'সন্দ্বীপ'- যেন এক মায়া দ্বীপ
লিখেছেন লিখেছেন দূরদৃষ্টি ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৩:২৫:৫৫ দুপুর
আমার স্কুলের বন্ধু ফজলু আর তৌহিদের বাড়ি সন্দ্বীপে। ২০০২ সালে আমাদের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ভাবলাম কোথাও বেড়াতে যাই। ঠিক তখনই তৌহিদ আর ফজলু প্রস্তাব দিল চল আমাদের গ্রাম ঘুরে আসি। সন্দ্বীপে যাওয়ার অভিজ্ঞতাটি আমার কাছে সম্পূর্ন ভিন্ন কারণ,
সন্দ্বীপ বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব উপকূল। এটি একটি চট্টগ্রাম জেলার মহকুমা. এটা মেঘনা নদী আর বঙ্গোপসাগরের মোহনার উপর অবস্থিত. এটি চট্টগ্রাম উপকূল থেকে সন্দ্বীপ চ্যানেল দ্বারা পৃথকীকৃত। প্রায় ৪,০০,০০০ জনসংখ্যা রয়েছে. সন্দ্বীপে ১৫টি ইউনিয়ন রয়েছে। সন্দ্বীপ বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক দ্বীপ। এটা ছিল একটি বিদেশীদের জন্য লাভজনক স্থান. এর কারনে আরব, পর্তুগাল, মায়ানমার, ইত্যাদি থেকে মানুষ দ্বীপে এসেছিলেন ক্ষমতা নিতে এবং তার সম্পদ কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছিলেন। দ্বীপ ছিল খুবই উর্বর এবং সন্দ্বীপের মানুষের ছিল খুব চতুর এবং কর্মঠ. সুতরাং,সন্দ্বীপ ধান, ডাল, সব্জি, গম, নারিকেল, প্রতি বছর তিনশত আমার জাহাজ ভর্তি লবন সন্দ্বীপ পোর্ট থেকে রপ্তানির জন্য লোড করা হয়. এটি ছিল একটি জাহাজ স্ফীতি শিল্প জন্য সুপরিচিত পোর্ট। এখনও সন্দীপ একটি উর্বর ভূমি। আম, নারিকেল, তরমুজ, আনারস, গাব এবং জাম ইত্যাদি ফল উৎপাদিত হয়। সূত্রঃ http://sandwipisland.blogspot.com/
সন্দ্বীপ বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক দ্বীপ। দ্বীপটি তিন হাজার বছরের পুরানো। বছরের পর বছর দ্বীপটি বিভিন্ন শাসকের দ্বারা শাসিত হয়েছে। তাদের মধ্যে দেলোয়ার খান অন্যতম। ১৭০০ শতকের এবং বর্তমানে প্রাপ্ত কিছু স্থাপত্য ও নির্দেশনা দেখে বুঝা যায় যে, সন্দ্বীপ দ্বীপটি পূর্বে পর্তুগীজ ও আরাকান জলদস্যুদের ভূমি ছিল। এরপর বাংলার গর্ভণর জলদস্যুদের অত্যাচার, অরাজকতা এবং পাপাচার থেকে দ্বীপবাসীকে মুক্ত করার জন্য ১৯৬৫ সালে আক্রমন চালিয়ে দ্বীপবাসীকে মুক্ত করে। বৃটিশ আমলে এটার মালিকানা নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি হলেও পরবর্তীতে এ দ্বীপটি বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যায়। সন্দ্বীপ উপজেলা যদিও ততোটা উন্নত নয়, কিন্তু এ দ্বীপের অবস্থান, পুরাকীর্তি মানুষকে আকর্ষন করে। সন্দ্বীপের অর্থনীতি মোটামুটি সমৃদ্ধ। এখানকার অধিকাংশ লোকজন দুবাই, আমেরিকাতে কর্মরত, এছাড়া চট্রগ্রাম শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করে।) সূত্র: দ্বীপের খবর।
আমার সফর সঙ্গী হিসেবে ওরা দুজন ছাড়াও ছিল শাহরিয়াত আর রাসেল। আমরা প্রথমে সীতাকুন্ড যাই বাসে, সেখান থেকে স্টীমার করে নামি সন্দ্বীপ মাইটভাঙ্গায়। ওখানে আমাদেরকে নামতে হয় কোমর পর্যন্ত কাদার মধ্যে। আমার জন্য এই অভিজ্ঞতা নতুন তবে খুউব মজা পেয়েছি। কাদা মাখা অবস্থায় কারো বাড়িতে ঢোকা এই প্রথম। তৌহিদের বাড়ি মুসাপুর সারেঙ বাড়ি আর ফজলুর মুসাপুর চান্দেরগো বাড়ি। প্রথমে তৌহিদের বাড়িতে গেলাম।
পূরো ভ্রমন কাহিনী লেখার সূযোগ নেই শুধু কয়েকটি বিষয় আমাকে বলতেই হয়। সন্দ্বীপের সবচে’ বেশি যে বিষয় আমাকে দারুনভাবে অভিভূত করেছে তা হচ্ছে ওখানকার মানুষগুলোর আন্তরিকতা আর আথিতেয়তা। আমি বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল ঘুরেছি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার সুবাদে। কিন্তু সন্দ্বীপের মানুষ বলতে নারী পুরুষ সবাই এত আন্তরিক ব্যবহার করে তা বোঝাবার ভাষা আমার কাছে নেই । রাত দুটায় বীনার মিষ্টি খেতে যাওয়ার স্মৃতি সবচে’ মধুর ছিল।
আমরা মোট ৫ দিন ছিলাম। সারাদিনের জন্য সাইকেল ভাড়া করে মোটামুটি পুরো দ্বীপটা ঘুরে দেখার চেষ্টা করেছি। আমার খুব ইচ্ছে আবারও ওখানে বেড়াতে যাওয়ার।
বিষয়: বিবিধ
১৩৫৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন