কবিতার শবদাহ
লিখেছেন লিখেছেন আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ ২৬ অক্টোবর, ২০১৪, ০৩:২৫:৪৬ দুপুর
পর্ব-১
হাঁটতে হাঁটতে আমরা প্রায় ক্লান্ত। একটা ঝুপটিতে ঢুকলাম দু’জনে। উদ্দেশ্য নাস্তা করবো। আমাদের পাশের টেবিলে দেখলাম একটা লোক। চেয়ারে বসে আছে। একা, সাথে কেউ নেই। ত্রিশ বত্রিশের সুঠাম যুবক। গেটাপ দেখেই বুঝা যাচ্ছে শিক্ষিত।
টেবিলের উপর দু’টা ডায়রী। একটা পানির বোতলও আছে। কফি(coffe) অথবা টি(tea) কোন একটা হবে, মাঝে মাঝে সেই কফি কিংবা টি’র গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে। কেমন যেন বিষন্ন চেহারা। মাথার চুলে হাত চালিয়ে যাচ্ছে কিছুক্ষণ পরপর। মনে হচ্ছিল কোন এক অজানা টেনশনে ভোগছে বেচারা।
সে দিকে তেমন খেয়াল নেই। আমরা আমাদের মত নাস্তা করতে লাগলাম। এখানকার কাঁকড়া ভাজা এবং ছোট ছোট পিঁয়াজুগুলো দারুন সুস্বাদু। আমরাও তাই খাচ্ছিলাম। সময় তখন রাত আটটা প্রায়।
নিয়ন আলোয় মৌ মৌ করছে চারদিক। কর্ণফুলির ওদিকে থেকে ঠাণ্ডা বাতাস এসে আবেশ বিলিয়ে যাচ্ছে হৃদয়ে হৃদয়ে। সারি সারি ঝাউ গাছের ছায়া খেলা করছে পথের ওপর। আলো ছায়ার কেমন এক লুকোচুরি চলছে সবার অজান্তে।
কর্ণফুলির মাঝখানে অসংখ্য রাইটার। রাইটারের আলোয় নদীর পানি ঝিকমিক করছে।শরতের শান্ত নদী। ছোট ছোট ঢেউয়ের গান যেন পরিবেশটাকে আরো বেশি মুখরিত করে তোলছে। কয়েকটা প্রাইভেট কার, দু’একটা হুণ্ডাও ভোঁ ভোঁ করে ছুটছে এদিক থেকে ওদিক। সব মিলিয়ে নেভালের রাতের পরিবেশটা সো রোমান্টিক। হাত ধরে পাশে কোন একজন প্রেয়সী দাঁড়িয়ে না থাকলে কেমন একটা আফসোস লাগবে যে কারো।
হঠাৎ আমরা অবাক। দেখলাম আমাদের পাশের লোকটা একটা সিলভারের বাটিতে আগুন ধরিয়ে কি যেন পোড়াচ্ছে। আমরা দুজনে বিষয়টা খেয়াল করলাম। দেখলাম একটা ডায়রী থেকে পাতা ছিড়ে ছিড়ে ওনি আগুনে দিচ্ছে, আর সর্বভূখা আগুন পাতাগুলো পেয়ে আরো দাউ দাউ করে জ্বলছে। লোকটি আরো বেশি অস্থির হয়ে ওঠছে। শীতল বাতাস থাকলেও লোকটি ঘেমে একাকার। উজ্জ্বল শ্যামলা হওয়ায় কপালের ঘামগুলো আগুনের আলোয় অনেকটা সোনার পুতির মতো জ্বলছে।
আমরা আর বসে থাকতে পারিনি। ওঠে লোকটার টেবিলে গেলাম। জিঙ্গেস করলাম
_ ভাই কি সমস্যা আপনার?
_ কোন সমস্যা নাই। অল কারেক্ট। কেমন একটা বিষন্ন কণ্ঠে লোকটির উত্তর।
ওনার এমন উত্তরে আমরা আরো কৌতূহলী হয়ে গেলাম। আবার জানতে চাইলাম কি সমস্যা আপনি ডায়রীর পাতাগুলো পোড়াচ্ছেন কেন?
_ ভাই প্লিজ আপনারা যান। আমার কোন সমস্যা নাই। বিরক্তিকর কণ্ঠে লোকটির জবাব।
এরই মধ্যে আরো কিছু কথা হয়ে গেলো আমাদের।
ততক্ষণে বাটির আগুন প্রায় নিভে এলো। পোড়া কাগজের গন্ধ একটু একটু নাকে আসছে। বাতাস থাকায় এই গন্ধ বেশিক্ষণ স্থির থাকতে পারলো না। ওড়ে গেল দূরে।
কাগুজগুলো পোড়াতে পেরে ওনাকে কেমন একটু প্রশান্ত কিংবা হালকা মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে মেঘলুপ্ত সূর্যের ভ্যাপসা গরম শেষে এইমাত্র প্রশান্তির বৃষ্টি শুরু হল। আর সেই বৃষ্টিতে ধোয়ে যাচ্ছে ওনার হৃদয়ের যত বিরহ কিংবা আবর্জনা।
আমরা একজন আরেক জনের দিকে তাকালাম। ভাবলাম চলে আসবো। কিন্তু ব্যাপারটা না জেনে আসতে ইচ্ছে করলো না। ওনার অনিচ্ছা সত্বেও টেবিলের খালি চেয়ারগুলোতে আমরা বসে পড়লাম। অনেক কথা বললাম ওনাকে। অনেক অনুরোধও করলাম। কি হয়েছে তা বলার জন্য। কিন্তু ওনি আমাদেরকে কিছুই বলবেন না।আমরাও নাছোড় বান্দাহ, ব্যাপারটা না জেনে ওনাকে ছাড়ছিই না।
আমাদের জোরা জুরি দেখে ওনি আর না করতে পারলেন না। অবশেষে রাজি হলেন- আমাদেরকে ডায়রী পোড়ানোর রহস্যটা বলতে। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে ওনি বলতে শুরু করলেন…
২০.১০.২০১৪
বাকি পর্ব আসবে অন্য যে কোন সময় হঠাৎ করে। ততদিন....
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ
বিষয়: সাহিত্য
১৩০০ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালই তো কবিতার দাহ হয়!! কবর হয়না।
মন্তব্য করতে লগইন করুন