হযরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)এর উপদেশ বানী

লিখেছেন লিখেছেন জাকির ০২ মার্চ, ২০১৩, ১০:০১:৩১ রাত

দোয়া (প্রার্থনা) প্রসঙ্গে

১ম মজলিস, ১৬ জিলকদ ১৪০০, হেদায়াতে মাজালিসে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)

‘‘কেহ কেহ শয়তানের এমন ধোকায় আছে যে, আমি গোনাহগার, কাজেই আমার দোয়া কবুল হবে না। তাহা ঠিক নহে। আল্লাহ পাক এমন দয়ার সাগর যে, ইবলিশের মত গোনাহগারের দোয়াও কবুল করেছেন। তার দোয়া ছিল কেয়ামত পর্যন্ত হায়াত দেওয়া, আল্লাহ পাক তাহা দিয়েছেন।“

৩৪ তম মজলিশ, কামরাঙ্গীচর, ২৮শে সফর ১৪০৮ হিঃ

* ‘‘কাঁদাকাটির সাথে দোয়া করতে থাকবেন। .. মানুষের কাছে একবার, দুইবার তিনবার কিছু চাইলে সে বিরক্ত হয়। কিন্তু আল্লাহর কাছে এর উল্টা, যত বেশী চাওয়া যায় তিনি তত বেশী খুশী হন।”

* ‘‘দোয়া করা তো আল্লাহর সাথে বাত-চিত করা, কাজেই আল্লাহ পাক দোয়া কবুল করিবেন বিশ্বাস রেখে খুব মনোযোগের সাথে দোয়া করন চাই।”

* ‘‘দোয়া কোন সময় কবুল করলে মঙ্গল হবে, সেটা আল্লাহ পাক ভাল জানেন। কাজেই আমরা তাড়াতাড়ি করলে তিনি তাড়াতাড়ি দিবেন না, যখন দেওয়া মঙ্গলজনক হবে তখনই দিবেন। তাড়াতাড়ি দেওয়া মঙ্গলজনক হইলে তাড়াতাড়ি দিবেন, আর দেরী করে দেওয়া মঙ্গলজনক হইলে দেরী করেই দিবেন, আর না দেওয়া মঙ্গলজনক হইলে দিবেন না। কাজেই নিরাশার কিছু নাই।”

* ‘‘লক্ষ টাকা চাহিয়া দোয়া করা হইল। কিন্তু ঐ লক্ষ টাকা না পাওয়া গেলেও ছওয়াব পাওয়া যাইবে।”

* ‘‘এক বুজুর্গের ক্ষুধা লেগেছিল, কিন্তু খাবার কিছু ছিল না। তিনি ছোট ছেলে-মেয়ের মত কাঁদাকাটি আরাম্ভ করিলেন। লোকেরা বলল, এ কেমন কথা, ছেলেদের মত কাঁদেন কেন ? তিনি জবাব দিলেন, কাঁদবো না তো আল্লাহর কাছে বাহাদুরী করব ?’’

* ‘‘গুনাহের কাজের কাছে যাবেন না। আর শরীরে যে গুনাহ আছে, তাহা পরিষ্কার করে ফেলেন, তাহা হইলে উদ্দেশ্য সফল হবে।”

সকল আদম সন্তান একে অপরের খান্দানী ভাই

* ‘‘আমরা সকল আদম সন্তান একে অপরের খান্দানী ভাই। আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আঃ)-কে বিশ্ব-জাহানের খালেক রাব্বুল আলামীন আপন খলীফা রূপে পয়দা করিয়াছেন।“

… ‘‘মুসলমানরা আমার দ্বিনী ভাই এবং অমুসলমানরা আমার খান্দানী ভাই। ’’

(ঘরে-বাইরে বহু সভায় হুজুর উপরোক্ত কথা বলেন)

খেলাফত প্রসঙ্গে

* ‘‘আদম (আঃ)-কে আল্লাহ তায়ালা খেলাফত দিয়াই পাঠাইয়াছেন। খেলাফত আমাদের মিরাছী (উত্তরাধিকারমূলক) সম্পত্তি। এই খেলাফত কায়েম করা আমাদের দ্বায়িত্ব। প্রত্যেক নবী এই খেলাফতের দ্বায়িত্বই পালন করে গেছেন। আমাদের হুজুর (মুহাম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহিচ্ছালাম) যে সব কাজ করলে আমাদের ভাল হবে এবং যে সব কাজ করলে আমাদের মন্দ হবে – তাহা তাঁহার কথা ও কাজের মাধ্যমে আমাদিগকে বলিয়া ও করিয়া দেখাইয়া দিয়াছেন। আমাদের সেই সকল কথা ও কাজের বাস্তব অনুকরণ ও অনুসরন করতে হবে।“

-৫০তম মজলিশ, ১৮ই রমজান ১৪০৩ হিঃ

* ‘‘আমি বলিনা যে আমার হাতেই খেলাফত কায়েম হউক। তিনি (আল্লাহ) যাহাকে এই কাজের যোগ্য মনে করেন তাহার দ্বারাই এ কায়েম করুন।“ -৪৬তম মজলিশ, ৫ই রমজান ১৪০৩ হিঃ

* ‘‘হুকুমতের উদ্দেশ্য হইল ৪টি কাজ করা – নামাজ ও যাকাত প্রতিষ্ঠা করা, এবং ‘আমরি বিল মা’রুফ ও নাহি আনিল মুনকার’ -অর্থাৎ সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধের কাজ করা। প্রথম দুইটি খুছুছী অর্থাৎ একা একা করা যায়, কিন্তু শেষের দুইটির জন্য হুকুমত দরকার।“

-৪৯তম মজলিশ, ১৭ই রমজান ১৪০৩হিঃ

* ‘‘খেলাফত কায়েমের জন্যই আল্লাহ পাক মানুষ পয়দা করেছেন। খেলাফত বলতে শুধু দেশের শাসনকার্য পরিচালনা বুঝায় না, এটা খেলাফতের একটি অংশ বিশেষ। প্রতিটি স্তরের প্রতিটি কাজ খেলাফতের অন্তর্গত। মাদ্রাছা পরিচালনা করা, মসজিদ পরিচালনা করা, ধর্মীয় বিধান মত সাংসারিক, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রিয়, ব্যক্তিগত – অর্থাৎ সর্ব স্তরের সকল কামে আল্লাহর আইন-কানুন অনুসারে চলা ও চালানোর নাম খেলাফত।“ – ৪৬তম মজলিশ, ৫ই রমজান ১৪০৩ হিঃ

* ‘‘অনেকে বলে যে আমি বুড়া মানুষ, রাষ্ট্র চালাব কেমনে ? আমি বুড়া হইতে পারি, কিন্তু আল্লাহ পাক তো বুড়া নন। আল্লাহ পাক কাহাকেও কোন কাজের দ্বায়িত্ব দিলে তাহাকে সেই কাজ পরিচালনার ক্ষমতা ও বুদ্ধিও দান করেন।“ -৪৬তম মজলিশ, ৫ই রমজান ১৪০৩ হিঃ

[ বিঃদ্রঃ ১৯৮১ সনের নির্বাচনের সময় বিচারপতি আব্দুস সাত্তার সাহেবের পক্ষের লোকেরা বিদ্রূপ করিয়া প্রচার করিয়াছিল ‘হাফেজ্জী হুজুর বুড়া মানুষ, এক পা কবরে, দেশ চালাবে কেমন করে?’ অথচ হাফেজ্জী হুজুর রহমতুল্লাহ আলাইহী ছিলেন বয়জ্যেষ্ঠ্য, জ্ঞানবান, ধার্মীক, মিতাচারী ও সুস্থ-সুঠাম শরীরের অধিকারী - ডায়বেটিস বা অনুরূপ কোন দুরারোগ্য রোগ তাঁর ছিলনা। পক্ষান্তরে, হাফেজ্জীর প্রতিদ্বন্দ্বী সাত্তার সাহেব ছিলেন অথর্ব, জড় ডায়াবেটিসের রুগী। ইতিহাস সাক্ষ্মী - সাত্তার সাহেব হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ.-এর ইন্তেকালের পূর্বেই মৃত্যুমুখে পতিত হন। সাত্তার সাহেব বে-আদবী ও জালীয়াতি করে ভোটে জিতেও ক্ষমতায় থাকতে পারেন নি। ভোটের পরে রেডিওতে সাত্তার সাহেব বিজয়ী হয়েছেন বলে সংবাদ প্রচার করা হলে হাফেজ্জী হুজুর রহ. হেসে ফেলে মন্তব্য করলেন ‘‘যো জিত গিয়া, উয়ো চিত হুয়া”। এবং ইতিহাস সাক্ষী - সাত্তার সাহেব ভোটের পরে অল্প দিনের মধ্যেই ‘‘চিত” অর্থাৎ ক্ষমতাচ্যুত হন। ]

বিবিধ উপদেশ

* ‘‘আমাদের এই শরীর আমাদের নিকট আল্লাহ পাকের এক মস্ত আমানত। এর হেফাজত করতে হবে। ছিহ্যাত (স্বাস্থ) যাতে নিজের দোষে নষ্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা ওয়াজেব (কর্তব্য)’’। -৩৫তম মজলিশ

* ‘‘হাত, চোখ, কান. মুখ, দেমাগ (মাথা), দিল (অন্তর) ইত্যাদীর হেফাজত একান্ত কর্তব্য।“

-৩৫তম মজলিশ

* ‘‘মানুষ সময়ের কদর বুঝ না। আপনারা সময়ের খুব কদর করবেন। সময় চলে গেলে আর পাওয়া যায় না।“ -৩৬ তম মজলিশ, পোস্তাগোলা, ১লা রবিউল আউয়াল ১৪০১ হিঃ

* ‘‘দুইটা জিনিসের খুব খেয়াল রাখবেন, এক- জিকির (আল¬াহর নাম যপ করা), আর এক- ইছলাহের ফিকির (আত্ম-সংশোধের চেষ্টা)। তাহা হইলে ইনশাআল্লাহ কামিয়াবী।“

* ‘‘গীবত (পরনিন্দা), শেকায়েত (অন্যকে দোষারোপ), অহংকার, হিংসা, যিনা (ব্যাভিচার) ইত্যাদী খারাপ অভ্যাস ছেড়ে দিতে হবে।“ -৩৮তম মজলিশ, ৪ঠা রবিউল আউয়াল ১৪০১ হিঃ

মাদ্রাসা প্রসঙ্গে

* ‘‘গ্রামে গ্রামে, মহল্লায় মহল্লায়, প্রতিটি মসজিদে সকাল বেলা আমভাবে ছেলে-মেয়েদের কুরআন মজিদ শিক্ষার ব্যবস্থার জন্য কর্মসূচী নেওয়া দরকার। যে মহল্লায় মসজিদ নাই, সেখানে স্থানীয় কোন লোকের বৈঠকখানা সকালে দুই ঘন্টার জন্য মক্তব হিসাবে ব্যবহার করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।’’ -১ম মজলিস ১৪০০ হিঃ

* ‘‘নামে থাকবে মাদ্রাসা, কিন্তু কাম হবে সব খানকার। পড়া-শোনার সাথে সাথে উহা আমলে পরিণত করা এবং চারিত্রক দোষ-ত্র“টি সংশেধন করা থাকবে মাদ্রাসার কর্তব্য। তাহা না হইলে ‘খানকা’ ‘খামাখা’ হয়ে যাবে।’’ -৩৯তম মজলিশ, ৮ই রবিউল আউয়াল ১৪০১ হিঃ

* “মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও ছাত্ররা যাকাত ফেতরার টাকা খাস করে কুরবানীর চামড়া সংগ্রহ করার জন্য শহরের অলিতে-গলিতে ঘুরাফিরা করে। ইহা ধর্মের জন্য বড়ই বে-ইজ্জতির কথা। ইহাতে মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকদের প্রতি মানুষের হেয় দৃষ্টি হয়, যা সর্বদিক দিয়ে লোকসানের কথা। মাদরাসা কর্তৃপক্ষের প্রতি বিশেষ অছিয়ত থাকল যে তারা যেন ছাত্রদেরকে এইরূপ চামড়া সংগ্রহ করতে না পাঠান; বরং মাদরাসা প্রাঙ্গনে ও শহরের বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্প থাকবে। সেখানে মাদ্রাসার দরদী জনগন চামড়া নিজেদের দায়িত্বে পৌঁছাবেন। আল্লাহপাকের উপর ভরসা করে মাদরাসা চালান। হেয়তাপূর্ণ কাজ বন্ধ করুন।’’ -৩য় মজলীস, ১৪০০হিঃ

* ‘‘বর্তমানে মাদ্রাসা গুলি হইল নূহ্ (আঃ)এর কিস্তি। যাহারা আস্তাজায়ে কেরাম (শিক্ষকবৃন্দ) ও তালাবা (ছাত্র), তাহারা তো কিস্তিতে আছেনই। এ ছাড়া আমার মহব্বতের দোস্তেরা যাহারা ইহা চালায়, তাহারও এর মধ্যে শামিল। এটাই কামিয়াবীর পথ।’’ -৩৬তম মজলিশ, ১লা রবিউল আউয়াল ১৪০১ হিঃ

* “দ্বীন হাসিল করা বা দ্বীনের খেদমত করা সবকিছু হওয়া চাই আল্লাহ পাককে রাজী-খুশী করার নিয়তে, দুনিয়া কামাই করার নিয়তে নয়।” -৩৪ তম মজলিশ, কামরাঙ্গীচর, ২৮শে সফর ১৪০৮ হিঃ

* ‘‘যাহারা দ্বীন শিক্ষা দিয়া দ্বীনের খেদমত করতেছেন, তাহারা এর জন্য আল্লাহ পাকের কাছে ছওয়াব পাইবেন। কাজেই এটাতো নিজের কাজ করতেছেন। নিজের বাড়ীর কাজ করে তো আর পয়সা চাওয়া যায় না। যদি নিজের বাড়ীর কাজ করে এসে কেহ অন্যের কাছে পয়সা চায়, তবে সকলেই তাহাকে পাগল বলবে। এক্ষেত্রেও তাই, পয়সা চাওয়া যাবেনা, কামনাও করা যাবে না – যদি এমনিই দেয়, তাহা সন্তুষ্ট চিত্তে গ্রহন করন চাই। যদি এই অযীফা (বেতন) কমে যায় বা কম দেয়, তবে এই বলে ছবর করবেন, এতে আল্লাহ পাকের কোন হেকমত আছে এবং এটি আমার উপর একটি পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় ছবর দ্বারা পাশ করতে হবে।’’

-৩৪ তম মজলিশ ১৪০৮ হিঃ---------collected

বিষয়: বিবিধ

৯২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File