ভিসা লাগে না, বর্ডারে একটা সংস্থা আছে...
লিখেছেন লিখেছেন FM97 ২২ মার্চ, ২০১৪, ০৯:৩৯:০৮ সকাল
বারান্দায় বসে এক ‘বম’ উপজাতি নিউজপেপার পড়ছে। প্রথমে অবাক হই কারণ- বান্দরবানের রুমা উপজেলায় যেখানে নিয়মিত নিজপেপার আসে না, সেখানে তার চেয়েও দূর্গম পথ বগালেকে নিউজপেপার? তাও ইংরেজী ভাষায়? স্থানীয় কোনো নিউজপেপার হবে কি? সামনে গিয়ে দেখি নিউজপেপার সাইজ চার পাতার নিউজলেটার। নাম তার- Synod Newsletter. নিউজলেটারটা মুলত ‘বম’ ভাষায় ইংরেজী হরফে লেখা, তাই তাতে কি লেখা আছে বুঝা যায় নি- তবে কিছু নিউজের পাশাপাশি অ্যাডমিশন জাতীয় তথ্য ছিলো। কৌতুহলী হয়ে সেই উপজাতিকে জিজ্ঞাস করে জানা যায়- এমন নিউজলেটার ভারতের মিজোরাম থেকে আসে। সম্প্রতি এক মিজো এসেছেন, অবস্থান করছেন বগালেকের পাশেই। উনি মূলত এই পেপার দিয়েছেন। এমন পত্রিকা প্রায়ই আসে কিনা জানতে চাওয়ায় তনি বলেন-“হ্যা, ভারত থেকে প্রায়ই এমন নিউজলেটার আসে। তাছাড়া বেশ উৎফুল্লের সাথে তিনি বলেন- আমরা আর তারা তো একই, একই জাত। শুধু আমরা বাংলাদেশে আর তারা ভারতে। ওদের সাথে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য চলে। ওরা এখানে আসে আর আমরাও ওখানে গিয়ে ব্যবসা করি”। এদিকে যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভিসার কথা জিজ্ঞাস করায়- (হেসে উত্তর)- আসলে……… ভিসা লাগে না। বর্ডারে……….. বিএসএফ (বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স) থাকে, তবে তাদের আর আমাদের চেহারা এক তাই বিএসএফ ধোঁকা খেয়ে যায়”। যদিও সেই উপজাতির কথা মতো বিএসএফের ধোঁকা খাওয়ার বিষয়টা আমার বিশ্বাসযোগ্য হয় নি। তাই বর্ডারের অবাধ যাতায়াতের বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা নিতে আরেক উপজাতি অনিল ত্রিপুরার সাথে কথা হয়। অনিলের বোন খ্রিস্টান মিশনারীর ঢাকাস্থ শাখায় মিশনারীর কাজ করে। অনিল রীতিমতো বর্ডার ক্রস করে ভারতের ত্রিপুরায় যায়। তার কোনো ভিসা নেই। তবে বর্ডারে একটা সংস্থা আছে যারা আমাদের ত্রিপুরা আর ভারতের ত্রিপুরার মধ্যে অবাধ চলাচলের ব্যবস্থা করে দেয়। সুতরাং, এই বিষয়টা বিএসএফ ও বিজিবি (বর্ডার গার্ড অফ বাংলাদেশ)’র দৃষ্টি এড়িয়ে যায় না- এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।
এদিকে চিন্তার বিষয় হলো- ভারতের সেভেন সিস্টার্স খ্যাত স্বাধীনতাকামী সাতটি রাজ্যের মধ্যে মিজোরাম ও ত্রিপুরাদের সাথে এখানকার সহজাতিদের অবাধ চলাচল ও সখ্যতা দেখে রাশিয়ার সাথে ক্রিমিয়ার সংযুক্তির কথা মনে পড়ে যায়। যেমনটি আমরা জানি- সম্প্রতি ২৬২০০ বর্গকিলোমিটারের ছোট উপদ্বীপ ক্রিমিয়া বৃহত্তর রাশিয়ার সাথে অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায়। সুতরাং বর্ডার ক্রস করে অবাধে যাতায়াত, তাদের নিউজলেটার বিলি, সেক্ষেত্রে দেশীয় পত্রিকা ও সুযোগ-সুবিধার ঘাটতি – যার সুবাদে ভিন্নদেশের প্রতি ঝুঁকে পড়া, অতঃপর তাদের সাথে মিশে একাকার হয়ে যাওয়াটা কি অস্বাভাবিক কিছু? আশেপাশের উপজাতিদের জনসমর্থন থাকলে ঠেকাবে কে?
এদিকে আমরা জানি ‘বম’ জাতিরা মূলত বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারি। তবে এখন অধিকাংশরাই হয়ে গেছেন খ্রিষ্টান। দশক দশক ধরে খ্রিষ্টান এনজিওদের মিশনের এটা ফলাফল। অবস্থা এমন যে- ‘বম’দের মূল ধর্ম যে বৌদ্ধ এটা তারা নিজেরাই জানে না। তাদের মা-বাবা কখন খ্রিষ্টান হলো সেটা তাদের অজানা। যদিও পত্রিকায় প্রকাশিত এনজিওদের তৎপরতা থেকে জানা যায়- উপজাতিদের মধ্যে কোনো মহিলা গর্ভবতী হলে সার্বিক তত্ত্বাবধান সহ সন্তানদের পরিচর্যা এমনকি অর্থিক সাহায্য প্রদান বাবদ মা-শিশুকে খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করে ফেলা হয়। যাকে বলে- অভাবকে পুঁজি করে ধর্মান্তর। তাই এ প্রসঙ্গে ক্ষ্রোভ প্রকাশ করে সেখানকার এক বাঙ্গালি বলেন- পাহাড়ি কিছু এনজিও আছে- যারা লেখাপড়া সহ আরো অনেক সামাজিক কাজ করে বটে, তবে তাদের একটা অংশ নিজেদের খ্রিষ্টান ধর্মে ব্যয় করে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তারা ধর্মান্তরিত করে। তাই কিছু এনজিওদের বন্ধ করে দেয়ায় আমি ব্যক্তিগতভাবে খুশিই হয়েছি”। যদিও সেখানে এমন অনেক এনজিও বহাল তবীয়তে আছে।
এদিকে যেমনটি আমরা জানি- দেশের এক দশমাংশ এলাকা তথা পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি- বাঙ্গালিদের মধ্যাকার ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ মেটাতে ভূমি মন্ত্রণালয় আগ্রহী হলেও সন্তুলারমার দল জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)পার্বত্য শান্তি চুক্তির সাথে সামঞ্জস্য রেখে কিছু সংশোধনী তাদের ওপর চেপে দেয়- যেটার বাস্তবায়ন হলে খোদ বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতি হবে। তাই এ বিরোধের নিষ্পত্তি ততটা সহজ বলে মনে হচ্ছে না। তাছাড়া সরেজমিনে যেটা মনে হয়েছে তাহল- আঞ্চলিক পরিষদ ও পাহাড়ি গ্রুপসহ কিছু এনজিও চায় না যে- উপজাতি ও বাঙ্গালিরা মিলেমিশে থাকুক। বরঞ্চ তাদের মধ্যে বিরোধ যাতে লেগেই থাকে সেই লক্ষ্য কিছু অপপ্রচার রটিয়ে দেয়া হয়। এই অপপ্রচার ও উসকানী এতটাই প্রকটভাবে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে যে এক উপজাতি সেখানকার বাঙ্গালিদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে বললেন- “এসব বাঙ্গালিরা চট্টগ্রাম থেকে রুমায় আসে আর আমাদের ওপর অত্যাচার করে। আমাদের বোনদের ধর্ষণ করে আর মা-বাবাদের কল্লা কেটে নেয়। আর শহর থেকে ভেসে আসা এসব কুকর্মের খবর শুনে কার না রাগ লাগে? তাই আমাদের গ্রামেও দুই পক্ষে দাঙ্গা লেগে যায়। এখন আর এসব দাঙ্গা-হাঙ্গামা ভালো লাগে না। আমরা শান্তি চাই, এই শান্তির জন্যই আলাদা হতে চাই”। যদিও উপজাতিদের এমন অপবাদ প্রসঙ্গে সেখানকার এক বাঙ্গালি ফোটো রাণী দাস বলেন- পাহাড়ি মেয়ে আর বাঙ্গালি ছেলের মধ্যে সম্পর্কের কিছু এদিক-সেদিক হলেই পাহাড়ি মেয়েরা ছেলের বিরুদ্ধে অত্যাচারের অপবাদ দিয়ে দেয়। এছাড়া আর কিছুই না। তাছাড়া দেখুন, উপজাতিরা সবসময় আলাদা হওয়ার কথা বলে- তবে আমি প্রশ্ন রাখলে চাই- সরকার যে এত টাকা খরচ করে সাংগু নদীর ওপর ব্রীজ করলো, যার কারণে আজ ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ হয়েছে- আজ যদি এরা আলাদা হয়ে যেতো তখন এত টাকার সহায়তা ও সুবিধা কোত্থেকে পেতো? তারা কি এটা ভেবে দেখে? তারা সব সময় নিজেদের বঞ্চিত হওয়ার কথা বলে- অথচ, স্কুলগুলোতে তাদের সংখ্যাই বেশি। এদিকে সরকার থেকে প্রতিবছর যে বাজেট আসে তার অধিকাংশই উপজাতিদের উন্নয়ণে চলে যায়। আর যাবেই বা না কেনো, খোদ চেয়ারম্যান সাহেব তো উপজাতি। তাই উনি শুধু উপজাতিদের নিয়ে ভাবেন”। এদিকে সুবিধাবঞ্চিত প্রসঙ্গে ক্ষ্রোভের সাথে এক বাঙ্গালি জসিম বলেন- “আমাদের দেশে যেনো আমরাই সংখ্যালঘু। রাগ তো লাগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টিচার এসে শুধু উপজাতিদের ব্যাপারে লিখে গিয়ে ঢাকায় সেমিনার করে, আমাদের বিষয়ে কিছু বলে না”। সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে উপজাতি ও বাঙ্গালিদের মধ্যে কিছু গ্রুপ বিদ্বেষ ছাড়াচ্ছে। যার পরিণতি-তাদের মধ্যাকার একে অপরের প্রতি ক্ষ্রোভ।
এদিকে রাজনৈতিক ময়দানে প্রধান দুই দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সেখানে প্রভাব নেই, বরং জানা যায়- তাদের লোকেরা এখানে মদের আসর করতেই মূলত আসে। পাহাড়িরা সন্তুলারমার সম্মেলনে যোগ দেয় আর সম্প্রতি যেমনটি আমরা জানি- জেএসএস এর প্রার্থী উপজেলা নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। যদিও আমাদের মনে থাকা দরকার- জেএসএস বিচ্ছিন্নতার পক্ষে, তারা শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের পথে, আর আমাদের প্রধানমন্ত্রীও তা বাস্তবায়নের জন্য তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন- যদিও এটা আমাদের দেশের অস্তিত্বের প্রতি হুমকি সরূপ। তাই তাদের বিজয়ী প্রার্থী পরবর্তীতে বিচ্ছিন্নতার বিষবাষ্প ছড়াবে না- এটা ভাবার কোনো কারণ নেই।
সুতরাং, যারা বাঙ্গালি-উপজাতিদের মধ্যে অপপ্রচার ছড়াচ্ছে, তাদের সহবস্থানের সুন্দর পরিবেশ নষ্ট করছে তাদের এই প্রয়াসকে নাসাৎ করতে দেশপ্রেমিক বাংলাদেশীদের এসব জায়গায় ব্যাপকভিত্তিক সামাজিক কাজ পরিচালনা করা অতি জরুরি হয়ে গেছে। অন্যথায় আমাদের সুন্দর পাহাড়ি এলাকাকে ষড়যন্ত্রকারীদের শকুনী দৃষ্টি থেকে রক্ষা করা মুসকিল হয়ে দাঁড়াবে।
বিষয়: বিবিধ
১৬৫০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এদিকে মিজোরামের লোকদেরকে ভারত, আমাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে না, বরং তারা নিজেরাই ভারতীয় সেনাবাহিনীর অত্যাচারে আলাদা হতে চায়, তো তারা আলাদা হলে হোক তাতে আমাদের কিছু না, তবে প্রশ্ন হলো তারা কি আমাদের এখানকার বমদের সাথে নিতে চায়? কেনো আমরা তো তাদের গলা ধাক্কা দিচ্ছি না? তাহলে? নাকি বান্দরবানের সেই জায়গা তারা দখল করে বৃহত্তর মিজোরাম গঠন করতে চায়? বিষয়টা ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুন।
আপনি হয়ত একটূ ভুল বুঝেছেন, বার্মার ভিতর রোহিংগাদের জন্য আলাদা জায়গা নয়, বরং তারা যাতে সেখানে একসাথে মিলেমিশে থাকতে পারে- সেটাই কাম্য।
আপনি হয়ত পূর্ব তীমুরের ঘটনা জানেন। সেই জায়গাটাকে কিন্তু খ্রিষ্টান মিশনারীরা তাদের ধর্মের প্রচারণা চালিয়ে সবাইকে নিজ ধর্মে এনে আলাদা করার ষড়যন্ত্র করেছে, কিন্তু আপনি একটা উদাহরণ দিন এমন যে- তাবলীগের লোকেরা দাওয়াতী কাজ করে কোনো দেশকে ভাগ করে দিলো, তাও ইসলামের জন্য।
আসলে খ্রিস্টান মিশনারীদের এমন দাওয়াতী কাজের লক্ষ্য থাকে আলাদা করা, যেটা ইসলামিক মানুষের মধ্যে থাকে না। কারণ- ইসলাম ঐক্য ও শান্তির কথা বলে। দোষ প্রকৃত খ্রিষ্টান ধর্মে নয়- তাদের বর্তমান মিশনারীদের তৎপরতায়।
সত্য
যারা বাঙ্গালি-উপজাতিদের মধ্যে অপপ্রচার ছড়াচ্ছে, তাদের সহবস্থানের সুন্দর পরিবেশ নষ্ট করছে তাদের এই প্রয়াসকে নাসাৎ করতে দেশপ্রেমিক বাংলাদেশীদের এসব জায়গায় ব্যাপকভিত্তিক সামাজিক কাজ পরিচালনা করা অতি জরুরি হয়ে গেছে। অন্যথায় আমাদের সুন্দর পাহাড়ি এলাকাকে ষড়যন্ত্রকারীদের শকুনী দৃষ্টি থেকে রক্ষা করা মুসকিল হয়ে দাঁড়াবে।
সহমত।
ধন্যবাদ...
মন্তব্য করতে লগইন করুন