বিজিএমইএ নেতাদের কুকীর্তি, ঢাল হিসাবে শ্রমিক, নেপথ্যে সরকার
লিখেছেন লিখেছেন FM97 ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৪:২৪:১৯ বিকাল
পোশাক শিল্পের রপ্তানীর সাথে জড়িত কতকগুলো শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর সাথে তুলনা করলেই বাংলাদেশের শ্রমিকদের আর্থিক অবস্থার করূণ চিত্র ফুটে উঠে। এটা সত্য যে, সস্তা শ্রমমূল্যের কারণে বেশ কয়েকটি আমেরিকান কোম্পানী চীন-ভারতে না গিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে। কিন্তু এই বিনিয়োগ ও রপ্তানী আয়ের প্রবৃদ্ধির কতটাই বা শ্রমিকরা ভোগ করছে? বরঞ্চ আয়ের অধিকাংশ ভোগকারী এই বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতারা দিন দিন আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছেন। ১৮ই জুলাই’১৩ প্রকাশিত এক রিপোর্ট থেকে এসব নেতাদের হালচিত্র হুবহু তুলে ধরছি- “অভিযোগ রয়েছে- “বিজিএমইএ-বিকেএমইএ’র বেশির ভাগ নেতারা অবৈধ আয়-রোজগারের সাথে সম্পৃক্ত। ফলে ঘন ঘন বিদেশ-ভ্রমণ, শ্রমিকের ঘামে অর্জিত টাকায় অমোদ-ফূর্তি করা, প্রতিবছর নতুন নতুন কারখানা করা, কাঁচামাল আমদানীর নামে বিদেশে অর্থ পাচারসহ অসংখ্য অপরাধের সাথে তারা যুক্ত হন। বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ, বিনোদনের নামে বায়ারদের অনৈতিক সুবিধা প্রদান, বাটেক্সপো আয়োজনের নামে প্রতি বছর ভারতীয় নর্তকীদের এনে আশ্লীলতা ছাড়ানোসহ নেতিবাচক কাজের সাথে যুক্ত এসব নেতারা”। এই যখন তাদের হাল-চিত্র তখন মাত্র ৬০০ টাকা বেতন বাড়ানোর কথা কি শ্রমিকদের জীবনের সাথে করূণ উপহাস নয়? শ্রমিকরা বলছে ৩০০০টাকা থেকে সরাসরি ৮০০০টাকা করতে (যদিও এখানে অনেক উসকানী কাজ করছে, লেখার মধ্যাংশে বর্ণনা করা হলো)। তবে আমার কথা হলো- ৮০০০ না হয় করা না গেলেও নেতাদের বলা ৬০০ এর সাথে কি একটা শুন্য ‘০’ লাগানো যেতো না? কিছু কিছু শিল্প মালিকেরা পুরোপুরি ৮০০০টাকা দাবি না মানলেও তারা বেতন বাড়ানোর পক্ষে। তবে আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে- সম্ভবত বিজিএমইএ-বিকেএমইএ- নেতাদের চাপেই তারা শ্রমিকদের দাবি বিবেচনা করতে পারছেন না। কারণ- “ প্রত্যেক কারখানা মালিকই কোনো না কোনো নেতার আশ্রয়ে থাকেন। আর যারাই তাদের বশ্যতা স্বীকারে আপত্তি করেন তাদের ওপর নেমে আসে রাজ্যের খরগ। কথায় কথায় সমিতি থেকে বহিষ্কার, এমনকি পুলিশ ও স্থানীয় রাজনৈতিক মাস্তানদের দিয়ে হয়রানির কাজটিও করেন এক শ্রেণীর নেতা। এদিকে, সাধারণ শিল্প নেতাদের অভিযোগ, প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় করলেও সাধারণ মালিকদের স্বার্থে বিজিএমইএ-বিকেএমইএ কেনো কাজ করে না। বরং বিরোধ মিমাংসার নামে সংক্ষুব্ধ উভয় পক্ষের কাছ থেকে বখরা আদায়েই ব্যস্ত থাকেন সংগঠনের নেতারা। এমনকি কারখানায় আগুন লাগা, শ্রমিক অসন্তোষ, শুল্ক বিভাগের হয়রানিসহ নানা বিষয়ে বিজিএমইএ’র কাছে যাওয়া মানেই অযথা বিপদ ডেকে আনা”।
সুতরাং সাম্প্রতিক সংঘর্ষে সাধারণ উদ্যোক্তাদের, চাপের মুখে চুপ থাকার এটাও একটা কারণ হতে পারে। এদিকে টানা চারদিন ব্যাপি চলমান সহিংসতা-ভংচুড়কে দেশী-বিদেশী চক্রান্তের ফলাফল বলা হলেও কোনো তদন্ত্র নেই। তবে সম্প্রতি দেখা গেছে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এর নেতৃত্বে গার্মেন্ট শ্রমিকদের মহাসমাবেশ হওয়ার পর থেকেই শ্রমিকদের বিক্ষোভ- আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নিয়েছে (যদিও জানা যায়-বেশির ভাগ শ্রমিকই এসব জ্বালাও-পোড়াও পছন্দ করেন না, তারা আলোচনার সাপেক্ষে বেতন বাড়ানোর পক্ষে)। তাই বলতেই হয়- সামনে শ্রমিকদের রেখে উসকানী দিয়ে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের দাবি আদায়ের যে সংগ্রাম চলছে, তাতে নিশ্চয়ই রাজনৈতিক নেতাদের ভাগ-বাটোয়ারা রয়েছে। আর এটাই অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে যে- ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে অসৎ নেতাদের লুটে-পুটে খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। আর এখন হয়ত রপ্তানী খাতে সর্বোচ্চ অবদান রাখা এই খাতের ওপর তেমনই কুনজর পড়েছে। শাজাহান খান সাহেবের ক্ষেত্রে সেরকম কিছু হচ্ছে কিনা তা তদন্ত্রের দাবি রাখে। এদিকে বিদ্যমান ভংচুড় ও সহিংসতার জন্য শ্রমিকদের গ্রেফতার না করে মূল হোতা তথা রাজনৈতিক নেতাসহ বিজিএমইএ নেতাদের গ্রেফতার করলেই হয়ত রহস্য বের হয়ে যাবে।
হাদিসে যেখানে ঘাম শুকানোর আগে শ্রমিকদের টাকা পরিশোধের বিধান রয়েছে সেখানে এই দেশের পোশাক শ্রমিকদের মাসের পর মাস মজুরি বকেয়া রাখা হয়, চাকরি ছেড়ে গেলে সে টাকা জীবনেও তারা পায় না। সুতরাং শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ থাকা স্বাভাবিক আর এজন্যই উসকানী দিলেই তারা উঠলে উঠে। আফসোস, এ দেশে সুষ্ঠ তদন্ত্র কোনো কিছুরই হয় না আর হয়ত বর্তমান সহিংসতার তদন্ত্রও হবে না, এটা ধরে নিয়েই বলছি- অন্তত দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ণের স্বার্থে অনির্দিষ্ট কালের জন্য কারখানা বন্ধ না রেখে, ৮০০০টাকা না হয়- অন্তত বর্তমান বাজার দর বিবেচনা পূর্বক তাদের বেতন বৃদ্ধি করে শমিকদের কাজে ফিরিয়ে আনা হোক।
বিষয়: বিবিধ
১৩০৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন