মিজা সওদাগর
লিখেছেন লিখেছেন লাথি মার ভাঙরে তালা যতসব বন্দীশালা ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৮:০৫:০২ সকাল
আবিষ্কার- ১, পর্ব- ১
ঘটনাকাল: ২০১৩।
স্থান: বাংলাদেশের যে কোন স্থান।
বিষয়বস্তু: বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধীকার কমিশন।
হা রে...
শোনেন শোনেন ভাই-বোনেরা শোনেন দিয়া মন
বাংলাদেশের কথা...... কিছু করিব বর্ণন,
আছেন যত মুরুব্বি আর মা-বোনেরা সাথি
সবাইরে সালাম জানাইয়া...... শুরু করলাম পুঁথি।
প্রথমেতে স্মরণ করি... সৃষ্টিকর্তার নাম
যার ইচ্ছাতে আপনি আমি... এই দেশে জন্মাইলাম,
তারপরেতে সালাম জানাই... মা ও বাবারে...
যার উছলাতে আইছি আমরা... বাংলার এই ভুবনে।
এই গানের কীটটা সকাল থকে রবিনের মাথার মাঝ কিলিবিলি করছে, কিছুতেই যাচ্ছে না। অনেক ভাবে সে চেষ্টা করে যাচ্ছে কাজ হচ্ছে না। দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে, রবিন জানালা দিয়ে কাক গুনতে ব্যস্ত হয়ে গেল। ১... ২... ৩ বলার সাথে সাথে ডিশের লাইনের উপর বসা কাকটা কা... কা... করে উঠলো। সাথে সাথে মাথায় অটো প্লে হলো " শোনেন শোনেন ভাই-বোনেরা শোনেন দিয়া মন...।" মনে হচ্ছে কেউ ইচ্ছে করে রিমোর্ট কন্ট্রোল চেপে দিচ্ছে। খবরের কাগজ হাতে নিয়ে তার মস্তিস্ক অন্য কাজে ব্যাস্ত রাখতে চাইলো। দি ডেইলি কমেট এর প্রখম পাতায় উইলটন হ্যাট মাথায়, কাঁধ বেল্ট পড়া, বোরাতের মতো নাকের নিচেঁ সাদা কালো গোঁফ, মেদভূড়িওয়াল এক ব্যাক্তির ক্লোজআপ হাসির ছবি। নিচে ক্যপশনে লেখা বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার (লংঘন) কমিশন চেয়ারম্যান মিজা সওদাগর। তিনি নাকি বর্তমানে বিভিন্ন বক্তৃতার মাধ্যমে বাংলাদেশে আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রথমে মিসা সওদাগর মনে করে রবিন একটু হকচকিয়ে গিয়েছিলো কিন্তু না এটা সে নয় এটা মিজা সওদাগর।
মিসা সওদাগর বড্ড সিরিয়াস টাইপের রসিক অভিনেতা। রসিক হলে কি হবে তিনি দেশে এ এক নম্বর খলনায়ক হিসাবে পরিচিত। এযাবতকালে তার প্রায় ৭৫০টির মতো ফিল্ম বেড়িয়েছে। সে বলেছিলো ১ হাজার ছবি করে গীনিস বুকে নাম লিখেই ক্ষান্ত হবেন। ভদ্রলোক গীনিস বুকে নাম লেখাতে পেড়েছিলো নাকি কে জানে রবিন কোন আপেডট পায়নি। তবে যখন তার সাক্ষাতকারটি পড়েছিলো তখন সে যে ছবিতে কাজ করছিলো তার নাম "আমার চ্যালেঞ্জ।" সেই ছবিতে তার চরিত্র ছিলো একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী হিসেবে, যার উপরে উঠার জন্য যে কোনো কাজ করতে সে রাজি ছিলো, এমনকি নিজের স্ত্রীকেও মন্ত্রীর সাথে...। যদিও ঢালিউডের ফিল্মগুলো বলিউড থেকে কপি পেস্ট... যাক সে সব কথা।
রবিন আপন মনে মিজা সওদাগরের রির্পোট পড়তে থাকলো। নিচে ইনভারটেড কমাতে ইটালিক বোল্ডে লেখা তার বাণী,
"বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ, এদেশে ২০০৮ সালে প্রায় ৭ কোটি বালেগ নরনারী ভোট দিয়েছে, যার মাঝে ৩২ লাখ সড়াসড়ি রাজাকার, ২ কোটি ৩০ লাখ রাজাকারের প্রত্যক্ষ সহযোগী, ১ লাখ রাজাকার বন্ধু, ৩ কোটি ৪০ লাখ মুক্তিযোদ্ধা, ৪৮ লাখ সামরিক লোক, ৪ লাখ রক্তচোষা, ২ লাখ দিন মজুর/ খেত মজুর, ১ লাখ ৫০ হাজারের মতো উদার গণতান্ত্রিক, এবং ৩৩ লাখ উদাসীন রয়েছে এবং এই নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় এসেছে!"
কোথায় যেন রবিন পড়েছিলো মিজা সওদাগর মাদার তেরেসা গোল্ড মেডেল হোল্ডার। মাদার তেরেসা রিসার্চ কাউন্সিল কি জানতো না, নৈতিকতার বিবেচনায় মিজা সওদাগরের ভিত্তিগত দূর্বলতার কথা। মনে হয় না, কারন মুনষ খ্যাতির ছটা না পেলে ভৈা- ভৈা করেনা, তার আগ পর্যন্ত সে লেজ গুটিয়ে বসে থাকে। সুমনের কথা মনে পরে গেল রবিনের গত বছর লন্ডনে সুমনের কাছে বেড়াতে গিয়েছিলো সে। সুমনটা অনেক পরিবর্তন হয়ছে। ভিত্তিগত পরির্বতন যাকে বলে। এমনকি রাস্তায় গাড়ী নেই তাও সে সবুজ বাতীর জন্য অপেক্ষা করে। কৈৌতুহল না চাপতে পেরে শেষ পর্যন্ত প্রশ্নটা করেই বসলো। উত্তরের সারর্মম হচ্ছে, " বন্ধু সবে মাত্র ন্যাশনালিটির জন্য আবেদন করেছি। এখন বেআইনী কিছু করা যাবেনা।" মাদার তেরেসা কোখনো জাতীবাদী, বর্নবাদী, বৈশিষ্ট্যবাদীতে বিশ্বাসী ছিলেন না, যার কারোনে তিনি কোখনো ঐসকল আন্দোলনের বিরোধী আন্দোলনে মিজা সওদাগরের মতো গাঁ ভাসিয়ে দেননি। এটাই হলো মাদার তেরেসার সাথে মিজা সওদাগরের পার্থক্য। সৃষ্টিকর্তা মানুষ তৈরী করেছেন এমন ভাবে যে, কেউ কারো বড় ছোট নয়। ভিত্তগত অধিকারের দিক থেকে সকলে সমান। দল-মত-ধর্ম-জাতি-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সবার এই অধিকার সর্বজনীন, শ্বাশত, সহজাত ও চিরন্তন। এর কোন মৌলিক সীমারেখা নেই। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি হিসেবে মানুষ যেসব অপরিহার্য অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন তাই মানবাধিকার। তাই প্রকৃত এবং শ্বাশত এই অধিকার হরণ করলেই তা হয় মানবাধিকার লংঘন। গলায় মাদার তেরেসা গোল্ড মেডেল পড়ে মানবকে ফিল্টার করার কোন যুক্তি রবিন খুজে পায়না। তবে হা সৃষ্টিকর্তাতে বিশ্বাস না করলে একটি যুক্তি আছে। তাহলে যেটা দাড়াচ্ছে মানবাধীকার শুধু বিশ্বাসীদের জন্য অন্য পরিভাষায় বিবেচকদের জন্য। বিশ্বাসীরাই মানবতার রক্ষাকারী। তাই অবিবেচকরা মানবাধীকারের লংঘন করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ঐ অবিবেচকরা যদি মানবাধীকার রক্ষার চেয়ারম্যান হয়ে বসে তাহলে কি হতে পারে তার একটি উজ্জল নমুনা "বাংলাদেশ"।
রবিনের মনে মিজা সওদাগরের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন জাগলো। এধরনের অবিবেচক মানুষরা কিভাবে মানবতার মুক্তি দিবে? গম্ভীর মুখে রবিন জানালার পাশে এসে দাড়ালো। বাইরে মিছিল হচ্ছে, মিছিলের সার্বগ্রে এক তরুণ বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা নিয়ে শ্লোগান দিচ্ছে নারায়ে তাকবীর, আল্লাহ- হু- আকবার, তোমার নবী আমার নবী বিশ্বনবী মুস্তাফা। মুহুর্তই রবিনের মুখের কোনায় এক চিলতি হাসি ফুটে উঠলো... বিশ্বাসী তথা বিবেচকরাই পারবে মানবতার মুক্তি দিতে...।
বিষয়: বিবিধ
১১৮৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন