বৃষ্টিও আর নেই...

লিখেছেন লিখেছেন আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ ২৭ জুলাই, ২০১৫, ০৩:৪৪:৩২ দুপুর



সকাল থেকে রোদ নেই, বৃষ্টিও না। শ্রাবণের আকাশ মেঘে ঢাকা। কোথাও গাঢ় কালো, কোথাওবা ধূসর মেঘ -ঢেকে রেখেছে নীলাম্বরী আকাশকে। যে কোন সময় বৃষ্টি হতে পারে। একটু-আধটু হিমেল বাতাস আছে। বৃষ্টিধারিনী মেঘগুলো খুবই হালকা গতিতে উড়াউড়ি করছে। অনেকটা মালবাহী কার্গো বোটের মতো।

ছোটবেলায় দেখতাম- বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে চলা বঙ্গোপসাগরে কুতুবদিয়া অথবা মহেশখালিগামী লবন বোঝায় করা কালো কালো বোটগুলো ভেসে যেতো। এতো ধীর গতিতে এসব চলতো যে, সকাল পেরিয়ে প্রায় দুপুর হয়ে গেলেও দৃষ্টিসীমানা ছাড়িয়ে যেতে পারতো না। বর্ষার বৃষ্টিধারিনী কালো মেঘগুলোকে আমার সেই লবন বোঝায় করা বোটের মতো মনে হয়।

গাড়িতে বসে এসব কথা ভাবতে ভাবতে আমি কলেজে এসে পৌঁছলাম। সময় প্রায় বারটার কাছাকাছি। থার্ড ইয়ারের প্রবেশপত্র সংগ্রহের জন্য এসেছি। সেশন ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন, পরীক্ষা ইত্যাদি প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া অন্য কোন দিন কলেজের ক্যাম্পাসে আমার পা পড়ে না। কাজেই কলেজ ক্যাম্পাসে আমাকে বসন্তের কোকিল নয়, প্রায় দুধের মাছিই বলতে পারেন।

যাই হোক, রানা ভাইয়ের কাছ থেকে প্রবেশপত্র নিয়ে আমরা হোস্টেল গেইটের ওখানে এসে দাঁড়ালাম। কলেজের ছেলেমেয়েরা ক্লাশ শেষে এই হোস্টেল গেইটের মোড়ে এসে দাঁড়াবেই। গোল-গাল হয়ে ইচ্ছে মতো আড্ডা দিয়ে তবে বাসায় ফিরা, নয়তো...। আমার অবশ্যই তেমন একটা আসা হয় না, আলী থাকলে মাঝে মধ্যে আসি।

আজও এসেছি আলীর জন্য। ওর আসতে দেরী হচ্ছে, তাই ওর প্রবেশপত্রটাও নিয়ে আমি এখানে এসে দাঁড়ালাম। ক্লাশের অন্যরা ছিল, সবাই দাঁড়িয়ে কথা বলতে লাগলাম।

হঠাৎ করে ঠাণ্ডা বাতাস বইতে শুরু করলো, আকাশটা আরো গাঢ় কালো হয়ে চারদিকে আঁধার নেমে আসলো। সাথে সাথেই ঝুপঝুপ বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিলো সব। ছাতা থাকলেও এতো জোরে বৃষ্টি এলো যে, সবাই ভিজে একাকার। কেউ দৌড়ে গাড়িতে উঠলো, কেউবা গাছের নিচে, কেউ কেউ ভবনের কিনারায় আশ্রয় নিল।

আমি ছাতা খুলে একটা গাছের নিচে এসে দাঁড়ালাম। ধমকা হাওয়ায় বৃষ্টির নাচন দেখতে দেখতে অনেক ক্ষণ পার হয়ে গেলো। ভাবলাম বৃষ্টি থেমে যাবে কিন্তু বৃষ্টির আর থামা কই? ধমকা হাওয়ার সাথে আরো জোরে ঝরতে লাগলো শ্রাবণের বৃষ্টি। প্রায় আধা ভেজা হয়ে গেলাম। আলী তখনো আসেনি। সময়টা কেমন যেন অমধুর হয়ে উঠলো।



গাছের নিচ থেকে সরে একটা ভবনের নিচে চলে এলাম। আরো অনেক ছেলেমেয়ে আধা ভেজা অবস্থায় এখানে দাঁড়িয়ে আছে। আমিও তাদের পাশে এসে দাঁড়ালাম। ততক্ষণে মাস্টার্সের পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলো। ছেলেমেয়েরা সব বের হয়ে হৈচৈ শুরু করে দিল। কেউ দৌড়ে এসে আমাদের পাশে জায়গায় করে নিল, কেউ কেউ ভিজতে-ভিজতে সোজা গাড়িতে গেলো।

হঠাৎ দেখলাম পূর্ব দিক থেকে ভিজে ভিজে একটা মেয়ে আসছে। বৃষ্টিতেও সে এতো ধীরে ধীরে হাঁটছে যে, আমার মনে হলো সে ক্যাটওয়াক করছে। প্রতিটি পদক্ষেপ গুণে গুণে সে আমাদের প্রায় কাছাকাছি এলো। লম্বা একটা জামা গায়ে, ওড়নাটা খুব লক্ষ্মীভাবে মাথায় জড়ানো। ভিজে সবটাই একাকার। মেয়েটাকে এতো দারুন লাগছিল, যে কেউ কল্পনায় হারাতে বাধ্য। রাধাকৃষ্ণের যমুনা খণ্ডের কথা মনে পড়ে গলো আমার।

ভাবলাম মেয়েটা আমাদের পাশে, ভবনের কিনারায় এসে দাঁড়াবে। কিন্তু না! আমার সব ভাবনাকে বৃষ্টির জলে জলাঞ্জলি দিয়ে সে একটা রিক্সাতে উঠে গেলো। পিছন থেকে আরেকটা মেয়ে তাকে ডাক দিলো- ‘বৃষ্টি দাঁড়া, আমিও যাবো’

পিছনের মেয়েটা তার সাথে রিক্সায় গিয়েছিল কিনা জানি না। আমি সত্যি কোথাও হারিয়ে গিয়েছিলাম। কল্পনার আয়নায় পড়া বৃষ্টির ফোটা ফোটা পানি দিয়ে কি যেন কি লিখতে লিখতে মনটা সত্যি দারুন রোমান্টিকতা হয়ে উঠলো। ঝাপটা বাতাস এসে আরো নাড়িয়ে দিয়ে গেলো আমার ভিতরটাকে। এমনই বিভোর সময়ে কে যেন পাশে এসে বললো- ‘কিরে তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস?’ মাাথাটা একটু নেড়ে, ভাবটা তাড়িয়ে দেখলাম- এ তো আলীই। ততক্ষণে বৃষ্টিও আর নেই।

০১.০৪.২০১৫

বিষয়: সাহিত্য

১৪০৯ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

331982
২৭ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০৩:৫৫
রক্তলাল লিখেছেন : :-b
২৭ জুলাই ২০১৫ বিকাল ০৪:২৯
274244
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : ?
331990
২৭ জুলাই ২০১৫ বিকাল ০৪:২৬
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : বাহ! দারুণ তো... ভালো লাগলো..
২৭ জুলাই ২০১৫ বিকাল ০৪:২৮
274243
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : ভালো লাগার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদGood Luck Good Luck Good Luck
331992
২৭ জুলাই ২০১৫ বিকাল ০৪:৩০
হতভাগা লিখেছেন : এখন থেকে নিয়মিত ক্যাম্পাসে যাবেন - ঠিক আছে ?
২৭ জুলাই ২০১৫ বিকাল ০৪:৩৬
274248
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : ফাইনাল ইয়ার ফাইনাল এক্সাম চলতেছে, দুইটা অলরেডি শেষ। আর যাওয়ার সুযোগ পাবো না। গেলেও যে সেই বৃষ্টির দেখা পাবো এমন কোন নিশ্চয়তা নেই, কতো মেয়ে...
২৭ জুলাই ২০১৫ বিকাল ০৪:৫৭
274250
হতভাগা লিখেছেন : চাওয়ার মত চাইলে পাওয়া যায় (ব্লগার কিশোর কারুনিক)
৩০ জুলাই ২০১৫ সকাল ০৬:০৮
274848
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : হাহাহা দারুণ একটি বাণী তো! দেখা যাক কি হয়
332034
২৭ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৩৯
আহমদ মুসা লিখেছেন : পূর্ব দিক থেকে ভিজে ভিজে একটা মেয়ে আসছে। বৃষ্টিতেও সে এতো ধীরে ধীরে হাঁটছে যে, আমার মনে হলো সে ক্যাটওয়াক করছে। প্রতিটি পদক্ষেপ গুণে গুণে সে আমাদের প্রায় কাছাকাছি এলো। লম্বা একটা জামা গায়ে, ওড়নাটা খুব লক্ষ্মীভাবে মাথায় জড়ানো। ভিজে সবটাই একাকার।
আকাশ থেকে নেমে আশা বৃষ্টি গিয়ে একাকার হয়ে গেলো মানব “মানবকন্যা বৃষ্টির সাথে”। তাই বৃষ্টির সাথে বৃষ্টির মিলনে আপনার কাছে খুবই লক্ষ্মীরাণী হয়েছে।
৩০ জুলাই ২০১৫ সকাল ০৬:০৯
274849
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : ওয়াও অনেক দিন পরে স্যার আপনাকে পেয়েছি, ভালো লাগছে ভীষণ।
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর কমেন্টের জন্যGood Luck Good Luck Good Luck
332050
২৭ জুলাই ২০১৫ রাত ০৯:২২
সিকদারর লিখেছেন : আস্-সালামু-আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। সুন্দর ভাষার গাথুনি । তবে গল্প নয় অনু গল্প পরতে না পরতেই শেষ ।
৩০ জুলাই ২০১৫ সকাল ০৬:১৩
274850
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আসসালাম। অনেক অনেক ধন্যবাদ দাদা, ভালোবাসাও রইলো দাদি আর আপনার জন্যGood Luck Good Luck Good Luck
332072
২৭ জুলাই ২০১৫ রাত ১০:২৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : বৃষ্টিতে বৃষ্টি দেথতে দেখতে আমাদের তো আর দেখছেন ই না!!
৩০ জুলাই ২০১৫ সকাল ০৬:১৬
274851
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : আপনাদের তো বৃষ্টির মতো করে দেখতে পারবো না, ‍অন্য ভাবে দেখতে হবে
332219
২৮ জুলাই ২০১৫ বিকাল ০৪:০৫
পুস্পগন্ধা লিখেছেন :
বৃষ্টি তাহলে ভালই ভিজিয়ে দিয়ে গেল।
আর সপ্ন যখন আচমকা এভাবে সামনে চলে আসে তখন মনে হয় সবাই ক্ষণিকের জন্যে আচ্ছন্য হয়ে পড়ে....
৩০ জুলাই ২০১৫ সকাল ০৬:১৭
274852
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : আসলেই আছন্ন হয়ে পড়ে। সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপুGood Luck Good Luck Good Luck
334774
০৯ আগস্ট ২০১৫ রাত ০৮:২৪
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : ভেবেছিলাম কবিতা। পড়ে দেখি এত কবিতা নয়,গবিতা।
১৩ আগস্ট ২০১৫ বিকাল ০৪:৩২
277551
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : আমার কবিতারা অভিমান করে আছে, অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File