বৃষ্টি ভেজা ঈদ
লিখেছেন লিখেছেন আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ ১৭ আগস্ট, ২০১৩, ১১:৪২:১০ রাত
ঈদ নিয়ে কিছু না লেখার ইচ্ছে ছিলো কিন্তু টুডে ব্লগে মিলন মেলার পোস্ট-কমেন্ট দেখে আর লোভ সামলাতে পারলাম না। লিখতে বসে গেলাম। মিলন মেলার সবাইকে অনেক ধন্যবাদ না দিয়ে পারছি না -সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং সালাম।
আনন্দ উচ্ছ্বাস সব মিলিয়ে ঈদের প্রথম দিনটা ভালোই কেটে গেলো। তেমন অদ্ভুদ কিংবা মজার কোন ঘটনা চোখে ধরা পড়েনি। ঈদের দ্বিতীয় দিনই ঘটলো খুব মজার মজার সব ঘটনা। সকাল ৯ টায় বাড়ি থেকে বের হলাম বারশত-মেজো খালার বাড়ির উদ্দেশ্যে। মেজো খালাকে সালাম করে গেলাম চালি তাতলি ছোট খালার শ্বশুর বাড়িতে। সেখান থেকে বের হয়ে কিছু পথ আসতেই শুরু হয়ে গেলো তুমুল বৃষ্টি, আধা ভেজা অবস্থায় আমরা আশ্রয় নিলাম একটা ইবাদত খানায়। ৫/১০ মিনিট পর বৃষ্টি থেমে গেলে আসলাম বারশত কালিবাড়িতে, সেখান থেকে সিএনজি নিয়ে বটতলী, বটতলীতে থেকে ডাইরেক্ট ছোট ফুফির শ্বশুর বাড়ি। ঘড়িতে ততক্ষণে প্রায় ২.৩০ টা। ফুফিকে সালাম করে, সেমাই শরবত খেয়ে বের হয়ে পড়লাম বাড়ির উদ্দেশ্যে।
আনোয়ারার জুইদণ্ডিতে ফুফির শ্বশুর বাড়ি। জরুরী একটা কাজের তাড়া নিয়েই দ্রুত বাড়ি ফিরছি। আমরা ছিলাম চার জন -আমি, ‘মেঘে ঢাকা স্বপ্ন’, ‘সাদা কালো মন’ আর শামসুদ্দিন। জুইদণ্ডি থেকে আমাদের গহিরায় আসার সবচেয়ে সহজ রাস্তা নৌপথ। সাঙ্গু নদী দিয়ে নৌকা/সাম্পান/ফানসিতে করে খুব সহজে আসা যাওয়া করা য়ায়। ফেরি ঘাটে এসে ফানসিতে উঠলাম, আমাদের সাথে ৩/৪ জন শ্যামলা-কালো মেয়ে উঠলো, তাদের সাথে জিন্স প্যান্ট-মাইকেল শার্ট ইন করা দু’জন সেয়ানা পোলাও, স্বভাতই মনে হচ্ছে গ্রামেরই স্মার্ট পোলাদের অন্যতম! মেয়েগুলার সারা মুখে জঠিল মেকআপ, ঠোঁটে ঘন করে লাগানো লাল লিপিস্টিক! তাদেরকে দেখে আমি তো কয়েক মিনিট বেদম হয়ে গেলাম, হায় হায় এ কেমন অদ্ভুদ সাজ?
হালকা মেঘে ঢাকা আকাশ, ভ্যাপসা গরম, মনে হচ্ছে একটু পরেই জোরশে বৃষ্টি নামবে! মেঘলুপ্ত সূর্যের তাপ বেশি প্রখর! মেয়েগুলো এমনিতেই একটু শ্যামলা, তার উপরে ঘন মেকআপ, তারও উপরে সূর্যের ভীষণ তাপ! ঘড়িতে সময় তখন দুইটা বাজলেও মেয়েগুলার মেকআপের অবস্থা বারটার ঘর ছোঁয় ছোঁয়! মাঝে মাঝে ঠোঁট বাকিযে একটু চাপা হাসিও মারতেছে। সব মিলিয়ে তখন তাদের চেহারা দেখে আমার মনে হচ্ছে যেন কোন এক দুষ্ট বন বিড়াল তাদের মুখে ডাস করে একটা পাদি(বায়ু) দিছে! হাতে সাদা টিস্যুও আছে। ভাব-সাব দেখে মনে হচ্ছে তারা নিয়মিত টিস্যু ইউস করে না। আজকে ঈদ উপলক্ষে একটু ভাব নেবার জন্যই এই টিস্যু! যাই হোক।
আমরাতো এ দিকে হাসতে হাসতে হয়রান! ফানসিতে বসে আমরা কয়েকটা ছবি নিলাম। যাত্রীতে আস্তে আস্তে ভর্তি হতে লাগলো আমাদের ফাননি। ততক্ষণে গুটি গুটি বৃষ্টি আসতে শুরু করলো। মাঝির উপর রাগও আস্তে আস্তে বাড়তে লাগলো। দুএক বার মাঝিকে ডাকও মারলাম- ‘আরে ভাই মানুষ অইয়ি-ত এবার এস্টার্ট দ-না’, কার ডাক কে শুনে, দু’এক জন লোক বেশি হলে কয়েকটাকা বেশি পাওয়া যাবে সে আশায় মাঝি আরো একটু সময় অপেক্ষা করলো। দু’একজন যাত্রীও আসলো, অবশেষে অপেক্ষার বাঁধ ভেঙ্গে আমাদের ফানসি যাত্রা শুরু করলো তেলিপাড়ার উদ্দেশ্যে। সাঙ্গুর উত্তাল ঢেউ ভেঙ্গে আমাদের ফানসি চলছে তো চলছেই। গুটি গুটি বৃষ্টি তখনো ঝরতেছে, মাঝে মাঝে হালকা বাতাস, মনটা কেমন শৈল্পিক হয়ে উঠলো, ঠোঁট নেড়ে আস্তে আস্তে গাইতে শুরু করলাম-
‘জোয়ার ভাটায় নদীর চলা
উতাল পাতাল ঢেউ
কোন দুখে তোর ভাঙ্গা গড়া
জানলো না তো কেউ...
৩০/৩৫ মিনিটে আমাদের ফাসনি এসে ভিড়লো তেলিপাড়ার ঘাটে। গহিরার ছোট্ট একটা অংশের নাম তেলিপাড়া। ততক্ষণে বৃষ্টি অনেক জোরে আসতে শুরু করলো, আমরাও ফানসি থেকে নেমে জোরে হাটতে লাগলাম, একটা দোকানের নিচে আশ্রয় নিলাম। গাড়ির তেমন ব্যবস্থা না থাকায় ‘সাদা কালো মন, আর শামসুদ্দিন ভাইয়ের পরামর্শে আমার বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে তেলিপাড়ার ঘাট থেকে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নিলাম। যেই সিদ্ধান্ত সেই কাজ, শ্রাবণের পরিচ্ছন্ন বৃষ্টিতে ভিজে ভ্রমনের সব ক্লান্তি ধোয়ে, বড় গলায় গান গেয়ে গেয়ে আমারা হেঁটে চললাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। সাদা সেলোয়ারগুলোর গায়ে ততক্ষণে মাটির নাম্বার উঠতে শুরু করলো, কিন্তু কি আর করার! কিছু পথ পাকা আর কিছু কাদামাখা রাস্তা মাড়িয়ে ভিজে একাকার-কাদামাখা পায়ে ১৫/১৮ মিনিটের মাথায় আমরা ঘরে এসে পৌঁছলাম! মেয়েগুলা কোন দিকে গেলো তার আর কোন খবরই ছিলো না। ঈদে বেড়ানোর পাশাপাশি বৃষ্টিতে ভিজে বর্ষাও উপভোগ করা হয়ে গেলো। ইশ্ খুব মিস করছি সেই মুহূর্তগুলো!
বিষয়: সাহিত্য
১৫৩৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন