চিঠি লেখা...
লিখেছেন লিখেছেন আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ ০৮ এপ্রিল, ২০১৪, ০৮:৪৭:৩০ রাত
আমার ছোট চাচা। খুব মজার একজন মানুষ। অনেক রোমান্সকর তার জীবন কাহিনী। স্কুল জীবনে খুব ট্যালেন্টেড একজন স্টুডেন্ট ছিলেন। ফাইভ, এইটে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি পেয়ে এলাকাবাসীর সর্বোচ্চ প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। এসএসসিতে অল সাবজেক্টে স্টারমার্কস পেয়ে এলাকায় রীতিমত তোলপাড় তুলেছিলেন। রেজাল্টের দিন চাচাকে দেখার জন্য নাকি অনেক লোক আমাদের বাড়িতে এসেছিল। চাচা এত থ্রুলি ইংরেজি বলতে পারেন যে, তার সামনে আমরা তো ঠিক মত কথাই বলতে পারি না।
যাই হোক, চাচার জীবনী লেখার জন্য আমি আজ বসিনি, মূলত চাচার একটি কথাকে মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য আমার আজ লিখতে বসা। 'লেখা-পড়া' বিষয়ে এডভাইস দিতে গিয়ে চাচা আমাদের প্রায় বলতেন- 'কোন মেয়ে যদি তোদেরকে লাভ লেটার দেয়, সুন্দর ভাষায় সাজিয়ে তার সঠিক উত্তরও তোরা দিতে পারবি না। ডামিশ কোথাকার? পড় বেশি করে। লাভ লেটার লেখার জন্যও অনেক জ্ঞানের দরকার। জানিস, আমার লেখা চিঠি দিয়ে সিনিয়র, জুনিয়র, সহপাঠিরা কত মেয়ের সাথে কত প্রেম করেছে, তার কোন ইয়াত্তা নাই।'
আমরা তখন চাচাকে বলতাম- 'আপনি কয়জনের সাথে করেছেন?' চাচা হেসে জবাব দিতেন- 'ধুর পড়ালেখা নিয়ে আমি এত ব্যস্ত ছিলাম যে, প্রেম করার সময় পাইলাম কই? তাছাড়া ক্লাসের মেয়েগুলা আমারে খুব ভয় পেতো।' ভিতরের রুম থেকে এ সব শুনে আম্মু তখন চাচাকে বলতেন- ছোট ভাতিজা-ভাতিজিদেরকে আপনি এগুলো কি বলতেছেন? চাচা বলতেন একটু মজা করছি আরকি। সবাই মিলে আমরা তখন অনেক হাসতাম।
কেন জানি না, এই অবেলায় আজ চাচার কথাগুলো আমার খুব মনে পড়ছে। কাউকে একটা চিঠি লিখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কাকে লিখবো? চিঠি দেওয়ার মত আমার তো কেউ নেই। তাছাড়া এখন কি কেউ চিঠি দেয়? আলিমে আমাদের বাংলা স্যার বলতেন- হোস্টেলে খেয়ে খেয়ে না ঘুমিয়ে, অবসর সময়ে কিছু কিছু লিখবা। লেখার কোন বিষয় না পেলে অন্তত কোন একজন প্রেমিকাকে কল্পনা করে তার জন্য একটি রোমান্টিক চিঠি লিখবা।
ইশ্ আমার তো একজন কাল্পনিক 'নীলপরী' আছে। তাকে না হয় একটা চিঠি লিখি। এখন চিঠি লিখলে সমস্যাটাবাই কি? আজ একটা চিঠি আমাকে লিখতেই হবে।
'০৭/০৪/২০১৪
প্রিয় নীলপরী,
পত্রের শুরুতে আমার ভালোবাসা নিও। আমি এখন মোটেও ভালো নেই। তোমাকে ছাড়া একাকী কি করে ভালো থাকি বলো? তোমার হৃদয়ে প্রস্ফুটিত প্রেম গোলাপের সুরভি নিতে আমি আজ সেই মৌমাছির মত ব্যাকুল। তুমি কোথায়? কেমন আছো? -আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে। চেনা অচেনা শত মানুষের ভিড়ে তোমাকে কত খুঁজি, কিন্তু তুমি নাই তো!
আচ্ছা, তুমি কি কখনো আমাকে খুঁজো না? তুমি খুব নিষ্ঠুর, হৃদয়হীনা! তোমাকে এত্তসব বলতেছি, তুমি আবার রাগ করবা না তো? রাগ করলে আমার কি, আমিও তোমার সাথে রাগ করবো।
এই নীলা, তোমার নীল শাড়িটি কেমন আছে? তোমার লম্বা কালো চুলগুলো কি খোপা করে রাখো? প্লিজ খোপা করো না, খোপা করলে তোমাকে বউ বউ লাগবে। নীল শাড়িতে খোলা চুলে তোমাকে খুব মানাবে কিন্তু...! আমাদের কখন দেখা হবে? '
ধুর আমি এইসব কি লিখছি? চিঠিতে কি কেউ এইসব লিখে? চিঠির ভাষা হতে হবে আরো আবেগী, হৃদয় থেকে স্ববেগে নির্গত। আমার এই অনুভূতিহীন ফালতু চিঠিটা অন্য কেউ পড়লে আমাকে নিশ্চয় পাগল ভাববে। কে কি ভাববে তাতে আমার কি? সব প্রেমিকরাই আমার মনে হয় এক রকম পাগল। আমি কি প্রেমিক? হুম আমিতো প্রেমিকই। আমি নীলপরীর পাগল প্রেমিক। আমার পক্ষে আর চিঠি লেখা সম্ভব না। সো নীলা তোমাকে বলছি-
'তোমার প্রস্ফুটিত গোলাপের
সবটুকু সুরভি লুটে নিয়ে
স্টেশনের সেই যাত্রীর মত তোমাকে
নিঃস্ব করে দিতে চাই, তবে...
কেউ লুট হয়
কেউ লুটে নেয়
এই 'লুট হওয়া' আর 'লুটে নেওয়া'র মধ্য দিয়েই
একটি নতুন,
চেতন-অচেতন সুখের
সচেতন সোপান রচিত হয় দু'টি ভবে...' (লুট)
বিষয়: সাহিত্য
১২৬৩১ বার পঠিত, ৪৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমার
প্রানের
প্রিয়
ময়না
না না তুমি কি ময়না ?
তুমি তো কচি কাঁচা
সদ্য পুটিত সুন্দর একটি গোলাপ ।
ছোটকালের এক বন্দুর লেখা ছিটির প্রথম কটা লাইন ।
পুরুত ছিটির জামানাটা চলে গেল ।
অনেক ধন্যবাদ
আসলে আমি গুছয়ে লিখতে পারি না অনেকেই আমাকে ভুল বুঝে । ছোটকালে বন্দুটা তার প্রেমিকাকে ছিটিটা লেখেছিল ।
আপনাকে নীলপরীর ঠিকানা দিলাম, চিনে আসতে পারেন- নীলপরী
প্রেম ? হু এখনকার পোলা-মাইয়ারা প্রেমের কি বুঝে । আরে প্রেম করছি আমরা একবার চিঠি লিখছিলাম ২৮ পাতা তারপরো শেষ হয় না । আহ! কই গেল সেই দিন । আর এখনকার পোলা-মাইয়ারা আফ্রিকান জোম্বিগ মত হাটতে হাটতে এস এম এস দিয়া প্রেম করে । ছে এরে আবার প্রেম ।
পাঠাপাঠি মজা। ভালো লাগলো
কেন জানি না, এই বিষয়টাতে লিখতে আমি খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। দিন দিন আমার পাঠকও কমে যাচ্ছে...
‘মাওলানা মওদুদির ও নাকি সাহিত্য চর্চায় হাতেখরি হয়েছিল কাল্পনিক প্রেমিকাকে প্রেমপত্র লিখার মাধ্যমে।’ ...এটা জেনে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত হলাম। তবে এখন এসএসএস’র প্রচলন। যদিও দু-একটি চিঠি আমরা লিখি তাতে সমস্যা তো নাই!
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর কমেন্টের জন্য
প্রেম কিজিস? এটা খায় নাকি গায়ে দেয়?
এটা কি গাছে ধরে নাকি হাতে বানায়?
এটা কি ভিজিবল নাকি অদৃশ্য কোন বস্তু?
এটা কি বাস্তবে পাওন যায় নাকি স্বপ্নে
ভাই
|| জবাব নেই ||
তবে ২য় চিঠিটা দারুন!!
আরেকটা বিষয় আমাকে কৌতূহলী করছে যে, যেখানে সুমাইয়া হাবীবা সেখানে সূর্যের পাশে হারিকেন, আমার আরো কয়েকটি লেখায়ও খেয়াল করলাম, এখানে কি কোন কিন্তু আছে?
হ্যা, পরিচিত হলে ভালোই লাগে। তবে আমিও যখন নবীন ছিলাম তখন আমারও পরিচিতজনদের জন্য আনইজি ফিল করতাম। তাই বহুবছর ছদ্মনামে লিখেছি।
আর হ্যারির ব্যাপার হলো যেখানেই শান্ত শিষ্ট বড়আপুরা, সেখানেই গিয়ে হাজিরা দেয়া। ( হ্যারি হচ্ছে সব ব্লগার বড়আপুর আদরের ছোট্ট ভাই। আর পাহারাদার। দেখোনা হারিকেন নিয়া ঘুরে! ) আর কমেন্ট প্রতিযোগীতায় ফাস্টু হওয়া!
মন্তব্য করতে লগইন করুন