বর্ষার পড়ন্ত দুপুরে...

লিখেছেন লিখেছেন আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ ১৯ জুলাই, ২০১৫, ১০:৪৩:০১ সকাল



(মানিক ভাইদের কাশফুল সাহিত্য গ্রুপে বর্ষা প্রতিযোগিতায় সেরা গল্প হিসেবে নির্বাচিত)

_

‘আচ্ছা, একটা কবিতার বই বের করতে অনেক টাকা লাগে, না?’

‘হুম, টাকা তো লাগবেই, টাকা ছাড়া কি এখন কিছু হয়?’

‘কিন্তু... এতো টাকা খরচ করে কবিতার বই বের করে কোন লাভ তো নেই।’

‘লাভ? প্রমথ সাহেবের কথাটি কি ভুলে গেলে? __যে খেলার ভিতরে আনন্দ নেই কিন্তু উপরি পাওনার আশা আছে, তার নাম খেলা নয়, জুয়াখেলা।

সাহিত্য হচ্ছে এক ধরনের খেলা, আর সাহিত্যের উদ্দেশ্যেই হচ্ছে সকলকে আনন্দ দেওয়া। এখানে লাভ লোকসানের হিসেব থাকবে কেন?’

‘ধুরু, তাইলে তো এটা সাহিত্যিকদের জন্য একটা লস প্রজেক্ট। তাছাড়া প্রমথ সাহেব যে সময়ের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে এই কথাটি বলেছিলেন, সেই প্রেক্ষাপট এখন আর নেই। তুমি তো বললে- টাকা ছাড়া এখন কিছুই হয় না।’

‘কোন মহৎ সাহিত্যিকের কথা এমন হতে পারে না। প্রথম সাহেব তো এও বলেছিলেন যে, __কবির সৃষ্টিও এই বিশ্ব সৃষ্টির অনুরূপ, সে সৃজনের মূলে কোনো অভাব দূর করবার অভিপ্রায় নেই-সে সৃষ্টির মূল অন্তরাত্মার স্ফূর্তি এবং তার ফল আনন্দ।

মানুষকে আনন্দ দান করা, পাঠক মনে রসের সঞ্চার করাই তো সাহিত্যের কাজ।’

‘আল মাহমুদ আর হুমায়ুন আহমেদের লেখায় আমি পড়েছিলাম, ওনারা দুজনই নাকি পেটের দায়ে লিখতেন। আল মাহমুদ তো সেদিনও বলেছিলেন, আমি এখনো লিখি পেটের দায়ে। ওনাদের ব্যাপারে তুমি কি বলবে? ওনারা কি অভাব পূরণের উদ্দেশ্যে সাহিত্য রচনা করেননি? ওনারা কি তবে মহৎ সাহিত্যিক নয়?’

‘ধ্যাত, আমি কিচ্ছু জানি না। এ সব অদ্ভুদ বিষয় নিয়ে ঘ্যান ঘ্যান করার জন্যই কি আমাকে আসতে বলেছো?’ -কপালটা একটু ভাজ করে মধ্যম চড়া সূরে নীলুফারের রিপ্লাই।

বর্ষার পড়ন্ত দুপুর। একটানা ঝুপঝুপ বৃষ্টি ঝরেই চলছে, সে অনেক আগ থেকেই। মেঘের আঁধারে মায়াবী পৃথিবী। বৃষ্টির স্পর্শে যুবতী প্রকৃতির হৃদয় ব্যাকুল করা রূপ। হঠাৎ হঠাৎ শীতল বাতাস। একটুও উশৃংখলতা নেই কোথাও।

আমরা বসে আছি, আমি আর নীলুফার। পরিত্যক্ত এই পার্কের একটি ছাউনীতে। পাশে বিশাল দীঘি। ঝুপঝুপ বৃষ্টির ফোটায় যেন দীঘির পানিতে খুশির কোলাহল তৈরি করে চলছে অবিরাম। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আমরা।

এক সময় এই দীঘিতে রঙবেরঙের অনেক নৌকা ছিল, এখন নেই। ২০০৮ কি ’০৯ সালের দিকে পার্কটি বন্ধ করে দেয় কতৃপক্ষ। আস্তে আস্তে কৃত্রিম সৌন্দর্য হারিয়ে পার্কের গাছগাছালি এখন পুরোপুরি প্রাকৃতিক। কেটেছেটে সাধু বানানো পাতাবাহারের ডালগুলো এখন মুক্ত-স্বাধীন। যার যেমনটা ইচ্ছে তেমনটাই বেড়ে গেছে।

শীতল বাতাসে কদমের গাছগুলোতে কদম কন্যাদের নৃত্য যেন মুখর করে তুলছে আমাদের সময়। নজরুল কিংবা রবীন্দ্রনাথের একটি শীতল রোমান্টিক গানের মতো মুগ্ধ থেকে মুগ্ধতার অতলে ডুবে আমরা উপভোগ করে চলছি বর্ষার সুখ-সৌন্দর্য।

একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে আমি বললাম,

‘তাইলে আর হবে না।’

আবেশী কণ্ঠে নীলুফার জানতে চায়লো,

‘কি হবে না?’

‘ঐ যে কবিতার বই! কিছু দিন ধরে মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে বিষয়টা, একটা কবিতার বই বের করবো।

কবিতার বই

কবিতার বই

কবিতার বই

আর সহ্য করতে না পেরে ভাবলাম, তোমার সাথে শেয়ার করি। তাই এই অসময়ে তোমাকে আসতে বললাম।’

হাহাহাহা... অট্টহাসিতে উৎলে উঠলো নীলুফার। বৃষ্টির রিমঝিম সুরের মাঝে তার এই হাসিটা কেমন যেন রহস্যময় মনে হলো। অনেকটা দূরে কোথাও বেজে ওঠা নুপুরের রিনিঝিনি সুরের মতো। একেবারে তাচ্ছিল্যের ঢঙে সে বললো,

‘সিরাজ, তুমি কবিতার বই বের করবে? তোমার কবিতাও মানুষ পড়বে? হাহাহাহা... আমি আর হাসি ধরে রাখতে পারছি না। প্লিজ তুমিও হাসো।

তুমিনা আসলেই একটা পাগল। অদ্ভুদ পাগল।’

নীলুর এই কথাটি শুনে আমি কেমন যেন ভাবনায় ডুবে গেলাম। ঢঙ ঢঙ ঘণ্টার মতো আমার মাথায় শুধু অনুরণিত হতে লাগলো, আমি কবিতার বই বের করবো? আমার কবিতাও মানুষ পড়বে? ভাবতে ভাবতে আমি কোথায় হারিয়ে গেলাম।

হঠাৎ বৃষ্টির কণা নিয়ে ঝাপটা হাওয়া এসে আমাকে সজাগ করে দিলো। ‘ধুর্ আর হবে না।’ নীলুফারের দিকে ফিরতে ফিরতে বললাম-

‘চলো আজ আর না, ভালো লাগছে না আর।’

কিন্তু কি আশ্চর্য, নীলু কই?

আমি চারদিকে তাকালাম, কোথাও সে নেই।

বৃষ্টি তখনো ঝরে চলছে একটানা ঝুপঝুপঝুপ। শীতল বাতাসও আছে। হঠাৎ আমার দৃষ্টি গেলো দীঘির দিকে। অথৈ দীঘিতে দেখলাম প্রস্ফুটিত পদ্মগুলো ছলনার লাল শাড়ি পরে রাঙা কন্যা সেজে আছে। বৃষ্টির ফোটা আর দীঘির পানিতে তখনো চলছে কিসের যেন কোলাহল...

Tongue

(নীলুফার আরবি শব্দ অর্থ পদ্মফুল)

০৪.০৭.২০১৫

আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ

আনোয়ারা, চট্টগ্রাম।

বিষয়: সাহিত্য

১২৩৫ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

330615
১৯ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০১:০৪
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো পিলাচ
১৯ জুলাই ২০১৫ রাত ১১:২৯
272912
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : ভালো লাগলো, অনেক ধন্যবাদGood Luck Good Luck Good Luck Good Luck
330624
১৯ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০২:০৮
চোথাবাজ লিখেছেন : ভালো লাগলো পিলাচ
১৯ জুলাই ২০১৫ রাত ১১:৪৩
272914
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : খুশি হলাম, অনেক ধন্যবাদGood Luck Good Luck Good Luck
330632
১৯ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০৩:০৯
মোঃ মাকছুদুর রহমান লিখেছেন : অনেক দারুণ হয়েছে!
১৯ জুলাই ২০১৫ রাত ১১:৪৬
272915
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ রইলোGood Luck Good Luck Good Luck Good Luck
330643
১৯ জুলাই ২০১৫ বিকাল ০৫:০৮
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : কবির কবিতা কিন্তু টাকার অভাবে অপ্রকাশিত রয়ে যায়।

কবি নিজে টাকা দিয়ে কবিতার বই বের করার প্রশ্নটা কষ্টের!!!!
১৯ জুলাই ২০১৫ রাত ১১:৪৯
272916
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : ঠিক বলেছেন, অনেক ধন্যবাদ আপনাকেGood Luck Good Luck Good Luck Good Luck
330742
২০ জুলাই ২০১৫ রাত ০৩:২০
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : খুবই ভাল লাগল। মন ছুঁয়ে গেল ভাইজান। আরো লিখুন,ধন্যবাদ..
২০ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০১:২৮
273006
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : উৎসািহত করার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া
330747
২০ জুলাই ২০১৫ রাত ০৪:২৩
কাহাফ লিখেছেন : কল্প জগতের মায়াবী কন্যার কথায় বন্ধ করবেন না 'কবিতার বই' বের করা!
আমরা আছি না! অন্তত:উৎসাহ দিতে পারবো তো!
২০ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০১:২৯
273007
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : অন্তরের অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ রইলো কাহাফ ভাই
330866
২০ জুলাই ২০১৫ রাত ০৯:০৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : গল্পের বই বাইর করেন!!
২০ জুলাই ২০১৫ রাত ১০:২৯
273086
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : নীলুফারের সাথে গল্পের বই নিয়ে কথা বলে দেখি, সে কি বলে। হয়তো হাসতে হাসতে....
331069
২২ জুলাই ২০১৫ সকাল ১১:২৫
পুস্পগন্ধা লিখেছেন :
আপনার কবিতা গুলির মত গল্পটাও অনেক ভাল হয়েছে।

নীলুফারের রহস্যময় হাসিতে ডুবে গিয়ে আবার কবিতা লিখতে ভুলে যাবেন না যেন...।
336764
১৯ আগস্ট ২০১৫ রাত ০২:৩৪
রফিক ফয়েজী লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File