তোমার স্বামী আহলে হাদিস হোক!
লিখেছেন লিখেছেন FM97 ১১ এপ্রিল, ২০১৪, ১২:২৭:২৯ দুপুর
মসজিদে এক আন্টি এক মেয়েকে বলছে- “আল্লাহ করুক তোমার স্বামী আহলে হাদিস হোক”। আমি তো অবাক! কি ব্যাপার! আল্লাহ তো বলেছেন ‘চক্ষু শীতলকারক’ হওয়ার দোয়া করতে, কিন্তু উনি ঐ মেয়েটার জন্য আহলে হাদিস হওয়ার দোয়া করলেন!
আসলে সমস্যা ঐ আন্টির না, বরং বিদ্যমান মুসলমানদের দূরাবস্থায়। মুসলমানরা আজ নিজ নিজ মাযহাবকে দ্বীন বলে মেনে নিয়েছে। সেটার বিপরীতে কিছু শুনতে নারাজ। আর কেউ যদি একটু বিপরীতে বলে- তবে তাকে ‘কাফির’ আখ্যায়িত করা হয়। অথচ রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেনঃ কাফির নয় এমন কাউকে কাফির বললে- কাফির কথাটি বক্তার ওপরেই গিয়ে বর্তায় (বুখারী)। অথচ আজ আমরাই নিজ ধর্মের মানুষকে শুধুমাত্র ভিন্ন মাযহাবের জন্য গালিগালাজ করে দূরে ঠেলে দিচ্ছি। অথচ আমরা মুসলিম জাতি তো একটা দেহের মতো। যেমনটি দেহের কোনো এক অংশে ব্যাথা অনুভব হলে ব্রেনে সিগন্যাল পড়ে যায়, হাত-পা ব্যস্ত হয়ে যায় সেই ক্ষত সারাতে। অথচ আজ এই মুসলিম জাতির নার্ভাস সিস্টেমে সমস্যা। কারণ-মানসিক অবস্থাই ঠিক নাই। ক্ষত সারানোর সিগন্যাল আসবে কোত্থেকে?
এদিকে সেই আন্টির এমন দোয়া করার পিছনে রহস্য হলো- উনার মেয়ে জামাই হানাফী মাযহাবের অনুসারী। আর উনার মেয়ে আহলে হাদিস নিয়মে তথা রাফে ইয়াদাইন (দুই হাত উত্তোলন) করে নামাজ পড়েন বিধায় স্বামী বেশ রাগারাগি করেন। হ্যা, আমি জানি- কিছু হানাফী মাযহাবধারী ব্যক্তি আছেন যারা আহলে হাদিস নামই শুনতে পারেন না, আবার কিছু আহলে হাদিসের লোকেরা হানাফী মাযহাবীদের সহ্য করতে পারেন না। আর এই রাগারাগি, রেষারেষি ধরে মসজিদ পর্যন্ত আলাদা হয়ে গেছে। কি দুঃখের বিষয়! অথচ আমরা যদি সাহাবীদের জীবনের দিকে তাকাই- তাহলে দেখবো বিভিন্ন মাসলা-মাসায়েল নিয়ে তাদের মধ্যেও বিরোধ ছিলো কিন্তু তাই বলে তাদের ঐক্যে ফাটল পড়ে নি। মাযহাবী মতভেদের কারণে একে অপরের পিছনে নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকেন নি। তাই, মনে কি হয় না যে, আমরা অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করছি?
হতে পারে অপরপক্ষ সঠিক তাহলে তার মত নিয়ে গবেষণা করতে দোষ কথায়? আবার এরও হতে পারে আমরা সঠিক সেক্ষেত্রে আমাদের মতের দলীল অন্যের কাছে পেশ করাটাই শুধু আমাদের দায়িত্ব। তবে আমরা তো কাউকে কোনো কিছু মানতে বাধ্য করতে পারি না। রাগারাগি, লাগালাগি তো দূরের কথা। হিদায়াত দেয়ার মালিক আল্লাহ, আমাদের কাজ তো শুধু বার্তা পৌঁছে দেয়া। স্বয়ং আল্লাহ যেখানে বাধ্য করেন নি, সমগ্র নিদর্শন মানবজাতির জন্য উম্মুক্ত করে চিন্তাশীল হতে বলেছেন- সেখানে আমরা কে অন্যের ওপর জোর খাটানোর? "তোমরা ঝগড়া ও মতবিরোধ করো না, তাহলে তোমাদের শক্তি চলে যাবে ও তোমরা দূর্বল হয়ে পড়বে" (সূরা আনফালঃ ৪৬)
সুতরাং, আমাদের মধ্যাকার সংকীর্ণ মনোভাব ঝেড়ে ফেলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পথ সুগম করতে হবে। জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে মাথায় অন্যের ভুল ধরার প্রবণতা না রেখে সহিষ্ণু মনের অধিকারী হতে হবে। অতি ক্ষুদ্র বিতর্কিত বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে মুসলমানদের মন ও মসজিদকে আবাদ করতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
১২৩০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন
ঐক্যতা কামনা করি
মন্তব্য করতে লগইন করুন