শাসকের শোষণের ভিতকে কাঁপিয়ে দিয়ে অবরুদ্ধ স্বদেশের জনসমাজকে জাগ্রত করেছিলেন মাষ্টার দা সূর্যসেন।
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ১২ জানুয়ারি, ২০১৫, ১২:৫৯:২২ দুপুর
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নায়ক মাস্টারদা সূর্যসেন।গণচেতনায় ত্যাগ-তিতিক্ষাকে ধারণ করে সর্বোপরি ক্ষুদ্র জনবল এমনকি অস্ত্রবলকে সম্বল করে মাস্টারদা ব্রিটিশ শাসকের শোষণের ভিতকে কাঁপিয়ে দিয়ে অবরুদ্ধ স্বদেশের জনসমাজকে জাগ্রত করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় স্ব্বাধীনতা সংগ্রামের এক জ্যোতির্ময় শুভ সূচনা ধরে বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের অলোকবর্তিকা সূর্যসেন হয়ে উঠেন এ উপমহাদেশের কালজয়ী ইতিহাস। আজও তার বিপ্লবীগাথা আমাদের শানিত করে।
মাস্টারদা কলেজে অধ্যয়নকালে ১৯১৭ সালে যুগান্তর দলে যোগ দিয়ে ১৯১৮ সালে বিপ্লবী দল গঠন করে ১৯২০ সালে 'সাম্যশ্রম' প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২১ সালে গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলনের সময় বিপ্লবী সদস্যদের নিয়ে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে ১৯২৩ সালে গোপন আস্তানা স্থাপন করেন। ১৯২৪ থেকে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত আত্মগোপন অবস্থায় বাংলা আসাম যুক্তপ্রদেশে বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তুললে ১৯২৬ সালের ৮ অক্টোবর কলকাতায় গ্রেফতার হয়ে কয়েক মাস পর মুক্তি লাভ করেন। ১৯২৮ সালে কংগ্রেসে যোগদানের পর ১৯২৯ সালে চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি বিপ্লবীদের নিয়ে অস্ত্র সংগ্রহ করে অনেক সদস্যকে সামরিক ট্রেনিং দেন। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল পুলিশ অস্ত্রাগার ও অঙ্লিারি অস্ত্রাগার দখল করেন। ১৯৩০ সালের ২২ এপ্রিল জালালাবাদ পাহাড়ে কর্নেল ভার্লাসের ব্রিটিশ বাহিনীর সঙ্গে মাস্টারদার নেতৃত্বে ভয়াবহ যুদ্ধে নিহত হয় ৬৪ জন ইংরেজ সৈন্য। ১১ বিপ্লবীও শহীদ হন।
সূর্যসেন প্রথম থেকেই লক্ষ করেন ইংরেজদের মতো পরাশক্তির সঙ্গে লড়াই করতে হলে ব্যাপক প্রস্তুতি প্রয়োজন। মাস্টারদা সিদ্ধান্ত নেন, সীমাবদ্ধ প্রস্তুতি ও শক্তি দিয়ে হলেও ব্রিটিশ সৈন্যকে আঘাত হানতে হবে।
মাস্টারদার ভাষায়, আঘাতের পর আঘাত হানো। মাস্টারদাকে ধরতে সে সময় ইংরেজ সরকার বিশাল অঙ্কের পুরস্কার ঘোষণা করলে ১৯৩৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি কল্পনা দত্ত, মনি দত্ত, শান্তি চক্রবর্তী, সুশীল দাশগুপ্তসহ বিপ্লবী ব্রজেন সেনের সহায়তায় গৈড়লা গ্রামে ক্ষীরোদ প্রভা বিশ্বাসের বাড়িতে তারা আশ্রয় নেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি দেশদ্রোহী ইংরেজ গুপ্তচর নেত্ররঞ্জন সেনের কাছ থেকে খবর পেয়ে ক্যাপ্টেন ওয়েসলি ওই বাড়ি ঘেরাও করলে উভয়পক্ষে প্রচন্ড গুলিবিনিময় হয়। অন্যরা কোনোক্রমে পালিয়ে গেলেও ইংরেজ সৈন্যের হাতে মাস্টারদা ও ব্রজেন সেন গ্রেফতার হন।বন্ধুরা এগিয়ে চল। জয় আমাদের সুনিশ্চিত। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক। বন্ধুরা বিদায়! ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ফাঁসির রজ্জু মাথায় নিয়ে কথাগুলো বলেছিলেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নায়ক মাস্টারদা সূর্যসেন। তার বিচারের জন্য গঠন করা হয় লোক দেখানো স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল। বিচারের সময় মাস্টারদার বিরুদ্ধে সরকার কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ উপস্থিত করতে না পারলেও রিভলবার পাওয়ার জন্য ইংরেজ বেতনভোগীর বিচারক তাকে প্রাণদ- দিতে দ্বিধা করেনি। ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি ১২টা ৪০ মিনিটে সূর্যসেনকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলানো হয়।কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে এক বছর রাখার পর এ রাতে মাস্টারদাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। পরে বর্বর ব্রিটিশরাজের পুলিশ বাহিনী মাস্টারদার মরদেহ বঙ্গোপসাগরের ২০০ মাইল গভীরে পাথর বেঁধে সমুদ্রে নিক্ষেপ করে।
১৮৯৪ সালের ২২ মার্চ চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার নোয়াপাড়া গ্রামে সূর্যসেন জন্মগ্রহণ করেন। পিতার রাজমনি সেন এবং মাতা শশী বালা সেন। ছোটবেলায় পিতা-মাতাকে হারালে কাকা তার দেখাশোনার দায়িত্ব নেন। গ্রামের দয়াময়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা আরম্ভ করেন। নোয়াপাড়া উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী শেষ করে চট্টগ্রাম শহরের ন্যাশনাল হাই স্কুলে ভর্তি হন। ১৯১২ সালে মাস্টারদা এখান থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯১৪ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। এরপর মাস্টার দা চট্টগ্রামে এসে ব্রাহ্ম সমাজের আচার্য্য হরিশ দত্তের জাতীয় স্কুলে শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন। অতঃপর উষাতারা স্কুলের অঙ্কের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে ছাত্রদের কাছে মাস্টারদা হিসেবে তিনি বহুল পরিচিতি লাভ করেন।
ব্রিটিশরা ধারণা করেছিল, মাস্টারদার সৎকারের পর তার সমাধিস্থল তীর্থভূমিতে পরিণত হবে। কিন্ত না, তিনি নেই তবে তার চেতনা আজও জাগ্রত করে স্বদেশ প্রেমী হাজারো মানুষকে।
বিষয়: বিবিধ
১৬৮০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এক দুইজন মাস্টারদা কি আর করতে পেরেছিল ? এই রকম যদি একেবারে শুরুতেই করতো তাহলে ইংরেজদের গোড়া এত শক্ত হতে পারতো না ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন