ইডেন কলেজে মূর্তি নির্মাণ হচ্ছে!

লিখেছেন লিখেছেন FM97 ২১ আগস্ট, ২০১৩, ০৬:২৮:২৬ সন্ধ্যা



চাপা ক্ষোভ সবার মধ্যেই। প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাস করলেই তারা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কেউ এক গাল হেসে বলছেন-“ কাজটা হলেই তো দেখবেন”? কেউ বলছেন-“না,........ মানে......, মুক্তিযোদ্ধা রিলেটেড, তিন জনের ছবি এই আর কি......., ঐ যে টিএসসিতে দেখেন না? সেরকম কিছু........”। আবার এমনও শোনা যাচ্ছে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের নারী মুক্তিযোদ্ধা, মৃত্যু ১৯৩২) ভাস্কর্য হবে। কিন্তু কোথায় যেনো ফাঁকফোকর। কেউ নিশ্চিত না। আর জানলেও বলতে চাচ্ছেন না। হবে হয়ত কারো স্মরণে ভাস্কর্য বা মূর্তি। কিন্তু কার? উলেখ্য ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজের মেইন গেট সংলগ্ন বাগান- যেখানে নাম না জানা হরেক রকমের ফুলের গাছ, সে বাগানেরই মাঝখানের জায়গা ব্লক করে প্রশাসনের লাখ লাখ টাকা খরচে নির্মাণ করা হচ্ছে কারো ভাস্কর্য। কাজের অর্ধেকটা প্রায় শেষ। উপরের নির্মাণাধীন অংশ দেখে মনে হচ্ছে কোনো ব্যক্তির মূর্তি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের এক কর্মকর্তা চাপা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করে, কলেজের গেটের চারপাশে টাঙ্গানো আওয়ামী ব্যানার, পোষ্টার দেখিয়ে বলেন- “চারপাশে যাদেরকে দেখছেন, তাদেরই জিনিস হবে, আর কি”? (কিছুক্ষণ থেমে) এখানে দুইটা মূর্তি হবে, একটা মুজিবের আরেকটা হইতে পারে শেখ হাসিনার। কিন্তু কলেজে কি আর করার মত কিছু নাই, যে লাখ লাখ টাকা খরচে এটা নির্মাণ করতে হবে? এত বড় মেয়েদের কলেজ, আজও এইটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা পায় নি। স্টাফদের বেতন আটকিয়ে রেখেছে, তাদের ও শিক্ষকদের থাকার সুব্যবস্থা নাই, হোস্টেলে কল নষ্ট, বাতি নষ্ট, পানি নাই-মেয়েরা অভিযোগ করে- অথচ সেই দিকে কারো নজর নাই। আমরা তো সরকারি চাকরি করি, তাই কিছু বলতে পারি না। প্রতিবাদ করলে সরাসরি ট্রান্সফার। ফলে লাভ আর কিছু হবে না। এখানে পড়তে আসা প্রত্যকটা মেয়ের পিছনে তার মা-বাবার কষ্ট, স্বপ্ন কাজ করে- যে, তার মেয়ে পড়াশুনা করে বড় হবে। কিন্তু এখানে এসে যদি সেই মেয়েটা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়- তবে কি তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে? তাই, কলেজে এত সমস্যা থাকতে এটা নির্মাণ কি দরকার ছিলো”? এদিকে ভাস্কর্যটির নির্মাণের ইতিকথা জানিয়ে তিনি বলেন- “এটা নির্মাণের বিল পাস হয় আগের অধ্যক্ষ মাহফুজা ম্যাডামের সময়ই । আর নির্মাণ হচ্ছে বর্তমান অধ্যক্ষ রওশন ম্যাডামের সময় (উল্লেখ্য, সরকারের আমলে আসা পর পর দুটি অধ্যক্ষই আওয়ামী পন্থি)। আর আপনি তো জানেনই এটা যেন নিয়মই হয়ে গেছে যে, যখন যে সরকার তখন দেশের সব প্রশাসনের উঁচু পর্যায়ে সেই দলেরই লোক। যেমনটি আপনি জানেন, এই সরকার প্রশাসনে কি ব্যাপক হারে রদবদল করছে, ওএসডি করে রাখছে। আর এখানেও তার ব্যতিক্রম নেই। এ কলেজে কিছু সরকারী আমলা আছে, যাদের পরিকল্পনায় এই ভাস্কর্যের কাজ হচ্ছে। এসব আমলার আগে কারো চলে না। সব কিছু তো আমরা চোখের সামনে দেখছি, কিন্তু চুপ। বলার তো কিছুই নেই। চাকরি চলে যাওয়ার ভয়”। সুতরাং এবার পরিষ্কার যে, ইডেন কলেজে কি হতে যাচ্ছে। এদিকে বলে রাখা ভালো যে, ইডেন কলেজে কখনো কারো মূর্তি নির্মান করা হয় নি, কিন্তু এবার তা করার আয়োজন চলছে।



কথায় আছে- “বাইরে ফিটফাট, ভিতরে সদরঘাট”। ইডেন কলেজের অবস্থা হলো সে রকম। বর্তমান সরকারের আমলে আসা পর পর দুটি অধ্যক্ষই কলেজের বিশাল বিশাল সমস্যা রেখে উপরি সৌন্দর্য বর্ধনে লেগেছেন। কলেজের প্রধান তিনটি গেটকে আলিশানভাবে নির্মাণ করা হয়েছে, আর এখনো চলছে। অথচ- ভিতরে পড়াশুনার মানের উন্নয়ণ নেই। পারলে দিন দিন আরো খারাপ হচ্ছে। কাউকে এই কলেজে ভর্তি হওয়ার তাই ব্যক্তিগত ভাবে আমি পরামর্শ দেই না। এটা ঠিক, সুন্দর জিনিস সবাই পছন্দ করে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের দ্বায়িত্ব কি শুধু বাইরের সৌন্দর্য বর্ধন? গবেষনাগারে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই, থিসিস করার সুযোগ নেই, একটা যন্ত্রের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়া। এদিকে লাইব্রেরীতে নেই পর্যাপ্ত বই। সেখানকার কর্মকর্তারা এতটাই অশিক্ষিত যে, ইংলিশ লেখকদের নাম বললে বলে- ‘বুঝি না, লেইখা দেন’। লিখে দিলে- একটু পরে এসে বলে- “আপা, এই বই নাই”। এটা শুধু এক ডিপার্টমেন্টের অবস্থা নয়, বরং সব ডিপার্টমেন্টের। শুধু ইংলিশ লেখক বলে নয় বাংলা লেখকসহ প্রয়োজনীয় অনেক বই নেই। অথচ প্রশাসনের সেই দিকে নজর নেই। এদিকে কলেজের সবচেয়ে বড় সো-পিস হচ্ছে নতুন হোস্টেল। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার প্রায় দুই বছর হয়ে যাচ্ছে- অথচ তা শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেয়া হচ্ছে না। প্রায়ই হোস্টেল খুলে দেয়ার জন্য আন্দোলন হয়- কিন্তু প্রশাসন তাদের আশ্বস্ত করে থামিয়ে দেয়। ফলে ভোগান্তি হয় ঢাকার বাইরে থেকে আসা শিক্ষার্থীদের। আরো আশ্চর্যের বিষয় হলো- ১৯৯৯ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত পাস হওয়া শিক্ষার্থীদের তাদের আসল সার্টিফিকেট দেয়া হয় নি। সবাইকে প্রোভিশনাল সার্টিফিকেট দিয়ে বিদায় দেয়া হচ্ছে। আসলটা কবে আসবে- সেটা জিজ্ঞাস করলে বলা হয়- ‘সেটা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে জিজ্ঞাস করো’। তবে এটা জিজ্ঞাস করে ছাত্রীদের দেয়ার দ্বায়িত্ব কাদের? এই যখন কলেজের অবস্থা তখন উপরি হাবভাব লাগিয়ে কি লাভ? শুধু কি কিছু আমলাদের পকেট গরম? কলেজের টয়লেটের নোংরা অবস্থা, হোস্টেলের বাতি, পানির টেপ নষ্ট, থাকার সমস্যা - ইত্যাদি সমস্যা লেগেই আছে-অথচ সেসব ঠিক করার নাম নেই। দীর্ঘ দিন ধরে কলেজের মান উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি ওঠানো হচ্ছে- কিন্তু তাও হচ্ছে না। এদিকে অবিবেচক আমলারা ক্ষমতার অপব্যবহারে মগ্ন। সে সব আমলাদের এসব দিকে নজর নেই।

এদিকে কলেজে যেনো একটা প্রতিহিংসার বীজ ইতোমধ্যে বপন হয়ে গেছে। প্রতিহিংসা বললাম এই কারণে যে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উনার মরহুম পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সম্বলিত নোটই (১,২ নোট বাদে) শুধু ছাপানই নি, বরং কয়েক দফা নোটের চেহারা পরিবর্তন করে সরকারি টাকা উড়িয়েছেন। চীন মৈত্রী সম্মেলন (যেটা নির্মাণে চীনের অবদান ছিলো) নাম কেটে বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্র করেছেন, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ রাস্তায় সরকারি খরচে টাইলস লাগিয়ে উনার ছবি টাঙ্গানো, প্রশাসনিক সব জায়গায় উনার ছবি টাঙ্গানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে- তাহলে কি ধরে নেবো যে, বিশ্ববিদ্যালয়কেও এমন ভাষ্কর্য নির্মাণে বাধ্য করা হচ্ছে? এদিকে প্রাক্তন ইডেন কলেজের ছাত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেহেতু সব জায়গায় উনার পিতার ছবি দেখতে চান- এই কারণেই কি উনার নিয়োজিত আমলারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগার থেকে লাখ লাখ টাকা খরচে এই ভাস্কর্য নির্মাণ করছে? তাদের ভাষ্য মতে হয়ত, ‘হোক শিক্ষার্থীদের ক্ষতি, কর্মকর্তাদের ভোগান্তি- তাতে কি? সবখানে বঙ্গবন্ধুর মূর্তি চাই’।

তবে প্রশ্ন হলো- বাংলাদেশ হওয়ার পিছনে কি শুধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ছিলো?’ ১৯৪৭ এ ভারত-পাকিস্তান ভাগ না হলে হয়ত এ স্বাধীনতা আমরা পেতাম না। কিন্তু তার পিছনে যার অবদান বেশি তিনি হলেন শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক-যিনি ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাব দেন। যাতে পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্রের কথা বলা হয়। কিন্তু কোথায়? উনার কথা তো এ দেশের ইতিহাসে তেমন স্থান পায় না! এদিকে মাওলানা ভাষানী, এ বাংলার শিক্ষার দিক্ষার সাথে জড়িত নবাব সলীমুল্লাহ (যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি দান করে গেছেন), নবাব আহসানুল্লাহ (যিনি বুয়েটের জন্য জমি দান করেছেন)- এদের ইতিহাস আমাদের জানানো হয় না। তাছাড়া মেজর জিয়া-যিনি জাতীয় সংকট মুহূর্তে জাতীয় স্বার্থে সবাইকে এক করে ছিলেন- তারও তো অবদান আছে। আমরা মরহুম মুজিবুর রহমানের অবদান অস্বীকার করতে পারি না, কিন্তু তাই বলে- আরো অন্যান্যদের অবদান ইতিহাস থেকে মুঝে দিলে তাদের অবদানের সাথে বেঈমানী করা হবে আর জাতিকে ভুল শিক্ষা দেয়া হবে। তাই কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শুধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে প্রতিহিংসার বীজ বপন করা হচ্ছে। যে হিংসায় বশীভূত হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলগুলোকে দেখতে পারেন না। এদিকে যদি প্রীতিলতার মূর্তিও যদি নির্মিত হয় তবে বলবো- তিনি ভারতের স্বাধীনতার জন্য তথা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন করেছিলেন। ওনাকে অনেকে ‘প্রথম বিপ্লবী মহিলা শহীদ’ও বলে থাকে। যদিও ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়-উনি ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে থাকলেও আমরা উনাকে শহীদ বলতে পারছি না, কারণ তিনি শত্রুর সাথে লড়াই করে মারা যাননি বরং পাহাড়তলী ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ শেষে পুলিশের হাতে ধরা খাওয়ার ভয়ে পূর্বপরিকল্পনা মাফিক সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। তাহলে একজন আত্মহত্যাকারীর কাছ থেকে কি শিখার আছে? এদিকে কারো মূর্তি বানালে অবদানের স্বীকৃতি দেয়া হয় না- সেটা টিএসসির মতো মুক্তিযোদ্ধাদের মূর্তি নির্মাণ করে হোক কিংবা শেখ মুজিব বা প্রীতিলতার মূর্তি বানিয়েই হোক। প্রকৃত মূল্যায়ণ হয় সেই মহান নেতাদের, সাধারণ মানুষদের যারা জীবন দিয়েছেন- তাদের অসমাপ্ত স্বপ্নকে বাস্তবায়নে।

লক্ষ্যণীয়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে মসজিদের শহর ঢাকাকে মূর্তির শহর বানানোর চেষ্টা করছে-যেটা এদেশের মূল্যবোধ ও ধর্মের সাথে যায় না। নির্জীব মূর্তিতে বিশ্বাসের কারণে সুষ্ঠ ধারণা নিয়ে যখন ইসলামের আবির্ভাব হয়েছে- আজ তাহলে কি সেই ধর্মকেই অবমাননা করা হচ্ছে? ছোটবেলা থেকেই শুনেছি, পড়েছি, যে ঘরে মূর্তি থাকে সেখানে রহমতের ফেরেশতা আসে না। তাহলে কি ইডেন কলেজের প্রাঙ্গণ থেকে ফেরেশতাদের বিদায় দেয়ার আয়োজন চলছে?

এটা ঠিক- প্রতিহিংসা, অন্যায়মূলক কর্মকান্ডের ফল বেশি দিন টেকে নি- এগুলোও ইনশাআল্লাহ টিকবে না। তাই, কলেজ প্রশাসনের উচিত প্রশাসনের লাখ লাখ টাকা অপব্যয় না করে বাগানের সৌন্দর্য ফিরিয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীদের থাকার, পড়াশুনার মান উন্নয়ণ করার- যাতে ইডেন কলেজ তার হারানো মর্যাদা ফিরে পায়।

বিষয়: বিবিধ

২০০৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File