বউ, দীঘি এবং ডটডটডট
লিখেছেন লিখেছেন আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৫:৫৭:৪৫ বিকাল
হেই, কেমন আছেন?
জী, আলহামদুলিল্লাহ ভালো, অনেক ভালো! আপনি?
আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো। আপনি এতো ভালো কেন?
আমার বউ মারা গেছে তাই!
হিহিহি... আপনার বউ মারা গেছে? আপনি বিয়ে কখন করলেন?
আমিও জানি না!
তো বউ কীভাবে মরলো?
হাহাহাহা... হুম একটা কাহিনী আছে।
তো বলেন দেখি, কী কাহিনী।
হুম বলছি-
আমাদের স্কুলে দুই শিফটে ক্লাশ হয়। প্রথম শিফট নার্সারী থেকে ক্লাশ টু। দ্বিতীয় শিফট থ্রি থেকে টেন। আমি মূলত দ্বিতীয় শিফটেই জয়েন দিয়েছি। তাই প্রথম শিফটের প্রায় স্টুডেন্ট আমাকে চিনে না। প্রথম শিফটের সবার সাথে আমার শুধু একদিনই দেখা হয়েছিল। বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানের ফাইনালের দিন। উপস্থাপনার দায়িত্বটা আমার থাকায় সবার দৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দুতে সেদিন একটু হলেও আমি ছিলাম। পিচ্ছি ছাত্রছাত্রীরা সবাই আমাকে মনে রাখতে না পারলেও কিছু কিছু অভিভাবক আমাকে চিনে নিয়েছেন। স্কুলের নতুন স্যার। আমিও কয়েকজনকে চিনে নিয়েছি।
হুম, তারপর?
তারপর...
দশটা বিশে প্রথম শিফটের ছুটি। সাড়ে দশটা থেকে দ্বিতীয় শিফটের শুরু। আমি স্কুলে আসার আগেই টুনটুনি-টোনারা সবাই চলে যায়। আমি আসি, ওরা যায়। পথে অনেকের সাথে দেখা হয়। স্কুলের ড্রেস দেখে আমি তাদেরকে চিনি। তারা আমাকে চিনে না। কিছু কিছু অভিভাবক যারা চিনেন তারা মুচকি হাসেন, কেউ কেউ সালাম দেন, আমিও দেই। এই ভাবেই আবর্তিত হতে থাকে আমার স্কুলের দিনগুলি।
ভালো তো। তারপর?
তারপর... দেখতে দেখতে চলে আসে অর্ধ-বার্ষিকী পরীক্ষা। সিক্স টু টেনের। দশটা থেকে পরীক্ষা হওয়ায়, আমাকে সাড়ে নয়টায় স্কুলে আসতে হয়েছে কিছু দিন। সে সুবাদে অনেক পিচ্ছি আর অভিভাবক/ অভিভাবিকাদের সাথে আমার নিয়মিত দেখা হতে শুরু হয়। ছাত্রছাত্রী দুয়েক জনের সাথ কথা হলেও অভিভাবক/ অভিভাবিকা কারো সাখে কখনো কথা হয় না। শুধু দেখাদেখি।
তো একদিন আমার পরিচিত একজনকে দেখি স্কুলে। ওনার সাথে আমার সম্পর্ক ভীষণ মশকারীর। ওনার ছেলে পড়েন টুতে। ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছেন। প্রায় সময় নাকি আসেন, আমি সকালে থাকি না বলে আমার সাথে দেখা হয় না। ওনার সাথে অনেক কথা হলো।
কথা বলে জানলাম, অভিভাবিকারা নাকি সবাই বলাবলি করতেছে আমার বউ মারা গেছে। কারণ হিসেবে বলেছেন, আমি সব সময় নাকি মুখ কালো করে থাকি। বই একটা নিয়ে বসে থাকি। কারো সাথে কোনো কথা-টতা বলি না।
হাহহাহহা শোনেই তো আমার হাসি শুরু হয়ে গেলো। তো ওনাকে বললাম আপনি ওনাদেরকে কিছু বলেননি?
হ্যাঁ, বলেছি তো। আমি বলছি তোমার মতো ভালো দুষ্ট আর দুইটা নাই। ও কথা বলা শুরু করলে আপনারা বুঝবেন। কতো কথা যে ও বলে। কান ঝালাপালা করে দিবে।
হাহহা ঠিক বলেছেন।
একটা বিষয় মনে করে ভীষণ হাসি পাচ্ছে যে, বিয়ে না করেও আমি বউ হারিয়েছি। ওয়াও! আমার বউ মারা গেছে!
আচ্ছা। তাহলে এই ব্যাপার।
হুম এ-ই ব্যাপার!
আমি তো মনে করছি অন্য কিছু। তো কী করেন এখন?
আমি? বসে বসে একটা দীঘি খুঁড়তেছি।
হিহিহি হাউ ফানি! দীঘি খুঁড়তেছেন?
হুম দীঘি খুঁড়তেছি।
আজব!
আজব না। আপনি জানতে চান, কোথায় কেন দীঘি খুঁড়তেছি।
হুম বলেন, কোথায় কেন দীঘি খুঁড়তেছেন?
আমার মনের ভিতরে একটা দীঘি খুঁড়তেছি। কল্পনায়। তার জন্য। দীঘি না বলে সরোবর বলরে মনে হয় শব্দটা শুনতে একটু সাহিত্যিক লাগবে। আমি মনের ভিতরে একটি সরোবর খুঁড়তেছি।
মনের ভিতরে সরোবর? কল্পনায়? তার জন্য। কে সে?
নীলুফার।
নীলুফার? আপনার কী?
একটি মায়াবী ছায়া।
হুম বুঝতে পারছি।
কী বুঝতে পারছেন।
মানে আপনার কাল্পনিক কেউ একজন!
হুম, অনেকটা তাই।
সবাই কল্পপ্রিয়ার জন্য হৃদয়ে ঘর বানায়, বাসা বুনে, প্রেম জমায়, তার ছবি আঁকে কিন্তু আপনি দেখছি উল্টো। কল্পপ্রিয়ার জন্য বসে বসে সরোবর খুঁড়তেছেন। আজীব তো! সরোবরে ডুবিয়ে তাকে মেরে ফেলবেন নাকি?
না।
তো?
আমি সেই মায়াবী ছায়াটির নাম দিয়েছি নীলুফার। যাকে আপনি কল্পপ্রিয়া বলছেন। নীলুফার অর্থ পদ্মফুল। তো এই পদ্মফুলকে মনের ঘর কিংবা হৃদয় কোণে রাখলে মানাবে না। হৃদয় সরোবরে রাখতে হবে। পদ্মফুলকে দীঘিতেই বোধহয় ভালো মানায়। তাই আমার হৃদয় নিভৃতে আমি তার জন্য প্রেমের সরোবর খুঁড়তে শুরু করেছি। যাতে সে প্রস্ফুটিত লালপদ্ম হয়ে থাকবে।
ওয়াও, চমৎকার আইডিয়া। আপনি অনেক সুন্দর করে বলতে পারেন।
হাহহা তাই নাকি।
হুম তাই।
তো আপনি কী করেন এখন?
কিছু না।
কিছু না মানে?
বসে আছি।
কার জন্য?
এমনিতে!
ও আচ্ছা। বসে থাকা ভালো।
আচ্ছা আপনাকে একটা কথা বলি?
হুম বলেন, একটা না চাইরটা বলেন।
না, থাক। আরেক দিন বলবো।
হুম, আপনার ইচ্ছা।
আচ্ছা....
?
না, কিছু না।
কিছু না? তবে ভালো থাকিয়েন, আসসালামু আলাইকুম।
১৪. ১২. ২০১৫
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ
আনোয়ারা, চট্টগ্রাম।
বিষয়: সাহিত্য
১৯৬৪ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ ছোটদা ।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকেও
ফার্সি ভাষায় নিলোফার মানে শাপলা বা পদ্ম!!!
পুরাই অস্থির
অস্থির হওয়ার দরকার নাই! ভালো থাকিয়েন। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
মন্তব্য করতে লগইন করুন