কবি ও কবিতা লেখা...
লিখেছেন লিখেছেন আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ ০৬ জুন, ২০১৪, ১২:০৩:৪৪ রাত
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় একটি প্রবাদ আছে- ‘যে কোঁরি বজা পারে সে কোঁরি হইত পারে বজা পারাত কি হষ্ট’ অর্থাৎ ‘যে মুরগি ডিম পাড়ে সে মুরগি বলতে পারে ডিম পাড়ায় কত কষ্ট।’ আমার মনে হয় কবির কবিতা লেখার ক্ষেত্রেও এ প্রবাদটি সমানভাবে প্রযোজ্য। খুব সহজে পাঁচ-দশ মিনিটে আমরা একটা কবিতা পড়ে ফেলি। এবং সেই কবিতা নিয়ে আরো সহজে ‘খুব ভালো লাগলো’ কিংবা ‘ওয়াও দারুন কবিতা তো’ অথবা ‘ভাই দারুন লিখেছেন, চালিয়ে যান’ মার্কা রেডি কমেন্টও করি।
কিন্তু কখনো কি খেয়াল করেছি, এই পাঁচ-দশ মিনিটের কবিতাটা লিখতে একজন কবিকে অশ্রান্ত ডুবুরীর মত কতবার ভাবনার অতলে ডুব দিতে হয়? কল্পনার অনন্ত আকাশে দিক থেকে দিগন্তে রঙিন ডানা মেলে কত দূর দূরান্তে উড়তে হয়? স্মৃতি বিস্মৃতির অচেনা রহস্যালোকে ক্লান্ত পথিকের মত কত দিন দিনান্ত ঘুরতে হয়? কবিরা কালের ক্ষুদ্র অংশে দাড়িয়ে মহাকাল দেখে। মহাকালের বাণী শোনায়। সত্য সুন্দরের বীণা বাজায়। একজন কবি ছাড়া সে ব্যাপারটা আর কেইবা এত বুঝে?
আমি হয়তো কিছুটা বুঝি। কারণ কবিতার কবি না হলেও আমি যে ‘আলগা ভাবের কবি’। নিজেকে ‘আলগা ভাবের কবি’ দাবী করলাম এই জন্য যে, কবিতা লিখে কবি হিসেবে পরিচিতি না পেলেও বাংলা পড়ার কারণে আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুবান্ধব অনেকের কাছে আমি কিছুটা কবি হিসেবে পরিচিত। তারা seriously কিংবা funny যে ভাবেই বলুক। প্রথম প্রথম একটু লজ্জা লাগলেও এখন আর লাগে না, কারণ কবি হওয়া যার তার পক্ষে সম্ভব না, সে কথাটি এখন খুব বুঝি। সেটা কবিতার কবি হোক কিংবা আলগা ভাবের কবি হোক। দু’টুই তো কবিত্ব।
হৃদয় বন্দরে জেগে উঠা কোন বিশেষ ভাব কিংবা রোমান্সকর কোন অনুভুতিকে প্রকাশ করার জন্য, ভেসে আসা একটি দঙ্গল শব্দ থেকে রত্নশব্দগুলোকে তোলে নিয়ে, অনুপম বাণীবিন্যাসে সাজিয়ে, ভাবের যে চিত্র কবিরা আঁকে, তা নিতান্ত সহজ কিংবা মূল্যহীন কোন কাজ নয়। বঙ্কিমচন্দ্র বলেছেন- ‘কবির কবিতা বুঝিয়া লাভ আছে কিন্তু কবিকে বুঝিলে আরো লাভ।’ আজ কবিকে বুঝা তো দূরের কথা, কবির কবিতা বুঝার ফুসরতও আমাদের কই?
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের বর্তমান বাজারে কবিতার সচেতন পাঠকের চেয়ে অচেতন পাঠকই বেশি। অন্তর দৃষ্টি দিয়ে দেখি না বলেই হয়তো, শব্দের মাঝে আঁকা কবির অনিন্দ্যসুন্দর ভাবের চিত্রটি আমাদের অগচোরে থেকে যায়। যার ফলে কবিতা পাঠ করেও কবিতার সুখ-সুধা থেকে আমার বঞ্চিত হই। আসুন আমরা কবিতা পড়ি, কবিতা বুঝি, কবিতার কবিকেও কিছুটা খুঁজি। অনেক বেশি লাভ না হলেও অনন্ত কিছুটা ক্ষতি হবে না। সবশেষে বলি- ‘সবাই কবিতা ভালোবাসে কিন্তু কবিকে কে ভালোবাসবে???’
০৫/০৬/২০১৪
বিষয়: সাহিত্য
২৮৭৬ বার পঠিত, ৭১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমাদের ক্লাসের এক ছাত্র দাড়িয়ে ম্যামকে বলেছে যতটুকু স্বরণ আছেঃ
ভার্সিটির শিক্ষকরা ত সমাজ গঠন করবে ।সেবামূলক কাছে নিয়োজিত থাকবে ।
ম্যাম প্রশ্নঃ তোমার কি মনে হয় তারা গঠনমূলক কাজ করছে না ।সেবামূলক কাজে নিয়োজিত নেই ।
ছেলেটা বললঃআমার মনে হয় তারা নিয়োজিত নেই তারা গঠনমূলক কাজ করছে না ।
(কিঞ্চিত্ আমার সহমত)ম্যাম বেশ রেগে গেলেনঃ
কাউকে কিছু বলার আগে আঙ্গুল নিজের দিকে তাক কর কোন ব্যক্তিই ব্যক্তি সার্থের উর্ধ্বে নয় ।]
লেখাটা পড়ে মনে হচ্ছিল একজন সাদামাটা কলম যোদ্ধাও চায় তার কলমের প্রতিটি কালির হরফকে শ্রদ্ধা করা হোক ।মনোযোগ দিয়ে অনুভব করা হোক ।
আমার মন্তব্যটা একদম উল্টোঃ
একটা লেখা সেটা কবির হোক বা যারই হোক তা শুধুই নিজের অস্তিত্ব নিজের সত্ত্বার একটু অসচেতনা ।যখন ব্যক্তির পাঠকদের প্রতি চাওয়া পাওয়া থাকবে তখন নিজের সত্ত্বার চাওয়া পাওয়া মরে যাবে ।এক্ষেত্রে কার মন্তব্য নয় বরং নিজের মনের মন্তব্য শুনা বেশি প্রয়োজন ।তাহলে কলম থামবে না ।নয়ত ছুটন্ত ঘোড়ার চলন্ত যোদ্ধার কলম অবেলায় ঝরে যাবে ।
পড়াশুনা করেন!
কবি হলে কবিতা এমনিতেই আসবে। আর শুধু তাকে শব্দ দিয়ে সাজাতে হবে।
পড়াশুনা করেন!
কবি হলে কবিতা এমনিতেই আসবে। আর শুধু তাকে শব্দ দিয়ে সাজাতে হবে।
স্বপ্ন উৎপাদন কারীদের অনেকেই
তার বাস্তবে রুপ দিতে অক্ষম,
বাস্তবায়নে সক্ষম মহাকাল ক্ষণজন্মাদের
কারো কারো উদরে,
স্বপ্নের জন্মই হয় না । ।
তাই--
কবির কবিতা বুঝিয়াই বেশি লাভ
কবিকে বুঝে লাভ..নেই..
কবি বা ব্যাক্তি নয়..তার সৎকর্ম তথা কবিতা বুঝা ও অনুস্বরণ করাই কল্যাণকর ।
আপনি বর্তমান কবিদের মনের আক্ষেপ টুকু তুলে ধরেছেন৷ ধন্যবাদ৷
নীলপরীর আচর তোমার উপরেও যে পড়ছে তার প্রমাণ পাচ্ছি। ওকে ভালো সুন্দর করে করে রেখে দাও, সব তাকেই দিও। তার বেহজম হলে কিন্তু আমরা দায়ী নই...
পড়াশুনা করেন!
কবি হলে কবিতা এমনিতেই আসবে। আর শুধু তাকে শব্দ দিয়ে সাজাতে হবে।
সমাজের যে চিত্র বলছেন - তার জন্য অপরাধী কে?
যে দেশের প্রধানমন্ত্রী সকাল বিকাল মান্যবরদের গালি দেন সেই দেশের পড়ুয়া জনগন এমনইতো হবেই।
আসলেই আমাদের দেশের উচ্চ শিক্ষিতরা যে সব কাজ কারবার করে চলছে, অশিক্ষিতরা তার চেয়ে ভালো আছে। তারা শিক্ষিত মানুষদেরকে উপযুক্ত সম্মান দেয়, কিন্তু শিক্ষিতরা তাদের সেই সম্মানকে নিতে জানছে না।
মুহাম্মদ
সিরাজ
ভাই মনের কথাটা তুলে ধরেছেন আসলে কি বলবো আজ ভালো লেখকদের দাম নেই এই জন্য অনেকে লেখায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলে
আপনার চিরন্তন এ কথাগুলো যেন সব কালের জন্য প্রযোজ্য। কবিরা কল্পনা রাজ্যের যাদুকর। আর এ কল্পনা রাজ্যে যারা বিচরণ শিল তারাই জ্ঞানী। কবি সেই জ্ঞানের রাজ্য হতে মুক্ত সব শব্দগুলো খুজে গেথে গেথে ছন্দ তৈরী করে কবিতা বানায়্। এটি বুঝার জন্য বোদ্ধা পাঠক না হলে স্বীকৃতিহীন কবি আত্মহত্যা করে। কবি জম্ম নেয়না। কবিরাই পারে বিদ্রোহ করতে। ফুটিয়ে তুলতে প্রকৃতির সৌন্দয্যকে। তাই এ নিয়ে সোনার বাংলা ব্লগে কবিতা লিখেছিলাম সেই অনেক আগে
অক্ষর বুনতে বুনতে আমি
গড়ি শব্দ পাহাড়,
শব্দ গেঁথে গেঁথে বাধিঁ ছন্দ,
ছন্দের শৈল্পিকতায় গড়ি কবিতা,
কবিতা বেঁধে দেয় সভ্যতায় দ্বন্ধ।
আমি এখন এক নব্য বিদ্রোহী,
কবিতার ধোঁয়ায় শুধু বারুদের গন্ধ,
নিয়তির কাঠগড়ায় অসহায় কবি,
প্রহসনের বিচারালয়ে আজ সভ্যতা বড় অন্ধ।
অনেক সুন্দর করে তুমি লিখতে শিখেছ ,,দারুন হয়েছে লিখা বন্ধ কর না
ভাব সম্প্রসারন কর-
বঙ্কিমচন্দ্র বলেছেন- ‘কবির কবিতা বুঝিয়া লাভ আছে কিন্তু কবিকে বুঝিলে আরো লাভ।’
এইটা তো করবেনই সাথে প্রশ্নের উত্তর দেন-
বঙ্কিম ওই সময় কি, কেন, কোথায়, কাকে, কিভাবে, কখন এই কথা বলিয়াছিল?
সুখে না দুঃখে বলিয়াছিল।
ফ্রেন্ডস এন্ড ফেমিলি নকলের সুযোগ দিলাম। শুদু মাত্র বঙ্কিম কেই জিজ্ঞাসা করিতে পারিবেন।
ধুর মিয়া আম্নে ভালানা।
আপনের চেহারাটা আমার এক বন্ধুর মত। তার নাম মাহবুব খান আকাশ।
পটিয়া বাড়ি মনে হয়। (ভুলে গেছি অনেকদিন দেখা হয় না)
ধুর মিয়া আম্নে ভালানা।
আপনের চেহারাটা আমার এক বন্ধুর মত। তার নাম মাহবুব খান আকাশ।
পটিয়া বাড়ি মনে হয়। (ভুলে গেছি অনেকদিন দেখা হয় না)
সুন্দর লেখা।
‘নত নেড়ে নেড়ে কহিত হাসিয়া এত দিন পরে এলে?
পথ পানে চেয়ে আমি যে হেথায় কেঁদে মরি আঁখি জলে!’ আমি কিন্তু কেঁদে মরিনি। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
মন্তব্য করতে লগইন করুন