আজকের এই লেখাটি আমি উৎসর্গ করছি আমার প্রাণ প্রিয়তমাকে বৃষ্টি নামের মেয়েটিকে….

লিখেছেন লিখেছেন মিথ্যা জবানবন্দি ১৫ এপ্রিল, ২০১৩, ০৬:২৫:১৫ সন্ধ্যা

এক সত্যপ্রেমিকের মিথ্যাজবানবন্দি….

বৃষ্টি ..বৃষ্টি.. বৃষ্টি…….যাকে আমি সত্যিকার অর্থে মন থেকে অনেক ভালবাসি, যাকে আমি প্রেমিকা কিংবা সাগরিকা অথবা মায়াবিনীর দৃষ্টিতে কখনো দেখিনাই আজো দেখিনা। শুধু তাকে দেখেছি আমার একমাত্র সঙ্গী আর ভালবাসার স্বর্গ হিসেবে। যার স্থানটা আমার হৃদয়ের গহীনে। সে কি জানে কি জানে না কিংবা বুঝে কি বুঝে না তাও আমি জানিনা।

গত ছয় থেকে সাত মাস আগে আমি আমার বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঁটায় তলা নামে একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে বাদাম খাচ্ছি, সাথে আমার চার বন্ধু যাদের ছাড়া আমি এক মুহুর্তও অন্য কারো সাথে চলি না। জীবনে কোনো মেয়েকে তো ভালবাসা দূরের কথা একটু চোখ ইশারাও করেনি। জীবনের গতিতে জীবন সংগ্রামের নেশায় আমাকে ছুটতে হয়েছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চমহল পর্যন্ত। তাই মেয়েলি বিষয়টি চিন্তা মাথায় আসেনি। তবে মজা পেতাম বেশি প্রেমিক প্রেমিকার রোমাঞ্চকর দৃশ্য দেখে। বিশেষে করে যদি দেখতাম কোনো ছেলে তার প্রেমিকার হাতে হাত রেখে ঘুরে বেড়াচ্ছে তখন মনে মনে বলতাম মানতে হবে ব্যাটা তোর সাহস আছে। আসলেই তুই একটা হিরো। তবে অন্য কারো হাতে নিজের হাত সেটা কখনো মাথায় আসেনি কিংবা কামনাও জাগেনি মনে।

দিনটি ছিল সমবার, ঠিক দুপুর ১২.৩০ মিনিট আমরা চার বন্ধু নিজেরা নিজেদের চাকরি বাকরির কাজ কর্ম নিয়ে দুষ্টমি আর ঠাট্টা করছি। ঠিক তখনি বাতাসে ভেসে কানে আসে একটি মিষ্টি হাসির কণ্ঠ। হাতের বা দিকে ফিরতে না ফিরতে দেখি হাসির বাকসো তো আমাদের পাশ ঘেষে যাচ্ছে! চোখ পড়তেই দেখি তিনটি মেয়ে কি যেন কি নিয়ে হাসছে? তবে যার হাসিটা উচ্চস্বরে আমার কানে বাধছিল মানতেই হবে সে চমতকার হাসতে পারে। যেমন সুন্দর মুখের হাসি তেমন সুন্দর তার চলনভঙ্গি। পিছনে একটি ছেলে আসছে আমি যাকে আমি ফাস্ট ইয়ারে ভর্তি হওয়ার পর থেকে সুন্দরি বলে ডাকতাম। আজো তাকে সুন্দরী বলে ডাক দিলাম। আরে অর্ণব কেমন আছস? কি ব্যাপার কি হয়েছে ক্যাম্পাসে তো এখন আর দেখা ই যায়না। কোথায় থাকছ ইত্যাদি প্রশ্নগুলোর জবাব আমি দেওয়ার আগেই সরোজ এককথায় বলে দিল আরে দাদা প্রডিউসার বলে কথা। মানে কি? তুই তো আস্ত একটা হালা কিছুই তো আমাদের বলছ নাই! যাক বাদ দে শুন ওই মেয়েটিকে চিনছ দেখতো? কোনটা ওই যে তিনটার সারি? কিন্তু কোনটা পিছন থেকে তো মুখ দেখা যায়না চিনব কিভাবে? সামনে যাই চল। না সামনে যেতে হবে ওই যে দেখ একটা কালো বোরকা হাফ স্কেপ, খয়েরি থ্রি পিজ পরা বাকিটা আকাশি ডোরাকাটার সাজে সজ্জিত! ওরে সালা মারছে তো? কেন কি হইছে? না কিছু না? চিনছ কিনা সেটা বল? চিনব না মানে তিনটাই তো আমাদের ঘরের জিনিষ! মানে? আমাগো ডিপার্টম্যান্টে পড়ে। মানতে হবে হাসিটা কিন্তু অসাধারণ। কার হাসি? বামপাশের মেয়েটার। তাই নাকি? ওর পিছনে লাইনে আছে অনেকে। ভালই তো আমি যদি লাইন দিই নতুন করে কেমন হবে? এক্কেবারেই খারাপ হবেনা। তবে এটা নিশ্চিত এখনো প্রেম করেনা আর করবে বলে ও মনে হয়না। বাদ দে তো প্রেম মেয়েরা করতে হয়না ছেলেরা করলে মেয়েদের প্রেম হয়ে যায়। ভালই তো এক কাজ করো অর্ণব মিডিয়ার কাজ ছেড়ে একটা লাভ কোচিং সেন্টার দিলে ভাল ই চলবে। চল ক্যান্টিনে বসি। সেদিন আর মেয়েটির সাথে দেখা হয়নি আমার ফেন্ড সুন্দরির কাছ থেকে প্রায় অনেক কিছুই জানতে পারলাম মেয়েটির সম্পর্কে। সপ্তাহ দু’য়েক পর আমি একটা কাজে ক্যাম্পাসে যাই। বাসায় ফিরব এমনি মুহুর্তে সরোজ মনে করিয়ে দিল কিরে ওরে দেখতে যাবি না? কাকে? ওই আপনার মিষ্টি হাসিকে? ইয়ার্কি হচ্ছে তাই না? ইয়ার্কি না চল দেখে আসিছ আবার কবে আসিছ ক্যাম্পাসে তার ঠিক আছে? পিছন থেকে কাধে হাত দিয়ে সুন্দরী জিজ্ঞেস করল কিরে কখন আসছি? এই তো প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেল। আমরা তো তোদের ওদিকেই যাচ্ছিলাম। কেন রে? সরোজ আবার ওই যে হাসি? সরোজ তুই কি শেষ পর্যন্ত মেয়েটার নাম হাসি দিয়ে দিল? সুন্দরি জবাব দেয় আরে হাসি না তো বৃষ্টি? সরোজ উত্তর দেয় ওই সৃষ্টি হল বৃষ্টির মৃষ্টি হাসি এক বলে ডাকলেই হয়। দ্বিতীয় দিন তাকে দেখে কেন জানি বেশ মায়া জন্মেছিল মনে। শুধু দূর থেকে দেখেই চলে এসেছি। সামনে যাওয়ার দু:সাহসটা এখনো বুকে জন্মায়নি। সুন্দরির কড় নির্দেশ তার কথা কিছুই বলা যাবেনা বলতে কিন্তু এটাই শেষ দেখা। তাই কাউকে কিছু না বলে বাসায় ফিরলাম। সপ্তাহে রবিবার আমার অফিস ডে অপ তাই রবিবারে ক্যাম্পাসে যাওয়া হয়। কিন্তু আজ ভাবছি কাউকে না বলে বৃষ্টি আপুকে দেখে আসব? চলেও গিয়েছিলাম কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আজ সে নাকি ক্যাম্পাসে আসে নাই। মনে পড়ল কবির সে কথাটি ‘একা চলতে যেওনা বাপু বিপদ হতে পারে’ যাক বাসার পথে চললাম। ভিক্টোরিয়া পার্কের কোনায় এসেই দেখি সুন্দরীর সাথে বড় বড় দু’টি মেয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। মনে মনে ভাবলাম বড় বোন টোন হতে পারে! কিন্তু কিছুক্ষণ পর সে পরিচয় করিয়ে দিল তার ইয়ার মেট শুনেতো আমি লারে লাপ্পা। যাক পরিচিত হলাম কথাবার্তাও বললাম। সুন্দরি আমার আগমনে তাদের বিদায় দিয়ে আমার নিয়ে পার্কে গিয়ে বসল। শুরু হলো কথাবার্তার ঝড় কিভাবে মিডিয়ায় গেলাম? কে চাকরি দিল? এক কথায় আর কিছুই বাকি রইলনা। এক পর্যায়ে প্রশ্ন করে বসে কি বৃষ্টি কে দেখতে আসছিলি? অস্বীকার করতে পারলাম না। সে আমাকে অনেকবার বৃষ্টিকে প্রফোজ করতে বলেছিল কিন্তু আমি তখনো বৃষ্টির প্রেমে সত্যিকার অর্থে নিশ্চিত ছিলাম না। ভাবলাম যদি আবার শয়তানি মাথায় আসে কি করব কিংবা আমার যেরূপ শুটিং ব্যস্ততা আমি তাকে কিভাবে সময় দিব? অথবা সে যদি আমাকে অ্যাকসেপ্ট না করে? আর করলেও বা শেষ পরিণতি বলে তো একটা কথা আছে? মুল কথা আমি বাস্তবতাকে সাথে নিয়ে বৃষ্টির প্রেমকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবছি? আমার মনে পড়ে সুন্দরির সাথে আমার যেদিন শেষ দেখা হয়েছিল আমি বৃষ্টির প্রেম কাহন সম্পর্কে তার কাছে জানতে চেয়েছি আচ্ছা বলতে পারছি প্রেম শেষে যদি সে আমাকে কিংবা আমি তাকে বিয়ে না করি কিংবা বাস্তব জীবনে না পাই তবে কি এখন না পাওয়ার চেয়ে আরও বেশি কষ্ট হবেনা? আদর যদিও সেদিন আমার কথাগুলো নিয়ে বেশ মজা করেছিল আর বলেছিল আরে ব্যাটা আগে প্রপোজ কর তার পর প্রেম অত:পর বিয়ে। ও আসলেই অনেক ভাল মেয়ে। তোকে ধোকা দিবেনা। আমি তার কথায় আশ্বস্ত হয়ে মিস বৃষ্টির কন্টাক্ট নাম্বারটা নিয়ে বাসায় ফিরে আসি। আজ বলে কাল কাল বলে পরশু এই ভাবে একেক দিন একেক সপ্তাহ এমনকি একেকমাসও কেটে গেছে তাকে ভাবতে ভাবতে? একদিন রাতে তার হাসিটার কথা আমার মনে বেশ দোলা দিয়েছিল আমি উদাস মনে তার ভাবনায় প্রায় উন্মাতাল? মন কে প্রশ্ন করি যার জন্য এত ভাবনা সে কি আজো জানে আমি তাকে মনে প্রাণে কতটা ভাবি? কিংবা সে কি আজো জানে আমি যে তাকে ভালবাসি? বলা ই তো হয়নি তাকে এখনো? না কাল ফোন দিয়ে বলবই বলব? বৃষ্টির ভাবনায় রাত প্রায় শেষ সকালে ওঠতে তাই বেশ দেরি হয়ে গেছে। তড়িগড়ি করে অফিসে যাই। অফিসে ঢুকার পথেই বসের ডাক? ঘামে ভিজে পুরো শরীর শেষ? কি জানে আবার বলে? নাকি উল্টাপাল্টা? গেলাম বসের রুমে। হাসিমুখে বস বসতে বলল। মনের দু:চিন্তাটা কিছুটা হালকা হলো। নাস্তা করছ? হ্যাঁ করেছি? কি ব্যাপার রাতে কই ছিলা? কেন বস কি হইছে? তোমার চোখ লাল তো তাই? ঘুমাতে একটু লেট করে ফেলছি তাছাড়া নয়া দিগন্ত পত্রিকার একটা উপসম্পাদকীয় প্রবন্ধ লিখতে হয়েছে। তুমি এখনো সেই লেখালেখির জগতেই আছ? এত কিছু কিভাবে যে তোমার মাথায় ধরে? যাক শুন আমার হয়ে তোমাকে একটা কাজ করতে হবে। কি পারবে? পারব না কেন? বলেন কি করতে হবে? ক্লোজআপ ওয়ানের নাম শুনছ তো? হ্যাঁ অবশ্যই। ওই প্রোগ্রামটার সহকারি পরিচালক হিসেবে তোমাকে কাজ করতে হবে। এমনকি অডিশন এবং সিলেকশন রাউন্ডসহ সবগুলো এপিসোডে তোমাকে প্রত্যকটি জেলার অডিশন সিলেকশনে থাকতে হবে। তবে তোমার জন্য কষ্টকর হবে কি জান? কি বলেন তোমাকে আজ রাতেই তাদের সাথে ঢাকার বাহিরে চলে যেতে হবে। অর্থাৎ আগামি তিনমাস তুমি আর ঢাকায় থাকতেছনা। তিনমাস পর দেশের সর্বত্র ভ্রমণ করা শেষ হলে আবার তাদের টিমের সাথে ঢাকায় ব্যাক করতে হবে। ওকে? ওকে বস? অমত করার কিছুই নেই কারন তুমি তো আর বিবাহিত না? বস আমি অবিবাহিত তাই আমাকে পাঠানো হচ্ছে টিমের সাথে কিন্তু আপনি কি তাহলে বিবাহিত? তাই তো! শুন বয়স তো আর কম হয়নি বউ নেই কি হয়েছে নিজকে তো আর অবিবাহিত মনে হয়না। যাক তাহলে তুমি রাতে ঢাকা ছাড়ছ এখানেই ডান। ওকে ডান। আমার ঢাকার বাহিরে চলে যাই আর বৃষ্টি থেকে যায় ঢাকায়। হয়ে যাই মনোবিচ্ছেদ। এত বেশি ব্যস্ত ছিলাম যে বৃষ্টিকে একটা ফোনও দিতে পারি নাই। সকালে বের হলে রাত কখন বাসায় আসি তা নিজেও জানিনা। একদিন রাতে বৃষ্টিকে আমার বেশ মনে পড়ল। ফোনও দিতে মন উতালা হয়ে গিয়েছিল। অনেক রাত তাই ফোন না দিয়ে আমি এই প্রথম বৃষ্টির ফোনে একটা এসএমস পাঠাই। কোনো সাড়া তো দূরে মনে হয় এখানে বৃষ্টি নামে কেউ থাকেনা। দু’তিন দিন পর আরো একটা এসএমএস পাঠাই কিন্তু মনে হয় তাতেও বৃষ্টির দৃষ্টি পড়েনি আমার এসএমএসের দিকে। যথারিতি অডিশন সিলেকশ রাউন্ড শেষে আমি ঢাকায় চলে আসি। ঢাকায় এসে পরেরদিন বৃষ্টিকে ফোন দিই। হ্যা রিসিভ হয়েছে কিন্তু পরিচয় দেওয়ার আগে সে ফোনটা রেখে দেয়। বুঝতে পারছিনা কি হয়েছে বৃষ্টির? আসলেই বৃষ্টি অতি কঠিন মেয়ে, শক্ত মন, দৃঢ়মনবল, অটলবিশ্বাস কেউ না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেনা। পাঁচ ছয়দিন পর আমার সুন্দরি বন্ধুটির সাথে টিএসসিতে দেখা? বৃষ্টির সব খোঁজ খবর জানতে চাইলাম। তবে তার কথায় আমি একটা দু:সংবাদের আভাস পেয়েছিলাম। সে নাকি কার সাথে কখন বৃষ্টিকে দেখেছে। দেখতেই পারে স্বাভাবিক। এই লেভেলে এসে দলবেধে ঘুরাটা কারো কাছেই অস্বাভাবিক মনে হবে না। আমি সন্ধ্যায় তাকে ফোন দিলাম। কিছু কথা বলার চেষ্টা করেছি তাকে। সে আমাকে এককথায় জানিয়ে দিল তার অ্যাফেয়ার্স আছে। এটা ও আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হয়েছিল কারন গ্রাজুয়েট লেভেলে এসে অ্যাফেয়ার্স থাকাটা স্বাভাবিক। বৃষ্টিকে আমি আবারও ফোন দিয়েছিলাম পরেরদিন কিন্তু সেই একই কথার পুনরাবৃত্তি করল বৃষ্টি। স্বাভাবিক মনে ধরে নিলাম হয়তো আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য কিংবা দূরে সরিয়ে দিতে তার এমন এড়িয়ে যাওয়া। আমার সাথে বৃষ্টি প্রতিদিন কথা না বললেও আমি প্রতিদিন তাকে একটা করে এসএমএস দিতাম। কখনো সুখ দু:খ কিংবা আশা হতাশা আলো ছায়ার রূপালি বার্তায় জানতে চাইতাম কেমন আছে বৃষ্টি? বৃষ্টি কখনো কোনো উত্তর কিংবা রিপ্লে কোনো এসএমএস আমাকে পাঠাত না। একদিন একসপ্তাহ একমাস দু’মাস তিন’মাস করে অনেকটা সময় পার করলাম এভাবে বৃষ্টিকে এসএমএস দিয়ে। বড় ধরণের একটা কষ্ট জীবনে পেয়েছিলাম যখন বৃষ্টি কখনোই আমার মনের কথাটা একবার জানতে চায়নি বুঝতে চায় নি। এমন কি সুযোগও দেয়নি। যাক গত মাসে একটা এসএমএস করে বৃষ্টি জানতে চাইল আমার পরিচয়। সেদিন আমার মনটা সত্যিই আনন্দে ভরে ওঠেছিল। দু’চোখের কোনে আনন্দ অশ্রু ঝরে নামল। আমি রিফ্লে একটা এসএমএস এ লিখে পাঠালাম‘ আমি অর্ণব মামুন’ মুসলমান, বাংলাদেশি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, প্রডিউসার অব এনটিভি, বাসা; কাটাবন, শাহবাগ, ১২/৪ মনির হোসেন ভিলা, গ্রামের বাড়ি লক্ষীপুর, বড় হয়েছি নারায়ন গঞ্জ ইত্যাদি সহ আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। এরপর থেকে তার সাথে আমার একটু আধটু কথা আদান প্রদান চলে তাও সপ্তাহের আগা মাথায়। আবার দেখা যায় ‍দু’সপ্তাহও তার কোনো খোঁজ থাকেনা। তবে এটা নিশ্চিত যে আমি আমার মনের কুঠিরে তার জন্য কোথাও কমতি রাখিনাই আমি তাকে ভালবেসেই যেতাম। তাকে ফাঁকি দিই নাই একদিনের জন্যেও। তার এমন এড়িয়ে যাওয়া দেখে আমি আমার ভালবাসার সাথে রাগ করে মনে মনে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি যাক সে যদি আমাকে ভাল নাও বাসে কিংবা তাকে নাও পাই তবে আমি তাকে আমার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ভালবেসে যাব। এটাই শেষ কথা….

সৃষ্টিকর্তার পরম করুণায় গত কিছুদিন ধরে কেন জানি তার মনটা একটু গলতে যখন শুরু করল। একটু আধটু কথাও বলতে শুরু করল। সত্যি কথা বলতে কি আমি যে খুশি হয়েছি তার ফিরে আসা দেখে যা জীবনে আর দ্বিতীয়বার কেউ আমাকে খুশি করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস হয়না। কথা হলো তার সাথে দু’দিন। গত তিনদিন আমি যেখানে থাকি যেন আমার সাথে পূর্ণিমার চাঁদকে সঙ্গী হিসেবে পাই। বাসায় কিংবা কর্মক্ষেত্র অথবা হাঁটতে চলতে আমি সবসময় তাকে যেন আমার পাশে পাই। এ যেন এক অবর্ণনীয় ভালবাসার সুখের বৃষ্টিতে আমি ভাসিয়ে চলছি। আর বৃষ্টির মৃষ্টি হাসিতো এখন আমার সারাঘর আলোকিত করে রাখে। থাকেনি বেশি দিন সে সর্গীয় অলীক সুখ। মাত্র এক মিনিটের ব্যবধানে সে সুখ হাওয়া হয়ে ওড়ে গেল স্বর্গলোকে। দু’চোখ ভাসিয়ে দিল প্রশান্ত মহাসাগরের সমস্ত জলে। তিল তিল করে পাওয়া সুখটা উবে গেল ক্ষণিকের অবিশ্বাসে। দিনটি ছিল রবিবার রাত ১.২০ মিনিট। দ্বন্দ্বটা বাধলো তার সাথে একটা ফেসবুক আইডি নিয়ে ‘অর্ণব মামুন’ এই নামের সাথে হুবুহু মিলের একটা ইংলিশ আইডি আরো ফেসবুকে আছে। আমার একফেন্ডকে আমার প্রথমে সন্দেহ হয়েছিল কিন্তু সে প্রমিস করে বলেছে সে এই কাজটি করেনি তাহলে কেবা কারা খুলেছে এই আইডি আমি তার কিছুই এখনো জানতে পারি নাই যে আইডি সম্পর্কে আমি আদৌ কিছুই জানিনা। এই আইডিটা নিয়িই আমার এতদিনের প্রিয় মানুষটি আমার কপালে একটা অবিশ্বাসের তিলক বসিয়ে দিল শুধু কি তিলক সাথে মিথ্যাবাদি প্রতারক। যে মানুষটিকে গত আট মাস আমার ভালবাসার কথা বলতে পারিনি কিংবা বিশ্বাস করাতে পারিনি সে কিনা এক মিনিটে একটা ফেক আইডি দেখে আমার সম্পর্কে একশত ভাগ নিশ্চিত হয়ে গেল। আমার পুরো জন্মবাস, পেশা পড়া লেখা, ধর্মকর্ম, সবকিছুতেই অবিশ্বাস জন্মে গেল! এখন আমারো প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছে কে এই অর্ণব মামুন? তাহলে কি এই ছেলেটিকে একটি বেসরকারি টেলিভিশন মাস শেষে বিশটি হাজার টাকা মুখ চেয়ে দিয়ে দেয়। নেই তার কোনো পরিচয়? কোথায় থেকে আসল কোথায় থাকে কিংবা কিবা করে? লেখাটি যখন লিখতেছি তখন আমার বস আমার বস আমার পাশে এসে লেখাটি দেখে পাগল নাকি তুমি বলে চলে গেল? আমি বললাম বস বৃষ্ট্রিও গত পরশু একথাটাই বলেছে। এখন আপনি যদি সে একই কথা বলেন তাহলে বৃষ্টি রাগ করবে।

আসলে আজ যে ‘অর্ণব মামুন’ নামটি নিয়ে এত বিতর্ক আর এই নামটি আমি মিডিয়ায় আসার পরে পরিবর্তন করেছি। আমার শিক্ষাগত সার্টিফিকেটের নামের সাথে এই নামটির একটি শব্দের কেবল মিল আছে। মামুন শব্দটার মিল আছে আর অর্ণব শব্দটা মিডিয়ার দেওয়া। বেশ কিছু পত্রিকায় লিখতে গিয়ে আমার মুল নামটির এত ঘষামাজা সংযোজন বিয়োজন করতে হয়েছে। কোনো কোনো প্রতিবেদনে অর্ণব আবার কোথাও মামুন আবার কোথাও আব্দুল্লাহ আবার কোথাও আল মামুন আমাকে লিখতে হয়েছে ক্রেডিট লাইনে। যা এখনো করতে হচ্ছে জানিনা কোন দিন শেষ হবে এই নামকাটার খেলা। বৃষ্টিকে কে বুঝাবে এসব দু:খের কথাগুলো! বুঝাতে পারব না শত যুক্তি দিয়ে যদি তুমি না বুঝ মনের কথাটা। শুধু শুনে রাখ আমি নাম,গোত্র কিংবা বংশহীন অথবা জন্মস্থানহীন কোনো ছেলে না, আমার সবকিছুই সঠিই আছে। ফেসবুক যদি সব বিশ্বাসের মূল ভিত্তি হয় তবে আমি তোমাকে অন্য একটা আইডি খুলে দিই দেখি তোমার সত্যিকারের মানুষ খুঁজে পাও কিনা? আমি অন্য দশটা ছেলের মতো আবাল ছেলে না। যাকে তুমি হাতে নিবে আর ছুঁড়ে ফেললেই সে ভেঙে যাবে? আর এও না যে তোমাকে ভালবেসে ফাঁকি দিয়ে মাটির গর্তে ঢুকে পড়ব।

তবে আমি তোমার সাথে একটা বিষয় লুকিয়ে ছিলাম…..হতে পারে তোমাকে কাছে পাওয়ার জন্য এই মিথ্যে বলা কিংবা তোমার ভালবাসা পাওয়ার জন্য এই ছোট মিথ্যাটা। হতে পারে আমাকে এড়িয়ে যাওয়ার ভয়ে আমি তোমাকে এই মিথ্যাটুকু বলেছি। সবমিলে আমি আমার সৃষ্টিকর্তার শপথ করে বলছি সেই মিথ্যাটা বলেছি শুধু তোমাকে পাশে পাওয়ার জন্য। আর যদি হাজার সত্যের মাঝে সেই একটা মিথ্যা বলা মহা পাপ হয় তবে আমাকে তুমি যেই শাস্তিই দিবে আমি তা মাথা পেতে নিব। আর এই সত্যটা তোমাকে আগ পর আমি নিজেই বলে দিতাম, আর আজ না কাল তুমিও জেনে যেতে এটা নিশ্চিত। কারণ বিয়ের আগ পর সব মেয়েরাই তার স্বামীর সব কৃত কর্ম জেনে যায়। তবে এমন কোনো কুকর্ম করেনি জীবনে যার জন্য তুমি অসূখী হবে কিংবা কষ্ট পাবে কিংবা তোমাকে কষ্ট দেওয়ার কোনো ইচ্ছা নিয়ে আমি তোমার জীবনে আসি নাই। এখন বলতো সেই সত্যটা জানার পর কি আর পাশে থাকবে না কিংবা ভালবাসবে না কিংবা ভূলে দুরে চলে যাবে? তাহলে আর বলব না। পৃথিবীতে জ্ঞানী গুনি কবি সাহিত্যিক কিংবা সাধারন মানুষ এমন অসংখ্য আছেন যারা তার প্রিয়তমাকে কাছে পেতে অনেক বড় মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিল তার তুলনায় আমার মিথ্যাটা অতি নগন্ন। চোখ রাখ তো ইতিহাসের পাতার দিকে কারা পৃথিবীতে কেমন মিথ্যার আশ্রয় আশ্রয় নিয়েছিল তার প্রিয়তমাকে কাছে পেতে। যদি এদেরকে অস্বীকার করতে পারো তবে আমাকেও অস্বীকার করো তাতে দু:খ নাই।

পৃথিবীর ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় এই নশ্বর ভূবনে অনেক মহান ব্যক্তি ছিলেন যারা তার প্রিয়তমাকে পাওয়ার জন্য অনেক কিছুই করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই আজো ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ আছেন লাইলি মজনু কিংবা শিরি ফরহাদ অথবা ইউসুফ জুলেখার অমর প্রেমকীর্তির কথা না হয় বাদ দিলাম। ২০০৫ সালের ৩ জানুয়ারির কথা জর্দানের এক প্রেমিক তার প্রেমিকাকে পাওয়ার জন্য মিথ্যে রাজপুরুষ সেজে তাকে বিয়ে করেছিল। পরবর্তীতে তার পরিবার যখন বিষয়টি জানতে পেরেছিল তখন তারা ছেলেটিকে হত্যা করার পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছিল। শেষ অবধি মেয়েটি তার বাবাকে বলেছিল বাবা তোমরা তো চেয়েছিলে আমি সুখী হই এই তো? নাকি অন্যকিছু? আমি এই ছেলেটিকে পেয়ে জীবনে অনেক সুখী। হোক না সে মিথ্যে রাজপুরুষ সেজে আমাকে বিয়ে করেছিল। তবে আমি নিশ্চিত যে কোনো সত্যিকারের রাজপুরুষ আমাকে যতটা না ভালবাসত তারচেয়েও হাজার গুণ বেশি এই মিথ্যে রাজপুরুষটি আমাকে ভালবেসে তার আপন করে নিয়েছে। আমি চাই না তোমাদের সত্যিকারের রাজপুরুষ! গত মাসে বাংলাদেশের দৈনিক পত্রিকা ভোরের কাগজের পাতায় লেখা হয়েছিল তাদের এই সুখকীর্তি।

এবার আসা যাক শাহজান মমতাজ আপুর প্রেমকীর্তির কথায়। সে নাকি একটা তার প্রিয়তমার জন্য একটা তাজমহলও বানিয়েছিল। কিন্তু বলার বিষয় হলো তাদের প্রেমটা হয়েছিল মিথ্যে চক্রান্তের জালে। মমতাজ প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেনি। যদিও পরে তাকে অনেক আফসোস করতে হয়েছে শাহজান ব্যাটার জন্য। বাদ দিলাম পুরাতন্ ইতিহাস আসা যাক নতুন যুগে। অ্যান্টনিও নামের বৃটেন যুবকটি তার প্রিয়তমা ক্লিওপেট্রোর প্রেমে যখন দিশেহারা কিন্তু প্রিয়তমা তার ভালবাসাকে বরাবরই অস্বীকার করে আসছিল যুবকটি বেকার ছিল বলে। ঠিক সে মুহুর্তে তিনি কোনো উপায় না পেয়ে একটা চক্রান্তের খেলায় মেতেছিল। তৎকালিন টয়েটো কোম্পানির এক ম্যাগনেটকে বানাতে হয়েছিল তার শেয়ার হোল্ডার। তাদের মাঝে প্রেম ও হয়েছিল কিন্তু মেয়েটি এক পর্যায়ে জানতে পারে সে আসলেই বেকার। মিথ্যা কথাটা শুনে মেয়েটির মাথা গরম হয়ে একপর্যায়ে ছেলেটিকে ছেড়ে চলে যায় কিছুদিন পরে মেয়েটি তার ভূল বুঝতে পেরেছিল আর যখন তার কাছে ছুটে আসছিল ততদিনে ছেলেটি দুনিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছিল। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় ক্লিওপেট্রা তার বাকি জীবনে অন্য কোনো ছেলেকে বিয়ে করেননি। এবং অবশেষে সে বলেছিল আমি তো তোমার ধনসম্পদ কিংবা বেকারত্ব চাইনি চেয়েছি তোমার ভালবাসা। কেন তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলে। হোক না তুমি আমাকে পেতে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিলে। হুবুহু একটি ঘটনা ঘটেছিল রানী ভিক্টোরিয়ার জীবনে। একটা মিথ্যা বলার দায়ে সে স্বামী আলবার্টকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। যখন জানতে পেরেছিল তাকে প্রেমিকাকে খুশি রাখতে আলবার্ট ঐ মিথ্যা কথাটা বলেছিল। কিছুদিন পর যখন তার প্রেমিকার বিরহে মরে গিয়েছিল তখন তারমাঝে প্রেমবোধ জেগেছিল। আর শেষ জীবনে ভিক্টোরিয়া তিন বছর ঘর থেকে বের হনানি এমনকি বাকি জীবনে একটা রঙিন কাপড়ও পরেননি। কিন্তু কেউ কি বলতে পারবে তাদের প্রেমের মাঝে কোনো চক্রান্ত কিংবা প্রতারনা হয়েছিল? বরং ইতিহাসের পাতায় তাদের নাম লেখা হয়েছে স্বর্ণাক্ষরে। রাজা অষ্টম অ্যাডওয়ার্ড তার প্রিয়তমাকে পাওয়ার জন্য তার নিজ সিংহাসন ত্যাগ করেছিলেন। যদিও অনেকের দাবি মেয়েটি তার সাথে মিথ্যা প্রেমের নাটক করেছিল কিন্তু এ কথায় সবাই একমত ছিল যে হতে পারে প্রেমটা চক্রান্তের জালে বন্ধি কিন্তু ভালবাসাটা ছিল তাদের চিরখাঁটি। এবার নজর দিই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দিকে। তিনি তার প্রেমিকাকে খুশি রাখতে রোজ রোজ একটা মিথ্যা কথা বলতেন। কেউ কি বলতে পারবে মিথ্যা বলার জন্য তার প্রেমিকা তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল? কিংবা অস্বীকার করেছে তার ভালবাসাকে? বরং বলেছিল প্রিয় কোন আলো লাগলো চোখে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তার পাশে ছিল মেয়েটি। কেউ কি আজো ভূলে গেছে বেহুলা লখিন্দরের অমর প্রেম কাহিনী? মিথ্যার আশ্রয়ে লখিন্দরের মৃত্যুর পর ভেলায় ভাসিয়ে লখিন্দরকে স্বর্গে নিয়ে যাচ্ছে বেহুলা। হেমান্ত নামের এক ভারতীয় যুবক তার প্রেমিকার সাথে একটি মিথ্যা কথা বলার দায়ে প্রেমিকার রাগ থামাতে ১০৮টি নীলপদ্ম নিয়ে তার সামনে হাজির হয়েছিল। কই সেদিন তো এই যুবককে তার প্রেমিকাকে দূরে সরিয়ে দেননি! বরং বুকে টেনে নিয়েছিল। এই জন্য লর্ড বায়ান বলেছেন প্রেম হলো হামের মতো-প্রেমে কিছু মিথ্যা না থাকলে প্রেম পাওয়া যায়না। ঝড়গা না বাধলে তো প্রেমই শক্ত হয়না। শিল্পি মান্না দে জীবনে হাজার বার মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিলেন তার প্রেমিকাকে কাছে পেতে। তবে তার প্রেমিকাকে সে যে সত্যিই ভালবাসে তার একটি গান তার প্রেমিকার নামে উৎসর্গ করেছিলেন? প্রতিটি মানুষের জীবনে প্রেম আসে তবো হোক তা মিথ্যার কোলে, আছো তুমি হৃদয়ে সত্যি হয়ে। বাংলাদেশের শিল্পি সুবীর নন্দি তার প্রেম বিরহে তো বলে দিয়েছিলেন পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই, তবে মিথ্যা সত্যি বুঝিনা ভালবাসা খাঁটি হওয়াটাই সর্বোত্তম। বিখ্যাত উপন্যাসিক চালর্স ডিকেন্স তার প্রিয়তমার সাথে মিথ্যা বলার কারনে তার প্রেমিকা ক্যাথরিন তাকে ইঁদুর নামে ডাকতেন। নাট্যকার ইবসেন তার প্রেমিকার সাথে মিথ্যা বলার কারনে প্রেমিকা সুজানা সারাজীবন তাকে বেড়াল সোনা বলে ডাকতেন। লেখিকা রেবেকা তার প্রেমিকের সাথে অহরহ মিথ্যা বলার কারণে প্রেমিক এইচ জি ওয়েলস জাগুয়ার,প্যান্থার কিংবা হিংস্র নামে ডাকতেন। এক অনুষ্ঠান শেষে যখন সাংবাদিকরা এই যুগককে জিজ্ঞেস করেছিল স্যার আপনারা কি আসলে হিংস্র? তারা সাংবাদিকদের কাছে জানতে চেয়েছিল কেন আমরা হিংস্র? ওই যে একজন অন্যজনকে হিংস্র বলে ডাকেন? শুনেতো দু’জনে অবাক? তারা সাংবাদিকদের কাছে উল্টো জানতে চেয়েছিল তার মানে কি আমাদের প্রেম ভালবাসা হিংস্র? বিষয়টা হচ্ছে সে সবসময় আমার সাথে মিথ্যা কথা বলে তাই আমি আদর করে তাকে হিংস্র নামে ডাকি! আমাদের মাঝে কোনো বিরোধ কিংবা হিংসা অথবা এমন কোনো আক্রস নেই যে আমাদের ভালবাসা সামান্য মিথ্যার স্রোতে ভেসে যাবে। আমরা অনেক সুখী বুঝলেন তো এবার? এমন কথা শুনে তো অনেক সাংবাদিক সেদিন প্রায় বেহুশ ই হয়ে গিয়ৈছিল। পরের দিন ব্রিটিশ ম্যাগাজিনে সংবাদ শিরোনাম হয়েছিল ‘মিথ্যার ওপরে ভালবাসার শক্তিই বেশি”। ঘরের কথা বলি জনাব মহাত্মা গান্ধি ও লালন সংসার বিরাগি হয়েও তার প্রেমিকা কিংবা ভালবাসাকে অস্বীকার করেননি। যদিও তাদের স্ত্রীরা তাদের মিথ্যাবাদি বা প্রতারক ভেবেছিল কিন্তু অবশেষে বুঝতে বাকি ছিল তাদের প্রেম ও ভালবাসার চেয়ে আর কি সত্য হতে পারে এই নশ্বর পৃথিবীতে? গতবছরের শুরুর দিকে রাজিয়ার স্ট্রিট রোমি গালর্স কলেজের সামনে শিম্পান্ঝি নামের ঝাঁড়ুদার যুবকটি এক রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধির আদুরে মেয়ে ম্যারিয়ার সামনে গিয়ে সরাসরি বলে দেয় ‘আই লাভ ইউ’ মেয়েটি ক্ষেপে গিয়ে তার গালে কষে একটা চড় বসিয়ে দেয়। চড় খেয়েও যুবকটি আবার বলে বসে ‘আই লাভ ইউ’ দ্বিতীয় চড় মারতে হাত ওঠায় ম্যারিয়া এমনিতেই ছেলেটির চোখে চোখ পড়ে মিস ম্যারিয়ার থেমে যায় হাতটি দ্বিতীয় চড়টি আর মারতে পারল না। অবশেষে ম্যারিয়া মুসকি হেসে চলে যায়। গত অক্টোবরের ১৫ তারিখ ওয়াল স্ট্রীট জার্নাল তাদের দু’জনের ছবি দিয়ে শিরোনাম ছাপে ‘ঝাঁড়াদারের প্রেমে মজলেন মিস ম্যারিয়া’ অবশেষে বিয়ে করলেন সেই ঝাঁড়ুদারকে। তারা বেশ সুখেই আছে বলা যায়। শেষ কথাটা বলব আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে উৎসর্গ করে। কবি তার জীবনে দ্বিতীয় বিয়ে করার সময় দ্বিতীয় স্ত্রীর পরিবারের কাছে তার প্রথম বিয়ের কথাটা অস্বীকার করেছেন। তার বিশ্বাস ছিল মিথ্যে না বললেও হয়তো মেয়ের পিতা-মাতা এই বিয়েতে অমত করতে পারেন। এখন প্রশ্ন হলো সে মেয়েকে কি পরবর্তীতে কবির জীবনে এসে সুখী হয়নি? বরং ভালবাসার কমতি ছিল না। কেউ কি আজো প্রশ্ন তুলেছে যে আমাদের জাতীয় কবি প্রতারণা করেছিলেন? কবি গিবন এই জন্যই বলেছিলেন যাকে তুমি ভালবাস মিথ্যা দিয়ে হলেও তাকে তুমি বেধে রাখ। তাতে তোমার ভালবাসার অমর্যদা যেমন হবেনা আর এর জন্য তুমাকে প্রতারকও সাজতে হবে না।

আর আমার মিথ্যাটা ছিল আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মান ফাইনাল ইয়ার পরীক্ষার্থী। তাছাড়া কোনো ইনফরমেশনে ক্রটি নেই বিন্দু মাত্র। আর এটা জন্ম বল ধর্ম বল, কর্ম বল আর পেশা বল, আর নেশা বল। স্বপ্নটা ছিল তোমাকে চমকে দিব কিন্তু তার পরিবর্তে উল্টো হয়ে গেলাম মিথ্যাবাদি, বিশ্বাসঘাতক, প্রতারক। এখন বলো এর পরও কি আমায় ছেড়ে চলে যাবে? উপরের এসব বিখ্যাত লোকদের গল্পটা তোমাকে এই জন্য শুনালাম যে এদের তুলনায় আমার মিথ্যাটা কি অনেক বড় যদি তা না হয় তাহলে কেন গত রাতে তুমি আমাকে এত বেশি কাঁদিয়েছিলে?

এখনো আমার মনে পড়ছে কাল সারা রাত কেঁদেছি অনেক ঘুমাতে আমি পারিনি। তবে কেন তুমি এভাবে ছিন্ন করতে মায়ার বাঁধন একটু বুকে বাধেনি?

(লেখাটা আমাদের এক কাছের সহযোগি বন্ধুর প্রেমিকার সনে প্রকাশিত) নাফিস শাহরিয়ারের ওয়াল থেকে প্রকাশিত।

বিষয়: বিবিধ

৭০১৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File