“স্বাধীনতা বিরোধীরা ক্ষমতায় কেনো”?- একটি পর্যালোচনা-সহজ হিসাব

লিখেছেন লিখেছেন FM97 ০৪ আগস্ট, ২০১৩, ০৩:৩১:৩৫ দুপুর



‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’-দলটি যত না আলোচিত ছিলো, বর্তমান সরকার এই দলটিকে ততটাই আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত করেছে। সেটা ‘যুদ্ধাপরাধী’, ‘স্বাধীনতাবিরোধী’- আখ্যায়িত করে কিংবা সবশেষে দলটিকে অবৈধ ঘোষণা করেই হোক না কেনো। বিগত পাঁচ বছরে জামায়াতের প্রথম সারির নেতাদের স্বাধীনতাবিরোধী (যদিও আগে তাদেরকে এমনটি বলা হত না) বলায় অনেকেরই মতে- “যারা বাংলাদেশই চায় নি, তাদের এদেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই, তাদের তো নাগরিকত্ব বাতিল হয়ে যাওয়া উচিত”। আজকের আর্টিক্যালটি মূলত এই বিষয়টির ওপর এবং এ ক্ষেত্রে একান্ত এক মতামত শেয়ার করছি।

প্রথমত, যারা জামায়াতের নেতাদের স্বাধীনতাবিরোধী বলেন- তাদেরকে বলবো-হ্যা, এটা আমরা সবাই জানি তারা অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো। যদিও তাদের স্বাধীনতাবিরোধী বলার আগে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতাবিরোধী বললে ভূল হবে না। সে সময়কার বিশিষ্টজন, সাংবাদিক, কলামিষ্ট-প্রায়ই সবাই বলেন শেখ মুজিবুর রহমানের রহস্যময় চরিত্রের কথা। ২৫ মার্চের রাতে এদেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বর হামলা চলাকালীন শেখ মুজিবুর রহমান কারো অপেক্ষায় ছিলেন। সেটা উনার স্ত্রী স্বয়ং ফজিলাতুন্নেসাই বলেছেন। তাজউদ্দিন আহমদ উনার কাছ থেকে স্বাধীনতার একটা ঘোষণা চেয়েছিলেন- কিন্তু তিনি এটাকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ মনে করে পূর্ববাংলা ত্যাগ করার পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত বলে যান নি। অনেকে উনার “এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” বক্তব্যটি বাজিয়ে শোনালেও মূলত এটা উনার বক্তব্যের শেষাংশ। কারণ তিনি নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর, সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার আহ্বানসহ কয়েকটি দফা উল্লেখ করে বলেন- ‘আর যদি তা না মানা হয় তবে এবারে সংগ্রাম......। এদিকে তিনি যখন মুক্ত হয়ে লন্ডন হয়ে বাংলাদেশে আসছিলেন, তখন হিথ্রো বিমানবন্দরে দেশ স্বাধীনের খবর পেয়ে, রেডিমেড ক্ষমতার সর্বোচ্চ আসন পেয়ে যান। সুতরাং বলা যায়- এদেশের প্রথম স্বাধীনতাবিরোধী শেখ মুজিবুর রহমান-যিনি এদেশে রাজনীতি করেছেন। কিন্তু এখন এসব বিষয় খোদ কট্টোরপন্থি আওয়ামী লীগ স্বীকার করবে না। করতে চাইবে না। আর যেহেতু তিনি ইন্তিকাল করেছেন- তাই সে ব্যাপারে আর কিছু বললাম না- শুধু যুক্তির খাতিরে ইতিহাসটি বললাম।

রইল এবার জামায়াতের নেতাদের কথা। জামায়াতের গুটিকয়েক নেতা যারা সেসময় স্বাধীনতা সমর্থন করেননি, আমার প্রশ্ন হলো- তাদের জন্য পুরো জামায়াতকে কিভাবে আমরা স্বাধীনতাবিরোধী বলতে পারি? যেকোনো সিদ্ধান্তে আসার আগে যেহেতু যুক্তির আলোকে প্রস্তাব দিতে হয়, তাই আমি বলবো বর্তমানে জামায়াতের মধ্যে নিজামী, মুজাহিদ ছাড়াও অনেক নেতা আছেন, যাদের বয়স এখন ৫০-৫৫ হবে। যারা স্বাধীনতার সময় পক্ষের শক্তি, বিপক্ষের শক্তিকে সমর্থন করা, সিদ্ধান্ত নেয়া কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণের মত তাদের বয়স ছিলো না। তাই আমি মনে করি- পুরো দলকে স্বাধীনতাবিরোধী না বলে, যারা অভিযুক্ত তাদেরই উচিত দেশের স্বার্থে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানো- যাতে অন্তত তাদের কারণে অন্যের ওপর, দলের ওপর দোষ না আসে। এটা সত্য নিজামী- মুজাহিদরা মন্ত্রী থাকাকালীন তাদের বিরুদ্ধে কেউ দূর্নীতির অভিযোগ তুলতে পারে নি, আর সেই যুক্তি দিয়ে জামায়াত সমর্থক অনেকেই হয়ত বললে পারেন- ‘যারা দেশের কল্যাণে কাজ করে গেছেন, যাদের বিরুদ্ধে আদালত প্রমাণ পেশ করতে ব্যর্থ হচ্ছে- আপনি তাদেরকে সরে যেতে বলছেন’? যারা এমনটি বলেন- তাদেরকে বলবো- ‘আচ্ছা, নিজামীরা সরে গেলে কি এদেশে ইসলাম কায়েম হবে না? আমরা যারা জানি ইসলাম শান্তির ধর্ম, মুক্তির ধর্ম, যে ধর্ম- সকল ধর্মের মানুষদের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করে, ন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত ও অন্যায়কে প্রতিহত করতে বলে- সেটা কি এদেশের মাটিকে স্পর্শ করবে না’? বরং আমি তো বলবো তাদের এই বিশ্বাসে সরে যাওয়া উচিত যে, ‘আমাদের কারণে যদি বিতর্কের সৃষ্টি হচ্ছে, তাহলে আমরাই সরে যাই’।

এদিকে মজার ব্যাপার হলো জামায়াত আপাতত অবৈধ হয়েছে, আশা করা যায়- এই দলটি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে দেয়া হবে। এতে জামায়াতের নামটি হয়ত বাংলাদেশের ইতিহাসেই রয়ে যাবে। জরুরী নয় যে, ‘জামায়াত’ নাম দিয়েই ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আর এটাও সত্য যে, দেশের অনেকেই জামায়াতপন্থি না হলেও তারা রাষ্ট্রে ইসলামের সৌন্দর্যকে দেখতে চায়, ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আসতে চায়। তাই সময় এসেছে অনুকূলে, তাদের জন্য যারা উপলব্ধি করছেন মুসলিম ঐক্যের। তাই আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান বলে- বাস্তবতা বিবেচনা করে জামায়াতের ১ম সারির অভিযুক্ত নেতাদের সরে যাওয়া উচিত এবং সব মুসলমানদের ঐক্যের পথে কাজ করা উচিত।

বিষয়: বিবিধ

১২০৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File