সরকারি মাল, দরিয়ায় ঢাল!
লিখেছেন লিখেছেন FM97 ০১ মে, ২০১৪, ০৭:২৮:৫৭ সন্ধ্যা
আমরা সবসময় আমাদের দূর্গতির জন্য প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করি যদিও এ অব্যবস্থাপনার পাশাপাশি আমাদের অনৈতিকতা ও দূর্নীতিপরায়ণ চিন্তাভাবনাও দায়ী।
“সরকারি মাল, দরিয়ায় ঢাল”, “এদেশে নীতি নিয়ে চলা যাবে না”- আমাদের মানসিকতা অনেকটাই এমন। আমাদের বাড়ি, আমাদের অফিসের ইলেকট্রিক সংযোগ, গ্যাসের লাইন, পানির সংযোগ লাইন-ইত্যাদি ব্যবস্থায় যদি শুরু থেকেই আমরা দুই নাম্বারি না করি, তবেই আমাদের গলায় জোর থাকবে। যদিও প্রায়ই দেখি অধিকাংশরা দুই নাম্বারি করে আর তাদেরকেই কর্মকর্তারা ‘পাইছি তরে’ মনোভাব নিয়ে পেয়ে বসে-টাকা খাওয়ার জন্য। চলে দেন-দরবার। অবশেষে উভয়পক্ষ খুশি হয়-এমন একটা মূল্য নির্ধারিত হয়ে কর্মকর্তার পকেটে টাকা যায়।
আমি সরকারি চাঁদাবাজি, দূর্নীতি’র প্রসঙ্গকে উপেক্ষা করছি না। পুরাতন লক্কড়-ঝক্কড় পানির সংযোগ, সেই সংযোগ মেরামতের প্রতি কোনো উদ্দ্যোগ নেই, শহরের সব বাসায় পানি পৌঁছতে পারছে কিনা-সেই দিকে তদারকি না করা-এসবের কারণেও প্রতিবছর গরম মৌসুমে হেডলাইন হয় “ঢাকায় তীব্র পানি সঙ্কট”। এদিকে সমস্যা আরো আছে। দিন দিন যেহারে ঢাকার জনসংখ্যা বাড়ছে সেটাকে পরিকল্পিতভাবে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। রাজধানী হিসাবে ঢাকায় বাড়তি সুবিধা থাকবে, তবে সবকিছুর জন্য ঢাকাকে কেন্দ্রবিন্দু করে তোলা, বাকি জেলার মানুষদের সুবিধাবঞ্চিত করা, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করা-এসবের জন্যও দিন দিন ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে। যাবেই না কেনো? লোক বাড়ছে, চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু লক্ষ্য করে দেখুন-অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, আজকাল বড় বড় ফ্ল্যাটের অন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাঙ্কে পানি নাই। পাম্প ছাড়া স্বাভাবিক কলে পানি আসে না। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে যেতে যেতে কি পরিমাণে নিচে গেছে তার হিসাব আমরা সেদিন বুঝি যখন মাঝে মধ্যে মৃদু মাত্রায় ভূমিকম্প হয় ও সচেতন সমাজ সেটা নিয়ে সেমিনার করে। কিন্তু সেই করা পর্যন্তই-কোনো সফল উদ্দ্যোগ নেই।
আমি কোনো কিছুর সমাধান সরকারের উদ্দেশ্য দিতে চাই না, কারণ বলে হয়ত লাভ নেই, তাই পদক্ষেপ নিয়ে এবার আমাদেরকেই ভাবতে হবে। প্রত্যেক জেলার নগর-শহর-গ্রাম আলাদা পরকল্পনা দরকার। “গ্রামকে শহরে পরিণত করতে হবে” কিংবা “ক্ষেত- খামারের জমিতে বিল্ডিং আর কলকারখানা গড়তে হবে”- তা যেমন নয় তেমনি অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ন কিংবা সব কিছুর জন্য একটা জেলাকে প্রাধান্য দেয়ার ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করতে হবে। প্রত্যেক জেলার মানুষকে সেই জেলার লোকদের নিয়ে ভাবতে হবে। ধরূন, আপনি ঢাকায় থাকেন-ভালো আয় রোজগার হচ্ছে-যেটা হয়ত বিদ্যমান অব্যবস্থাপনায় আপনি গ্রামে থেকে করতে পারতেন না, তাই এবার টার্গেট থাকবে- নিজ উদ্দ্যোগে গ্রামে কিছু বেকার যুবকের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। যাতে যে পরিস্থিতির শিকার হয়ে আপনাকে নিজ ভিটে মাটি ছেড়ে কষ্ট করে আরেক জেলায় থাকতে হচ্ছে-সেটা যাতে আপনার জেলার আরো মানুষদের সাথে না হয়। আর নিজ এলাকায় ফিরে যাওয়ার মানসিকতা রাখাও ভালো।
সবশেষে যেহেতু কথা চলছিলো পানি সঙ্কট নিয়ে তাই বলি পানি খরচ করতে আমরাও কম বেহিসাবী নই। হ্যা, পানি ব্যবহারে মাসিক বিলের ক্ষেত্রে সরকার দুটি ব্যবস্থা রেখেছে। মিটার আর নন-মিটার সিস্টেম। ব্যাপারটা ঐচ্ছিক। আমরা যদি বাড়িতে মিটার লাগাই তাহলে বাড়ির ভ্যালুয়েশন অনুযায়ী বিল আসবে আর নন-মিটার থাকলে মাসিক ৭০০টাকা দিতে হবে। এবার আমরা যুক্তি দেখাই-৭০০টাকায় যত ইচ্ছা পানি খরচ করো সমস্যা নাই-বালতি ভরে পানি উপচে পড়লেও আমাদের খারাপ লাগে না। কি চমৎকার? অথচ অপচয়কারী যে শয়তানের ভাই-এটাই যেনো আমরা ভুলে গেছি। আমরা শয়তানের ভাই-বোন হতে উৎসাহী!
তাই আফসোস করে বলতে হয়, এখানে সরকার+ জনগণ- একে অপরের দোষে দুষ্ট।
বিষয়: বিবিধ
৯৬৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন