দাড়ি রাখলে বিয়ে হয় না!!
লিখেছেন লিখেছেন FM97 ২৪ জানুয়ারি, ২০১৪, ১১:৪৯:৪৭ সকাল
অনেক ছেলেদের ধারণা (এমন ধারণার জন্য দায়ী মিডিয়া ও মেয়েরা) যে- দাড়ি রাখলে বিয়ে হওয়া মুশকিল। কারণ, দাড়িওয়ালা ছেলেদের মেয়েরা পছন্দ করে না। আবার এমনও দেখা যায় ছেলে রাখতে চায় তবে পরিবার থেকে তাকে নিরুৎসাহিত করা হয় তাই রাখা হয় না। আবার কিছু ছেলেতো এমনও করে বসে- বর সাজতে গিয়ে দাড়ি কেটে ফেলে। পারিবারিক চাপ, ফ্রেন্ডদের নিরুৎসাহিতার ফলে তাদের মনে ধারণা জন্মে যায় যে- ‘দাড়ি থাকলে হয়ত সুন্দর লাগবে না, আনস্মার্ট লাগবে’। যদিও ব্যাপারটা সেরকম না।
এদিকে অবশ্য একটা কথা বলে রাখা সমীচীন মনে করি তাহলো-দাড়ি রাখা উত্তম তবে কোনো ছেলের দাড়ি দেখেই যে বিয়ে করতে হবে এমন শর্ত অজ্ঞতার মধ্যে পড়ে। হ্যা, যে মানুষটি অধিক তাকওয়া সম্পন্ন সে না হয় দাড়ি রাখলো, তবে অনেকেই আছেন- যাদের কু’রআন-হাদিস সম্পর্কে অগাধ জ্ঞান, ইসলামকে মানবতার সমাধান হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার তীব্র ইচ্ছাশক্তি সবই আছে- কিন্তু কোনো এক মানসিক দূর্বলতার কারণে দাড়ি রাখা হচ্ছে না। তবে কি সেই মানুষকে আপনি খারাপ বলবেন?
আবার দেখুন, আমি একটা প্রত্যক্ষ উদাহরণ দেই- ঘটনাটা পাসপোর্ট অফিসের। বলে রাখি- পাসপোর্ট নেয়ার সময় ছেলে-মেয়েদের আলাদা লাইন থাকে, কোনো তাড়াহুড়া বা ধাক্কাধাক্কির সম্ভাবনা থাকে না। তাছাড়া সকলের সুবিধার্থে মাইকে নাম ধরে ডাকা হয়। তো, সে ঘটনার দিন মহিলাদের লাইনের সামনে মহিলারা জোড়ো হয়ে বসে ছিলো। কিছু মহিলা ছিলো দাঁড়ানো। তো এমন সময় এক দাড়িওয়ালা পুরুষ (বয়স আনুমানিক ৩৫ হবে) দাঁড়িয়ে থাকা মহিলা দুটির পিছনে দাঁড়ায়। এতে মহিলারা অস্বস্তিবোধ করে বলে- “আপনি এখানে এসে দাড়াচ্ছেন কেনো, পুরুষের সাইডে যান”। তখন লোকটি বেশ রুঢ় কন্ঠে বললো- “আমার বউ এখানে আছে, তাকে দেখিয়ে দিতে হবে, আপনার সমস্যা হলে, আপনি যান”। মহিলা দুটি আর কিছু বললেন না। লোকটার এমনভাবে কথা বলা ঠিক হয় নি, কারণ মহিলারা কোথায় যাবেন? বরং উনি নিজেই তো মহিলাদের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন, আর রইলো উনার বউয়ের কথা, আসলে পাসপোর্ট নেয়ার সময় এমন কিছু করতে হয় না যে- বউকে দেখিয়ে দিতে হবে। কারন- শুধু স্বাক্ষর করে নিজের পাসপোর্ট নিয়ে আসতে হয়। তো এখানে দেখিয়ে দেয়ার কি হলো? বরং কোথায় স্বাক্ষর করা লাগে তাও সেনাকর্মকর্তারা দেখিয়ে দেন। তাই উনার এমন আচরণ দেখে খারাপ লাগলো, আরো খারাপ লাগলো এটা ভেবে যে- ধর্মীয় লেবাস ধারণ করে তিনি যে অভদ্রতা করেছেন এতে ধর্মবিদ্বেষীরা ধর্মের বিরুদ্ধে বিশেষ করে ইসলামের বিরুদ্ধাচারণ করার সাহস পাবে। আমি বলছি না- সব দাড়িওয়ালারা এমন-বরং আমি বিপরীত একটি উদাহরণ দেখালাম। মূলত দাড়ি হচ্ছে ছেলেদের পরহেজগারিতার প্রতীক। এটা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা তথা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। যদিও অনেক আলেম দাড়ি রাখাকে সুন্নত থেকে ফরজের পক্ষে মত দেন। যাই হোক, তবে এটা আমরা সবাই জানি- রাসূলুল্লাহ সাঃ গোফ ছোট করতে আর দাড়ি রাখতে বলেছেন। আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবেসে দাড়ি রাখে- তাদের ক্ষেত্রে কোনো কিছুই প্রতিবদ্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় না।
একবার এক অ্যান্টি এসে এলাকার এক ছেলের প্রসঙ্গ তুলে আম্মুকে বলে- “ছেলেটাকে তার পরিবার বলে, আমিও বলছি- দাড়িটা ফেলে দাও। কিন্তু না, কোন হুজুরের কাছ থেকে শুনেছে, তারপর থেকে দাড়ি রাখা শুরু করেছে। দাড়ির কথা বললেই বলে-“না, ফেলবো না”। তো, সেই ছেলেটা দাড়ি রাখা নিয়ে কি সংগ্রাম করছে তা তো বুঝাই গেলো।
এদিকে এটা সত্য যে- অনেক মেয়েরা দাড়িওয়ালা ছেলে পছন্দ করে না। বলে- “বুড়া বুড়া লাগে!” এটা মূলত একটা দৃষ্টিভঙ্গি যা আমি মনে করি -পরিবর্তনের প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ কেউ হিজাবি মেয়ে পছন্দ করে, কেউবা হিজাব ছাড়া পছন্দ করে। তাদের দৃষ্টিতে-“ স্বাভাবিক ভাবে চললেই তো হয়- এতো গোড়ামী করার কি আছে”? অর্থাৎ তাদের কাছে হিজাব করা গোড়ামির পর্যায়ে। সুতরাং এগুলো হচ্ছে একেক জনের দৃষ্টিভঙ্গি।
আরেকটা বিষয় হলো যারা বলেন- “বুড়া বুড়া লাগে" তাদের ক্ষেত্রে বলতে- ছেলে হোক মেয়ে হোক, মানুষের বয়ষ্ক হওয়ার ছাপ তার মুখের ওপর পড়বেই-সেটা ছেলেদের ক্ষেত্রে দাড়ি থাকুক বা না থাকুক। তাছাড়া একটা মানুষের মানসিকতা, তার কথা বলার ধরণ, চলাফেরা, স্মার্টনেস- ইত্যাদি দ্বারা মানুষটি বয়ষ্ক না যুবক সেটাও বুঝা যায়। আর কেউ যদি বলে- ‘দাড়ি রাখলে আনস্মার্ট লাগে’- তাহলে বলবো- আগোছালো সব কিছুই আনস্মার্ট। পরিপাটিভাবে থাকলে সবকিছুই স্মার্ট।
যাই হোক, আমি কারো ভালোলাগার ওপর হস্তক্ষেপ করতে চাই না। তবে সমাজে এক ধারণা বেশ প্রচলিত (যার জন্য মেয়েদের দোষারোপ করা হয়) তাহলো- দাড়ি রাখলে বিয়ে হওয়া মুশকিল। আর এই ধারণার বশীভূত হয়ে মেয়েদের সামনে স্মার্ট লাগবে ভেবে অনেকে দাড়ি রাখেন না, দাড়ির ব্যাপারে জানলেও মানসিক দূর্বলতার জন্য রাখা হয় না বা বিয়ের আগে দাড়ি কেটে ক্লিন সেইভ করে ফেলেন। আবার অনেকে দেখা যায়- বিয়ের আগে দাড়ি থাকলেও বিয়ের পরে নাই হয়ে যায়। তখন লোকেরা হেসে হেসে বলে- “কি রে……বউ এসে দাড়ি কাটিয়ে ফেললো নাকি…..হে হে…”। তাই বলতে, বউ যদি এসে এমনটি করে বা ছেলেটি যদি বর সাজতে গিয়ে এমন করে বসে তাহলে তো বলবো- তারা এক জঘন্য কাজটি আনন্দের সাথেই করলো!
আমার এক ফ্রেন্ডের কথা দিয়েই লেখাটি শেষ করছি- কথা প্রসঙ্গে সে একদিন বললো- “ছেলেদের দাড়ি থাকাটাই ভালো লাগে। দাড়ি রাসূলুল্লাহ সাঃ পছন্দ করেন তথা আল্লাহ ভালোবাসেন। আর আল্লাহ যেটা ভালোবাসেন সেটাই আমি ভালোবাসি”।
বিষয়: বিয়ের গল্প
৫৩২১ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
কষ্ট পেলাম-এমন অন্যায় দেখে।
দাড়ি রাখা উত্তম তবে কোনো ছেলের দাড়ি দেখেই যে বিয়ে করতে হবে এমন শর্ত অজ্ঞতার মধ্যে পড়ে।
এটা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা তথা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত
আসলেই কি দাড়ী রাখা সুন্নাত ?
আমাদের সমাজে দাড়ী রাখাকে অনেক নামাযীও ঐচ্ছিক মনে করেন। দাড়ী রাখা উত্তম/সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নাকি অবশ্য পালনীয় কর্তব্য সে সম্পর্কে একটু আলোচনা করি ,
وما كان لمؤمن ولا مؤمنة اذا قضي الله ورسوله امرا ان يكون لهم الخيرة من (امرهم (سورة الاحزاب
অর্থ : আল্লাহ এবং তার রাসুল (সা কোন কিছুর ফয়সালা করে দিলে কোন মু'মিন পুরুষ মু'মিন নারীর জন্যে সেটা করা না করার ব্যপারে কোন ঐচ্ছিকতা থাকে না (অর্থাত তা পালন করা আবশ্যক হয়ে যায়। (সুরা আল আহযাব ,আয়াত ৩৬)।
আসেন দেখি দাড়ির ব্যাপারে নবী সা: এর ফয়সালা কি ?
قال رسول صلي الله عليه وسلم : خالفو المشركين قص الشارب واعفاء اللحية
রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, তোমরা দাড়ি লম্বা করো এবং মোচ ছোট কর । দাড়ি সংক্রান্ত এ সহীহ হাদীসটি একাধিক হাদীস গ্রন্থে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। হযরত ইবনে উমর রা. এর হাদীসে আছে-রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন, তোমরা দাড়ি লম্বা করো, গোফ ছোট রাখো । কোন কোন হাদীসে উপরোক্ত বাক্যের পূর্বে আছে-“তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা করো”।
রাসূলুল্লাহ সা. সারাজীবন লম্বা দাড়ি রেখেছিলেন, যদি দাড়ি মুন্ডানো কিংবা মুষ্টি পরিমাণের আগে কর্তন করা জায়িয হত, তাহলে তিনি সারা জীবনে কম পক্ষে একবার হলেও তা করে দেখাতেন । অথচ তার দ্বারা তা প্রমাণিত নয় ।
তাহলে দাড়ি রাখার ব্যপারে নবী সা: এর যদি আদেশ থেকে থাকে তাহলে এই উম্নতের কারও জন্য কি আর কোন এখতিয়ার থাকতে পারে তা রাখা না রাখার ব্যপারে ? এজন্যই উসুলে ফিকাহ এ একটা প্রসিদ্ধ কায়দা আছে 'আল্লাহ ও তার রসুল সা: এর আদেশ সুচক বাক্য আবশ্যকতাকেই নির্দেশ করে '
দাড়ী কাটা এমন একটা গুনাহ যে গুনাহ প্রকাশ্যেই করা হয়।
প্রকাশ্যে গুনাহ এসম্পর্কে একটা হাদীস শুনুন
قال رسول صلي الله عليه وسلم : ان من امتي كل معافا الا المجاهرين
অর্থ : আমার উম্নতের মধ্যে প্রত্যকেই মাফ করা হবে তবে তাদের নয় যারা প্রকাশ্যে গুনাহ করে।
পড়লাম। খুব সুন্দর লিখেছেন।লিখাটি অনেক ভালো লাগলো। কিছু রেফারেন্সও পেলাম অন্যদের মন্তব্য থেকে, যা সামনে কাজে আসবে। অনেক কন্সেপ্ট ক্লীয়ার হল।
অনেক ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা আপনার জন্য।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন