‘বিয়ের গল্প প্রতিযোগিতা’র অল্প গল্প
লিখেছেন লিখেছেন আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৭:৪৬:১৪ সন্ধ্যা
(মুমতাহিনা তাজরি আপুর বিয়ের গল্পের টুকিটাকি পোস্টে কমেন্ট করতে গিয়ে আমার এই ছোট্ট গল্পের অবতারনা। আপুর প্রতি কৃতজ্ঞতা। উল্লেখ্য এখানকার প্রতিটি চরিত্র কাল্পনিক, কারো সাথে মিলে গেলে কাকতালীয়, তার জন্য লেখক দায়ি নই)
কি বলবো?
_আপনার যা ইচ্ছা তাই বলেন।
কিছুই বলবো না।
_ক্যান?
এমনিতেই!
_প্লিজ ভাই বিয়ে নিয়ে কিছু একটা বলতেই হবে আপনাকে। খুব জোর-রিকুয়েস্ট করলাম আমরা।
বলতেছি, খাড়ান...
ওহ্ বলাই হয়নি, কথা হচ্ছিল টুডেব্লগে ‘বিয়ের গল্প লেখা প্রতিযোগিতা’ নিয়ে।
আমি জানতাম ওনি বলবেনই। আমরা ‘নাচোড় বান্দাদের’ রিকুয়েস্ট ওনি ফেলতে পারবেন না। একটু এদিক-সেদিক আর রসিকতা না করলে ওনার হয়ই না। ওনি দারুন মজার একজন লোক। আমরা ছিলাম পাঁচজন- ওনি, আজিজ, ফাহিম, আরিফ আর আমি। আমরা চারজন ক্লাশমিট, ওনি আমাদের তিন বছরের সিনিয়র। গত বছর এনইউ থেকে বাংলায় মাস্টার্স করে বের হয়েছেন। স্বনামধন্য একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে একটি সম্মান জনক চাকরীও পেয়ে গেলেন ভালোই ভালোই। এখন শুধু একজন নবোঢ়ার জন্যই ওনার যত অপেক্ষা।
জনাব শাহীন আহমেদ। আমরা শাহীন ভাই বলেই ডাকি। দীর্ঘ দিন এক সাথে একই মেসে থাকতে থাকতে আমাদের সবার মাঝে গড়ে উঠেছে চমৎকার বন্ধুত্ব সুলভ সম্পর্ক। আমার সাথে ওনার সম্পর্কটা একটু বেশি কারন আমিও বাংলার ছাত্র। পড়ার কাজে ওনি প্রায়ই আমাকে হেল্প করেন। আমাদের মাঝে সবচেয়ে দুষ্টু আর চঞ্চল হচ্ছে আরিফ। অফিস শেষে শাহীন ভাই বাসায় আসলে, ওনার সাথে আরিফের রসিকতার যেন শেষই হয় না। এভাবেই চলে আমাদের ব্যাচেলর জীবন।
তো সেদিন ‘ফাতেহা-এ-ইয়াজ দহুম’ উপলক্ষে ওনার অফিস বন্ধ থাকায়, আমরা সবাই মিলে হাঁটতে বের হলাম বিকেলে। হাঁটাতে হাঁটতে আমরা চলে এলাম সাগর পাড়ে, পতেঙ্গা বীচের প্রায় কাছে। একজনের কাঁধে আরেক জন হাত দিয়ে পাথরের উপর বসে থাকতে দেখলাম অনেক ‘জোড়া’দের। কেউ কেউ দেখলাম হাত ধরাধরি করে গুণগুণ করে হেঁটে চলছে তাদের আপন গন্তব্যে। আমরাও বসে পড়লাম সাগর পাড়ের এলোমেলো পাথরের উপরে। আর এই পাথরের উপর বসেই চললো বিয়ে নিয়ে আমাদের যম্পেশ আড্ডা।
শীতের সাগর। হালকা উত্তুরে হাওয়া। ছোট ছোট ঢেউ -যেন কোন এক শান্ত মেয়ে সুললিত কণ্ঠে গেয়ে চলছে এক সুধাময় সংগীত। দু‘একটা সাম্পান, কয়েকটা স্পীড বোট ছুটে চলছে এদিক সেদিক। সূর্যটা লাল হতে আরো কিছুটা সময় বাকি। কেমন একটা গম্ভীর ভাব নিয়ে শাহীন ভাই বলতে লাগলেন-
রবীন্দ্রনাথের গল্পে পড়েছিলাম, বিয়ে নিয়ে যত চিন্তা আমাদের নবীন ছাত্রদের কিন্তু টুডেব্লগে যা দেখলাম তাতে আমার মনে হল, এখন বিয়ে আর বউ নিয়ে যত চিন্তা সব আমাদের প্রবাসী ভাইদের মাঝে!
_কেন? কেন আপনার এমন মনে হল? প্রশ্ন করলো আরিফ।
_থাক বেটা কথা বলিস না বলে আরিফকে থামিয়ে দিল ফাহিম।
শীত প্রায় শেষের দিকে। তারপরও একটু একটু শীত গায়ে অনুভূত হতে লাগলো। শাহীন ভাইও প্রবাহিত ধারার মত বলে যেতে লাগলেন-
বিবাহিত প্রবাসীরা বউ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারন হচ্ছে-
‘না জানি আমার বউটা কেমন আছে? মোবাইলে কারো সাথে... কে জানে, কি করছে?’
আর এ দিকে অবিবাহিত প্রবাসীদের চিন্তার কারন হচ্ছে-
‘অনেক দিন তো বিদেশে আছি, টাকা পয়সাও তো কম কামাইনি। ইশ্ শালার কখন যে দেশে যাব -বিয়েটা সারবো? আমার ভাগ্যে কে আছে? আল্লাহই জানে, আর ভালো লাগে নারে... আমার সোনার ময়না পাখি, কোন দেশেতে...’
_আচ্ছা শাহীন ভাই আপনি কেমনে এত্তসব জানলেন? -প্রশ্ন রাখলেন আজিজ।
‘ধুর আমি কেমনে, কিভাবে জানলাম তা জানার দরকার কি? বিয়ে নিয়ে আমাদের বর্তমান ছাত্রদের ভাবনা কি তা-তো আগে শুনবে।’
সূর্যটা তখন একটু একটু লাল হয়ে আসছিল। হালকা হালকা কুঁয়াশা ঝরতে লাগলো। পানিতে ভাসমান ঐ দূরের জাহাজগুলোতে বাতি জ্বলে উঠতে লাগলো আস্তে আস্তে। সাগরের পানিতে ঝাপসা ঝিলিক চোখ ধাঁধায়ি দিচ্ছিল।
শাহীন ভাই বলতে লাগলেন, বিয়ে নিয়ে আমাদের ছাত্রদের ভাবনা হচ্ছে-
‘ধুর কখন একটা চাকরী পাবো, কখন যে বিয়ে করবো তার অনেক দেরী। তার আগে ক্লাশের...সাথে কিছু দিন টাংকি মাইরা লই, মোবাইল নংটা পায়লে দারুন হত’
_আপনারে বলছে...যত্তসব আফাড়া কথা, ব্যাঙ্গাত্মক সূরে বলল আজিজ। ফাহিম আরিফও বলে চলল যার যার মত... ছাত্রদের নিয়ে এমন মন্তব্য করায় তাদের একটু লাগলো, আমার লাগছে কিন্তু কি আর করার?
আমি বললাম আচ্ছা শাহীন ভাই বিয়ে নিয়ে আপনার নিজের চিন্তা ভাবনা কি?
আর বলনা ভাই, বিবাহিতদের দেখলে আমার মনে হয় যেন এক একটা ধূমকেতু!
_কেন?
সূর্যের আলো ভেদ করে জ্বলতে গিয়ে হঠাৎ করে ধূমকেতুর পিছনে যেমন আগুন ধরে যায়, বিয়ে করলেও তেমনি ছেলেদের পিছনে কে যেন টিশ্ করে মাসিসের সলা জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। আর বসে থাকার সময় নাইরে এবার দৌঁড়াও...বললেন শাহীন ভাই।
ততক্ষণে রাত নেমে এলো। ঝাপসা আঁধার, হালকা কুঁয়াশায় ঢেকে গেল চারদিক। তখনও অনেকগুলো জুটি বসে আছে পাথরের উপরে। একটা টমটমে করে হাসতে হাসতে আমরা চলে এলাম বাসায়।
বিষয়: বিয়ের গল্প
৫০৪৫ বার পঠিত, ৪২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চূক চূক
চুক চুক
এতদিন কই চিলেন। এখন সময় শেষ, তা বুঝি টানা-টাণী করতেছেণ?
তবে শব্দ চয়ব দারুন হয়ছে-
আপনি আগে লিখলে হয়তো পুরস্কৃত হতেন।
আমার এই মন্তব্যটাও কোন ‘আফাড়া’ কথা নয়। সত্যিই আমার ভাল লেগেছে।
সংসার জগতে একবার পা পিছলে পড়ে গেলে অমৃত্যু আর বেড়োনোর পথ নেই
আজীবন দৌড়ের উপর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন