ধন্যবাদ মাননীয় তথ্যমন্ত্রী!

লিখেছেন লিখেছেন FM97 ০১ নভেম্বর, ২০১৩, ১০:৫৬:২৫ সকাল

ধন্যবাদ মাননীয় তথ্যমন্ত্রী। জনগণের জানার অধিকার উপলব্ধি করে আপনি প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর ফোনালাপ প্রচার করেছেন। তবে প্রশ্ন হলো- আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রাহমান আর মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ এর পরিচালক আদিলুর রহমান সাহেবের কি দোষ ছিলো? জনগণের জানার স্বার্থেই যেখানে স্কাইপ কথোপকোথন ফাঁস করা হয় ও হেফাজতের সমাবেশে মধ্যরাতের হামলায় নিহতের সংখ্যা প্রকাশ করা হয়- সেখানে তারা কি অপরাধ করেছেন? যদিও তাদের গ্রেফতারের সময় বলা হয়েছিলো- তারা কিনা জনমনে উসকানি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। আচ্ছা, আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল এর নামে যে আসলেই একটা ষড়যন্ত্র চলছে, আর তার পিছনে যে সরকারি হস্তক্ষেপ রয়েছে -তা কি জনগণের জানার অধিকার নেই? তাড়াহুড়ো করে শুধু জনগণকে একটা বুঝ দেয়ার জন্য যাচ্ছে তাই স্ট্রাকচার বানানো, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) এর নিয়ম লঙ্ঘন, বিচার বিভাগে মন্ত্রীদের দূর্নীতি, মূল যুদ্ধাপরাধী ১৯৫ জন পাকিস্তানীদের শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষমা, আর বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম এর প্রোমোশনের কথা- এগুলো সবই যে স্কাইপ আলোচনায় ফুটে উঠেছে, বিচারব্যবস্থাকে বিতর্কিত করেছে- যে বিচারকার্য পুরো দেশকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষে ভাগ করে দিয়েছে (যদিও আমরা কেউই মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করি না)- সেই বিষয়গুলো কি জনগণের জানার অধিকার নেই? সুতরাং এত কিছুর পরও একটা বিতর্কিত ট্রাইব্যুনালের মুখোশ উম্মোচন করাই কি মাহমুদুর রহমানের ভুল ছিলো? আপনারা এই সত্যের প্রকাশকে শুধু উসকানির নাম দিয়ে ক্ষ্রান্ত হন, নি বরং দেশের কতিপয় তরূন- প্রজন্মের আবেগকে উসকে দিয়ে শাহবাগে জোড়ো হতে বাধ্য করেছেন। যারা ছিলো এতটাই আবেগ আপ্লুত যে, বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচারে ভারতের সহানুভূতি ও নাচানাচির অর্থও বুঝে নি। দিনকে দিন আন্দোলনের অন্তরালে অসামাজিক কার্জকলাপ করে গেছে, নাস্তিকরা যেখানে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে- এসব ‘আমার দেশ’ পত্রিকা বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করলেই দোষ হয়ে যায়? যে ভারত সিমলা চুক্তির মাধ্যমে তাদের কাস্টাডিতে থাকা পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীদের ফেরত দেয় সেই ভারত আজ কাদের বিচারের জন্য ফাঁপা দরদ দেখায়?- এই প্রশ্ন শাহবাগীদের মাথায় আসে না। কারণ তারা মাল খেয়ে টাল হয়ে গেছে।

এদিকে শাহবাগের অপকর্মের বিরুদ্ধে হেফাজত আওয়াজ তুললে, আর তাদের উপর মধ্যরাতে করা হামলার চিত্র ফুটে উঠেলে বন্ধ হয়ে যায়- দিগন্ত টিভি? সেই সাথে ইসলামী টিভি? কেনো? আপনারা হেফাজতীদের কিভাবে খাতির (?) করেছেন তা কি জনগণের জানার অধিকার নেই? নাকি, ‘জানার অধিকারের’ সংজ্ঞাও ক্ষেত্র বিশেষে পরিবর্তন হয়ে যায়?

আরেকটা বিষয় যা না বললেই নয়- তাহল লক্ষ্য করছি- এই সরকারের আমলে মিথ্যাকে বার বার মানুষের সামনে এমন ভাবে উপস্থাপন করা হয়- যেনো সেটাকে জনগণ সত্য মনে করে। এই কাজটা খুব সূচারুরূপে বাস্তবায়ন করছে অধিকাংশ আওয়ামী বান্ধব তথা এক চোখা মিডিয়াগুলো। ‘প্রধানমন্ত্রী ফোন করেছেন’ --এটা বার বার প্রচার করে জনগণের মধ্যে এমন একটা চিন্তা ধরিয়ে দিতে চাইছে- যেন মনে হচ্ছে শেখ হাসিনা ফোন করে সমস্যার সমাধান করে ফেলেছেন। ঠিক আছে, ফোন করে আন্তরিক হওয়ার জন্য উনাকে ধন্যবাদ দিতে হয়, তবে উনি কি কোনো উদ্দ্যোগ বা নির্বাচন নিয়ে কোনো যৌক্তিক ফলাফলে পৌঁছতে পেরেছেন? বরং দুই নেত্রীর ফোনালাপে কাজের কাজ কিছুই হয় নি। এদিকে একটা কথা যেন- আওয়ামী সংগঠনের মুখের বুলি হয়ে উঠেছে, আর যেমনটি আমি আগে বলেছি- সেই ভাবেই তারা বার বার বলে বেড়ায় যে- “বিএনপি ও জামায়াত এই দেশকে পাকিস্তান বানিয়ে ফেলবে”। অতীত ইতিহাস ঘাটলে আওয়ামী নেতারা কিভাবে পাকিস্তানীদের সাথে হাত মিলিয়ে দেশের ভালো মানুষদের হত্যা ও লুট করেছেন তা বেরিয়ে আসবে, তবে আমি চোখের সামনে যা দেখতে পাচ্ছি তাই নিয়ে যদি আলোচনা করি- তাহলে দেখবো- এই সরকার অন্ধ ভারতপ্রেমী আর কথায় কথায় পাকিস্তান শব্দ টেনে নিয়ে জনগণকে উত্তেজিত করতে চায়। অপরদিকে তারা বিরোধীদলগুলোর উপর অপবাদ দিলেও - বিরোধীদলগুলোর মধ্যে পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হওয়ার মতো অলীক মনোভাব কিংবা সেরকম প্রসঙ্গ উঠে আসে না। সুতরাং সরকারের এমন অপপ্রচার কি জনগণকে বোকা বানানোর আরেকটি প্রয়াস নয়? এদিকে ১২০০ মাইল দূরত্বের দুই পাকিস্তান নিয়ে যেখানে অতীতে অনেকেই টিকে থাকার ব্যাপারে সন্দিহান ছিলেন, সেখানে ১৯৭১ এ বিচ্ছিন্ন হওয়া সেই দুই দেশকে (মাঝখানে ভারতকে রেখে) যুক্ত হওয়ার স্বপ্ন দেখা কি অলীক নয়?

সুতরাং, ভুল তথ্য দিয়ে জাতিকে উত্তেজিত করা কখনো উচিত নয়। এদিকে জনগণকে সত্য তথ্য জানাতে গিয়ে যদি মিডিয়া বন্ধ করে দেয়া হয়-সচেতন ব্যক্তিদের গ্রেফতার হতে হয়, তাহলে ফোনালাপ প্রচার করার দায়ে তথ্যমন্ত্রীর বিচার হওয়া উচিত।

বিষয়: বিবিধ

৯৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File