সেরকম দেখলে…..বিয়ের পর তালাক!
লিখেছেন লিখেছেন FM97 ১২ জানুয়ারি, ২০১৪, ১০:১৩:৫০ রাত
মা-বাবা সিদ্ধান্তে অটল- “এবার মেয়ের বিয়ে দিতে হবে”। ছেলে পছন্দের দিক থেকে সমাজের প্রায় সকল মা-বাবারা যেমনটি ভাবে চিন্তাভাবনা তেমনই। ছেলের কামাই ভালো হতে হবে, স্থায়ী ঠিকানা থাকবে, দেখতে লম্বা-চওড়া আর বংশ-মর্যাদা উঁচু হলে তো কথাই নাই।
তেমনই এক প্রস্তাব এসেছে বাবার হাতে। দেখালো তার স্ত্রীকে। মা-বাবা বড্ড খুশি। তারা যেমনটি চাচ্ছিলেন তেমনটি পেয়েছেন। এবার মেয়ের পছন্দের পালা। ছেলের বায়োডাটা গেলো মেয়ের হাতে।
বাবাঃ (হেসে) কি? কেমন দেখলে?
মেয়েঃ হুম, ভালোই। তবে…. বায়োডাটা দেখে তো কিছু বলা যায় না। আচ্ছা……. ছেলেটা কি ইসলামী মাইন্ডেড, মানে…. নামাজ, তাফসির পড়ে তো… নাকি…..
মাঃ ওফ! রাখো, তোমার ওসব!
বাবাঃ দেখো, ছেলেকে তো আমি দেখেছি। হ্যান্ডসাম, সুন্দর। নিজের বাড়ি আছে। শুনলাম বিয়ের পরে আলাদা ফ্ল্যাটে বউ নিয়ে থাকবে। সেখানে বিয়ে হলে আরামেই থাকবে………
মেয়েঃ হ্যা, ঠিক আছে। তবে আমি তো প্রথমেই শর্ত দিয়ে দিয়েছি, ছেলেটা তেমন কিনা?
বাবাঃ আচ্ছা তুমি যখন বলছো, তো কালই সেই এলাকার মসজিদে গিয়ে খবর নিবো।
(খবর নেয়ার পর আবার মা-বাবা-মেয়ে একসাথে)
বাবাঃ দেখো, সবাই কিন্তু পৃথিবীতে এক রকম না, তুমি যেমন চাচ্ছো সেটা আমি বুঝেছি। তবে অনেকেই হয়, আগে এক রকম থাকে পরে ঠিক হয়ে যায়। আমার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনো। আমি তোমার বাবা, আমি তোমার জন্য ভালোই চাইবো, খারাপ না। তোমার কথা মতো…… আমি খবর নিয়েছি। আর…….. ইমাম সাহেবকে আমি জিজ্ঞাস করেছি- তিনি বলেছেন ছেলেটাকে কোনো দিন মসজিদে দেখেন নাই। শুক্রুবারেও না………
মেয়েঃ তো ব্যস, কথা তো এখানেই শেষ। রিজেক্ট!
মাঃ আরে! এভাবে রিজেক্ট করে নাকি মানুষ? দেখলো না কিছু না……..
মেয়েঃ আর দেখার কি দরকার? যে ছেলে কুরআন-হাদিস তো দূর, নামাজই পড়ে না সেটা নিয়ে আর আগে বাড়ার কি দরকার?
মাঃ দেখো, সবাই তরূণ বয়সে ওরকম একটু…. থাকেই। পরে ভালো হয়ে যায়।
মেয়েঃ যে তরূণ বয়সে ভালো হতে পারলো না, সে পরে ভালো হয়ে যাবে সেটার কি ভরসা?
বাবাঃ আচ্ছা আমি বলি- ছেলে নামাজ পড়ে না, ঠিক আছে। বিয়ের পরে তুমি তাকে ঠিক করে দিও। কি? পারবা না?
মেয়েঃ কেউ কাউকে ভালো করতে পারে না। ওসব কথার কথা। বাস্তবতা নয়। এগুলো নাটকে দেখায়। আলাদীনের চেরাগের মতো, বউ আসার পর খারাপ ছেলেও ভালো হয়ে যায়। আর আরেকটা কথা হলো- আল্লাহ যাকে হিদায়াত দেন-সেই ভালো হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়- অনেক চেষ্টা করে, অনেক দোয়া করেও কেউ কেউ নিজের দোষে হিদায়াত পায় না। তাই, আমি ওসব ঝামেলায় পড়তে চাই না। আরেকটা ধারনা আমাদের সমাজে প্রচলিত, তাহলো- খোদ ছেলের মা-বাবারা নিজের খারাপ ছেলেকে একটা ভালো মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে বলে- “বিয়ের পরে ছেলেটা ভালো হয়ে যাবে”- কিন্তু বাস্তবে মেয়ের ওপর দিয়ে অত্যাচার হয়, অনেক ধকল সামলাতে হয়।
মাঃ আচ্ছা, তুমি এতো খারাপ বলছো কি অর্থে? যে ছেলেটা তোমাকে দেখালাম, সে কি চোর? গুন্ডা? এডিকটেড?
মেয়েঃ যদি সেরকম হয় তো?
মাঃ তো বিয়ের পরে সেরকম দেখলে তালাক দিয়ে চলে আসবা!
মেয়েঃ কি? তালাক! এটা কি কোনো খেলা নাকি? তখন সমাজ আমাকে কি বলবে? তালাকপ্রাপ্ত নারী। আর আমার বাকি জীবনের কি হবে?
(এবার সব চুপ)
এটা সত্য যে টাকার মোহে পড়ে আমরা মানুষকে বাছ-বিচার করতে ভুলে যাই। সমাজে এমনও ধারণা আছে যে- “বেশি ইসলামী মাইন্ডেড খুঁজতে গেলে দেখা যাবে টাকা পয়সা নাই। কারণ, তারা দূর্নীতি করবে না, তাই নিজের সম্পত্তি বাড়াতেও পারে না”। হ্যা, এটা সমাজের নির্মম বাস্তবতা যে, এখানে অধিকাংশ বড়লোকেরা দূর্নীতি করেই বড় হতে পেরেছে, তার মানে কি তারা ভালো কাজ করেছে? না, কখনোই না। অন্যের অধিকার হরণ করে সম্পত্তি গড়ার হিসাব তাদের একদিন দিতেই হবে। আরেকটা সত্য হলো- ধর্মীয় মূল্যবোধ না থাকলে টাকা-পয়সাও সংসারে সুখ দিতে পারে না। তাই, ছেলে হোক কি মেয়ে- পছন্দের দিক দিয়ে ধার্মিকতাকে আগ্রাধিকার দিয়ে বাকি শর্তগুলো শিথিল করা উচিত।
এদিকে তালাক প্রসঙ্গ যখন উঠেছেই তাহলে বলতেই হয়- তালাকপ্রাপ্ত মেয়েদের (যারা স্বামীদের অত্যাচারের কারণে তালাক নিতে বাধ্য হয়) বিবাহ আমাদের সমাজে প্রচলিত নয়। একটা বাস্তব উদাহরণ দিয়েই বলি- আমার এক খালাতো বোন। যেমন উচ্চশিক্ষিত, তেমনই রূপবতী। এমনকি ঘরের কাজকর্মেও বেশ পারদর্শী। আপুর বিয়ের দুই কি তিন মাস পর শুনলাম তালাক হয়ে গিয়েছে। কারণ- শ্বশুর বাড়ির ননদ, শাশুড়ি তাকে মারধর করে আর স্বামী বাপের বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসতে বলে, যদিও বিয়েতে যৌতুক দেয়া হয়েছে। মেয়েটি প্রথমে তার পরিবারকে শ্বশুড়বাড়ির ব্যাপারে কিছুই জানায় নি। তবে শেষে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাসায় জানায়। শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে অত্যাচারের মাত্রা বুঝতে আর বাকি রইলো না। শেষে সেই মেয়েটার তালাক হয়। এদিকে তালাক হওয়ার পরে তার অধিকার তথা মোহরানা পর্যন্ত তাকে দেয়া হয় নি। ঘটনাটা কোনো গ্রাম সাইডের নয়, বরং পুরান ঢাকার অভিজাত এলাকা খ্যাত লালবাগে ঘটে যাওয়া। এখন প্রশ্ন হলো সেই মেয়েটার বাকি জীবনের কি হবে? সারাজীবন একাই কেটে যাবে? তার হয়ত অনেক স্বপ্ন ছিলো। ছিলো এক সুন্দর প্রত্যাশার। সেই কল্পিত আনন্দের কি ইতি এখানেই? তাছাড়া আরেকটা জিনিস যেটা না বললেই নয়, তাহলো- যুবতী তালাকপ্রাপ্ত মেয়েদের বিয়ে করতে ছেলেদের সমস্যা না থাকলেও সমস্যা দেখা যায় তার পরিবার থেকেই। বলা হয়- “কি! তুই এক তালাকপ্রাপ্ত মেয়েকে বিয়ে করবি? দেখি তোর বিয়েতে কে থাকে? আমি থাকতে আমার পিওর ছেলেকে এমন মেয়ের কাছে বিয়ে হতে দিবো না”। কোনো মেয়ের যদি বিয়ের একদিন পরেও তালাক হয়ে যায়- তখন সেই মেয়েটা “এমন মেয়ে” হয়ে যায়। এটাই হলো বাস্তবতা। সুতরাং, সমাজে পরিবর্তন আনতে হবে অনেক খাতেই।
যেহেতু বিয়ের আগের শর্ত নিয়ে লেখা শুরু করেছি তাই সে দিকে ফিরে গিয়ে বলতেই হয়- অহেতুক শর্তের বেড়াজালে দুই জীবনকে বেঁধে দিলে বিয়ের পরের জীবনকে আর ‘জীবন’ বলা যাবে না, বরং সেটা জঙ্গল হয়ে যাবে। যেখানে থাকবে না মানসিক প্রশান্তি।
বিষয়: বিয়ের গল্প
২৪৫৬ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবে এ লেখায় শুধু ছেলেদের দোষ তুলে ধরা হয়েছে।অনেক দ্বীনদার ছেলে বেপর্দা আধুনিকা মেয়ে বিয়ে করার কারণে দাম্পত্য জীবনে কলহ দেখা দেয়।
ধন্যবাদ
Thanks for the important piece of writing
কষ্ট পেলাম-এমন অন্যায় দেখে।
ইসলামী মাইন্ডেড মানুষেরা যখন বেইনসাফি করে তখনই কষ্ট লাগে।
কোনো কিছুর লোভে কথাগুলো বলিনি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন