শুভ্র কপোতী
লিখেছেন লিখেছেন আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ ০৫ আগস্ট, ২০১৪, ০৮:২০:৩৮ রাত
।।একটি ছোট গল্প।।
প্রেক্ষাপটঃ চট্টগ্রাম কলেজ হোস্টেল গেইট
বিবর্ণ দুপুরে শুভ্র কপোতীর মত তবু কিসের টানে সে এসেছে, ফোন দিয়ে বলেছে-
“আমি ‘ভুবন প্রেয়সী’, কেয়ারীর নিচে দাঁড়িয়ে আছি, আপনি কোথায়?”
আমি স্বাভাবিক ভাবেই বলেছি-
‘...তুমি জিরো পয়েন্ট অর্থাৎ হতাশার মোড়ে চলে এসো।’
_আমি ওগুলো চিনি না।
_তুমি তাইলে হোস্টেল গেইটের দিকে আস...
তারপর?
তারপর সন্ধানী ধবল বকের মত একটি কৌতুহুলী মুহূর্ত পার করে চললাম। খোলা ‘প্যারেড ময়দান’র ও-দিক থেকে উত্তরী হাওয়া এসে কেমন এক অচেনা বীণ বাজিয়ে যাচ্ছে কানে কানে। সূর্যের আলোয় গাছের ছায়ারা যেন প্রফুল্ল চিত্তে উন্মাতাল নৃত্তে মাতোয়ারা। হৃদয় বেলাভূমিতে তখন অজানা প্রেমের চুপ চুপ শান্ত ঢেউ ভিজিয়ে দিচ্ছে আমার সমগ্র পৃথিবীকে।
আকাশ, পাতাল দশদিক হতে শুধু শোরগোল ওঠছে-
“এই বুকে আছে যত ভালোবাসা
তোমায় নিয়ে বেঁধেছিল স্বপ্নের বাসা
তুমি যে আমার মনেরি প্রথম ও শেষ আশা
ও আজো পথ চেয়ে রই
তুমি আসবে বলেছে এ হৃদয়...”
হঠাৎ সেলফোনটা বেজে ওঠলো। পিছনে ফিরতেই দেখি- সে অচেনা প্রেয়সী!
ঝরঝর করে বালির প্রাচীরের মতো নিমিশেই চুর্ণ-বিচ্ছুর্ণ হয়ে গেল অদেখার অদৃশ্য বাঁধ। অবশেষে দেখা হল দু’জনার। আমি কয়েক পলকে তাকে দেখে নিলাম, সেও হয়তো আমাকে...
তার মায়াবী চেহারা যেন মায়াজাল হয়ে এক অস্পর্শী বন্ধনে আমাকে বন্দী করতে শুরু করলো। তার হরিণী দু’টি চোখ যেন মন্ত্র দিয়ে মুহূর্তেই আমার বিশাল পৃথিবীকে একটি ছোট্ট রাজ প্রাসাদ বানিয়ে দিল। আর তাতে ‘রাণী বিলকিস’র মত মহা সম্রাজ্ঞী সেজে সে বসে আছে।
আমার মনের বেতারে অনুরণিত হতে লাগলো-
“তুমি কি ‘সিংহল দ্বীপ’র রপসী রাজকন্যা আলাওলের ‘পদ্মাবতী’?
তুমি কি বঙ্কিমের ‘কপালকুণ্ডলা’ -চাঁদনী রাতে হৃদয় হরণী?
তুমি কি নজরুলের ‘গোপন প্রিয়া’? শিউলিমালার ‘শিউলি’?”
কি জানি কি তার উপমা?
তার স্ফটিকস্বচ্ছ হাসি থেকে যেন ঝরে পড়ছে অজস্র লাল-সাদা বহুরঙা বেলি। আর আমি বিস্মিত-বিভ্রান্ত দুটি চোখ দিয়ে নিরন্তর আহরণ করে চলছি সেই ঝরে পড়া ফুলগুলো। সে কোকিলকণ্ঠী, কোমল স্বরে আমাকে বলছে- ‘কেমন আছেন?’
বিস্ময়ের ঘোর কেটে গেল। আমি কেমন যেন নার্ভাস কণ্ঠে বলেছি-
_এই তো ভালো, তোমার...
_এই তো আছি...
আরো কত কথা! এ যেন পরিকল্পনাহীন দুটি হৃদয়ের সুপরিকল্পিত সুনিপুন কথামালা। পরিকল্পনা করে তা গাঁথা যায় না, মনের খেয়ালে দু’জনার অজান্তে তা গাঁথা হয়ে যায়। অনেকটা লোকসাহিত্যের মতো!
একে অপরের ব্যাপারে ‘সূচনা-সমাপ্তি’ জেনে নিলাম।
তার প্রতিটি শব্দ, কথা যেন প্রেমের সুধা মিশানো সুতীক্ষ্ন বান। একে একে বিঁধে যাচ্ছিল আমার হৃদয়ে। ব্যাকুল চিত্ত যেন জ্যৈষ্ঠের তৃষিত প্রান্তর। যেন এক পশলা কালবৈশাখীর জন্য চাতকীর মতো উন্মুখ এ ধরা। কিন্তু অতৃপ্তির তীরহীন সাগরে আমাকে ডুবিয়ে উত্তুরে হাওয়ার অনুকূলে পাল তোলা তরীর মতো সে চলে গেল দূরে। ঐ দূরে...
‘শুভ্র কপোতী’ একটি কবিতা হিসেবে লিখেছিলাম কিন্তু ছোটগল্প সম্পর্কে পড়তে গিয়ে আমার মনে হয়েছে- আমার এই লেখাটি কবিতা না হয়ে ছোট গল্প হলে ভালো হবে। তাই কিছুটা এডিট করে এটাকে একটি গল্পে রূপ দেওয়া।
এডিট- ৩ আগস্ট ২০১৪ইংরেজি।
বিষয়: সাহিত্য
১৪৫৬ বার পঠিত, ৩৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
‘শুভ্র কপোতী’ একটি কবিতা হিসেবে লিখেছিলাম কিন্তু ছোটগল্প সম্পর্কে পড়তে গিয়ে আমার মনে হয়েছে- আমার এই লেখাটি কবিতা না হয়ে ছোট গল্প হলে ভালো হবে। তাই কিছুটা এডিট করে এটাকে একটি গল্পে রূপ দেওয়া।
আপনার সাহিত্য দিয়ে রসলো প্রেমের অনুভুতি ভাল লাগার মত। ধন্যবাদ।
অনেক সুন্দর এরিয়া, প্যারেড ময়দান, শীতল বাতাস, রাতের হালকা আলো সব মিলে অন্য রকম অনুভূতি। অনেক ধন্যবাদ আপনাকেও
শুভকামনা রইল।
মন্তব্য করতে লগইন করুন