ইসলামী আন্দোলনকে সফল করতে হলে…
লিখেছেন লিখেছেন আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ ২১ মে, ২০১৪, ০৬:০৯:৩৮ সন্ধ্যা
প্রথমেই বলে রাখি আমি কোন বিষেশজ্ঞ নই, সো গভীর বিশ্লেষণধর্মী কথাবার্তা বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। নিজের ছোট দৃষ্টি দিয়ে যা দেখি, অল্প বোধ দিয়ে যা বুঝি তা থেকে সহজ ভাবে কয়েকটি কথা বলার ব্যর্থ/অব্যর্থ প্রচেষ্টা মাত্র। আমার দেখায় আমার বুঝায় ভুল থাকতে পারে। যে কেউ খুব সহজে আমার সাথে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন।
একটা ছোট্ট উদাহরণ দিয়ে শুরু করছি, যেমন- বর্তমান বাংলাদেশের প্রায় তিন ভাগ লোকই আওয়ামীলীগ সরকারকে চায় না। তারপরও ক্ষমতার জোরে তারা গদি দখল করে আছে। দেশটাকে হাতের আঙ্গুলের উপর ফুটবল ঘুরানোর মত ঘুরানো চেষ্টা করছে। ক্ষমতার ন্যাগেটিভ কিংবা পজেটিভ যে ভাবে ইউস করুক সেটা ভিন্ন কথা। সো এ দিক থেকে বিবেচনা করলে আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠে- কোন কিছুকে টিকিয়ে রাখার জন্য সেটার উপযুক্ত ধারক/ বাহকের যেমন প্রয়োজন তেমনি ধারক বাহকদের সামাজিক প্রতিপত্তি কিংবা পাওয়ার বা ক্ষমতারও বৃহৎ প্রয়োজনীয়তা আছে। ইসলামী আন্দোলকে সফলতার দ্বার প্রান্তে নিয়ে যেতেও একই কথা প্রযোজ্য। তবে এ ক্ষেত্রে ক্ষমতার নেগ্যাটিভ ব্যবহার দোষণীয়।
আফসোসের বিষয় হচ্ছে- আমাদের দেশে এখন মুসলমানদেরকেই ইসলামের দাওয়াত দিতে হচ্ছে। আমাদের অশিক্ষিত থেকে শুরু করে শিক্ষিত সমাজেরও বিরাট একটা অংশ ইসলামের বিভিন্ন বিষয় ও দিক সম্পর্কে বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারনা তাদের মন মগজে গেঁথে রেখেছে এবং ব্যবহারিক ক্ষেত্রে তার ভ্রান্ত চর্চা করে যাচ্ছে। এই ভ্রান্ত ধারনার পিছনে সবচেয়ে বড় দায়ী আমাদের পূর্ব পুরুষদের সংস্কৃতি ও ইসলাম সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতা। আর এই ভ্রান্ত ধারণা থেকে বের হতে না পারার জন্য দায়ী আমাদের সমাজের কিছু বকধার্মিক আলেম, তথাকথিত পীর ও কবর পূজারী-ব্যবসায়ীরা।
নামধারী মুসলমানদের মন মগজ থেকে ইসলামের ভ্রান্ত ধারনা মুছে দিয়ে সেখানে সঠিক ইসলামী আকিদা ঢুকিয়ে দেওয়াটা অনেক কঠিন একটা কাজ। আর এর জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন সাধারণ মানুষের মাঝে সঠিক ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া। ব্যাপক ভাবে দাওয়াতী কাজ ছাড়া গণপর্যায়ে ইসলামের সঠিক শিক্ষা পৌছানো অসম্ভব। মানুষকে শুধু দাওয়াত দিয়ে গেলেই হবে না। আমাদেরকে দাওয়াত কতটা ফলপ্রসু হচ্ছে তাও গভীর দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। আর দাওয়াত গ্রহনকারীদেরকে সংঘবদ্ধকরে ইসলামের মৌলিক বিষয়াবলীর উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের মধ্য থেকে অগ্রগামী শিক্ষিতদেরকে সমাজের বিভিন্ন স্তরে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক আসনে বসিয়ে দেওয়ারও প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। রাষ্ট্রীয় সামরিক, বেসামরিক ক্ষেত্রের সকল উচ্চ স্তরে সঠিক ইসলামী মনমানসিকতার লোকদেরকে বসানোর চেষ্টা করতে হবে। কারণ সমাজের অপপ্র্রথাকে ভেঙ্গে দিয়ে ইসলামী প্রথা প্রতিষ্টিত করতে গেলে প্রথমেই বিরোধীতা করবে সমাজের মোড়লরা, বড় বড় গোফওয়ালারা । অতীত ইতিহাস, বর্তমান অবস্থা অন্তত তাই বলে। ক্ষুদ্র ব্যক্তিক্ষেত্রের গণ্ডি ছাড়িয়ে বৃহৎ রাষ্ট্রীয়ক্ষেত্রে ইসলামী প্রথা বা সংস্কৃতি প্রতিষ্টিত করতে বললেই নড়েচড়ে উঠে এসব সুবিধাবাদীরা। কাজেই তাদের প্রতিবন্ধকতাকে মোকাবেলার জন্য উপযুক্ত মানুষ ও সামাজিক পাওয়ার দুটোই প্রয়োজন। মিশরের ব্রাদারহুডের সাম্প্রতিক ইতিহাস এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত উদাহরণ।
একটা ছোট্ট কাহিনী দিয়ে শেষ করবো। ২১ সেপটেম্বর, ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দ। বাহার ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা নয় জন ব্লগার কল্যান পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ ইব্রাহীম বীরপ্রতীক সাহেবের সাথে এক সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হয়েছিলাম, চট্টগ্রামের একটি অভিজাত কমিউনিটি সেন্টারে। ওনি আমাদেরকে ওনার জীবনের অনেক অভিজ্ঞতা শোনালেন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমাদেরকে অনেক উপদেশও দিয়েছিলেন। আমাদের জন্য মোটামুটি ভালোমানের আপ্যায়নের ব্যবস্থাও করেছিলেন। সেদিন আমরা সবাই ওনাকে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনেক প্রশ্ন করেছিলাম। সবার শেষে আমি ওনাকে প্রশ্ন করেছিলাম- ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলাম’ এটাকে আপনি কিভাবে দেখেন? আমার প্রশ্ন শোনে ওনি আমাকে বললেন দাঁড়াও, আমি দাঁড়ালাম। বয়স কত? আমি বললাম ২২/২৩ হবে। কোন ক্লাশে পড়? অনার্স থার্ড ইয়ারে।
তারপর ওনি আমাকে ওনার পাশে ডেকে নিয়ে গেলেন। ছোট্ট একটা কেকের টুকরো নিয়ে ওনি আমাকে বললেন হা কর। আমি হা করলাম, ওনি কেকের টুকরোটা আমার মুখে ঢুকিয়ে দিলেন। তারপর আমাকে জিঙ্গেস করলেন আমার এই খাওয়ানোটা তুমি কি সহজভাবে নিছো নাকি কঠিন ভাবে নিছো? আমি বললাম সহজভাবে নিছি। ওনি বললেন তুমি যে এই কেকের টুকরোটা সহজ ভাবে নিছো ইসলামকে তো কেউ এরকম সহজভাবে নেয় না। আজ থেকে সাড়ে চৌদ্দশত বছর আগে আবু জেহেল আবু লাহাবরা যেমন নেয়নি এখনকার হাসিনা বল খালেদা বল অথবা অন্য যে কেউ বল তারাও এত সহজ ভাবে নিবে না। সো আমাদেরকে যুগ যুগ ধরে ইসলামী আন্দোলন করে যেতে হবে।
পরিশেষে কেউ যদি মনে করে কোন একটা ইসলামী দল ক্ষমতায় গেলেই এ দেশে ইসলামী আন্দোলন সফল হয়ে যাবে তা অবশ্যই ভুল। ইসলামী আন্দোলন মাত্র একটি মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড়াবে। সামনে দীর্ঘ পথ নব্য আবু জেহেল আবু লাহাবদের প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়ে আমাদেরকে সিরাতুল মুসতাকিমের পথ ধরে এগিয়ে যেতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। বাংলাদেশের মানুষদেরকে সঠিক ইসলাম বুঝার তৌফিক দান করুন। তথাকথিত পীর মাজার বাদ দিয়ে সঠিক ইসলামী দলের পতাকা তলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তৌফিক দান করুন।
২১ মে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ।
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ
বিষয়: রাজনীতি
১৩৩৪ বার পঠিত, ৪৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভাবছিলাম আমি প্রথম মন্তব্য করুম ।
ভিশু ভাইয়া কোত্থেকে আসল আবার ?
ভাল্লাগছে ভাইয়া ।
আমনে বন্দুক দিয়ে ক্ষমতায় চলে গেলে আমি আপনারে বন্দুক দিয়ে ক্ষমতা থেকে নামাতে পারুম কিনা?
আমি কিছু কিছু পোষ্টদাতা ও মন্তব্যকারীকে লক্ষ্য করে বলেছি। যারা ইসলামী আন্দেলনকে অন্যান্য রাজনীতির সাথে তুলনা করতে চায়। আপনাকে নয়। ধন্যবাদ
ভালো লাগলো।
শুধু একটা কথা মানতে পারলাম না যে ৩/৪ অংশ এই সরকার চায় ৫% ভোট পড়লে হিসাব করে দেখুন কত % হবে
না অন্য কোন কাজে আসে? কেন এদেশের মানুষ এটা নিয়ে আগ্রহ দেখাবে?
যারা বাংলাদেশে ইসলামের ষোল এজেন্ট হিসেবে দাবীদার তারাও এসব প্রশ্নগুলোর সহজভাবে জনগনকে বুঝাতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। তা না হলে পূর্ব থেকেই এদেশের মানুষ কেউ নামে মুসলমান তো আবার কেউ কাজে মুসলমান। কেউ ইসলামের ব্যবহারকারী কেউ বা আবার ইসলামের প্রয়োগকারী। যাদের কথাই বলেন না কেন কেউ এসব প্রশ্নের উত্তরগুলো দিতে ব্যর্থতার পরিচয় দেন।
একজন খেটে খাওয়া কৃষকের ইসলাম কি কাজে আসবে? একজন শিল্পউদ্যেক্তার ইসলাম কি কাজে আসবে? একজন কলা-সাহিত্যের মানুষের কাছে ইসলাম কি কাজে আসবে? একজন বিজ্ঞানীর কি উপকার করতে পরে ইসলাম? কি সাহায্যে করতে একজন ডাক্তারকে রোগী ঠিক করার ক্ষেত্রে? রাষ্ট্রের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে ইসলাম তার কি উপকার করতে পারে? ইত্যাদি প্রশ্নগুলোর উত্তর কার্যকরভাবে দেয়ার লোকজন কি পরিমান তৈরী হয়েছে?
ইসলামকে এখনো নামাজ, রোজা, হজ্ব, তসবিহ, তালিম, দোয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছে কথিত ইসলামের ষোল এজেন্টধারাীরা।
আপনার লিখার বিষয়বস্তুটি আরো আলোচনার খোরাক দিত, ভিন্ন মতাদর্শীদের কাছে আপনার বক্তব্য আরো চমৎকারভাবে ফুটে উঠতো - যদি আপনি 'ইসলামী আন্দোলন' এর একটা সংজ্ঞা দিতেন বা দিতে চেষ্টা করতেন। যদি আপনি কষ্ট করে 'ইসলামে (কোরান হাদীসে), ইসলামী আন্দোলন' সম্পর্কে কি বলা হয়েছে - তার দু একটা রেফারেন্স দিতেন।
রিসেন্টলী - ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়েছে - আপনার মত যারা ইসলামকে ভালবাসেন এবং সামর্থ্যানুযায়ী কিছু করতে চান - তাদের মনোযোগ দুটি বিষয়ে নিবন্ধ করা উচিত। একই সাথে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের উচিত - আলেম ওলামা ও শিক্ষিত সমাজ হতে - এ দুটি বিষয়ের পরিপূর্ন ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষন তলব করা।
১। নবী মোহাম্মদ সঃ এর শেষ জামানা সংশ্লিষ্ট 'মেজর সাইন সমূহে'র বিচার বিশ্লেষনের আলোকে বর্তমান পৃথিবীর সময়কালের অবস্থান (সাইন প্লাস অর্থনীতি, মুদ্রাব্যবস্থা, রাজনীতি, যুদ্ধাবস্থা, ফসল ও পানির নিয়ন্ত্রন ইত্যাদি ইত্যাদি) ও তার আলোকে কোরান হাদীসে মুসলিমদেরকে কি করতে বলা হয়েছে?
২। ঐ সাইন সমূহের আলোকে অপরাপর ইসলামী আন্দোলন সমূহের অবস্থান, এ্যাকশান, রেজাল্ট সমূহ বিশ্লেষন এবং তার আলোকে করনীয় কি নির্ধারিত হতে পারে?
আবার ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি অনবদ্য একটা লিখা উপ হার দেবার জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন