বাংলাদেশে আদিবাসী দাবী কেন ও তার পরিণতি কি?

লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ১৩ আগস্ট, ২০১৬, ১১:৪১:১২ রাত



জাতি, জাতিসত্তা, জাতীয়তাবাদ সমস্যা বাংলাদেশে এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যে শক্তি কাজ করেছে তার মূলে ছিল বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ধারণা দেন। তাঁর দল বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। সাধারণত বাংলাদেশের জনগণ দেশের বৃহৎ স্বার্থে তাঁর এই জাতীয়তাবাদ ধারণা মেনে নেয়। তবে এর সমালোচনা যে হয়নি তা নয়। তারপরেও সে দিক নিয়ে গবেষকরা বেশি নজর দেয় না। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে এ বিষয়ে সুন্দর সমাধান দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬ এর ২ধারা মতে, জাতি হিসেবে বাঙ্গালী ও নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশি বলে বিবেচিত হবে। এছাড়া বাঙ্গালি ব্যতীত অন্যান্য যারা আছে তারা উপজাতী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলে পরিচিত হবে।বাংলাদেশে বসবাসরত কয়েকটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নিজেদের আদিবাসী স্বীকৃতির দাবী করায় এই মিমাংসিত বিষয়টি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা উপজাতিরা যদি আইএলও কনভেনশন ও আদিবাসী সংজ্ঞা অনুসারে আদিবাসী হতো তাহলে তাদের দাবি মেনে নিতে আমাদের কোন আপত্তি ছিল না। আমরা জানতে চেষ্টা করবো বাংলাদেশের উপজাতিরা আসলে আদিবাসী কি না। তারা কেন নিজেদের আদিবাসী দাবি করছে। তাদের আদিবাসী দাবি মেনে নিলে আমাদের বা রাষ্ট্রের কি ক্ষতি হবে।

আদিবাসী না উপজাতি

আদিবাসী কারা? বাংলাদেশে আদিবাসী আছে? আক্ষরিক অর্থে ও আভিধানিক সংজ্ঞানুসারে কোন দেশ বা স্থানের আদিম অধিবাসী বা অতি প্রাচীনকাল থেকে বসবাসরত জনগোষ্ঠিই ঐ অঞ্চলের আদিবাসী (Indigenous)। সেই অর্থে বাংলাদেশের ভূ-খন্ডে বসবাসরত বাঙ্গালিরাই আদিবাসী। বর্তমানে বাংলাদেশের ভূ-খন্ডে বিভিন্ন সময়ে আগত অন্যান্য নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের অধিবাসী বটে, আদিবাসী নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে শত বছর পূর্বেও বাঙ্গালি ছিল। সেখানে আশপাশের দেশ থেকে আগত নৃ-গোষ্ঠীর জনগন (Ethnic Group) আজ এ দেশের নাগরিক। কিন্তু তাদের আদিবাসী বলা হচ্ছে কেন? এ বিষয়ে যে সকল আর্ন্তজাতিক দলিলের কথা বলা হচ্ছে সেগুলো আমেরিকা ও অষ্ট্রেলিয়ার উপনিবেশিকতার যাঁতাকলে পৃষ্ঠ রেড ইন্ডিয়ান ও এ্যাবোরোজিনদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে; যারা এখনও পর্যন্ত নিজেদের ভূমি ও অন্যান্য অধিকার থেকে বঞ্চিত।

উপরে আদিবাসী কারা তা উল্লেখ করেছি। এবার দেশবাসীর কাছে কয়েকটি প্রশ্ন রাখবো।

১। যারা মাত্র কয়েকশ বছর আগে এই ভূখন্ডে প্রবেশ করেছে তারা কি করে সহস্র বছরের প্রাচীন বাঙ্গালি অধ্যুষিত অঞ্চলে আদিবাসী হয়? তারা আদিবাসী হলে বাঙ্গালিরা কি নিজ ভূমে পরবাসী?

২।হঠাৎ এই দাবি কেন? পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের মনে কে বুনেছেন এই বীজ?

৩।দেশের প্রচলিত আইন কি পারে না এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার সংরক্ষণ করতে? তারা তো এ দেশেরই নাগরিক।

৪। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জনগণের অধিকার সংরক্ষণের জন্য “আদিবাসী” পরিচয় বা স্বীকৃতি কেন দরকার? কেন এজন্য আন্তর্জাতিক আইনের শরণাপন্ন হতে হবে?

৫। ক্ষুদ্র এই নৃগোষ্ঠীর অধিকার সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮ ধারা কি যথেষ্ট নয়? যেখানে বলা আছে যে, “জনগণের যেকোন অনগ্রসর অংশকে অগ্রসর করার নিমিত্তে, সুবিধা দেওয়ার নিমিত্তে রাষ্ট্র যেকোন প্রকার বন্দোবস্ত নিতে পারবে এবং সংবিধানের অন্য কোন ধারা সেটাকে বাধা দিতে পারবে না।”

৬। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা উপজাতিদের আদিবাসী স্বীকৃতি দিতে বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের এত আগ্রহ কেন? এতে তাদেরইবা লাভ কি?

৭। শান্তি চুক্তিতে যারা নিজেদের উপজাতি বলে পরিচয় দিল, সেই চুক্তির ৩বছর যেতে না যেতে ২০০১ সাল থেকে কেন নিজেদের আদিবাসী বলে স্বীকৃতি দিতে দাবী করতে শুরু করল?

৮। কেন তারা আদিবাসী স্বীকৃতির দাবি করছে তার ব্যাখ্যা দেওয়া হয় না কেন?

৯। তারা যদি আদিবাসী হতো তবে মানবরেন্দ্র নারায়ন লারমা ১৯৭২ সালে সংসদে দাঁড়িয়ে নিজেদের চাকমা, মারমা আলাদা পরিচয়ের দাবি করেছিল কেন?

যেকেউ সংবিধানের ২৮ ধারা যদি ভালো করে অনুধাবন করে তবে বুঝতে পারবে তাদের (উপজাতি) অধিকারের জন্য সরকার কতটুকু সচেষ্ট।

আদিবাসী নিয়ে প্রশ্ন আসলেই আইএলও (ILO) এর দোহাই দেওয়া হয়। এই পর্বে আইএলও কনভেনশন ১০৭ ও ১৬৯ নিয়ে আলোচনা করব। আইএলও কনভেনশন ১০৭ এ কি আছে?? ১৯৫৭ সালের আইএলও কনভেনশন ১০৭, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক স্বাক্ষরিত হয়। ঐ দলিলের মূল প্রতিপাদ্য ছিলঃ ১। উপজাতি জনগোষ্ঠীকে মূল ধারায় সমকক্ষ হতে সহায়তা করবে।

২। তাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে রাষ্ট্র কর্তৃক সহায়তা করা।

৩। এক্ষেত্রে কোন ধরনের বাধ্যবাধকতা করা যাবে না।

৪। রাষ্ট্র নিরাপত্তা বা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে জমি ব্যবহার করতে পারবে, তবে তাদের স্বাধীন মতামত গ্রহণ এবং যথাযথ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।

৫। উপজাতি জনগোষ্ঠী দেশে প্রচলিত ধারায় বিচার যোগ্য হবেন।

এই কনভেনশনের ধারাগুলো বাংলাদেশের সংবিধান ও রাষ্ট্রের জন্য কোন হুমকি নয় বিবেচনা করে তৎকালীন সরকার সেই দলিলে স্বাক্ষর করে।

আইএলও কনভেনশন ১৬৯-এ কি আছে?? ১৯৮৯ সালের এ কনভেনশনের মূল বক্তব্য হলোঃ

১। উপজাতি জনগোষ্ঠী চিরস্থায়ী এবং সবচেয়ে পুরানো জনগোষ্ঠী এই ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত।

২। সর্বক্ষেত্রে তারা আলাদা গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচিত হবে এবং রাষ্ট্র তা নিশ্চিত করবে।

৩। তাদের আত্ম-পরিচয় নিরূপণের ক্ষেত্রে তারা মূল জাতিগোষ্ঠী থেকে ভিন্নতর, নিজস্ব সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং আর্থ-সামাজিক মানদণ্ডে বিবেচিত হবে।

৪। ঐতিহ্যগতভাবে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মালিকানার পাশাপাশি তাদের জীবনধারণ ও বিবিধ কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহৃত জমির উপর উপজাতিদের নিরঙ্কুশ অধিকার এবং দখল রাষ্ট্র কর্তৃক সংরক্ষণ করা হবে।

৫। এখানে কোন খাস জমি থাকবে না, এমনকি প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে তাদের মতামত প্রাধান্য হবে।

৬। এই জনগোষ্ঠীর বাইরে কেউ এখানকার জমির মালিক হতে পারবে না, যা রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে।

৭। কারা অন্তরীণ ব্যতীত তাদের প্রচলিত ধারায় শাস্তি প্রদানকে প্রাধান্য দিতে হবে।

কনভেনশন ১৬৯ এর প্রস্তাবনাসমূহ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে বহুলাংশে খর্ব করে এবং বিভিন্ন বিষয়ে আইনি জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে বিধায় বাংলাদেশ সরকার ঐ কনভেনশনে স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থাকে। এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ্য যে, দক্ষিণ এশিয়ার নেপাল ছাড়া আর কোন দেশ কনভেনশন ১৬৯ সমর্থন বা স্বাক্ষর করেনি। বিশ্বের মাত্র ২৭টি দেশ ঐ কনভেনশন স্বাক্ষর করে।

এবার দেখা যাক কি আছে জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক ঘোষণাপত্রে-

১। আদিবাসীদের আত্ম নিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং অভ্যন্তরীণ ও স্থানীয় বিষয়ে স্বায়ত্তশাসন।

২। ভূমি ও ঐ স্থানের উপর পূর্ণ অধিকার।

৩। নিজস্ব শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও তা নিয়ন্ত্রণের অধিকার।

৪। আদিবাসীদের অনুমতি ব্যতিরেকে বা যৌক্তিক না হলে ঐ অঞ্চলে সামরিক কার্যক্রম পরিহার।

৫। জাতিসংঘ বা আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংস্থা কর্তৃক এই অধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠার জন্য চাপ প্রয়োগের নিমিত্তে জনমত গঠন, অর্থনৈতিক সহযোগিতা বা কারিগরী সহায়তা প্রদান।।

উল্লেখিত আইনসমূহ কেবল আদিবাসীদের জন্য প্রযোজ্য। আর এমন লোভনীয় আইনের সুবিধা নিতেই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো নিজেদের আদিবাসী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে উঠে পড়ে লাগছে।

এবার দেখি আমাদের সংবিধান কি বলে? বাংলাদেশের সংবিধানের উনুচ্ছেদ ২৩ (ক ) রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন। উল্লেখ, সংবিধানের কোথাও আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি। এছাড়াও সংবিধানের ২৮ ধারায় উল্লেখ আছে বিভিন্ন অনগ্রসর সম্প্রদায়কে মূল ধারার সমকক্ষ করতে বিশেষ সুবিধা দিবে। যেমনঃ শিক্ষা, চাকুরী, ব্যবসা, বিদেশে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ, বিসিএস নিয়োগে কোটা ইত্যাদি। এতো কিছুর পড়েও কেন তারা আদিবাসী স্বীকৃতির দাবি করছে?

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগনকে আদিবাসী স্বীকৃতি দিলে কি হবে?

১। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীকে সুনির্দিষ্ট ভৌগলিক সীমারেখায় চিহ্নিত করে একটি এলাকায় আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দিতে হবে।

২। সেক্ষেত্রে ঐ ভৌগলিক সীমারেখায় চিহ্নিত রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন কানুন, সংবিধান, প্রশাসন যন্ত্র, আইন – শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা বিপন্ন হবে।

৩। ঐ এলাকায় প্রাকৃতিক সম্পদ, বনাঞ্চল, নদ-নদী, জলাধারা বা জনসমষ্টির উপর দেশের সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।

দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্বের জন্য এর চেয়ে বড় হুমকি আর কি হতে পারে? তাছাড়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর স্বকীয়তা রক্ষা ও উন্নয়নের জন্য দেশের আপামর জনগনকে বঞ্চিত করা সমীচীন হবে কি? যদি পার্বত্য চট্টগ্রাম কিংবা ময়মনসিংহের গারো পাহাড় অথবা সিলেটের বিভিন্ন স্থান দেশের অন্যান্য জেলার আপামর জনগণের জন্য রুদ্ধ হয়ে যায়, তাহলে কি বাঙ্গালি অধ্যুষিত সমুদয় এলাকা থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জনগণকেও বিতাড়িত করতে হবে? এদেশে গারো, সাঁওতাল, চাকমা কিংবা বাঙ্গালি সকলের অধিকার কি সমান নয়?

বলা হয়ে থাকে, ভারত পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ। সেদেশেও রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে ভারত ও বাংলাদেশে একই গোত্রভূক্ত উপজাতি বসবাস করে। কিন্তু জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা কিংবা বিদেশী এনজিওরা কেন কেবলমাত্র বাংলাদেশের উপজাতিদের বিশেষ মর্যাদা দিতে আগ্রহী তা স্পষ্ট নয়!

প্রকৃত পক্ষে, পার্বত্যাঞ্চলে অবস্থানরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতির পরিণতি হবে দেশের জন্য ভয়াবহ। পাহাড়ি (উপজাতি) নেতারা তা ভালো করেই জানেন। অথচ সাধারণ উপজাতিদের সরলতার সুযোগ নিয়ে এবং বিদেশি দোসরদের মদদে পার্বত্যাঞ্চলের কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল ও অর্থলোলুপ ব্যক্তির মদদে এ বিষয়ে যারা ইন্ধন যোগাচ্ছেন তাদের সাবধান হওয়া দরকার। নয়তো আপনি না হলেও আপনার আগামী প্রজন্ম দেখবে তিমুর কিংবা সুদানের মতো বিভক্ত একটি দেশ। এদেশের দেশপ্রেমিক জনগণ কখনই তা মেনে নিবে না, বরং এসকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।

--- তাজুল ইসলাম নাজিম

(সংগৃহীত)

বিষয়: বিবিধ

১৩৮১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

376223
১৪ আগস্ট ২০১৬ দুপুর ০২:০০
কুয়েত থেকে লিখেছেন : জনগণের যেকোন অনগ্রসর অংশকে অগ্রসর করার নিমিত্তে রাষ্ট্র যেকোন প্রকার বন্দোবস্ত নিতে পারবে এবং সংবিধানের অন্য কোন ধারা সেটাকে বাধা দিতে পারবে না। মায়ের চেয়ে মাসির দরদ একটু বেশীই হয় ধন্যবাদ আপনাকে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File