"গুন্ডে"-ছবিতে ভুল বলেনি...
লিখেছেন লিখেছেন FM97 ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০২:৩৯:২০ দুপুর
ইতিহাসের কিছু সত্য যখন সামনে চলে আসে- তখন কেউ কেউ চুপ করে থাকে, আবার কেউ কেউ উদ্ভূত পরিস্থিতিকে পুঁজি করে ফয়দা লুটতে চায়। সম্প্রতি ভারতে মুক্তি পাওয়া ‘গুন্ডে’ ফিল্ম নিয়ে আমাদের দেশে যে তোলপাড় চলছে- সেই ঘটনাটা বিশ্লেষণ করে আমার কাছে এমনটি মনে হলো। ছবিটির ট্রায়ালের শুরুতে বলা হয়- “১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ শেষ হলো ভারত-পাকিস্তানের তৃতীয় যুদ্ধ …….”- কথাগুলোকে কষ্টার্জিত আমাদের স্বাধীনতার গায়ে আচড় লাগা কিংবা মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা যেটাই বলি না কেনো- সত্য হলো এটাই যে, আমরা যেটাকে ‘মুক্তিযুদ্ধ’ বলি- বিশ্বে সেটা ‘war between India and Pakistan 1971’ হিসাবেই পরিচিত। খোদ যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার উনার বই-White House years এ বাংলাদেশের প্রসঙ্গটি যে অধ্যায়ে বলেছেন সেটার নাম তিনি এভাবেই দিয়েছেন। তাছাড়া ১৯৭৪ সালের ৩০ অক্টোবর শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে কথোপকথনের সময় ‘৭১ এর যুদ্ধকে তিনি ‘মুক্তিযুদ্ধ’ না বলে বলেছেন civil war (গৃহযুদ্ধ)। আর কিসিঞ্জারের এমন মন্তব্যের জন্য তখন শেখ মুজিব কোনো প্রতিবাদ করেছিলেন বলে জানা যায় না।
আমরা জানি না, চিরদিন ভারতের কাছে নতজানু হয়ে থাকার জন্য এমনটি করা হলো কিনা- তবে ভেজালটা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রেই হয়ে গেছে। যেটা এখন শুধরানোর কোনো পথ নেই। ‘ভারত বনাম পাকিস্তান’ যুদ্ধ বলার ক্ষেত্রে বিশ্বের কাছে প্রমান হলো এই পত্রটি, যেখানে পাকিস্তানের হয়ে স্বাক্ষর করেন জেনারেল নিয়াজী আর ভারতের পক্ষে স্বাক্ষর করেন জগজিৎ শিং আরোরা। তাই আমাদের মাঝে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক যে, ‘বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান’ যুদ্ধে বাংলাদেশের হয়ে কেনো তৎকালীন এদেশের জেনারেল ওসমানী স্বাক্ষর করেন নি? আর ৯৩ হাজার পাকিস্তানী সৈন্য ভারতের কাছে কেনো আত্মসমর্পণ করলো? যুদ্ধটা যেখানে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের হয়েছে- সেখানে ভারতের কাছে সমর্পণ কেনো? এসব প্রশ্নের উত্তরে অনেক ফাঁকফোকড় আছে- যেটা আমাদের জানানো হয় নি। যে কারণে আজ ইতিহাস এত বিকৃত।
‘গুন্ডে’ ছবিতে যা বলা হয়েছে- সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগ চুপ। কারণ আওয়ামী লীগ ভালো করেই জানে- এসব নিয়ে উচ্চবাচ্য করলে স্বাধীনতা প্রশ্নে তাদের পিতা শেখ মুজিবুর রহমান আর উনার উস্তাদ ভাসানীর দ্বিমুখী নীতি এ জাতির কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ বাজিয়ে বলা হয়-তিনি বলেছিলেন- ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম…..”, অথচ এই ভাষণের শেষে তিনি যে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলে বক্তব্য শেষ করেছেন সেটা আমাদের জানানো হয় না। সব খানে ফাঁকফোকর। আবার তিনি যদি সম্পূর্ণ স্বাধীনতাই চেয়েছিলেন- তবে ২৫শে মার্চের রাতে নিজের সেল্টারের নিশ্চয়তা কিভাবে দেন? ধরা দিলেন তাও পাকিস্তানীদের হাতে? স্বাধীনতা নিয়ে উনার উদ্দেশ্য যেনো পুরোপুরি ঘোলাটে। এদিকে যে ভাসানী পাকিস্তানকে ‘আসসালামু আ’লাইকুম’ জানিয়ে বিদায়ের আভাস দিলেন, সেই ভাসানী আবার ১৯৭৬ এ এক ঘরোয়া বৈঠকে বলেন- “তড়িঘড়ি করে পাকিস্তান ভেঙ্গে দেয়া উচিত হয় নি”! আমাদের নেতাদের এ কি অবস্থা! স্বাধীনতার প্রত্যাশা নিয়ে এতো গড়মিল? !!
সুতরাং ইতিহাস চর্চা করতে গিয়ে যখন আমাদের নেতাদের মধ্যাকার দ্বিমুখী নীতি, war field থেকে পাকিস্তানে পালিয়ে যাওয়ার ইতিহাস, আওয়ামী নেতাদের কলকাতায় মৌজ-ফূর্তির ঘটনা জানি আর এরই মাঝে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে ভারতের এককভাবে নিজের ক্রেডিট বুঝে নেয়া, ভারতের কাছে ৯৩ হাজার পাকিস্তানী সৈন্যের আত্মসমর্পণ ও দলীল মোতাবেক ‘৭১কে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ বলে ‘গুন্ডে’ ফিল্মে যে কথা বলা হয়েছে সেটাকে মিথ্যা বলার যুক্তি আমাদের কাছে নেই।
আমি মনে করি-সত্যকে সত্য বলা বুদ্ধিমানের কাজ। আমাদের ইতিহাসের অধ্যায়গুলো সঠিকভাবে এ জাতির কাছে বর্ণনা হওয়া উচিত তা নাহলে দশকের পর দশক বিভিন্ন ধরণের চেতনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে বিভক্তি সৃষ্টি করবে আর দেশ বিদেশে শত্রুতা ছড়াবে। তাই ‘গুন্ডে’ ছবির ট্রায়াল নিয়ে ভারত বিরোধীতা ছড়িয়ে, গলাবাজি করে, কিংবা টেকনোলজির মারপ্যাচ খাটিয়ে ওয়েবসাইট হ্যাক করে কোনো লাভ নেই। আর ভারত বিরোধীতা নয়- বরং ভারতের অন্যায়ের বিরোধীতা যদি করতেই হয়- তবে এদেশে ভারতের বাজার দখলনীতি, গার্মেন্টে অবৈধভাবে মালিক সেজে থাকা, সীমান্ত সমস্যা, পানি বন্টন সমস্যা, সাংস্কৃতিক আগ্রাসনসহ দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ভারতের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে এবং জনগণকে সচেতন করতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৫৫ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
Unbelievable!! Even very first time I know about that. Thanks a lot for sharing the important information through post.
তার মানে তো এই দাঁড়ালো যে ১৯৬৭ কিংবা তারো আগে পাকিস্থান সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের একটি অংশ দেশদ্রোহীতায় অংশ নিয়ে ভারতীয় রুপী ও নারীর কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। আর সেই ষঢ়যন্ত্রকারীদের, সেই দেশ দ্রোহীদের আমরা বলছি মুক্তিযোদ্ধাদের লিডারশীপ। যারা কিনা ১৯৭১ এ ট্রুলী ছিল ভারতের পেইড এজেন্ট, ফুট সোলজার ও দাস তুল্য।
এখানে বাংলাদেশীদের ইতিহাস হচ্ছে, সাফল্য হচ্ছে - ভারতীয় ষঢ়যন্ত্রের কটুকৌশলে নেতৃবৃন্দ যুক্ত থাকা স্বত্তেও এবং পাকিস্থানের সাথে যুদ্ধে জয় নিশ্চিত করার পর ও - এ জনপদবাসী বিচ্ছিন্ন ও দূর্বল পূর্বপাকিস্থানকে প্রায় ৩০/৩৫ বছর পয্যন্ত দমিত হতে দেয়নি, পদাবনত হতে দেয়নি।
এই ছবিটা কি বাংলাদেশীরা অস্বীকার করতে পারবে ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন