মাওলানা মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর (রহ)

লিখেছেন লিখেছেন জাকির ০৪ মে, ২০১৩, ১২:১৩:৫৬ রাত

বাংলার যমীন যে উলামায়ে দ্বীন, আওলিয়ায়ে কেরাম ও মাশায়েখে ইযামের অবদানে ঋণী তাঁদের মধ্যে হযরত মাওলানা মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর (রহ) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

এই মহান ব্যক্তি ১৮৯৩ সালে নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত লক্ষীপুরের রায়পুর থানাধীন লুধুয়া গ্রামের এক দীনদার পরিবারে জন্মগ্রহন করেন।শৈশবে তার চাচা মাওলানা ইউনুস ছাহেবের নিকট ‘বিসমিল্লাহ’র সবক গ্রহন করেন।১৯০৬ সালে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে ভারতের পানিপথ গমন করেন।তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর।পানিপথ মাদ্রাসায় ৩ বছরে হেফজ শেষ করেন।অতঃপর সাহারানপুরের মাজাহিরুল উলুম মাদ্রাসায় ৭ বছরে দাওরা শেষ করেন এবং সবশেষে দারুল উলুম দেওবন্দে ১ বছর উচ্চতর পড়াশুনা করার পর থানা ভবনে গিয়ে হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী(রহঃ) এর খেদমতে ৬ মাস অবস্থান করেন।১৯১৮ সালে ২৬ বছর বয়সে দেশে প্রত্যবর্তন করে প্রথমে নিজের বাড়ি না গিয়ে সরাসরি ব্রাক্ষনবাড়িয়া জামেয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসায় গিয়ে উপস্থিত হন এবং এই মাদ্রাসায় শিক্ষগতার মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু হয়।সেখানে ক্রমাগত ৩ বছর শিক্ষগতার পর কিছুদিন ছিলেন খুলনা গজারিয়া এক মাদ্রাসায় অতঃপর চলে আসেন ঢাকা বড় কাটরা হুসাইনিয়া আশরাফুল উলুম মাদ্রাসায়।যেখানে তার উল্লেখযোগ্য সহযোগী ছিলেন মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী(রহঃ) ও মাওলানা আব্দুল ওয়াহহাব পিরজী হুজুর(রহঃ)।১৯২২ সালে ৩০ বছর বয়সে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।যে কয়জন মহান বুজুর্গ এদেশে দীনী মাদ্রাসা স্থাপন এবং ইলমে দীনের প্রচার-প্রসারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হাফেজ্জী হুজুর(রহঃ)।ঢাকার লালবাগ জামেয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া,বড় কাটারা হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম মাদ্রাসা,কামরাঙ্গীচর নূরিয়া মাদ্রাসা,ফরিদাবাদ এমদাদুল উলুম মাদ্রাসা এবং নোয়াখালীর লুধুয়া এশা‘আতুল মাদ্রাসাসহ এদেশে তিনি ছোট বড় অনেক মাদ্রাসা মক্তব স্থাপন করেছেন।১৯৮১ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেন যা বাংলাদেশের উলামায়ে কেরামদের জন্য ছিল এক বিরল দৃষ্টান্ত।১৯৮৭ সনের ৭ই মে ৯৫ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করে্ন। কামরাঙ্গীচর নূরিয়া মাদ্রাসার জামে মসজিদের দক্ষিন পাশে তাকে দাফন করা হয়।একজন আলেমের যা যা বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার তা হাফেজ্জী হুজুর(রহঃ)এর কাছে পূর্ন বিদ্যমান ছিল।তিনি যেমন আল্লাহর খাছ বান্দা ছিলেন, তেমন হাজারো মানুষের শ্রদ্ধাবাজন ব্যক্তি।তিনি তাদেরই নমুনা ছিলেন যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা কুরআনের এই আয়াত নাযিল করেছেন-“রহমানের বান্দা তারাই,যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মূর্খরা কথা বলতে থাকে,তখন তারা বলে,সালাম।এবং যারা রাত্রি যাপন করে পালনকর্তার উদ্দেশ্যে সেজদাবনত হয়ে ও দন্ডায়মান হয়ে।এবংযারা বলে হে আমার পালনকর্তা,আমাদের কাছ থেকে জাহান্নামের শাস্তি হটিয়ে দাও।নিশ্চয় এর শাস্তি নিশ্চিত বিনাশ”(ফোরকান-৬৩-৬৫)।

আর এমন দলের অন্তর্ভুক্ত কেনইবা হবেন না যিনি ব্যক্তি জীবনে ছিলেন একেবারে সাদাসিধে মানুষ।যার প্রিয় ইবাদত ছিল আল্লাহর যিকির।নামাজের সঙ্গে যার গভীর সম্পর্ক ছিল । যিনি ছিলেন অসাধারন চরিত্রের অধিকারী।আবার সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয় জীবনে ছিলেন সবার শ্রদ্ধাবাজন ব্যক্তি।বর্তমান সময়ে তার মত আলেমের বড় অভাব। -জাকির

বিষয়: বিবিধ

১৭০৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File