মুক্তবুদ্ধি চর্চায় তো কোন বাধা নেই, তবে শুধু ইসলাম ও মুসলিম জাতিসত্তার বিরোধীতা করে এত লেখালেখি কেন ?
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ১১ নভেম্বর, ২০১৫, ০৫:২২:২১ বিকাল
ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর মাধ্যমে এদেশে আগ্রাসী হস্তক্ষেপকারী বৃটিশ-খৃষ্টানদের সুদূর স্বপ্ন ইতিমধ্যেই অনেকটা বাস্তবায়ন পরিলক্ষিত হচ্ছে! দ্বীনি শিক্ষাকে তাড়িয়ে দিয়ে তদস্থলে পাশ্চাত্যমুখী ইংরেজী শিক্ষাব্যবস্থা এদেশে প্রবর্তনকালে লর্ড ম্যাকল বলেছিলেন, -“আমরা ভারতবর্ষে এমন এক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছি- যা গ্রহন করে এদেশের সন্তানরা রং ও বর্ণের দিক দিয়ে থাকবে যদিও ভারতীয়, কিন্তু ধ্যান-ধারণা ও মন-মস্তিস্কের দিক দিয়ে তারা হবে সম্পূর্ণ বিলাতী (বৃটিশ খৃষ্টান)।” এদেশে লর্ড ম্যাকলের সেই ভবিষ্যদ্বাণীর চিত্রই যে অহর্নিশ ফুটে উঠেছে।
বস্ততঃ তদানীন্তনকালে উলামায়ে কিরাম নিছক ইংরেজী শিক্ষাকে হারাম ফাতওয়া দেননি, হারাম ফাতওয়া দিয়েছিলেন ইংরেজী শিক্ষার ছত্রছায়ায় ইংরেজ বনে যাওয়াকে।তখন যদিও সেই দৃষ্টিভঙ্গি বেখাপ্পা লাগছিল, কিন্তু তার ফলাফল দর্শনে আজ তার মর্ম হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করা যাচ্ছে।
মুসলীম বাঙ্গালী জাতির জন্য নিঃসন্দেহে অশনি সংকেত যে, বলতে গেলে সেই ইংরেজী বিদ্যার পরশ-আশীর্বাদেই আজ জাতীয় শিক্ষাকেন্দ্র থেকে একদল মুসলমান নামধারী নতুন প্রজাতির খৃষ্টান মস্তিস্ক পয়দা হয়েছে- যারা তাদের দেশীয় মুসলিম ঐতিহ্য ও বাপ-দাদার ধর্ম-কৃষ্টিকে সেকেলে আখ্যা দিয়ে এর উৎখাতে বিজাতীয় ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে মরিয়া হয়ে লেগেছে। ধর্মের পক্ষের কোন দৃশ্য যেন তাদের চক্ষুশূল এবং ধর্মের পক্ষের কোন কথা যেন তাদের কর্ণরন্ধ্র। এক কথায়-ইসলামের নামই যেন তাদের গায়ে জ্বালা ধরায়।
তাদের মধ্যে যারা মুসলমান দাবীদার, এদের মুসলমানিত্বের নাকি নামায-রোযার পাবন্ধী, হালাল-হারামের বাছ-বিচার, জায়িয-নাজায়িযের ফাতওয়া সীমারেখা, কুরআন-হাদীস-শরীয়ত অনুসরণ ইত্যকার ঝঞ্জাল-ঝামেলা নেই ! ওসব নাকি বাড়াবাড়ির মৌলবাদ আর ফতোয়াবাজী এবং গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা বিরোধী।(নাউযুবিল্লাহ্)
এদের মুসলমানিত্বে শুধু রয়েছে নিজেদেরকে জোরেশোরে ধর্মের স্বপক্ষ বলে ইজহার করা আর কার্যত মাঝে মধ্যে কিছু হস্ত প্রার্থণা প্রদর্শনী, হাফ জাঞ্জাবী-পাজামা ও টুপীর জড়াজড়ি, বিবাহ অনুষ্ঠান আর মরণ শেষে জানাযা ও কুলখানী,এই ব্যাস।এতটুকু সম্পাদনেই মুসলমানিত্বের কর্তব্য নাকি শেষ ! এরপর যা ইচ্ছা বলো, যা খুশী করো, যেভাবে মর্জি চলো-তাতে ইসলামের চৌদ্দটা বাজলেও নাকি তাদের মুসলমানিত্ব বহাল-তবীয়ত থাকে! এর নাম নাকি তাদের ভাষায় মুক্তবুদ্ধি, মুক্তচিন্তা, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র।
আরো শংকা হলো-তাদের মধ্যে যারা ইতিমধ্যেই নাস্তিকরুপে স্বগর্বে জাহির হয়েছেন, তাদের খড়গ হস্তে যেভাবে ইসলাম প্রহৃত-লাঠি পেটা হচ্ছে, তাদের কলমের ধারালো খোঁচায় যেমন করে দ্বীন-ধর্মের রুহ-জেসেম বিদীর্ণ-ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে, তাদের অঙ্গুলীর হিংস্র ইঙ্গিতে যে ধারায় ধর্মীয় কৃষ্টি-কালচার পদদলিত-নিষ্পেষিত হচ্ছে, তা বড়ই ভয়াবহ ব্যাপার।দেশের উলামায়ে কিরাম ও দ্বীনদার মুসলমানগণ দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি মনে প্রাণে চান, কিন্তু ক্ষুধার উপশমে রুটি বিতরণের পাশাপাশি বিষমিশ্রিত পানি পিয়ানোর মাধ্যমে প্রাণ হরণের নীলনকশা বাস্তবায়ন কোন সংজ্ঞায় “সেবা” ? ধর্মবাগকগণ লেখার স্বাধীনতার বিরোধী নন, কিন্তু লেখার স্বাধীনতার উপর সওয়ার হয়ে দেশ-ধর্মের অস্তিত্বকে হুমকীর সম্মুখীন করা লেখার স্বাধীনতার কোন ধারা ? ধর্মপ্রাণগন বস্তঃত বাক স্বাধীনতার স্বপক্ষ সৈনিকই বটে, কিন্তু বাক স্বাধীনতার ভিসা নিয়ে দেশ-জাতি-ধর্মের আঙ্গিনায় বিপর্যয় ঘটানো সুদূর ষড়যন্ত্রের পরিচায়ক বৈকি!
আশচর্যের বিষয় যে, কথায় কথায় তারা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির খল অভিনেতা সেজে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধকে ইসলাম, উলামায়ে কিরাম ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিপক্ষ ভূমিকায় স্থাপন করেন। এ ধৃষ্টতার সাহস তারা পেলেন কোত্থেকে ? কে, কোন অপশক্তি তাদেরকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের স্বাতন্ত্র ও স্বাধীনতার মূলে (যার স্বরুপ ভিত্তি দ্বি-জাতি তত্ত্ব বা ইসলাম ও মসলমান)আঘাত করে ইসলামী দেশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ মুক্তিযোদ্ধা কাফেলাকে ইসলাম ও মুসলিম বিরোধী বলে মিথ্যা চিত্র লেপনের অপপ্রয়াসে ওয়াসওয়াসা দেয়? এদেশের মুক্তিযোদ্ধারা এদেশের ধর্মপ্রাণ জনতার ধার্মিক সন্তান।মুক্তিযুদ্ধের ভাবমুর্তিকে অধর্মমূলক বিভ্রান্তির করালস্রোতে প্রবাহমানের অপচেষ্টা সেক্যুলার ফান্ডামেন্টালিষ্টদের প্রভূগুরু কর্তৃক দেশের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে তাদের দূরভিসন্ধিপুষ্ট দীর্ঘলালিত নীলস্বপ্নের লীলাভূমির পথে পর্যবসিত করারই একটি ঘৃণ্য অপপ্রয়াস।
আজ তাই জাতিকে সজাগ হতে হবে। দেশের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গকে হুঁশিয়ার হতে হবে। বিভেদ-প্রভেদের বিচ্ছিন্নতা গ্লানি মুছে দেশ-ধর্মপ্রেমিক সকল নাগরিককে আজ ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এ যুগের তাগূত, ফিরা’উন, আবু জাহল, আবু লাহাব ও উতবাদের হিদায়াত কিংবা প্রতিরোধের লক্ষ্যে দেশের অস্তিত্বের স্বার্থে, জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে ও দ্বীন-ধর্মের হিফাজতের স্বার্থে।
(সূত্রঃ সম্পাদকীয়, আদর্শ নারী, মে-২০১২ সংখ্যা।)
বিষয়: বিবিধ
১১৪৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন