থিউরি ঠিক রেখে প্রাক্টিক্যাল করা উচিত

লিখেছেন লিখেছেন FM97 ০৯ অক্টোবর, ২০১৩, ০৮:৩৬:৪৫ রাত

হিজাব নিয়ে খুব কম লিখি। বলতে গেলে লিখিই না। আসলে আমি মনে করি- প্রত্যেক মুসলিম মেয়ে যদি কু’রআন হাদিস-অর্থসহ পড়ে, তাহলে সে বুঝতে পারবে- তার মূল্যবান জীবনের উদ্দেশ্য কি আর সেই সাথে পর্দার গুরুত্ব কত। এদিকে আপন কারো বেপর্দাভাবে চলা যদি আমাদের কষ্ট দেয়, সেক্ষেত্রে সেই আপনজনকে ইসলামী বই, কিংবা সুন্দর দেখে একটা স্কার্ফ বা ওড়োনা কিংবা স্কার্ফের ক্লিপ তথা ব্রোচ গিফট দেয়া যায়। অবশ্যই সাথে সাথে তার হিদায়াতের জন্য দোয়া করতে হবে। যাই হোক, আলহামদুল্লিলাহ! দিন দিন সমাজে হিজাবী মেয়েদের সংখ্যা বাড়ছে। তাই মার্কেটে স্কার্ফ, বোরকার দোকানের সংখ্যাও বাড়ছে। যদিও আজকাল তথাকথিত Modern হিজাবীদের দেখা যায়, যাদের মূল টার্গেট থাকে শর্ট স্কার্ফ দিয়ে শুধু মাথার চুল ঢাকা। অথচ- আল্লাহ তা’য়ালা বলেন- “তারা যেন নিজেদের চোখকে বাঁচিয়ে রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানসমূহের হিফাজত করে ও নিজেদের সাজ-সজ্জা না দেখায়ঃ কেবল সেই সব জিনিস ছাড়া যা আপনা হতে প্রকাশিত হয়ে পড়ে (মুখ, হাতের কব্জি, পায়ের পাতা) এবং নিজেদের বক্ষদেশের উপর ওড়নার আঁচল ফেলিয়ে রাখে” (সূরা নূর, আয়াতঃ ৩১) অথচ ইদানিং মর্ডান হিজাবের নামে আয়াতের শেষ অংশ তথা বক্ষদেশে ওড়না থাকে না। পর্দা কি শুধু চুলের জন্য? তুর্কী/ ইরানি মেয়েরা কিভাবে পড়ে সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয় বরং আমাদের কাছে কু’রআনের থিউরি আছে, তাহলে প্রাক্টিক্যালে কারচুপি করছি কেনো? এমনও দেখেছি টপস আর প্যান্ট পড়ে মাথায় শর্ট স্কার্ফ দিয়ে হাঁটছে। প্রশ্ন হলো- পর্দার মূল নিয়ম কি মানা হলো? আট-সাট ড্রেস পড়ে বডি স্ট্রাকচার ফুটিয়ে তুললে, ছেলেরা তো তাকাবেই! শর্ট বোরকা পড়ুন কিংবা ফুল হাতার কামিজ পড়ুন কিন্তু টাইস/ল্যাগিংস পড়লে (ইলাস্টিসিটির কারণে যেন পায়ের চামড়ার সাথে লেগে থাকে) সেটা পর্দার মধ্যে পড়ে না। এক্ষেত্রে একটা জিনিস বলে রাখা উচিত মনে করি- অনেকেই হয়ত বলবে-‘পায়ের দিকে কে দেখে? ওসব গোড়ামি নিয়ে থাকলে আনস্মার্ট হয়ে থাকতে হবে। নতুন ফ্যাশন আসছে পড়ছি। সবসময় পড়বো নাকি?”। তাদের ক্ষেত্রে বলতে- দীর্ঘসময় কি আর স্বল্পসময় কি, মানুষ এই পৃথিবীতে কত সময় ধরে থাকবে তারই তো ঠিক নেই। পায়ের দিকে যদি মানুষের দৃষ্টি না যেতো তাহলে সর্বজ্ঞ আল্লাহ তা’য়ালা মেয়েদের হাটু পর্যন্ত কাপড় পড়ার জন্যই বলতেন। আর ফ্যাশনের কথা বললে- লং ফ্রকের সাথে ঢোলা প্যান্ট টাইপ সালওয়ারের ঝোঁক এসেছিলো, এর সাথে চুড়িদার/টাইস/ লেগিংসও চলতো। তো, কে বলেছে- আপনাকে টাইস/ল্যাগিংস কিনতে? আপনি ঢোলা সালওয়ারও বানাতে পারতেন। সেটা আনস্মার্ট লাগতো না। তাছাড়া স্মার্টনেসের সংজ্ঞা আমার কাছে মনে হয় না, যে যেটা মার্কেটে এসেছে- সেটাই পড়ে ফেলা, বরং আমার ব্যক্তিত্বের সাথে যেটা মানাবে- সেই ড্রেসটা স্মার্টলি পড়লেই সুন্দর লাগে। তাছাড়া যেকোনো ফ্যাশনই আসুক না কেনো, আগে নিজের ধর্মীয় নৈতিকতার কথা বিবেচনা করা উচিত। এদিকে আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা মাথায় কাপড়, লম্বা হাতা ড্রেস পড়লেও - নিজেদের সাজ-সজ্জা দেখিয়ে জমকালো ড্রেস পড়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে সমস্যার কিছু দেখেন না। তাদের প্রশ্ন আমি তো হিজাব করেই আছি- ছেলেরা তাকাবে কেনো? তাহলে বলতে হয়- এক অর্থে এসব প্রশ্নের প্রথমাংশ ভুল, শেষাংশ ঠিক আছে। তারা বলছে- আমি তো হিজাব করেই বের হয়েছি”- এই কথার মধ্যে ভুল হলো- আপনি যতই ঢেকে টেকে বের হন- আপনার ড্রেস যদি জমকালো, চোখ ধাঁধানো থাকে, রাস্তায় সবার দৃষ্টি আপনার উপর পড়বেই, কেউ গান গাবে, কেউ টিজ করবে……. ইত্যাদি, ইত্যাদি। আর রইলো ছেলেদের দৃষ্টি সংযত রাখার ব্যাপার। হ্যা, অবশ্যই ছেলেরা আল্লাহ’র বিধান না মানলে- তাদের জবাবদিহি করতে হবে। যেহেতু তাদেরকে নজর সংযত রাখতে বলা হয়েছে। তবে একটা জিনিস আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে এক হাতে তালি বাজে না। তেমনি সমাজ ঠিক করতে হলে ছেলে-মেয়ে উভয়কেই ঠিক করতে হবে। আমরা বিশৃংখল ভাবে চলে- শুধু ছেলেদের দোষারোপ করবো তা হয় না, বরং সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠবে- ছেলেটাকে উসকানি দিলো কে? তাই উসকানির জন্য আমাদেরকে যাতে জবাবদিহিতা করতে না হয় সেই দিকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।

যেহেতু হিজাব নিয়ে কথা উঠেছে- তাই সেটার রেশ ধরে আরেকটা বিষয় উল্লেখ করলে মন্দ হয় না। খুব খারাপ লাগে যখন দেখি- মেয়েটা বেশ পর্দা করে চলে, অথচ নামাজ সম্পর্কে উদাসীন। যদিও কাফির আর মুসলমানদের মধ্যে নামাজই হচ্ছে পার্থক্যকারী ইবাদত। তাছাড়া ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে নামাজ একটি। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ‘উমর রাঃ হতে বর্ণিত তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর স্থাপিত ১/ এই সাক্ষ্য দেয়া যে আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাঃ আল্লাহ’র রাসূল ২/ নামাজ কায়েম করা, ৩/ যাকাত দেয়া, ৪/ রমজানের রোজা রাখা, ৫/ হজ করা। (বুখারী, মুসলিম)। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি- আমার এক ফ্রেন্ডকে (সে, পর্দা করে চলে) প্রায় একবছর যাবত নামাজের কথা বলছি- অথচ সে পড়ে না। কলেজে নামাজের সময় হয়ে গেলেও বলে- বাড়ীতে গিয়ে পড়বো, কিন্তু তা আর হয় না, কারণ তার বাড়ী এত দূর যে, যেতে যেতেই নামাজের টাইম শেষ। আমরা জানি- নামাজ-পর্দা দুটোই ফরজ ইবাদত। তাহলে নামাজের বেলায় আলসামী, গড়িমসি কেনো? পর্দাটা যেহেতু লোকে দেখে, সেই কারণে? আর নামাজটা গোপনে থাকে এই কারণে? তাহলে কি লোক দেখানো ইবাদতের দিকেই কি আমরা ঝুঁকে পড়ছি? যাতে লোকেরা আমাদের ভালো বলে?- অথচ আমাদের অন্তর ঠিক নেই! যে ফরজটা সহজে সবার সামনে প্রকাশ পায় সেটাকে মেনে নিয়েছি, আর যেই ফরজ আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে, খারাপ চিন্তা- কাজকর্ম থেকে বিরত রাখে তাকেই ছেড়ে দিচ্ছি? তাহলে আমাদের অন্তর কি করে ঠিক হবে? “নিঃসন্দেহে নামাজ অশ্লীল ও খারাপ কাজ হতে বিরত রাখে” (সূরা আনকাবুত, আয়াতঃ ৪৫) যদি আল্লাহর আদেশে পর্দা করছি, তাহলে সেই আল্লাহ’র আদেশে নামাজ পড়তে টালবাহানা কেনো? এখন তো প্রায় সব মার্কেটেই নামাজের আলাদা জায়গা রয়েছে। আর যদি জায়গা নাও থাকে, তাতে কি? বাংলাদেশে কি মসজিদের কমতি আছে? নামাজ কঠিন ইবাদত তাদের জন্য যারা আল্লাহ’র প্রতি অনুগত নয়। “এবং তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। অবশ্যই তা কঠিন কিন্তু বিনীতগণের জন্যে নয়। যারা ধারণা করে যে নিশ্চয় তারা তাদের প্রতিপালকের সাথে মিলিত হবে এবং তারা তারই দিকে প্রতিগমন করবে।“ (সুরা বাকারাহঃ ৪৫, ৪৬)

সুতরাং- যেটা সহজে প্রকাশ পায়, শুধু সেই ইবাদত করলে হবে না। বরং বাহ্যিক- অভ্যন্তরীণ দুই দিক দিয়ে আমাদের ভালো হতে হবে। আর বাহ্যিক ইবাদত তথা হিজাব করার সময় অবশ্যই আমাদের থিউরি ঠিক রেখে প্রাক্টিক্যাল করতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

১৬২৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File