সাত নাম্বার বিপদ সংকেত
লিখেছেন লিখেছেন আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ ১৯ অক্টোবর, ২০১৫, ০৮:৫১:০৮ রাত
(সাত প্লাস)
প্রায় নয় মাস ধরে স্কুলে ক্লাশ নিচ্ছি। সেভেন টু টেন, আমাকে টোটাল চারটা ক্লাশ নিতে হয় প্রতিদিন। ক্লাশ নেওয়ার সুবাধে এই চারটা ক্লাশের ছাত্র/ছাত্রীদের মনোভাব, তাদের আচার-ব্যবহার খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাচ্ছি আমি। যাদের বেশির ভাগই এখন টিন এইজে প্রবেশ করেছে এমন অথবা টিন এইজের মাঝামাঝি অবস্থান করছে এমন।
বয়ঃসন্ধিকাল; কৈশোরের উচ্ছলতা পেরিয়ে নিজের দেহ-বোধের সাথে পরিচয়, শারীরিক চাহিদা, মনের আবেগের আকস্মিক জোয়ারের ফলে ছাত্র/ছাত্রীদের Attitude , তাদের Behavior আমাকে ভাবিয়ে তোলছে প্রতিনিয়ত।
শিক্ষা কী? শিক্ষা কেন? আমাদের দেশে অর্জিত শিক্ষার ব্যবহার কতটুক কিংবা এই অর্জিত শিক্ষার প্রয়োগিক সুফল কোথায়? এই প্রশ্নগুলো আমার মনে নতুন ভাবে উচ্চারিত হতে শুরু করে কিছুদিন ধরে। সেই উচ্চারণ থেকেই আমি প্রশ্নগুলোর কিছুটা উত্তর খুঁজতে চেষ্টা করেছি।
‘শিক্ষা’ লিখে উইকিপিডিয়ায় চার্চ দিয়ে যা পেলাম তার মধ্যে এই অংশটুকুই আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে- ‘সাধারণভাবে বলা যায় মানুষের আচরণের কাঙ্খিত, বাঞ্চিত এবং ইতিবাচক পরির্বতনই হলো শিক্ষা।’
শিক্ষা নিয়ে দার্শনিক ও কবি জন মিল্টন যা বলেছেন তা না বললেই নয়, তিনি বলেছেন- ‘দেহ, মন ও আত্মার সুসামাঞ্জস্যপুর্ণ বিকাশই শিক্ষা।’ (Education is harmonious development of body, mind and soul)
নবম-দশম শ্রেণির ‘শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ও খেলাধুলা’ বইয়ে শিক্ষার একটি সুন্দর সংজ্ঞা পেলাম- ‘শিক্ষা হলো সুস্থশরীরে সুস্থমন তৈরি।’ (Education is the creation of sound mind in a sound body) (পৃষ্টা নং ২)
মোটকথা শিক্ষার কাজ হচ্ছে মানুষকে নীতিবান ও সামাজিক বানাবে। নিজের দেহ এবং মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখাবে। সর্বোপরি একটি সুন্দর জীবন পরিচালনায় সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
কিন্তু আমাদের ছাত্রদের দিকে তাকালে মনে হয়, এতো বেশি শিক্ষা আমরা অর্জন করছি, আমাদের শিক্ষা আমাদেরকে এক অনিয়ন্ত্রিত জীবনের দিকে ধাবিত করছে। আমাদের দেহ-মন-আত্মা দিনদিন নিজেদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। ‘control’ নয় আমাদের শিক্ষা যেন আমাদেরকে ‘out of control’ হতেই শিক্ষা দিচ্ছে। আমাদের কৈশোর এখন ‘অকালপক্ক’। আমাদের তারুণ্য এখন ব্রেক ফেইল করা গাড়ি।
আমাদের শিক্ষা, আমাদের শারীরিক শিক্ষা আজ শিশুদেরকে বানাচ্ছে কিশোর, কিশোর করে তোলছে যুবক আর যুবকদেরকে বানিয়ে দিচ্ছে উদ্ভট-উন্মাদ। এই যুগে কেউ এখন আর বৃদ্ধ হয় না। আঁশি বছরের বুড়াও এখন আঠারো বছরের তরুণীর জন্য পাগল। আর চল্লিশ বছরের মধ্যবয়স্কারা এখন পোষাক-আষাকে যেন ষোল বছরের যুবতী।
আমাদের সংস্কৃতি; আমাদের নাটক-সিনেমায় আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব, বিশেষ করে হিন্দি সংস্কৃতির প্রবল অনুপ্রবেশ আমাদেরকে যা শেখাচ্ছে, যা দেখাচ্ছে তাতে আমাদের দেহ-মন আর আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। মন খুঁজে বেড়ায় অচেনা ময়ূরীকে আর দেহ চায় রাস্তায় হেঁটে যাওয়া বখাটে ভাষায় তেতুল-মালদের সাথে দৈহিক মিলন করতে। নয়তো নবম শ্রেণির ছাত্রী কেন বাসার পাশের মুদির দোকানের কর্মচারীর সাথে পালিয়ে যাবে? চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র কেন তার ক্লাশের কোন একজনকে দেওয়ার জন্য ‘I Love You… N+A’ মার্কা চিরকূট লিখবে?
আমাদের শিক্ষা, আমাদের সংস্কৃতি, অনলাইন, ফেইসবুক যেন ক্রমান্বয়ে একটি ‘খোর প্রজন্ম’ তৈরি করছে। যা দেশের সার্বিক উন্নতির জন্য বিরাট হুমকি। আমাদের শিক্ষাবিদ, সমাজবিজ্ঞানীদের বোধে এই এই বিষয়গুলো ধরা পড়ে কিনা কে জানে?
১১.১০.২০১৫
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ
আনোয়ারা, চট্টগ্রাম।
বিষয়: সাহিত্য
১২৩৬ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ছোটদা আশা করি একজন আর্দশ শিক্ষ হবেন ।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
শিক্ষার Definition এখন Definition এই আটকা পড়ে আছে। আর সামনে নতুন প্রজন্মের নামে আমরা যা পাব তা হয়ত বা দুই হাত দুই পা ওয়ালা অন্য কোন প্রজাতি.....
অনেক ধন্যবাদ আপু
মন্তব্য করতে লগইন করুন