এক মায়াবী সন্ধ্যার গল্প...

লিখেছেন লিখেছেন আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ ১৮ অক্টোবর, ২০১৫, ১০:৩৯:৪৯ রাত



আপনি এমন কেন?

আমি কেমন?

মুখটাকে সব সময় গোমড়া করে রাখেন, হাসেন না। কেমন যেন রাগি রাগি...

তাই নাকি?

হুম তাইই!

হাহহাহহা... আমি জানি এটা। তবে আমার হাসি অনেক সুন্দর!

তাই বুঝি!

হুম তাই।

এভাবে অনেকটা দিন কেটে গেলো। একটু একটু চ্যাট চলতে লাগলো আমাদের। এখন আমরা একজন আরেক জনকে চিনি। এই চেনাটা আবার অতো বেশিও না। অনেকটা একপাক্ষিক, কিছুটা ধুয়াশা। সে আমাকে সরাসরি চিনে, আমি তাকে চিনি শুধু একজন ফেবুইউজার হিসেবে।

তবে সে একদিন বলেছিল আমিও নাকি তাকে কয়েকবার দেখেছি কিন্তু অত বেশি খেয়াল করিনি। অন্য দশজন পথচারীর মতো আমি হেঁটে যেতাম আমার মতো, সে তার মতো।

ফেবুতে আমার প্রোপিক দেওয়া আছে, তার নেই। সে হিসেবে সে আমাকে চিনে নিয়েছে কিন্তু আমি তাকে পারিনি। কারণ তার প্রোপিকে আছে সূর্যাস্তের ছবি। তাছাড়া আমার আইডি আমার নিজের নামে, তারটা ছদ্মনামে। সব মিলিয়ে সে হঠাৎ করে আমার কাছে কেমন একটা রহস্য হয়ে উঠলো।

আচ্ছা, আমাদের গল্পটা বলার আগে আমাদের পরিচয়টা বলে রাখলে ভালো হবে মনে হয়! হুম তাই করি আগে।

আমি সিহাব সাইমুম। এনইউ থেকে অনার্স করে শেষ করে মাস্টার্সে ভর্তির অপেক্ষায় আছি। ফাঁকে ফাঁকে একটা চাকরীও খুঁজছি। এদেশে চাকরীর এখন যে বেহাল দশা, মামা-খালু না থাকলে চাকরীর আশাই গুড়েবালি। বাংলাদেশে চাকরীর বেহাল দশা নিয়ে আমি কিছুটা চিন্তাও করেছি। এই চিন্তা আমার একান্ত ব্যক্তিগত।

একটা সময় এদেশে অশিক্ষিত বেকার ছিল বেশি। শিক্ষিত বেকার বলতে ছিলই না। যারা মোটামুটি এইট পাশ করেছে তারাও কোন কোন একটা পোস্টে চাকরী পেয়েছে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এই সমীকরণটা হয়েছে উল্টো। দেশে এখন শিক্ষিত বেকার বেশি। অশিক্ষিত বেকারের সাথে শিক্ষিত বেকার মিলে বাংলাদেশে বেকারত্ব এখন মোটামুটি উৎকণ্ঠিত সমস্যা।

তবে আরেকটা বিষয় আরো ভীষণ মারাত্মক যে, অশিক্ষিত বেকারদের কাছে বেকারত্ব অতিষ্ট হয়ে গেলে এর তিক্ততা মিঠানোর জন্য তারা যে কোন কাজ করতে পারতো কিন্তু এখনকার শিক্ষিত বেকাররা তা পারছে না। ‘শিক্ষিত’ বিশেষণটার কারণে যে কোন ধরনের কাজ করতে তাদের প্রেস্টিজে ভীষণ রকম বাঁধছে। সব মিলিয়ে যাদের নেই কোন মামু, নেই কোন খালু তাদের দিন যে কতোটা অস্থিরতার মধ্য দিয়ে কাটছে, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। রাঙ্গামাটির আঁকাবাঁকা পাহাড়ী রাস্তায় অমাবস্যার রাতে আলোহীন পথিকের মতো অনেকটা। ভবিষ্যত অন্ধকার।

আমার পরিচয় দিতে গিয়ে বেকারদের নিয়ে অনেক কথা বলে ফেললাম। তবে একদিক দিয়ে এটা আমার একটা পরিচয়ও, কারণ আমি নিজেও একজন বেকার। আর বেশি কথা বলাটা আমার একটা ভালো গুণ। ভালো গুণ বলছি এই জন্যই যে, আমার কথা শুনে শুনে অনেকেই আমাকে ‘i like u’ বলেছে, ‘i love u’র কথা না হয় আজ থাক। আমার পরিচয় মনে হয় আপাদত এতোটুকু জানলেই চলবে। হুম, এবার আসি তার সম্পর্কে।

ফেইসবুকে তার নাম ‘মায়াবী সন্ধ্যা’। আমিও তাকে এই নামেই চিনি, আসল নামটা আমাকেও এখনো বলেনি। বললে আপনাদেরকে জানাবো। এবাউটে দেখলাম কয়েক লাইন কবিতা দেওয়া আছে।

‘ইদানীং তুমি আর আসো না এখানে

এই মন্তর বিকেলের ভাবনায়

সুনীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে উড়ে যাওয়া শেতাঙ্গ সারস হয়ে

তুমি আর আসো না এখানে

এই মৌনতার পৃথিবীতে হঠাৎ ভেঙ্গে যাওয়া কল্পনায়

কোন এক...’

সে কলেজে পড়ে, অনার্স ফাস্ট ইয়ারে, ইকোনমিক্সে। অনার্স-মাস্টার্স করে নাকি একজন অর্থনীতিবিদ হবে। বেকারদের সাবলম্বী করার জন্য ড. ইউনুস সাহেবের মতো নাকি কিছু একটা করবে। বেকারদের নিয়ে এই কিছু একটা করার চিন্তা তার আগে ছিল নাকি আমার সাথে পরিচিত হওয়ার পর থেকে এসেছে কে জানে। যাই হোক, খুব ভালো চিন্তা। এমন চিন্তা কয়জন মেয়েইবা করে। বিয়ে, সন্তান, রান্নাবান্নার বাইরে অতো ঝামেলায় যাওয়ার মানসিকতা কয়জন মেয়েইবা লালন করে?

বাবার নাকি বায়িং হাউস আছে। মা গৃহিণী। ভাই বোন টোটাল তিন জনের মধ্যে সেই নাকি সবার বড়। অনার্স থার্ড ইয়ারের মধ্যেই নাকি লাল শাড়িতে লাজুকী সাজার কাজটি সম্পাদন করবার ইচ্ছা আছে তার। ঘরেও সেই বিষয়ে কিছুটা কথাবার্তা যে কালেভদ্রেও উঠেনি এমন নয়। বরঞ্চ মা নাকি এখনই দিয়ে দেওয়ার জন্য অস্থির। মা’রা আসলে তাদের মেয়েদের নিয়ে একটু বেশি চিন্তিত হয়। মেয়ের বয়স বাড়ার সাথে সাথে মায়ের চিন্তাও বেড়ে যায়, কী করে অন্যের ঘাড়ে মেয়েটাকে চড়িয়ে দিবে তাড়াতাড়ি, হায়। আমিও মেয়েদেরকে ইন্টার পাস করার পর বিয়ে দেওয়ার বিশাল পক্ষে। এই বিশাল পক্ষাবলম্বনের কারণটা না হয় অন্য দিন বলি?

হুম, এভাবেই আমাদের চলতে লাগলো, ইঞ্জিনহীন গাড়ির মতো একটু একটু করে আমাদের চ্যাটও। এভাবে আরো কিছুদিন যাওয়ার পর একদিন মাগরিবের সময় দেখি তার ফোন। রিসিভ করতেই বললো আমি গণি বেকারীর মোড়ে, আপনি কোথায়? ফ্যাকাশে আঁধারের মতো মিষ্টি কণ্ঠের আবেশটা কানে লাগতেই মনটা কেমন যেন নেচে উঠলো। একটু দুষ্টমি করে আমি বললাম আন্টি আপনি কে? অই, আমি আপনার আন্টি নাকি? আমি মায়াবী সন্ধ্যা!

মায়াবী সন্ধ্যা? মাগরীবের সময় কী করেন?

কী করি মানে? আমি তো মাগরিবের সময়ই আসি। আস্তে আস্তে সূর্যাস্ত, ধূসর হয়ে আসে পৃথিবী, রোমান্সকর গোধূলির রঙের ছটায় আমি মায়াবী হয়ে উঠি। আমি মায়াবী সন্ধ্যা, মাগরিবের সময়ই আমি আসি।

ওয়াও! সুন্দর ব্যাখ্যা তো।

এতোদিন আমি মনে করতাম আমি সুন্দর কথা বলতে জানি কিন্তু তার এই ব্যাখ্যাটা শোনার পর ভাবছি, সুন্দর কথা বলার ক্ষেত্রে এই মেয়ে তো আমার মেডাম।

আচ্ছা তাড়াতাড়ি বলেননা আপনি কোথায়? আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে তো।

তাই! আমি গণি বেকারীর ভিতরেই আছি। জাস্ট টু মিনিট অক্ষেপা করেন। এই তো আসছি।

আমি আর রিফাত তাড়াতাড়ি নাস্তা সেরে বের হলাম বেকারী থেকে। কল দিতেই রিসিভ করে বললো, পশ্চিম দিকে তাকান, আমি ফিলিং স্টেশনের ওখানে। তাকাতেই দেখলাম একটা মেয়ে হাত নাড়াচ্ছে। আমাদের আর বুঝতে বাকি রইলো না এটাই মায়াবী সন্ধ্যা।

রাস্তা পার হয়ে কাছে আসতেই সালাম বিনিময়। হাত দিয়ে তার দিকে নির্দেশ করে আমি বললাম

মায়াবী সন্ধ্যা?

না, আমি তাসফিয়া।

তাসফিয়া? তাহলে?

হিহিহি, হুম আমিই মায়াবী সন্ধ্যা, আমিই তাসফিয়া।

অহ, তো কেমন আছেন?

ভালো না!

কেন?

দুজনে নাস্তা করে আসলেন, আমার নাস্তা কই?

ওহ্হ, মনে ছিল না।

মনে কতো জন যে ঢুকে বসে আছে কে জানে! আমাদের কথা মনে থাকবে কোত্থেকে?

আবার হিহিহি হাসি।

আচ্ছা, আজকে যাচ্ছি, আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে, বাসায় আবার আম্মু বকা দিবে। আরেক দিন দেখা হবে, কথা হবে। বাই বাই...

একটা রিক্সা নিয়ে সে আলীয়া মাদ্রাসার ওদিকে চলে গেলো। আমি আর রিফাত হালকা পায়ে মেসের পথ ধরলাম। কিছু দূর যেতে না যেতেই দেখলাম তার ফোন। রিসিভ করতেই বলে উঠলো একটা কথা বলি?

হুম বলেন।

কিছু মনে করবেন নাতো?

না...।

আপনার চোখ দুটো অনেক মায়াবী। মুচকি হাসিটাও অনেক সুন্দর।

হাহহাহহা... আমি জোরে একটা হাসি দিলাম। তারপর বললাম এই জন্যই তো আমি বাইরে কম হাসি, মুখটাকে অমন গোমড়া করে রাখি...

১৪/১৫.১০.২০১৫

আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ

আনোয়ারা, চট্টগ্রাম।

বিষয়: সাহিত্য

১৬৭৮ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

346255
১৮ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১০:৫৭
আফরা লিখেছেন : কতদিন পর আসলেন ছোটদা কেমন আছেন ?

সারাদিন ফেবুতে থাকেন ব্লগে আসেন না কেন ।
আপনি কবিতা ভাল লিখেন ,গল্প ও ভাল লিখেন ।মোট কথা আপনি ভাল লিখক ।ধন্যবাদ ছোটদা
১৮ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১১:৫৪
287347
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : কতোদিন যে ছোটদা ডাকটা শুনি না। মোটামুটি ভালো। আপনার কি অবস্থা???
সারাদিন থাকি না। একটা স্কুলে ক্লাশ নিচ্ছি প্রায় ৮ মাস ধরে, যার ফলে স্কুল নিয়ে কিছুটা ব্যস্ত, সব মিলিয়ে মধ্যবিত্তের গণ্ডিবদ্ধ জীবন চলছেই গরুর গাড়ির চাকার মতো ক্যাঁৎ ক্যাঁৎ শব্দ করে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ বুবু প্রশংসার জন্য
346261
১৮ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১১:২১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : কিসের মধ্যে কি বুঝতেই মাথা গোল!
১৯ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১২:০৭
287349
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : গণিবেকারীর মোড়ে গেলে বুঝতে পারবেন, আপনাদের কাছেই মনে হয়। মোড়টা আমার ভীষণ প্রিয়...
346267
১৮ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১১:৩২
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম!

শুধুই কি গল্প নাকি বাস্তব?

অনেকদিন পর আপনার লিখা পেলাম! Angel
১৯ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১২:০৯
287350
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : এতটুকু বলতে পারি যে ছোট একটা বিষয়কে কল্পনার রঙ মিশিয়ে বাজারজাত, সত্যের ছায়া এখানে আছেই! সেটা আমার নিজেরও হতে পারে অথবা ‍অন্যের কিন্তু আমার দেখাও হতে পারে... সেটা না হয় অনুক্তই থাক!
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু
346277
১৮ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১১:৪৬
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

সুন্দর!! পাঠককে হাটের মাঝে টেনে নেয়া!
পাঠের গতি ধরে রাখতেও সফল!!
Thumbs Up Thumbs Up Rose Rose

১৯ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১২:১১
287351
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ
সুন্দর মন্তেব্যে অনেক খুশি হলাম। ভালো থাকবেন, সুন্দর থাকবেন, সুস্থ থাকবেন
346283
১৯ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১২:৪০
রক্তলাল লিখেছেন : সুন্দর
১৯ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৮:৪৫
287480
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ ভাই
346296
১৯ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ০৮:২৩
হতভাগা লিখেছেন : পরবর্তী কিস্তির অপেক্ষায় .....

Stop not , চালা'য় যাও মাম্মা ।
১৯ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৮:৪৭
287481
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : মাম্মা এটা এতটুকুতেই শেষ, আর চালানো যাবে না!
১৯ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৮:৫৫
287490
হতভাগা লিখেছেন :


চালা'য় যাইও মাম্মা
১৯ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৮:৫৯
287491
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : কেমনে চালামু মামা, গল্প তো এতটুকুতেই শেষ
346383
১৯ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪৫
শেখের পোলা লিখেছেন : বেশতো জব্বর হয়েছেে৷ বেশ গোছানো গল্প৷ আরও সামনে চলুক৷ ধন্যবাদ৷
১৯ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৮:৪৮
287483
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : অনেক অনেক ধন্যবাদ রইলো ভাই। এটা এতটুকুতেই শেষ!
346786
২২ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৪:০০
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : ইশরে আমি যদি এভাবে রসাত্বক গল্প লিখতে পারতাম....।
০৯ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:০৮
289741
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : উহরে...... আপনি এর চেয়ে অনেক অনেক দারুণ লিখেন। উৎসাহ পেলাম, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
349998
১৭ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৩:১০
রফিক ফয়েজী লিখেছেন : অনেক সুন্দর হয়েছে। কবিতার পাশাপাশি গল্পতেও বেশ। ধন্যবাদ।
২৫ নভেম্বর ২০১৫ রাত ১১:০৭
291839
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : একটু ট্রাই করা! সাথে থাকার জন্য, উৎসাহ দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File