টক শো , তৃতীয় মাত্রার তথ্য বিভ্রান্তি / তারিখ : ৭/৫/২০১৩
লিখেছেন লিখেছেন হামিদ ফরাজী ০৮ মে, ২০১৩, ০৫:১৫:১৯ বিকাল
গেল তারিখ : ৭/৫/২০১৩ রাতে চ্যানেল আই. তৃতীয় মাত্রায় সাংসদ গোলাম মওলা রণি এবং নিলুফা আক্তার মণির আলাপচারিতা দেখলাম । শুরুতে (আওয়ামীলীগকে ভাই বলতে ঘৃণা লাগে তাই রণি ভাই বললাম না) সরকারদলীয় সাংসদ গোলাম মওলা রণি দেশকে নিয়ে শংকা প্রকাশ করে বলেছেন, সবাই মহান আল্লাহর কাছে ربنا لک الحمد حمدا کثیرا বলে প্রার্থনা করছেন । মানুষ যখন কোন শুভ সংবাদ বহন করে তখন এই দোয়াটি পড়েন । মহান আল্লাহর প্রশংসা করে । তাছাড়া নামাযে রুকু থেকে উঠার সময় মুক্তাদিগণ উক্ত দোয়াটি পড়ে ( ইমাম যখন সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ বলে) । জনাব, মানুষ যখন বিপদে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন، শংকা ও উৎকণ্ঠায় দিন কাটায় তখন আল্লাহর কাছে , ربنا اخرجنا من ھذہ القریة الظالم اھلھا واجعل لنا من لدنک ولیا واجعل لنا من لدنک نصیرا (সূরা নিসা : ৭৫) বলে প্রার্থণা করেন । আগে মনে করতাম তার ধর্মীয় জ্ঞান মোটামোটি আছে । শুরুতে যখন ধর্ম নিয়ে এরকম একটা ভুল তথ্য দিলেন, তখন মনে মনে আশা করছিলাম তার মুখ থেকে যেন আর ধর্মীয় আলোচনা শুনতে না হয় । পরে দেখলাম একের পর এক এরকম ভুল তথ্য দিয়ে দর্শকদের বিভ্রান্ত করেছেন । তার কয়েকটি নিচে তুলে ধরলাম ।
১. আপনারা (খুনী লীগেরা) ডেমোক্রেসীর কথা বলেন, কিন্তু রাত ২:৩০ শান্তিপূর্ণভাবে (সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক) অবস্থানকারীদের উপর যৌথবাহীনির সহযোগিতায় আওয়ামীলীগ যে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালাল, তারপক্ষে সাফাই গাইলেন । ঘুমন্ত মানুষের উপর রাতের অন্ধকারে এভাবে হত্যাযজ্ঞ চালানো কোন সভ্য সমাজের লোকেরা করতে পারে না । অথচ শাহবাগে নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্ধেষীদের নেতৃত্বাধীন তথাকথিত গণ জাগরণ মঞ্চে অবস্থানকারীদের মাসের পর মাস ৩/৪ স্তরের নিরাপত্তা দিয়েছিলেন । আমরা আল্লাহর কাছে এর বিচার চেয়েছি এবং চাইব । কারণ যালেমের কাছে বিচার চাওয়া মানে বিচার নামক ব্যবস্থাকে অপমান করা ।
২. সাংসদ রণি বলেছেন, যখন তাদের উপর গুলী চালানো হয় , আক্রমন করা হয় তখন তারা আল্লাহর কাছে এভাবে প্রার্থনা করেন যে, যেন আসমান থেকে ফেরেশতা নেমে আসবে । কিন্তু ফেরেশতা নেমে আসে না । তার মানে আপনি হেফাজতীদেরকে সরকারের বাহীনীর উপর হামলা করে প্রতিরোধ করতে বলেছেন ? তখন আপনারা এবং তথাকথিত মিডিয়াগুলো তাদেরকে জঙ্গী বানানোর পুরো প্রমাণ্যচিত্র হাতে পেয়ে যাবে ।
৩. আপনি বলেছেন, তথাকথিত আহলে সুন্নাতের সাথে আমাদের (سمیع بصیر) নিয়ে শত বছরের যুদ্ধ । আসল ঘটনা হচ্ছে , শাহ ওয়ালীউল্লাহর (মুজাদ্দেদ : সমাজ সংস্কারক) আদর্শে অনুপ্রাণিত দেওবন্দী ওলামায়ে কেরামগণ ব্রিটিশদের এই দেশে ব্যবসার নামে জেকে বসাকে মেনে নিতে পারেন নি । যদিও ভারত উপমহাদেশের সুবিধাবাদী হিন্দু সম্প্রদায় শুরু থেকেই ব্রিটিশদের দালালী করেছেন । কিন্তু ব্রিটিশরা ভারত উপমহাদেশে সুবিধাবাদী একদল মুসলমানকে চেয়েছিল, যারা তাদের পা চাটবে, ভাগ্যক্রমে পেয়েও গিয়েছিল তারা মুসলিম নামধারী (ভারতের স্বাধীনতাকামীদের দুশমন ও গাদ্দার) দুটি সম্প্রদায়কে , এর একটি হল : কাদিয়ানী সম্প্রদায় , এবং অন্যটি সন্যাসী বা সাধু ভাবাপন্ন কুসংস্কারাচ্ছান্ন (মাজারের নামে কবরপূজা করা, বাবার দরবারে গিয়ে ছেলে সন্তান চাওয়া) আহমদ রেযা খান বেরলভীর মতাদর্শে বিশ্বাসী তথাকথিত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত । ভারত উপমহাদেশকে যখন ওলামায়ে দেওবন্দ দারুল হারব (যুদ্ধাক্রান্ত দেশ) ফতোয়া দিয়ে আযাদীর ডাক দিয়েছিলেন , অপরপক্ষে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ভণ্ডনবী গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (নবুওয়াতের দাবীদার) ও কুসংস্কারাচ্ছান্ন আহমদ রেযা খান বেরলভী ওলামায়ে দেওবন্দের ফতোয়া "স্বাধীনতার জন্য জিহাদের ঘোষণাকে" প্রত্যাখ্যান করে ব্রিটিশদের পক্ষে সাফাই গায় । তখন থেকে তথাকথিত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত সম্প্রদায় গায়ে পড়ে দেওবন্দী আলেমদের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয় বা ব্রিটিশরা তাদেরকে স্বাধীনতাকামীদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করায় । তাদের সেই সুবিধাবাদী চরিত্র এখনও বিদ্যমান । যেই সরকার ক্ষমতায় থাকে তাদের পক্ষাবলম্বণ করে পদলেহন করে তাদের উচ্ছিষ্ট ভোজনে পারদর্শী ।
৪. আপনি আরেকটি অভিযোগ করেছেন, হুজুররাও ভাড়া খাটেন । তবে তা দেওবন্দী আলেমদের ক্ষেত্রে যুক্তিযুক্ত নয় । কারণ তারা বড় দুটি দলের মধ্যে যে দলে ধর্ম এবং জনগণ নিরাপদ মনে করে তাদের সাথে জোটবদ্ধ । দুটি প্রধান কারণ, এক. বি. এন. পি ধর্মিরপেক্ষতাবাদে অনুপ্রাণিত নয় , বরং জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী । পক্ষান্তরে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ উগ্র এবং কট্টর ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদী । দুই. বি. এন. পি এর রাজনীতির ইতিহাসে বাকশালের অস্তিত্ব নেই । যার কারণে মানুষের স্বাধীনতা রক্ষায় এদেরকে নিরাপদ মনে করে । যদিও হেফাজতে ইসলামকে দেওয়া তথাকথিত চেকের কথা উল্লেখ করে বি.এন.পির ভাড়াটিয়া প্রমাণের চেষ্টা করেছেন । হানিফ সাহেব ৮৫ কোটি টাকার লেনদেনের মত বেফাস কথা বলেছেন । টাকার চুরিচারী যারা করে, তারা সব সময় অন্যের উপর দায় চাপাতে চায় । শেয়ার বাজার কেলেংকারীতে অনেক লম্বা হাতওয়ালা আওয়ামী দরবেশ বাবাদের অস্তিত্ব, হলমার্ক কেলেংকারী , পদ্মাসেতুসহ হাজার হাজার কেলেংকারী যাদের নিত্যদিনের সঙ্গী।
৫. আরেকটি অভিযোগ, হেফাজতীরা শিষ্টাচার বিবর্জিত কথা বলেছেন, তার পরিপেক্ষিতে বলব, সরকারের বড় বড় হর্তা কর্তাদের , আঙ্গুলচোষার কথা, লেঙ্গুর গুটিয়ে বা লেজ গুটিয়ে পালিয়ে গেছে, ইসলামী ভাবধারার লোকদেরকে যখণ তখন পরিকল্পিতভাবে নাটক সাজিয়ে জঙ্গী বা রাজাকারের প্রেতাত্মা আখ্যা দিলে হয়ত এরকম দুয়েকটি শব্দ আসতে পারে । তবে তথাকথিত রাজনৈতিক (অধিকাংশ তরুনদের উক্তি, আই হেইট পলিটিকস) চাল চালানোর মত খেলায় যারা অপরিপক্ক তাদেরকে হেনস্থা করার সংস্কৃতি কতটুকু যুক্তিযুক্ত ?
৬. আর নিলুফা আক্তার সাংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রীর বি. এন.পির নেতা-কর্মীদের হেফাজতের পাশে থাকার নির্দেশ বা আহ্বানে সাড়া না দেওয়ার পরিপেক্ষিতে বলেছেন, বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে হেনস্তা করে ঘর থেকে বের করে দেয়ার প্রতিবাদে দশ হাজার নেতাকর্মীদের উপস্থিত হওয়ার জায়গায়, ১১০ জনের মত লোক প্রতিবাদ কর্মসূচীতে অংশ নেয় । এতে করে বুঝা যায়, যাদেরকে আমরা বিরোধী দল হিসেবে দেখছি, তারা কতটা দেউলিয়া হয়ে গেছেন রাজনৈতিকভাবে । তারা কি এই জালিম সরকারকে মোকাবিলা করতে পারবে ? আমার মনে হয় সুবিধাবাদী রাজনৈতিক দলের পক্ষে অন্যায়ের মোকাবিলা সম্ভব নয় । তারা অন্যের রক্তের উপর ক্ষমতায় আসার অপেক্ষায় থাকে । আমার মনে হয়, হেফাজতের অবস্থানকে ঘিরে বি.এন.পির দেয়া আল্টিমেটামকে ঘিরে আওয়ামীলীগ ক্ষমতা রক্ষার জন্য গভীর রাতে অমানবিকভাবে নিরীহ নিরস্ত্র আলেমদেরকে গণহারে হত্যা করেছে । এর জন্য তাদের দেয়া আল্টিমেটামও দায়ী । আলেমেদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে এই দেশ । আল্লাহ !!!! আমাদের বাঁচান । মুক্তি দিন এই জালিম থেকে । মাহবুবুল আলম হানিফ সাহেব বলেছেন, প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হতে দেয়া হবে না । হানিফ সাহেবের বা কারো বাবার দেশ নয় এই দেশ !!! তাই বি. এন. পি কে বলব, বিরোধী দলের ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হলে বিরোধী দল হিসেবে মানুষের অধিকারকে অবদমিত করে না রেখে তৃতীয় কোন শক্তির উত্থানের সুযোগ করে দিন ।
সাংসদ জনাব গোলাম মওলা রণি বলেছেন , হেফাজত অতীত হয়ে গেছে , আমরা বলব, হেফাজত (ভিন্ন নামে ব্রিটিশ বিরোধী আযাদী আন্দোলন, রেশমী রুমাল আন্দোলন , ফরায়েজী আন্দোলন, তিতুমীরের বাশের কেল্লা, বালাকোট রণাঙ্গণ শত বছর পূর্বেও অতীত হয়ে এখনও বেঁচে আছে । কে আছে বা অতীত হয়ে গেছে বা হবে তা সময় বলবে । ইনশা আল্লাহ !
বিষয়: বিবিধ
২১২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন