অপ্রস্ফুটিত প্রেম

লিখেছেন লিখেছেন আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৮:৩৫:০৫ সকাল



‘এই মারুফ, এই... মারুফ দাঁড়াও’ -হঠাৎ মাইশার ডাক শোনে আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। পিছনে ফিরে দেখি, হুম মাইশা-ই। হাঁটতে হাঁটতে হাত নেড়ে আমাকে ডাকছে। পিছন থেকে। কিন্তু সে এখানে? এই অসময়ে? আমার সাথে হেঁটে চলা কয়েক জন লোকও পিছনে ফিরে দেখলো, আবার হেঁটে চলে গেল। কেন যেন আমি একটু শরম পেলাম।

দুপুরের প্রথম ভাগ, মোটামুটি গরম পড়ছে। হালকা শীতল বাতাস থাকলেও গরম অনুভুত হচ্ছে খুব। হেমন্তের আবহাওয়া আসলেই এমন। দিনের বেলায় মোটামুটি গরম, রাতে বেলায় কিছুটা ঠাণ্ডা, নিশির শিশির ঝরে অবিরাম। শীতও না, শরৎও না। কেমন এক নাতিশীতোষ্ণভাব ভর করে থাকে সব সময়। প্রকৃতির পরতে পরতে গাঢ় সবুজ যেন আরো গাঢ় হয়ে আছে। কেমন এক গোপন উৎসবের আমেজ মৌ মৌ করে চারদিকে।

কাঠগড় বাস স্টেশন। অসংখ্য মানুষের আনাগোনা। বাস, রাইডার, টমটম, রিক্সা যে যার মতো ছুটছে নিরন্তর, দিক-বিদিক। ফুটপাতের চলন্ত মানুষগুলোও ব্যস্ত যার যার মতো। এ এক মুখরিত মফস্বল। রাস্তার বাম পাশে একটা বাদাম গাছ। গাছের এক পাশে একটু দূরে একটা টম। পান-সিগারেট, চা-বিস্কুট ইত্যাদি পাওয়া যায়। কয়েকটা চিপস এবং আচারের প্যাকেটও লম্বা করে ঝুলানো।

আমি টমের অপজিটে গাছের ছাঁয়ায় গিয়ে দাঁড়ালাম, হাতে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘প্রাগৈতিহাসিক’। পিছনে লম্বা খালের মতো নালা, অসময়ের মালতিতে সবুজ হয়ে আছে। কিছুটা ঝোপঝাড়ও বেড়ে উঠেছে সময়ের হাত ধরে। সব মিলিয়ে সুন্দর নান্দনিক পরিবেশ।

সাদার উপর রঙ বেরঙের আলপনা আঁকা জামাটায় মাইশাকে দারুন লাগছে। মাথায় ওড়নাটা গোছানো। কাঁধে ভ্যানিটি ব্যাগ, পোষাক আষাক সব মিলিয়ে এ যেন এক লক্ষী মেয়ে। দেখে যে কারো সহজে চোখ জুড়াবে। চোখে কালো চশমা। চশমাটা হাতে নিতে নিতে দ্রুত আমার কাছে আসলো। চঞ্চল হাসি দিয়ে, ছটফট করে জানতে চায়লো-

‘কিরে কেমন আছো তুমি?’

‘এই তো ভালো, তোমার কি খবর? এই অসময়ে তুমি এখানে?’

আমার কথা শেষ হতে না হতেই মাইশা বলে উঠলো- ‘আমার তো মনে হচ্ছে তুমি এখন ভালো নেই, কেন যেন মনে হচ্ছে তোমার মন খারাপ’

আমি প্রশ্ন করলাম- ‘কেন? তোমার এমন মনে হল কেন?’

‘কেন মনে হল সেটা ভিন্ন কথা। আগে সত্যি কিনা বল- তুমি এখন ভালো নেই’

ছোট্ট একটা ফ্যাকাশে হাসি দিয়ে আমি বললাম- হুম কিছুটা ভালো ছিলাম না, তবে এখন অনেকটা ভালো আছি।

আমার হাতটা একটু করে ছুঁয়ে দিয়ে মাইশা বললো- মারুফ, দেখলা আমার ধারণাই ঠিক। আর তোমার মন কেন ভালো হয়ে গেছে তাও আমি জানি কিন্তু তোমাকে বলবো না।

হুম ঠিক আছে, আমাকে বলতে হবে না। কিন্তু তুমি এখানে কেন?

‘এ দিকে আমার একটা ফুফি আছে, একটা কাজে ওনার বাসায় এসেছি, এখন চলে যাচ্ছি।’ আমার হাত থেকে বইটা নিয়ে ও উল্টিয়ে পাল্টিয়ে কি যেন দেখলো, মনে হয় বইয়ের নামটা দেখলো। আমাকে বললো- ‘এই অসময়ে গল্পের বই নিয়ে তুমি এখানে?’

আজকে অনেক দিন পর হঠাৎ মাইশাকে দেখে আবেগের অত্রিমাত্রায় আমি কেমন যেন হয়ে গেলাম। সেই কখন তার সাথে দেখা হয়েছিল। গত বছর শীতের শুরুর দিকে। বিবর্ণ দুপুরে শুভ্রকপোতী সেজে সে এসেছিল। মায়াবী চেহারা, নাকটা একটু কেমন যেন। চটপটে ভাব, ছোট ছেলেদের মতো আদো আদো কথা সব মিলিয়ে সে এক অনন্যা।

সেই প্রথম দেখাতেই যে আমি তার প্রেমে পড়েছিলাম সে হয়তো তা বুঝেও অবুঝ হয়ে ছিল এতদিন। কি জানি কেন? অনেক আকাঙ্ক্ষা আশঙ্কার আভরণ ছিড়ে হৃদয় নিভৃতে যে কুঁড়িটি জন্ম নিয়েছিল তা ফুল হয়ে ফুটলে কি এমন সমস্যা হতো তাতে? হয়তো এই ফুলের সুরভি তার নিঃষ্প্রয়োজন। নয়তো কেন? যুগের পরিক্রমায় তলিয়ে যাওয়া তুচ্ছ ঘটনার মতো হয়তো তার হৃদয় প্রাসাদের কোন এক কোণে, কোন এক রঙহারা দেওয়ালের এক পাশে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখা আছে। আমার কখনো জানা সম্ভব হবে না এই অনুক্ত প্রশ্নগুলোর জবাব। জেনেওবা কি হবে আর?

আমি একটা রহস্যের হাসি দিয়ে মাইশাকে বললাম- এই তো তোমার সাথে দেখা করতে!

হিহিহি হাসি দিয়ে সে আমাকে বলবো- ‘গাঁধা, আমি যে এই সময়ে এখানে আসবো তুমি কি তা জানতে? ইশ্ কত ঢঙ, ঢঙের জ্বালায় আর বাঁচি নারে।’

ও এমন কিছু একটা বলবে এটা আমার ধারণায় ছিল। তাই তেমন কোন বিশেষ ভাব আমি অনুভব করিনি। কিন্তু হেমন্তের এই পাণ্ডুর দুপুরে আমি এখানে এসেছি কেন? কি জানি, নিজেও ঠিক নির্ণয় করতে পারছি না। অথৈ সাগরে ভাসতে ভাসতে এক অনিন্দ্য সুন্দর দারুচিনিদ্বীপে ভিড়া কোন এক মাঝিহীন তরীর মতো আমিও হয়তো মনের খেয়ালে-অখেয়ালে হাঁটতে হাঁটতে এখানে চলে এসেছি। কিন্তু মাইশার সাথে যে এভাবে দেখা হয়ে যাবে আমি কি তা জানতাম?

না, নয়তোবা হ্যাঁ!

কেমন একটা ভাব নিয়ে আমি ওকে বললাম- হুম জানতাম। নইলে এই অসময়ে আমি এখানে আসলাম কেন? হেমন্তের শীতল হাওয়া অন্তহীন আবেশ দিয়ে আমাকে বলেছে আজ এখানে মাইশা এসেছে। তাই আমি চলে এলাম এখানে। তোমার চঞ্চল হাসিটা দেখতে, তোমার আদো আদো কথাগুলো শোনতে।

‘ধুরু থামো তো, এতো রোমান্টিক কথা শোনার সময় নাই আমার। আমাকে যেতে হবে। অন্য কোন দিন দেখা হবে। বাই মারুফ’

-এই বলে হাত নেড়ে মাইশা ১০ নং রাইডারের দিকে পা বাড়ালো। আমিও আর ওকে থামায়নি। মাইশাকে এখনো, কখনো হয়তো আর বলা হবে না- ‘আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি অনেক…।’ তুমি সেটা বুঝেও বুঝনি।হয়তো হৃদয় নিভৃতে লালন করা ছোট্ট কুঁড়ির আর প্রস্ফুটিত ফুল হয়ে ফোঁটা হবে না। সব কুঁড়িও যে ফুল হয়ে ফুটবে এমনও তো কথা নাই, হৃদয়কে এই কথা দ্বারা শান্তনা দেওয়া ছাড়া আর কিইবা করার আছে? যেন নিয়ন আলোর ঝলমলানীটা হঠাৎ লোডশেডিং-এ গায়েব হয়ে গেল। আমিও আর থ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকিনি। টমের টেবিলে বসে কখন যে চুমুকের পর চুমুক লাগিয়ে চাটা শেষ করে ফেললাম বুঝতেই পারিনি।

১৬.১১.২০১৪

আনোয়ারা, চট্টগ্রাম

বিষয়: সাহিত্য

১৪২৬ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

291437
০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:০১
ছালসাবিল লিখেছেন : ভাইয়া,আজকে আপনার ধরনীতে আগমনের দীন Day Dreaming
Cook Cook Cook
কেকের পরিবর্তে ডিম নিন Big Grin Wave Day Dreaming
০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৭
235127
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : তাই তো! অনেক ধন্যবাদ আপনাকে...Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck
291448
০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৪২
নূর আল আমিন লিখেছেন : ভালো লেগেছে
০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৮
235128
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ ভালো লাগার জন্য Good Luck Good Luck Good Luck
291451
০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:০০
হতভাগা লিখেছেন : ''মাইশাকে এখনো, কখনো হয়তো আর বলা হবে না- ‘আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি অনেক…।''


০ ছেলেদেরই এখন
বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না
অবস্থা
০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৯
235129
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : জানি না, এ বিষয়ে জরিপ চালাতে হবে...
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck
291472
০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:৪৯
আব্দুল গাফফার লিখেছেন : সুন্দর লাইক Good Luck Good Luck Good Luck Rose Rose
০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৯
235130
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ আপনাকে Good Luck Good Luck Good Luck
291508
০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : Cook Cook Cook Rose Rose Rose খানাটা রিজার্ভ থাকল।
০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫০
235131
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : ঠিক আছে দাওয়াতটা নিলাম, আমি অবশ্যই যাবো, ভালো ভালো সব খাবার যেন রেডি থাকে ভাবিকে বলবেন....(আমি উল্টা বুঝলাম আর কি)
291523
০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:১৩
আফরা লিখেছেন : গল্প ভাল হয়েছে ছোটদা মেন আপনি এত অনিয়মিত কেন ?পরিক্ষাকি এখনো শেষ হয়নি ছোটদা ?
০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:২৫
235148
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : পরীক্ষা না, কেন যেন ব্লগে ভালো লাগে না! মাঝে মাঝে মন না ঠিকলে চলে আসি, তবে টুডেকে মিস করি এটা সত্য!
ফেবুতে আসো বুবু, ওখানে নিয়মিত দেখা হবে ইনশাআল্লাহ
291530
০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৪৫
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : হায় হায় এমন প্রেমের গল্প লিখতে পারলি তুই ??? প্রেম করিসনা কেনরে ?
০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:১০
235265
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : আমি প্রেমের গল্প লিখলে কি সমস্যা আছে! না আমি প্রেম করি না, ভালো ছেলে। তোমার মতো সকিনার মা নাই আমার...
293151
১০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১০:২০
সূর্যের পাশে হারিকেন লিখেছেন : আমিতো কিছুই পড়তে পারলাম না! শিরো নাম দেখেই সোজা এখানে চলে আসলাম! Love Struck Love Struck Love Struck শিরোনামে কি লিখেছো আমুসি? Chatterbox Cool Day Dreaming
১০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১০:২১
236792
সূর্যের পাশে হারিকেন লিখেছেন : পোস্টে কি লিখেছো আমুসি? Crying Crying
১০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৪৪
236803
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : কি লিখলাম বুঝতে পারছি না!
১০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১১:১১
236815
সূর্যের পাশে হারিকেন লিখেছেন : Crying Crying Crying Crying Crying

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File