সভ্য নাকি অসভ্যের পাঠশালা?
লিখেছেন লিখেছেন FM97 ১৫ নভেম্বর, ২০১৩, ০৭:১৫:৫৫ সকাল
দেশে কতটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে সেই হিসাব আমাদের কাছে থাকলেও এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরকার সংস্কৃতি বোধ হয় সচেতন মহল জানেন না বা তুচ্ছ মনে করে জেনেও চুপ করে আছেন। সম্প্রতি সাউথ-এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট, ও বিশ্ববিদ্যালয় এর পক্ষ থেকে বৃত্তির তথ্যবলী সম্বলিত পেইজ এর প্রচ্ছদ ছবি দেখে অবাক ও প্রশ্নবিদ্ধ হই। প্রশ্ন হলো- এখানে কি পড়াশুনা করানো হয়, বৃত্তি দেয়া হয় নাকি মেয়েদের স্লিভলেস- শর্ট স্কার্ট পড়িয়ে ফ্যাশন শো এর আয়োজন করা হয়? মেয়ে, ছেলেকে এভাবে জড়িয়ে ধরে পিঠের উপর চড়িয়ে রেখেছে-সেই ছবিটা ওয়ালে এটাচ করার অর্থ কি? এদিকে বিজিএমইএ কর্তৃক পরিচালিত BUFT বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে গিয়ে মেনিকিন পুতুলদের স্বল্প বসনে ছবি এটাচকৃত দেখা যায়। সুতরাং এসব প্রতিষ্ঠান কি পরিমাণ অশ্লীলতার পাঠ দিচ্ছে তা হয়ত অকল্পনীয়। এদিকে সাউথ এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাপাসের ভিতরের অবস্থা জানতে ফোটো গ্যালারিতে গিয়েও দেখা যায়- ক্যাম্পাসে মেয়েদের শর্ট স্কার্ট পরে আড্ডা দেয়ার দৃশ্য।
এদিকে বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে যেমন- ইংরেজি সাহিত্য, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, বিবিএ’র তথ্য সম্বলিত পেইজগুলোতেও সেই একই দৃশ্য। যদিও এসব বিষয়ের সাথে তেমন ড্রেসের কি সম্পর্ক? হ্যা, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এ সুতা বুনা, বস্ত্র তৈরি, রঙ করা, গুণগত মান নির্ণয়, উৎপন্ন দ্রব্যের মার্কেটিং, যন্ত্রের মেরামত ও বিদেশীদের কাছে পণ্যের পাবলিসিটি ইত্যাদি পরিচালনা করার পাশাপাশি সিলেবাসে ফ্যাশন বিষয়ক পড়াশুনার অধ্যায় থাকে। যদিও আমরা দেখি- ফ্যাশনের নামে এমন কিছু শিক্ষা দেয়া হয়- যা এক গর্হিত অপরাধই বলা চলে। আজকাল ফ্যাশন কিংবা ফ্যাশন হাউজে ছেলেদের পাঞ্জাবির সাথে পাগড়ি পরিয়ে দিলেও স্মার্ট, গুড লুকিং কিংবা আধুনিকতার নামে মেয়েদের সুকৌশলে বস্ত্র হরণ চলতে থাকে। যেটাকে সুকৌশলে সমাজে নোংরামী ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমও বলা যায়। আর এসবই কিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর নামে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় থেকে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে? অনেকে হয়ত যুক্তি দেখিয়ে বলতে পারেন- “বিদেশীদের সামনে নিজেদের তৈরি পোশাকের গুণগত মান দেখানোর জন্য ফ্যাশন শো এর আয়োজন করা জরুরি- তা না হলে তারা আমাদের পোশাক নিবে না”। হ্যা, গদবাধা এই সংজ্ঞাটাকেই পরিবর্তন করতে হবে। বিদেশীদের সামনে পোশাক দেখাতে হলে নারী-পুরুষদেরকে পুতুলের মত উপস্থাপন করতে হবে-এটা কোথায় লেখা আছে? হ্যা, বিদেশী শাস্ত্রে যদি লেখা থাকে তবুও তাদের শাস্ত্র মোতাবেক কাজ করলে হবে না, আমাদের কাপড়ের গুণগত মান ভালো হলে তারা নিতে বাধ্য। ক্যাট ওয়ার্ক করে না দেখালে বিদেশী কর্তা যদি নারাজ হন- তাতে হোক। তাদের নজরে মানুষের বিশেষ করে নারীদের সম্মানের গুরুত্ব না থাকলেও আমরা কেনো তাদের পদাংক অনুসরণ করছি? আমাদের দেশ থেকে ব্যবসা করতে হলে আমাদের দেশের সংস্কৃতি মেনে ব্যবসা করতে হবে। হ্যাংগারে আটকিয়েও যদি কাপড় রাখি তখন তারা কাপড়ের কোয়ালিটি দেখে নিবে। আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ, সংস্কৃতি- মেয়েদের ‘বারবি ডোল’ মনে করে না, তাদের সম্মান করে- তাই ইংরেজী সাহিত্য পড়ার সময় ইংরেজ সাজতে হবে, কিংবা বিবিএ পড়তে গিয়ে মেয়েকে ছেলের পোশাক পরে অফিসে যাওয়ার প্র্যাকটিস করতে হবে কিংবা টেক্সটাইল ইঙ্গিনিয়ারিং পড়ার সময় ফ্যাশনের পাঠ নিতে গিয়ে কুসংস্কৃতির চর্চা করবে- তা একটা সভ্য দেশে হতে পারে না। তাই প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা পাল্টাতে হবে।
এদিকে ক্যাম্পাসে পোশাকের শালীনতা নিয়ে কথা বলার আগে বলতে হয়। কয়েক মাস আগে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়- (এনজিও দ্বারা পরিচালিত) মুখে নেকাব দেয়ার কারণে এক মেয়েকে বহিষ্কার করে- যদিও কর্তৃপক্ষের এটা অধিকার নেই যে কারো ধর্মীয় মূল্যবোধ বা ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা। এদিকে মুখে নেকাব দিয়ে চলাটা অন্য কারো জন্য শারীরিক/মানসিক সমস্যার কারণ না হলেও স্লিভলেস, টাইট ফিট শর্ট ড্রেস পরা জামা, ছেলে-মেয়েদের মনোযোগকে শুধু ভিন্ন খাতেই নিয়ে যাবে না বরং সমাজে বিশৃংখলাও ছড়াবে। তাই সরকার ও কর্তৃপক্ষের উচিত- ক্যাম্পাসে ছেলে-মেয়েদের ড্রেসে শালীনতা বজায়ের কথা বলা ও সে দিকে খেয়াল রাখা।
বিষয়: বিবিধ
১২৭৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন