জমিদার মিস উড়ালী বানু
লিখেছেন লিখেছেন আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ ২১ জুন, ২০১৩, ০৯:১২:১৯ সকাল
উৎসর্গঃ নগর জীবনে এসে একটি অদ্ভুদ প্রজাতির প্রাণীর সাথে আমার পরিচয় হয়! এরা মানুষ হলেও যেন রক্ত মাংসে ওনাদের শরীর গড়া নয়- ওরা রোবট! এরা হল এই শহরের জমিদার শ্রেনী! ১ ঘন্টা মোটর চালালে যাদের জমিদারগিরি পিছন দিয়ে লাল সুতা বের হয়। আমার এই গল্পটি তাদের তরে যারা ভাড়াটিয়াদের মানুষ বলে...........
দাদির কাছ থেকে শুনেছিলাম আগেকার দিনে যাদেরকে জমিদার বলা হতো তাদের অনেক জমি জমা থাকত। গোয়াল ভরা গরু থাকত, গোলা ভরা ধান থাকত, পুকুর ভরা মাছ থাকত আর বাটা ভরা থাকত পান। চাকর বাকর, গরবা অতিথিতে ঘর বাড়ি থাকত সারাক্ষণ মুখরিত। কিন্তু এ সব জমিদারদের এতো ধন সম্পদ থাকার পরও তারা ছিল ভীষণ লোভী।
সমাজের দরিদ্র ক্লীষ্ট নিন্মমধ্যবিত্ত, নিন্মবিত্ত মানুষগুলোকে শাসন শোষন করে তাদের সর্বস্ব কেড়ে নিত। অত্যাচারে অনাচারে তাদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রাকে করে তোলত অতিষ্ট। সমাজের এসব শোষিত বঞ্চিত মানুষগুলো কখনো কখনো এ সব অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করত। জমিদারদের অত্যাচার-শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত বিদ্রোহ-সংগ্রাম করে এরা কোন মতে বেঁচে থাকতো, তাদের অস্থিত্ব টিকিয়ে রাকত! কেউবা সহ্য করতে না পেরে আস্তে আস্তে নিঃশেষ হয়ে যেতো।
প্রাচীন বাংলার ইতিহাস ঘাটলে আমরা খুঁজে পাবো এ রকম অসংখ্য চ্যাচরা জমিদারদের নির্মম অত্যাচারের করুণ দৃষ্টান্ত। আমি আজকে যে জমিদারকে নিয়ে লিখবো ভেবে কলম ধরেছি ওনি ইতিহাসের পাতায় উল্লেখিত কোন বিখ্যাত জমিদার নন। ওনি আধুনিক জামানার এই নগর জীবনের অদৃশ্য খাতার অলিখিত এক অখ্যাত জমিদার। আমাদের জমিদার আন্টি মিস উড়ালী বানু!
উড়ালী বানুর দুই ছেলে। এক জামাই (জামাই বিদেশে থাকে)। দেড় গণ্ডা জমির উপর একটি চার তলা বাড়ি। চার তলায় সর্বমোট চৌদ্দটি ফ্যামিলি। ইউনিট প্রতি সাড়ে তিন টাকার কারেন্ট বিল পাঁচ টাকা, ২৫০ টাকার গ্যাস বিল ৩০০টাকা, ৩০টাকার সুইপার বিল ৫০ টাকা নিয়ে ভাড়াটিয়াদের সাথে চলে ওনার প্রতিনিয়ত নির্মম জমিদারগিরি!
ওনার আসল নাম আমি জানি না। মিস উড়ালী বানু নামটি আমার দেওয়া! এতো নাম থাকতে ওনার নাম উড়ালী বানু কেন দিলাম? তার কারণ হিসেবে বলতে চাই- ওনি খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে, গোলাপী মেকআপে মুখটাকে সাজিয়ে, জরিওয়ালা লিপস্টিক দিয়ে ঠোঁট দুটি ফকফকা করে, হাল জামানার ফিটফাট- শরীরের বিশেষ বিশেষ অঙ্গ স্পষ্ট হয়ে উঠা একটি বোরকা পড়ে, বিদেশী সেন্ট গায়ে মেখে, স্কুল ব্যাগ হাতে নিয়ে সকাল সাতটার আগেই বাসা থেকে বের হয়ে যায়। ওনি স্কুলে পড়ে না ওনার ছোট ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যায়।
সেন্টের এতো সুগন্ধ যে ওনার দশ বার হাত পিছনেও খুশবো ভুঁ ভুঁ করে। আন্টিকে এমন সাজে দেখলে আমার মনে হয় ওনি ৩৭ বছরের কোন বউ নয় বরং ২৩ বছরের কোন উচ্ছল যুবতী! চলাফেরা কথাবার্তায় এতো চাঞ্চলতা এতো উড়ালচণ্ডী ভাব যেন আমাদের মতো ২৩ বছরের যুবকদের প্রতিনিয়ত হৃদয় হরণ করাই ওনার কাজ! আমি মাঝে মাঝে কল্পনায় আন্টির প্রেমে পড়ে যায়। আবার চিন্তা করি ওনিতো বিবাহিত আর ওনার মতো এমন আজিব মালটাকে সামলানো আমার পক্ষে সম্ভব না! জমিদার আঙ্কেল কেমনে সামলায় আল্লাহ মালুম! আর এ জন্যই বোধহয় আঙ্কেল বিদেশ থেকে খুব কম আসে!
যাই হোক, এভাবে প্রতিদিন সারা এলাকা চষে বেড়িয়ে সাড়ে এগারটা কিংবা বারটার দিকে ওনি বাসায় ফিরে। এ দিকে ট্যাঙ্কিতে পানি থাকে না, সিড়ি ঘরে মোটর সুইচ থাকে তালা মারা, সকালে ঘুম থেকে উঠে হাগু মুতু সেরে না সেরে, হাচামিছে মুখ ধুয়ে আমরা কাজের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার জন্য রেডি হই। মেরুদণ্ডহীন প্রাণির মতো এভাবে আমরা ভাড়াটিয়ারা কোন মতে দিন পার করে যায়।
বাসার পাশে পচা নালা ঠিক সময়ে পরিষ্কার করতে হবে, কারেন্টের লাইন নষ্ট হয়ে গেলে ঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিতে হবে, লাইনে পর্যাপ্ত মতো পানি দিতে হবে ভাড়াটিয়াদের এসব সমস্যার কথা জমিদার উড়ালী বানুকে কে বলবে? আর যে বলবে তার পরিণাম কি হবে? আগামী মাস থেকে বাসা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া! ভাড়াটিয়াদের সাথে ওনার যে স্টাইলে কথা বার্তা যেমন দম্ভভরা হাবভাব আমিতো রীতি মতো কনফিউসড হয়ে যায়- ওনি কি আমাদের জমিদার মিস উড়ালী বানু নাকি আমেরিকান ফাস্ট লেডি মিশেল ওবামা?
বিষয়: সাহিত্য
২১৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন