হজরত ফাতেমা (রা.) ছিলেন সব মুসলিম নারীর জন্য অনুসরণীয় আদর্শ।
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ২৩ অক্টোবর, ২০১৪, ০৪:০০:৪১ বিকাল
হজরত ফাতেমা (রা.) ছিলেন মহানবীর (সা.) এর আদরের কন্যা। বিয়ের আগে তিনি একজন আলোকিত বালিকা ছিলেন। বিয়ের পরে সংসার-জীবনেও তিনি হয়ে ওঠেন মুসলিম নারী সমাজের অনুপম উদাহরণ। হজরত ফাতেমা (রা.) বহুমুখী কর্মকান্ডের মাধ্যমে ধর্মনিষ্ঠ ও খোদা-ভীরু মহিলার এক শ্র্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। স্বামীর প্রতি আনুগত্যে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। তার যাপিত জীবন সব মুসলিম নারীর জন্য অনুসরণীয় আদর্শ।
অপরিসীম গুণের আধার ফাতেমা (রা.) বড় হয়ে উঠলেন। তিনি পূর্ণ বয়সে উপনীত হলে বহু স্বনামধন্য সাহাবি বিয়ের প্রস্তাব দেন। অবশেষে মহানবী (সা.) নিজ চাচাতো ভাই হজরত আলীর সঙ্গে আদরের মেয়ের বিয়ে দেন। বিশ্বনবী (সা.) অত্যন্ত অনাড়ম্বরভাবে ফাতেমার বিয়ে সম্পন্ন করেন।
ইচ্ছা করলে বড় ধনী সাহাবার সঙ্গে তার বিয়ে দিতে পারতেন, কিন্তু তা করেননি। বরং বিয়ের পর ফাতেমাকে (রা.) সান্ত্বনা দিলেন, 'মা ফাতেমা! তোমাকে আমি অপাত্রে দান করিনি। সে খুবই ভালো একজন মানুষ। সর্বপ্রথম ইসলামে দীক্ষিত এবং আমার সাহাবিদের মধ্যে জ্ঞান-গরিমায়, বিদ্যা-বুদ্ধিতে ও শৌর্য-বীর্যে সবার সেরা ব্যক্তির হাতেই তোমাকে সমর্পণ করেছি।' এ কথা শুনে হজরত ফাতেমা খুশি হলেন।
সংসার-জীবনে হজরত ফাতেমা ছিলেন পরিতৃপ্ত। কখনও কেউ কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ তোলেননি। হজরত ফাতেমা (রা.) আরবের সবচেয়ে ধনাঢ্য মহিলা হজরত খাদিজার (রা.) উত্তরাধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তাকে তিন দিন পর্যন্ত উপবাস থাকতে দেখা যেত। সংসারের যাবতীয় কাজ নিজ হাতে করতে হতো। এতে তার হাতে ও কোমরে দাগ পড়ে যেত। শুধু তাই নয়, শিশুদের দোলনা ঝোলানো ও আটা পেষাসহ সংসারের সব কাজ নিজ হাতেই সম্পন্ন করতেন। অবসরে উলের সুতা কেটে পরিবারের ভরণপোষণের কাজে হজরত আলীকে (রা.) সাহায্য করতেন।
এ দম্পতির সংসার ছিল অভাব-অনটনে জর্জরিত, যা খুবই বেদনাদায়ক। হজরত আলী (রা.) বলেন, 'ফাতেমার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার সময় আমার কোনো বাসস্থান ছিল না। মহানবীর (সা.) সঙ্গেই কেটে যেত সময়। ছিল না একটা বিছানাও। একটা চামড়া ছিল, যা আমরা রাতের বেলা বিছানা এবং দিনে পানির পাত্র হিসেবে ব্যবহার করতাম। একটি চাদর ছিল, তাও অপ্রশস্ত, যা দিয়ে পা ঢাকলে মাথা, মাথা ঢাকলে পা উদোম হয়ে যেত। ফাতেমা এসব কষ্ট মেনে নিত। বিলাসিতার জীবন-যাপনের চিন্তাও করত না সে।' হজরত আলী (রা.) দাওয়াতের কাজে ব্যস্ত থাকতেন। আর্থিক উন্নতির অবকাশ ছিল না। হজরত ফাতেমা কখনও কোনো বিষয়ে স্বামীকে পীড়াপীড়ি করতেন না। সন্তুষ্ট-চিত্তে নিজ হাতে ঘরের যাবতীয় কাজ করে যেতেন।
মহানবী (সা.) সংসারে জাঁকজমক ও অপচয় পছন্দ করতেন না। একবার হজরত আলী (রা.) শখ করে স্ত্রীকে একটি সোনার হার বানিয়ে দিয়েছিলেন। দুনিয়া আসক্তির ভয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) সোনার হারটি নিয়ে বিক্রি করে দেন এবং এর মূল্য দিয়ে একটা গোলাম খরিদ করে দিলেন। তেমনি একদিন নবী করিম (সা.) এর আসার খবর পেয়ে ফাতেমা (রা.) ঘর সাজালেন। দরজায় সুন্দর পর্দা ঝোলালেন। শিশু হাসান ও হোসেন (রা.) এর হাতে রুপার বালা পরালেন। এসব জাঁকজমক ও চাকচিক্য দেখে মহানবী (সা.) ফাতেমার বাড়ি থেকে ফিরে এলেন। ফাতেমা (রা.) তা জানতে পেরে সব সাজসজ্জা অপসারণ করলে মহানবী (সা.) সেখানে আগমন করেন।
মহানবী (সা.) ফাতেমাকে সব সময় স্বামীর আনুগত্য করার নির্দেশ দিতেন। একদিন ফাতেমা (রা.) কোনো কারণে স্বামীর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে তার প্রতিকারের জন্য মহানবীর (সা.) কাছে গিয়ে স্বামীর রাগের বিরুদ্ধে নালিশ জানালেন। নবী (সা.) তাকে বললেন, হে মা! মনোযোগ দিয়ে শোন, পৃথিবীতে এমন দম্পতি নেই, যাদের মধ্যে কোনো মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়নি। তাছাড়া স্ত্রী লোকের ইচ্ছামোতাবেক কাজ করা পুরুষের জন্য জরুরি নয়। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সামান্য মনোমালিন্য হতে পারে। বাড়াবাড়ি না করে তা সহজে মিটিয়ে ফেলাই শ্রেয়। ফাতেমা (রা.) এর দাম্পত্য জীবনেও এমনটি ঘটেছে। সেক্ষেত্রে তারা দ্রুত মীমাংসায় চলে এসেছেন। হজরত ফাতেমা (রা.) মহানবীর (সা.) কাছ থেকে ঘর-সংসারের নানা বিষয়ে জ্ঞান লাভ করতেন। পৃথিবীর সব মানুষ তথা দম্পতির জন্য, তা পরম আদর্শ ও শিক্ষা হিসেবে বিবেচিত।
সংগৃহীত
বিষয়: বিবিধ
১১৭১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন