সেই দু’তলা বাড়িটাতে (পর্ব- ০১)
লিখেছেন লিখেছেন আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০২:৪৬:৩৪ দুপুর
২০০৪ সালের সে কখন পতেঙ্গায় এসেছিলাম। আর এখন ২০০৯ সাল। এর মধ্যে কখনোই ওনাকে দেখিনি। দেখলেও হয়তো খেয়াল করিনি। চলতে ফিরতে প্রতিদিন কত মানুষর সাথে দেখা হয়, ক’জনের চেহারাইবা মনে রাখা যায়। ওনার বেলায়ও হয়তো এমনটা হয়েছিল তবে এখন ওনি অনেক দিনের পরিচিত। বড় ভাইয়ের ফ্রেন্ড, সে হিসেবে আমার সাথে পরিচয়। মোজামেল ভাই-ই হয়তো ওনাকে আমার ব্যাপারে বলেছিলেন।
আমাদের বাসা ছিল মুসলিমাবাদ। মাদ্রসার অপজিটে, হোটেল মিছফালার পিছনে। মাদ্রাসার পোলাপাইনরা মজা করে এই হোটেলকে বলতো ‘হোটেল নিচতলা’। কাঠগড়ে আরো কিছু মজার মজার হোটেলের ডাক নাম শোনা যায়, যেমন- টুক্কুয়ের দোকান, হোটেল নাক বরাবর ইত্যাদি। এসব দোকানের অবশ্যই ভালো নামও আছে। কিন্তু এ সব ভালো নাম কজনেই জানে?
আমাদের এলাকায়ও একজন লোক আছে। আব্দুল জলিল। সবাই তারে ‘নুন বিয়ারী জইল্লে’ বলে ডাকে। অর্থাৎ ‘নুন বিক্রেতা জলিল’। কোন এক সময় ওনার নুনের ব্যবসা ছিল, সে কারনে লোকমুখে ওনি ‘নুন বিয়ারী জইল্লে’ নামে পরিচিত। এ নামটি পরিবর্তরনের জন্য ওনি নাকি বিশাল মেজবানও দিয়েছিলেন কিন্তু ফলাফল একেবারেই শূন্য। লোকমুখে প্রচলিত বলে কথা। এত দিনের প্রচলিত নামটাকে এত সহজেই কি পরিবর্তন করা যায়? লোকমুখে ওনি এখনো ‘নুন বিয়ারী জইল্লে’ই রয়ে গেলেন।
৩ মার্চ, ২০০৯ সাল। শরতের সে এক পড়ন্ত বিকেল। কাঠগড় থেকে রাইড়ারে চড়ে আমি চলে এলাম পতেঙ্গা সী বীচে। কারণ সী বীচের পাশে ফুলচড়ি পাড়াই আমার গন্তব্য। কাঠগড় থেকে তখন সী বীচের ভাড়া ছিল তিন টাকা। আসা-যাওয়া মোট ছয় টাকা। আর এখন আসা-যাওয়া পাঁচ পাঁচ- দশ টাকা। যে ভাবে সব কিছুর দাম বাড়া শুরু করেছে না জানি আর কিছু দিন পর এই দশ টাকা কোথায় গিয়ে ঠেকবে?
ঘড়িতে তখন ৩ টা কি সাড়ে ৩ টা। গাড়ি থেকে নেমে আমি হাঁটা শুরু করলাম। ঠিকানা জানা কিন্তু পথঘাট অচেনা। ওনি যে পথে বলেছিলেন সে পথেই হাঁটতে শুরু করলাম। মুল পথ ছেড়ে ঢুকলাম সাইটপথে। দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তরে পূর্বে কিছুদূর হাটলাম। এ যেন এক অজপাড়া গাঁ। এখানে এখনো এমন গ্রাম্যতা বিদ্যমান! আমাকে তা বিস্মিত করলো।
দেখলাম- মৃদু হাওয়ায় বিলের ও-পাড়ে কাশফুলের শুভ্র পাথারে ঢেউ খেলে যাচ্ছে। ঠাণ্ডা বাতাসের কোমল পরশে গায়ের কেশগুলো একটু একটু সজাগ হচ্ছে। ধানের মাঠে কাচা ধানগুলো সোনালী রঙের জন্য হেমন্তের অপেক্ষায় ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। চারিদিকে সবুজ আর সবুজ- প্রকৃতি যেন চির যৌবনা। আর কখনো এখানে না আসলেও আমার কাছে গ্রামটাকে অপরিচিত মনে হল না। মনে হচ্ছিল আমি এখানে আরো অনেকবার এসেছি। গ্রামীণ পরিবেশ ছিল বলেই হয়তো এমনটা মনে হয়েছিল। এখন অবশ্যই আর সেই গ্রামীন পরিবেশ নাই। ইট সিমেন্ট লোহা সব দখল করে নিয়েছে।
পরনে চকোলেট কালারের গাবাডিং প্যান্ট, নিচে এক বিট ভাজ করা। ডিলে-ডালা নীল রঙের একটি পাঞ্জাবী গায়ে, বাহু পর্যন্ত হাতগুলো মুড়ানো। আঙ্গুল চালানো চুল। সব মিলিয়ে বলা যায় একেবারেই সিম্পল। এক আনাড়ি সাজে আমি। হাঁটতে থাকলাম আর মনে মনে ওনাকে খুঁজতে থাকলাম। কিছুটা এসে দেখি- একটা ছোট্ট রিক্সার গ্যারেজ আর একটা ছোট্ট মুদির দোকানও। দোকানের পাশ ঘেষে পূর্ব দিকে একটা রাস্তা চলে গেছে, এখানে এসে আমি একটু দ্বিধায় পড়ে গেলাম, কোন দিকে যাবো?
দোকানদারের কাছ থেকে জানতে চাইলাম নোমান ভাইয়ের বাড়ি কোন দিকে? সওদাগর হয়তো স্থাানীয় ছিলেন, হাত দিয়ে ইশারা করে বললেন- ‘ঐ দিকে গিয়ে একটু ডানে’। আমি মিনিট দুয়েক সে দিকে হাঁটলাম। কিছুটা এসে দেখলাম তিন রাস্তার মোড়। তিনটা দোকান। আমাকে দেখে একটা দোকান থেকে নোমান ভাই বের হয়ে এলেন। সালাম বিনিময় অতঃপর হ্যান্ডশেক। টুকটাক কথা বলতে বলতে আমাকে ঘরে নিয়ে গেলেন।
চলবে...
বিষয়: সাহিত্য
১২২৩ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সবেতো শুরু, দেখা যাক তারপর কি হয়!!!!!
অপেক্ষায় রইলা পরবর্তি পর্বের
শুরুটা ভালো লেগেছে.....
সবেতো শুরু, দেখা যাক তারপর কি হয়!!!!!
অপেক্ষায় রইলা পরবর্তি পর্বের
শুরুটা ভালো লেগেছে....আমি ও একমত তবে ধারাবাহিক পড়তে আমার ভাল লাগে না । ধন্যবাদ ছোটদা ।
চলতে থাকুক সাথেই আছি। কোন অজানা ঘটনা নিয়ে লেখা আমার বেশ ভালোলাগে। ধন্যবাদ আপনাকে
তবে লেখাটা ভাল হয়েছে,অনেকটাই আমার প্রিয় লেখক আবুল আসাদ এর স্টাইল । ধন্যবাদ ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন