সততার পুরস্কার-২
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ০১ আগস্ট, ২০১৬, ১১:০৪:৩৯ সকাল
যারা তাদের চরিত্রের সৌন্দর্য দিয়ে, তাদের আচার আচরণ দিয়ে অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারাই সচ্চরিত্রবান। সুন্দর চরিত্রের অধিকারী মানুষেরা ভদ্র, নম্র, ও বিনয়ী হয়ে থাকেন।
নবী করিম (সা) বলেছিলেন: ‘সদাচরণ ও চারিত্রিক সততা- দ্বীনের অর্ধেক’।
সততা ও বিশ্বস্ততার প্রতি আহ্বান জানিয়ে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, ‘হে ইমানদাররা! আল্লাহকে ভয় কর এবং সৎ-সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গী হও।’ (সুরা তওবা : ১১৯)
অন্যদিকে নবী কারীম (স.) বলেছেন, চারটি জিনিস যার মধ্যে থাকে তার ইসলাম পরিপূর্ণ হয়। এগুলো হলো- সততা, কৃতজ্ঞতা, লজ্জা এবং সদাচরণ। তিনি আরও বলেছেন, 'নিশ্চয় সত্যবাদিতা পুণ্যের পথ দেখায় আর পুণ্য নিয়ে যায় জান্নাতের দিকে।'
সততার পুরস্কার সম্পর্কে আরও একটি গল্প-
এক রাজা ও সৎ যুবকের গল্প শোনাব। এক দেশের রাজা একদিন অনুভব করলেন উনি বৃদ্ধ হচ্ছেন। সিংহাসনের জন্য তার একজন উত্তরসূরি রেখে যেতে হবে। কিন্তু তার পুত্র-কন্যা আর মন্ত্রিসভার সবাই ভয়ানক দুর্নীতিতে লিপ্ত ছিল। কারও ওপর ভরসা করতে না পেরে সিদ্ধান্ত নিলেন জনগণের মধ্য থেকেই একজন যোগ্য লোক খুঁজে নেবেন এবং কিছু সময় প্রশিক্ষণ দিয়ে রাজ্য চালাবার জন্য উপযুক্ত করে তুলবেন।
যেই ভাবা সেই কাজ। একদিন রাজ্যের ১৭-১৮ বছর বয়সী হাজারখানেক তরুণ-তরুণীকে একটি ময়দানে ডাকা হলো। তাদের মধ্যে ওই রাজার পুত্র-কন্যারাও নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ করার সুযোগ পেল।
রাজা সবাইকে একটা করে বীজ দিয়ে বললেন, এটা একটা বিশেষ ধরনের বীজ। এটা তোমরা সবাই রোপন করবে, যত্ন নেবে, পানি দেবে। এক বছর পর যার বৃক্ষ সবচেয়ে সুন্দর হবে, সেই এই রাজ্য শাসন করার জন্য নির্বাচিত হবে। সেই পারবে আমার জনগণের ঠিক ভাবে যত্ন নিতে।
এরপর সবাই বীজ নিয়ে যার যার বাড়ি চলে গেল। যুবকদের মধ্যে এদের একজনের নাম ছিল আনিস। আনিস তার মায়ের সাহায্যে বীজটি রোপণ করল।
কিন্তু অনেক যত্ন নেবার পরও কোনো চারা বের হতে না দেখে আনিস খুব হতাশ হয়ে পড়ল। মাসখানেক পরেই নির্বাচিত অনেকের মুখেই ওদের চারা গাছের গল্প শুনতে পেল। কয়েক মাসেই অনেকের চারা বৃক্ষে পরিণত হল। আনিস ভাবছিল, নিশ্চয়ই তার কোনো পাপের কারণে বীজ থেকে চারা বেরুচ্ছে না। আনিস ওর কষ্টের কথা ওলজ্জায় কাউকে বলতেও পারল না।
এক বছর পর নির্দিষ্ট দিনে একটা বিশাল মাঠে সবাই যার যার বৃক্ষ তুলে নিয়ে হাজির। আনিস লজ্জায় যেতে চাইল না। ওর মা জোর করে পাঠাল। খালি টব নিয়ে আনিস পিছনের এককোণায় কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখল সবার কী সুন্দর সুন্দর বৃক্ষ! আনিসের খালি টব দেখে অনেকে খুব হাসাহাসি করল, ব্যঙ্গ করল নানাভাবে।
এক সময় রাজা এসে ঘুরে ঘুরে সবার গাছ দেখলেন। তারিফও করলেন অনেককে। হটাৎ রাজার নজর পড়ল আনিসের উপর। রক্ষীদের বলে তিনি আনিসকে মঞ্চে নিয়ে গেছেন। আনিস ভাবল, বীজ মারা যাওয়াতে তার সম্ভবত বড় শাস্তি হতে যাচ্ছে। কিন্তু রাজা সবাইকে অবাক করে দিয়ে ঘোষণা দিলেন, পরবর্তী রাজার নাম আনিস। এরপর সমবেত তরুণ-তরুণীদের উদ্দেশে তিনি বললেন, “তোমাদের সবাইকে একটা করে বীজ দিয়েছিলাম। কিন্তু বীজগুলো ছিল সিদ্ধ। যেগুলো দিয়ে কোনোভাবে চারা বেরই হবার কথা নয়। আনিস ছাড়া তোমরা সবাই ফুল, চারা ও গাছ এসব নিয়ে হাজির হয়েছো। তোমরা কখনোই বীজ থেকে চারা বের হতে দেখনি, সবাই অন্য বীজ লাগিয়ে মিথ্যা গল্প সাজিয়েছ। একমাত্র আনিস সাহস আর সততার সাথে তার ব্যর্থতা নিয়ে হাজির হয়েছে। একমাত্র ওর মধ্যেই এই রাজ্য শাসন করার মত নীতি আর চরিত্র আছে।”
রাজার কথা শুনে সবাই লজ্জায় লাল হয়ে গেল আর আনিসের মুখে বিজয়ীর হাসি ফুটে উঠল।
বিষয়: বিবিধ
১০৯৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
"কফিবীজ" গজানোর ছবিটা খুব সুন্দর!!
জাযাকুমুল্লাহ..
মন্তব্য করতে লগইন করুন