আগ্রাসন ঠেকাবে কে??
লিখেছেন লিখেছেন FM97 ২০ জানুয়ারি, ২০১৪, ১১:১৯:২৬ সকাল
ক্ষমতার লোভ মানুষকে কতটা হিংস্র করে তুলে আর সেই ব্যক্তি কিভাবে নিজ দেশেরই শত্রু হয়ে দাঁড়ায়-সেটার উৎকৃষ্ট উদাহরণ আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই, কার্ল মার্ক্স ধর্মকে আফিম বললেও আমার কাছে মনে হয় অযোগ্য ব্যক্তিদের জন্য ক্ষমতাই যেন আফিম। বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মতো তৃতীয়বার প্রধামন্ত্রী হওয়ার খায়েশ, শেখ হাসিনা ভারতের সহায়তায় পূরণ করতে পারলেও আর উনার পিছনে থাকা চাটুকারদের আরেকদফা মাল খাওয়ার সুব্যবস্থা হয়ে গেলেও দেশ আজ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং এমন কিছু তথ্য ফাঁস হয়ে আমাদের সামনে আসছে যে- বিশ্লেষকেরা হায়দারাবাদ ও সিকিমের পরিণতির সাথে বাংলাদেশের তুলনা করতে বাধ্য হচ্ছেন।
আমরা জানি, হায়দারাবাদে হয়েছিলো ভারতের সরাসরি আক্রমণ আর সিকিমে খাটানো হয়েছিলো কৌশল। তবে এই দুটো নীতির যেকোনো একটি যদি বাংলাদেশে প্রয়োগ করা হয় তাহলে হয়ত জয়ী হবে ভারত। কারণ-আমাদের সেনাবাহিনীর জানাজা তো ২৫ to ২৬শে ফেব্রুয়ারী’০৯ তেই উঠে গিয়েছে। তারপর হয়েছে ছাটাই-বাছাই। আমি ‘বীর বাঙ্গালি’ বলে এদেশের বাঙ্গালিদের লজ্জা দিতে চাই না আর শুধু ‘বাঙ্গালি’ শব্দ দিয়ে উপজাতিদের হেয় করতে চাই না-তবে সত্য হলো বীরত্ব বাঙ্গালিয়ানা থেকে আসে না, আসে ভিতরের আদর্শ থেকে। আর তেমন আদর্শিক মানুষের সংখ্যা বাংলাদেশে কম। সুতরাং ভারতের আগ্রাসন ঠেকাবে কে?
এদিকে ইন্ডিয়া ডকট্রিনে ভারতের আশেপাশে ছোট দেশগুলোর বিলোপের তথা রাজনৈতিক পরাধীনতার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে যেটা বাস্তবায়নের জন্য ভারত পথ পরিষ্কার করে ফেলেছে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমে-যেটার জন্য মূলত দায়ী এদেশের রাজনৈতিক নেতারা। জানা যায়- ২০০১ সালে বিএনপি’র আমলে অধিক সংখ্যক ভারতের চ্যানেলের অনুপ্রবেশ ঘটে। যেসব চ্যানেলের অধিকাংশ সিরিয়ালে নারীকে ভিলেন ক্যাটাগরীতে ও খারাপ চরিত্রের দেখানো হয়। তবে এসবের জন্য এদেশের নারীদের কখনো প্রতিবাদী হতে দেখা যায় নি। তাই, এসব দেখতে দেখতে আর শিখতে শিখতে সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট হবে-এটাই স্বাভাবিক। ভালো-খারাপের বাছ-বিচার ছাড়াই ছেলে-মেয়েরা মেতে আছে ফিল্ম, মিউজিক ভিডিও, অশ্লীল গান আর অর্ধ-উলংগ নৃত্য নিয়ে। চলছে কুসংস্কৃতির গলধঃকরণ। প্রভাব পড়ছে আমাদের সংস্কৃতিতে। অবাক করার মতো বিষয় হলেও পরিস্থিতি এমন যে-কোনো সরকার যদি চ্যানেল বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তবে হয়ত এদেশের মানুষেরাই সরকারবিরোধী হয়ে যাবে। সুতরাং, যুব সমাজের মধ্যে ড্রেস up থেকে শুরু করে কুসংস্কৃতির প্রতি যখন তাদের mind set up হয়ে গেছে সেক্ষেত্রে গণঅভ্যুত্থান করবে কারা? আর কোন আদর্শে? এদিকে ভারত যদি আক্রমণ করেও বসে সেক্ষেত্রে ঢাকার বাইরের জেলায় প্রতিরোধ গড়ে উঠলেও অস্ত্রের মুখে কয় দিনই বা টিকে থাকবে?
তাছাড়া বেশ পরিকল্পনার সাথে আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি, উপাসনালয়ে হামলা চলছে- যার কোনো বিচার তো দূর তদন্ত্র পর্যন্ত করছে না সরকার। তাই প্রশ্ন হলো এসবের পিছনে উদ্দেশ্য কি? ভারতের হিন্দুদের উসকে দেয়া? সেখানকার কট্টোর হিন্দুরা তাদের দেশের মুসলমানদের পর্যন্ত নিজ দেশের নাগরিক মনে করে না-বরং ইন্ডিয়াকে হিন্দুস্তান তথা শুধু হিন্দুদের স্থান বানাতে চায়- সেই হিন্দুদের এদেশের প্রতি হামলে উঠার জন্যই কি এবার টার্গেট করে চলছে আমাদের হিন্দুদের ওপর আক্রমণ? অবস্থা দৃষ্টে তো তাই মনে হয়।
অপরদিকে সিকিমের লেন্দুপ দর্জির মতো শেখ হাসিনা যদি এদেশের সাথে ভারতের একীভূত হওয়ার প্রস্তাব সংবিধানে পাস করে বসেন তাহলে আর যায় কোথায়? সরাসরি আক্রমণে ভারতের ওপর বিশ্বের যে নেতীবাচক প্রভাব পড়তো তা হয়ত এই কৌশল অবলম্বনে পড়বে না। আর আমরা লক্ষ্য করে দেখছি- বর্তমান সরকার বিগত আমলে কয়েক দফা সংবিধান পরিবর্তন করেছে। মুসলমানদের মনে আঘাত দিয়ে আল্লাহ’র উপর আস্থা কথাটি বাদ দিয়েছে, ধর্ম নারীদের কি অধিকার দিয়ে রেখেছে আর তা কি করে বাস্তবায়ন সম্ভব সেই আলোচনা না করে এক অযৌক্তিক নারীনীতি আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে- ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’র মতো করে সংবিধানকে সরকার নিজের মতো করে সাজাচ্ছে। সুতরাং ক্ষমতার লোভে পড়ে শেখ হাসিনা সরকার আরেক দফা সংবিধান পরিবর্তন করবে না- এমনটি ভাবার পিছনে কারণ নেই। তাছাড়া যত বার সংবিধান পরিবর্তন হয়েছে ততবার কিছু রাজনৈতিক গ্রুপ প্রতিবাদ করলেও সরকারের বিরুদ্ধে তেমন প্রতিবাদ দূর্গ গড়ে উঠে নি। শেষে আন্দোলন স্তিমিত হতে বাধ্য হয়েছে। কারণ- আজ স্পষ্ট। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত যোগ্য নেতৃত্বের হাতে ক্ষমতা যায় নি। নেতাদের পলিসিতে গণ্ডগোল, তারা জনগণের ভাষা বুঝে নি, তাই তাদের কর্মসূচীতে দলীয় গোষ্ঠী ছাড়া সাধারণ জনগণের কোনো সাড়া নেই। যে যেমন পেরেছে নিজের স্বার্থ দেখেছে, ক্ষমতার রাজনীতি করেছে। সঠিক দিক নির্দেশনার মাধ্যমে কয়েক দশকের প্লানিং করে কেউ এগোয়নি। সবশেষে জনতা রাজনীতি বিমুখ। তাই সত্যের পথে সংগ্রাম, কারো অন্যায় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার, আন্দোলন, অতঃপর বিজয় তখনই সম্ভব যখন অধিকাংশ জনগণ ব্যক্তিগত জীবন থেকে পারিবারিক জীবনে, সমাজে, রাজনীতিতে-তথা সকল স্তরে প্রত্যেকটি কাজে উদ্দেশ্য ঠিক রেখে কি করছি, কেনো করছি, কিভাবে করলে সবার কল্যাণ হয়- ইত্যাদি বিবেচনা করে চলবে। আমরা যারা উপলব্ধি করতে পেরেছি- তাদের দায়িত্ব যারা জানে না তাদের জানানো। তা নাহলে, আমাদের বিরাট সম্পদ তথা ১৬ কোটি জনগণকে রক্ষা করা মুসকিল হয়ে যাবে আর তারা বিগড়ে যাবে।
বিষয়: বিবিধ
১২০৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন