বাংলাদেশের মানুষ সৎ কিন্তু রাজনৈতিক চরিত্রহীনতা, অনৈতিক শিক্ষা এবং অশ্লীল সাংস্কৃতিক কার্যক্রম প্রচারে অধিকাংশ মানুষ আজ অসৎ।
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ২২ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৬:০২:২৫ সন্ধ্যা
বাংলাদেশের মানুষ তুলনামূলকভাবে সৎ কিন্তু রাজনৈতিক চরিত্রহীনতা, অনৈতিক শিক্ষা এবং অশ্লীল সাংস্কৃতিক কার্যক্রম প্রচারে আজ অধিকাংশ মানুষ অসৎপ্রবণ হয়ে গেছে। একটা সময় ছিল গ্রামে-গঞ্জে সাধারণ মানুষ দরজা জানালা খোলা রেখেই রাতে ঘুমাত। চুরি-ডাকাতি হতো না তা নয়, থানায় যে মামলা হতো ৭১'-এর পরে যে পরিসংখ্যান পাওয়া যায় তা এখন বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। কিন্তু ৭১-এর পূর্বে এই হার বেশ কম ছিল, সেই অপরাধপ্রবণতা হতদরিদ্র গরীবশ্রেণীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। যখন কোন অপরাধ ঘটত তখন গ্রামের মাওলানা-মৌলভীরা তার বিচার করতেন। সে বিচারের ফল গ্রামের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরাও মেনে নিতেন, তা যদি নিজেদের সন্তান বা ভাইব্রাদারের বিপক্ষেও যেত।
স্বাধীনতালাভের পরে সেইসব মাওলানা-মৌলভীদের প্রভাব প্রতিপত্তি একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যায়। কে ধংস করেছিল, কিভাবে তারা ক্রমে ক্রমে নিশ্চিহ্ণ হলেন বা তাদেরকে নিষ্ক্রিয় করা হলো তা গবেষণার বিষয়। হয়তো গবেষণা হবে, কবে তা জানি না। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী সম্প্রতি ধর্মীয় নেতাদেরকে মূল্যায়ন করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তার গবেষণায় হয়তো প্রতীয়মান হয়েছে যে, সব সমাজেই ধর্মীয় নেতাদের একটা প্রভাব থাকেই। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করতেই হবে।
অথচ আমাদের দেশে যেদিন থেকে ধর্মীয় নেতাদেরকে উঁচু পর্যায় হতে অবমূল্যায়ন করা শুরু হয়েছে তারপর থেকেই পরিবারের অভিভাবক থেকে শুরু করে মর্যাদাবান মুরুব্বিশ্রেণী উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদেরকে নৈতিকতা শিক্ষা দেয়া দুঃখজনকভাবে পরিহার করতে আরম্ভ করেছেন। যে কারণে প্রজন্মের মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটেছে।
বেশিরভাগ শিক্ষক এখন জ্ঞানার্জনের চেয়ে জীবনার্জনের প্রচেষ্টায় আত্মনিয়োগ করেছে। তারই কালোছায়া ভর করেছে অনিবার্যভাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তারা এখন শিক্ষালাভ করে নিজের বিবেকবোধকে স্বার্থান্ধ করে তোলায়। মানুষের জন্য দেশের জন্য কিছু করার মানসিকতা তারা পরিত্যাগ করেছে। কোন ত্যাগ নয়, মানুষ ও দেশের জন্য ত্যাগ করা যেন পাপ, এই অন্ধকারাচ্ছন্ন মন-মস্তিস্ক গঠনে তারা ব্যস্ত।
আজ সারা দেশে প্রায় সকলস্থানেই ‘দেশ দেশ’ একটা রব উঠেছে। কিন্তু দেশপ্রেম কোথায়! আসলে যে মানুষকে ভালোবাসে না সে কখনেই দেশপ্রেমিক হতে পারে না। তখন প্রেমের চিৎকারে তারাই মূখর হয় যাদের মধ্যে সত্যিকার প্রেমের সত্ত্বা থাকে না। যে প্রেমিক সে প্রেম প্রদর্শনে মূখর নয়। প্রেম থাকে তার কথায়, তার কাজে, তার সকল আচার-আচরণে। রাস্তায় কোন মানুষ অমানবিক ঘটনার শিকার হলে অথবা কোন মেয়েকে কেউ জোর করে তুলে নিতে চাইলে মানুষের মন উতলা হয় না, মানবিকতা যেন মুখথুবড়ে থাকে।
মানুষ আজ নিষ্ঠুর হৃদয়হীন হয়ে গেছে। অশ্লীল সংস্কৃতি চর্চায় মানুষ স্বার্থান্ধ হবেই, নিষ্ঠুরও। তাদের মধ্যে অস্থিরতা বাড়ে। তারা যেন আর ঘরে থাকতে চায় না, বাইরেও বেশিক্ষণ মন বসে না। তাদের মন আর মনের মধ্যে থাকে না। অস্থির হয়ে বিভিন্ন অনৈতিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তারা হরদম কি যেন খুঁজে বেড়ায় তা নিজেরাও জানে না।
এর পরিণাম বা ফলাফল কি! আমরা কথায় বলি, যতক্ষণ শাস ততক্ষণ আশ। কিন্তু যখন আশটুকুও শেষ হয়ে যায় তখন তা ফেলে নতুন জিনিষ ক্রয়ে কেউ বিলম্ব করে না। তেমনি আমাদের সমাজের অবস্থা। যতক্ষণ শাস ততক্ষণ আশ। আজ আশটুকু অর্থাৎ বাঙালীর মৌল সত্ত্বা অর্থাৎ যুবশ্রেণী এবং নৈতিকতা সম্পন্ন বৌদ্দিকশ্রেণীর আশটুকুও শেষের পথে। হয়ত নতুন করে একটা সমাজ ক্রয়ের দিন নিকটেই। সময়ের অনিবার্য রূপান্তর আসতেই হবে। একটা সভ্য সমাজ গড়ে তুলবে সে সেই সময় নামক নৈতিকতা সম্পন্ন যুবশ্রেণী এবং বৌদ্দিকশ্রেণী। তার সংখ্যা যত অল্পই হোক। কারণ অন্ধকার তো ঝাঁকে ঝাঁকে আসে। চাপচাপ অন্ধকার আসে। ছোট্ট একটা লাইট-ই বিপুল বিক্রমে সেই চাপচাপ অন্ধকারকে দূর করে দেয়। অন্ধকার কখনোই সেই লাইটকে, সেই আলোকে ধ্বংস করতে পারে না। আলো জ্বললে সে পালাবেই।
লেখক: শেখ আবুল কাসেম মিঠুন, অভিনেতা ও বাংলাদেশ সংস্কৃতি কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক (সংগৃহীত)
বিষয়: বিবিধ
১০৮২ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন