ঢাকাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দাও আর ‘হাসিনা পদত্যাগ করেছে, শুধুমাত্র এই খবরে আন্দোলন বন্ধ হবে’- লন্ডন থেকে তারেক রহমান।
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ০৫ জানুয়ারি, ২০১৫, ০১:০২:২৮ দুপুর
৫ জানুয়ারি: ব্রিটেন প্রবাসী বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমাদের লক্ষ্য একটাই শেখ হাসিনার পদত্যাগ। এবারের লক্ষ্য দেশকে মুক্ত করা, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। হাসিনা পদত্যাগ করেছে, শুধুমাত্র এই খবরে আন্দোলন বন্ধ হবে।
‘৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা ও কালো দিবস’ উপলক্ষে স্থানীয় সময় রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইস্ট লন্ডনের অট্রিয়াম অডিটোরিয়ামে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। তিনি বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার বিচার করা হবে। তথ্য প্রযুক্তিখাত উন্নয়নের নামে তার ছেলেকে যে অবৈধভাবে টাকা দিচ্ছে এ জন্য তার বিচার করা হবে। গত ৬ বছরে ইলিয়াস আলীসহ বিএনপি নেতাদের গুম-খুনের জন্য তার বিচার করা হবে। বিচার করা হবে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের হত্যার জন্যও।’
গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে সকলকে রাজপথে নামার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার দেশনেত্রীকে রাজনৈতিক কার্যালয়ে অন্তরীণ করে রেখেছে। বাংলাদেশের নেতাকর্মী-বিশেষ করে তৃণমূলের কাছে আমার প্রশ্ন-কারও মাকে যদি এভাবে অন্তরীণ রাখা হয়, তাহলে তোমরা কী করবে? কেউ কি ঘরে বসে থাকতে পারবে? যদি তাই না হয়-তাহলে কেন দেশনেত্রীকে অন্তরীণ থেকে বের করতে রাজপথে নেমে আসবে না?’
তিনি বলেন, ‘সারা দেশে লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। যে আন্দোলন সারাদেশে শুরু হয়েছে সে আন্দোলনকে লক্ষস্থলে নিয়ে যেতে হবে। আন্দোলন কোনোভাবেই থামানো যাবে না। এই আন্দোলন ব্যর্থ হলে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হবে এই দেশের, এই দেশের মানুষের এবং আমার তৃণমূল নেতকর্মীদের। তাই হাসিনা পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের অধীনে নির্বাচন না দেয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’
তারেক বলেন, ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে রং হেডেড শেখ হাসিনা তার পিতা বাংলাদেশের 'বাকশালের জনক' মুজিবুর রহমানের মতোই দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। হাসিনা তার ক্ষমতাসীন ৬ বছর সময়ে দেশ ও জনগণের পক্ষে কোন কাজ করেনি।
রাজাকারদের সঙ্গে বরাবরই আওয়ামী লীগের সখ্য রয়েছে- এমন অভিযোগ করে বিএনপির এ সিনিয়র নেতা বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের কাছে আমার জিজ্ঞাসা-দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের জন্য তোমরা যে স্বপ্ন দেখেছিলে তা কি হয়েছে? তা হলে পদ্মাসেতুর কাজ বন্ধ হত না। নতুন প্রজন্মের প্রতি আমার আহ্বান তোমরা কোন বাংলাদেশ চাও? আমার দল সুযোগ পেলে এ বাংলাদেশে কালো বিড়ালের সুযোগ থাকবে না। অন্যায়কে অন্যায় বলা হবে।’
তরুণদের উদ্দেশে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘এ দেশ সবার। নতুন প্রজন্মকে শুধু ফেসবুকে বসে থাকলে চলবে না। ঘরে বসে থাকলে হবে না। আমাদের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে রাজপথে নেমে আসতে হবে। জনগণকে সাথে নিয়ে তৃণমূল নেতাকমীরা ৯০-এ স্বৈরাচারকে পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। আবার কেন পারবেন না?'
তিনি বলেন, ‘বিএনপির কর্মসূচি বানচাল করতে ঢাকাকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। সোমবার থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের কাজ হবে ঢাকার এক অংশকে অপর অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া যাতে পুলিশ গুলি চালাতে না পারে।’
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ঘর থেকে বের হতে না দেয়ার আহবান জানিয়ে নেতাকর্মীদের তারেক বলেন, আমরা তাদের মত একটির বদলে ১০টি লাশ বা ঘর থেকে ধরে এনে হত্যার কথা বলব না, তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী যেন ঘর থেকে বের হতে না পারে, সেজন্য স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এদের অবরুদ্ধ করে রাখতে হবে।
শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের তহবিল আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগ তুলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, 'দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারতীয় একজন কর্মকর্তা বাংলাদেশে এসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে প্রবাসীদের পাঠানো ও দেশ থেকে নিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের একটি বিরাট অংকের অর্থ বাংলাদেশকে ফেরত দিতে ভারত সরকারের আগ্রহের কথা জানান। এই টাকা ব্যাংক ড্রাফট নাকি চেকে প্রদান করা হবে-এমনটি জানতে চাইলে উত্তরে বঙ্গবন্ধু তাকে ব্যাংক ড্রাফট বা চেক নয়, বস্তায় ভরে তার কাছে এই টাকা পাঠানোর অনুরোধ করেন। এসময় শেখ মুজিব এও বলেন- এই টাকা আমি আগামী নির্বাচনে খরচ করব। এটি প্রমাণ করে শেখ মুজিব বাংলাদেশে প্রথম দুর্নীতিকে ভিত্তি দিয়েছিলেন। শেখ মুজিবের মতো তার কন্যাও একই পথ অনুসরন করছে।
শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে এই অভিযোগের তথ্প্রযমাণ দিতে পারবেন বলেও দাবি করেন তারেক।
তারেক রহমান তরুণদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, "আমি তোমাদের এই নিশ্চয়তা দিতে পারি, বিএনপি আসলে ‘বেটার বাংলাদেশ’ হবে। সেই বাংলাদেশে কালো বিড়াল সাদা করা হবে না। অন্যায়কে অন্যায়, ন্যায়কে ন্যায় বলা হবে। গণতন্ত্রের কথা বলে অন্য দলের ওপর জেল-জুলুম করা হবে না। স্বাধীনতার চেতনার কথা বলে ক্রেস্টের স্বর্ণ চুরি করা হবে না। অন্যায়ের সমালোচনা করলে গণমাধ্যম বন্ধ করা হবে না। বাক-স্বাধীনতা হরণ করা হবে না। ফেসবুকে সমালোচনার জন্য জেল-জুলুম হবে না।"
অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করছে বাংলাদেশের একাধিক বেসরকারি টেলিভিশন।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুসের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মুহিদুর রহমান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এমএ মালিক, যুক্তরাজ্য বিএনিপর সিনিয়র সহসভাপতি আবদুল হামিদ চৌধুরী, নরসিংদী জেলা বিএনপির নেতা ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মনজুর এলাহী প্রমুখ।
বিষয়: বিবিধ
১১৯৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন