‘নীলপরী’ একটি অব্যক্ত মহাকাব্য
লিখেছেন লিখেছেন আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ ১৭ মার্চ, ২০১৪, ০৩:৪০:১৫ দুপুর
মনটা আজ মোটেও ভালো নাই। কেন জানি না। ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়’ -আসলে এই অচিন পাখির হালচাল বুঝা বড় দায়। আমার মন ভালো না থাকলে কি হয় জানো? -তোমাকে খুব মনে পড়ে। এখনও পড়ছে, তাই তোমাকে নিয়েই আজ লিখতে বসছি। কিন্তু কি লিখবো?
আমি তো আর মহাকবি আলাওল নই যে, শত উপমা-রূপকে সাজিয়ে তোমাকে নিয়ে একটি ‘পদ্মাবতী’ লিখবো। আমি তো আর রবীন্দ্রনাথ নই যে, ‘আশা দিয়ে ভাষা দিয়ে তাহে ভালোবাসা দিয়ে...’ শতবার শতরূপে সাজিয়ে তোমাকে নিয়ে ‘মানসী’ লিখবো। ‘আমি ক্লান্ত প্রাণ এক চারদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন/ আমারে দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন’ -মনের কথাগুলোকে এভাবে সাজিয়ে, নিঃসংকোচে জীবনানন্দ দাশের মত আরেকটি কালোত্তীর্ণ ‘বনলতা সেন’ লিখাও তো আমার পক্ষে সম্ভব না। সো আমি কি করবো? আমি তো পারি না। কেউ কেউ পারে, সবাইতো আর পারে না। সবাইকে যে পারতে হবে এমনও তো কথা নাই। আমি না হয় না পারারই দলে। সব গাছে তো আর ফুল ধরে না, কিছু কিছু পাতাবাহারও থাকে। আমি না হয় পাতাবাহার। পাতাবাহারে ফুল ধরে না ঠিক কিন্তু তার অপ্রস্ফুটিত ফুলগুলো পাতায় পাতায় শত আলপনা হয়ে ফুটে উঠে - হৃদয়ের জানালাটা খোলে তুমি একটি বার দেখিও।
তবে এটা বলতে পারি, আমার হৃদয়ের অদৃশ্য পাতায় প্রতিদিন তোমাকে নিয়ে শত অসমাপ্ত, অব্যক্ত মহাকাব্য রচিত হয়। হৃদয়ের ক্যানভাসে কল্পনার জলরঙে আমি শতবার তোমার ছবি আঁকি, আবার মুছে ফেলি, আবার আঁকি। কারন, তুমি তো ‘অচেনা গ্রহ’ -আমি যে এখনো তোমাকে আবিষ্কার করতে পারিনি। আমার সব ভাবনা-কল্পনা, ধ্যান-ধারনা, আশা-ভাষা, শব্দ-উপমা দিয়ে আমি তোমাকে শতবার গড়ি, শতবার ভাঙ্গি, আবার গড়ি। কিন্তু ইবরার টিপুর মত হয়তো সূর দিয়ে গাইতে পারি না-
‘তুমি আকাশের বুকে বিশালতার উপমা
তুমি আমার চোখেতে সরলতার প্রতিমা
আমি তোমাকে গড়ি ভেঙ্গে চোরে শতবার
রয়েছো তুমি বহুদূরে আমাকে রেখে ছলনায়...’
আচ্ছা থাক, অনেক হয়েছে। এবার চল পৃথিবীর সবার সাথে তোমাকে পরিচয় করিয়েদি। হায় হায় আমি তো তোমার নাম জানি না। কি হবে? সবাইকে কি বলবো? ‘তুমি আমার এই’, ‘তুমি আমার সেই’ -এত কথা বললাম কিন্তু তোমার নামটা জানি না। তা কি করে হয়? তুমি যেহেতু আমার হৃদয়ের মহাকাব্য সো এই কাব্যের তো একটা নাম দিতেই হবে। আমার ইচ্ছে মত তোমার একটা নাম দিবো। তুমি ‘নীলপরী’। অর্থাৎ নীল শাড়িপরা পরী। হা হা...
কি অবাক হলে নাকি? তুমি হয়তো প্রশ্ন করতে পারো, এতো নাম থাকতে নীলপরী কেন? হুম নীলপরী নাম দেওয়ার পিছনে একটা কারন আছে। দাঁড়াও বলছি- বড়ু চণ্ডীদাসের ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যে পড়েছিলাম- দুধের পসরা নিয়ে নীলশাড়ি পরে রাধা যখন যমুনার ওপাড়ে যেত, কৃষ্ণ তখন নৌকার মাঝি সেজে কিছু দূর নিয়ে গিয়ে তাকে নদীতে ফেলে দিত। আবার তাকে নৌকায় টেনে তোলত। এভাবে ভেজা নীল শাড়িতে রাধাকে দেখে কৃষ্ণের...আর বলবো না। বাকিটা তুমি পড়ে নিও। বুঝে নিও।
আমার কল্পনায় তুমি ‘সিক্তনীলাম্বরীতে রাধা’। ব্যাকুল এ হৃদয় আকাশে তুমি দূরে বহুদূরে উড়ে যাওয়া ‘শরৎশুভ্র মেঘ’। আমার ভাবনায়, ধ্যন-ধারণায় তুমি এক রহস্যময়ী ‘অচেনা’। আমি এক ক্লান্ত পথিক -কত পথ হাঁটি। আমি তোমাকে খুঁজি, আমি তোমাকে বুঝি না, বুঝতে চাই। স্বপ্ন-কল্পনা-ভাবনার সেই তোমাকে বাস্তবে পেতে এ হৃদয় এখন জ্যৈষ্ঠের চৌচির তৃষাতুর প্রান্তর। কোমল স্পর্শের হাত দিয়ে আমি যখন তোমাকে ছোঁতে চাই, তুমি কোথায় অদৃশ্য হয়ে যাও, হারিয়ে যাও, লুকিয়ে যাও। কারন তুমি যে পরী। নীল পরী। পরীরা তো অদৃশ্য, অস্পর্শী। সো সবশেষে নজরুলের সেই কথাগুলো তোমাকে মনে করিয়ে দিতে চাই-
‘যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে,
অস্তপারের সন্ধ্যাতারারয় আমার খবর পুছবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
ছবি আমার বুকে বেঁধে
পাগল হয়ে কেঁদে কেঁদে
ফিরবে মরু কানন গিরি,
সাগর আকাশ বাতাস চিরি’
যে দিন আমায় খুঁজবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!’ (অভিাশাপ)
১৭/০৩/২০১৪
এই লেখাটির জন্য আমার দুষ্ট মন আর অচেনা এক মনের পরী ছাড়া আর কেউ দায়ী নয়....
বিষয়: সাহিত্য
৩৫১১ বার পঠিত, ৩৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ধন্যবাদ বদ্দা, তোমার নীলপরী তোমার হোক
তবে লিখাটি ভাল লাগল। অনেক ধন্যবাদ
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
তুমি আমার চোখেতে সরলতার প্রতিমা
আমি তোমাকে গড়ি ভেঙ্গে চোরে শতবার
রয়েছো তুমি বহুদূরে আমাকে রেখে ছলনায়...’
অ্যাই কিতা কইতাম। কিছু খুজি হাইনা।
ব্লগে বসে প্রিয়সীর সাথে শব্দের ভাষায় কথা বললেন। আপনার মনের কথাগুলো ভাল লেগেছে। মনের সাথে প্রিয়সীকে নিয়ে ব্যক্তিগত আলাপন, হদৃয়ের কথায় আমারও ইচ্ছে করে গড়ে তুলতে নতুন ভালবাসার প্রাসাদ।
ধন্যবাদ।
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর কমেন্টের জন্য
ইর্ষা হচ্ছে। ইস..... আমিও যদি লিখতে পারতাম!!
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে কষ্টকরে পড়ার জন্য
মন্তব্য করতে লগইন করুন