আল্লাহ্’র ভয় মুসলমানের প্রতিটি কাজকে করে বিশেষ কাজ, প্রতিটি সময়কে করে বিশেষ সময়।

লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ১১ অক্টোবর, ২০১৪, ০২:৫৫:০৪ দুপুর



তাকওয়া অর্জনের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম আদর্শ ছিলেন বিশ্বনবী (সা.)। তাকওয়া ছাড়া কোনো ইবাদত কাজে আসবে না আর না কোনো কোরবানি কাজে আসতে পারে। তাই খোদাভীতির রূহ আমাদের ভেতরে সৃষ্টি করতে হবে। আমরা যদি এ রূহ সৃষ্টি করতে পারি তাহলেই আমাদের হজ ও কোরবানি তাঁর দরবারে গৃহীত হবে।

সবেমাত্র আমরা ঈদুল আজহা উদযাপন করলাম, এ ঈদকেও আমাদের সেই ঈদ বানানোর চেষ্টা করা উচিত, যার ভিত্তি তাকওয়ার ওপর। আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, কোরবানির শিক্ষা তা কি শুধু একদিনের জন্য? মোটেও নয়, যখন হজরত ইসমাঈল (আ.) তাঁর পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.)কে বলেছিল, ‘হে আমার পিতা! তোমাকে খোদাতায়ালা যা বলেন, তুমি তাই কর।’ এখানে কি শুধু গলায় ছুরি চালিয়ে আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্য ছিল? সেই যুগে মানুষের প্রাণের কোরবানি নেয়া হতো। এটি সেই যুগের দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো নতুন বিষয় ছিল না। এটি যদি সাধারণ কোনো কোরবানি হতো তাহলে পৃথিবীবাসী তা ভুলেও যেত, কিন্তু সেই পিতা-পুত্রের কোরবানি কোনো সাধারণ কোরবানি ছিল না, তাদের মাঝে তাকওয়া ছিল আর এ কারণেই আল্লাহপাক এ কোরবানিকে চিরদিনের জন্য প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছেন অনুর্বর উপত্যকায় মরুপ্রান্তরে এ কোরবানির ধারাবাহিকতা চালু হয়ে যায় যা আজও জারি রয়েছে। আমরা যে কোরবানি করলাম এটা আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জনের একটি মাধ্যম কিন্তু এর ওপর যদি আমরা প্রতিষ্ঠিত না থাকি তাহলে এ কোরবানির কোনো মূল্য তাঁর কাছে নেই।

আমরা যদি পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর জন্য হয়ে যাই তাহলে তিনিও আমাদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবেন। যেভাবে মহানবী (সা.)-এর সবকিছু ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, যা সম্পর্কে কোরআনে বর্ণিত আছে ‘তুমি বলো, আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও মরণ আল্লাহতায়ালার জন্য, যিনি সব জগতের প্রভু-প্রতিপালক।’ তাই আমরাও যদি আল্লাহর প্রিয়ভাজন হতে চাই তাহলে আমাদের সবকিছুকে আল্লাহর সন্তুষ্টির খাতিরে উৎসর্গ করতে হবে। এ ছাড়া লাখ লাখ টাকা দিয়ে কোরবানি করে কি লাভ যদি এর মাঝে খোদাভীতিই না থাকে।

হজ করলাম, কোরবানি দিলাম অথচ আমার মাঝে খোদাভীতি নেই তাহলে এসবের মূল্যই বা কি আছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যদি সঠিকভাবে আদায় না করি আর প্রতি বছর বড় বড় কোরবানি করি তাহলে কি এ কোরবানি গ্রহণীয় হবে? মোটেও না। কারণ আল্লাহর কাছে কোরবানির রক্ত, মাংস কোনোটাই পৌঁছে না, তার কাছে মানুষের তাকওয়া পৌঁছে। তাই শুধু একদিনের জন্য পুণ্যের কাজ নয়, পুণ্য করতে হবে বছরজুড়ে। হজের দিনগুলোতে আমরা আল্লাহর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ বলে অঙ্গীকার করেছি। দেশে ফিরে এসে আমাকে সেই অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন করতে হবে। নিজের সবকিছু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজে লাগাতে হবে। তার আনুগত্যে সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে। নিজের মাঝে এক আধ্যাত্নীক পরিবর্তন সৃষ্টি করতে হবে। এমন পরিবর্তন যে, হজকারীকে দেখলে মানুষ মনে করবে এ ব্যক্তি আসলেই আল্লাহপ্রেমিক। বাহ্যিকতার সব লোভ-লালসা পরিত্যাগ করে উঠতে-বসতে সর্বদা আল্লাহর জিকিরে মগ্ন থাকবে একজন হজকারী। নিজেকে যদি এমনভাবে গড়ে তোলা যায় তাহলেই আমি আল্লাহপ্রেমিক হতে পারব এবং আমার হজ আল্লাহ কবুল করবেন।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানবজাতিকে শুধু তাঁর ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। আর ইবাদতের চূড়ান্ত সীমা সম্পর্কে রাসূলে করিম (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন তা হল নামাজ। যত ধরনের ইবাদত রয়েছে তার সেরা হল নামাজ। মহানবী (সা.) নিজের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘নামাজ আমার চোখের শীতলতার কারণ।’ আমরা যদি সেভাবে নামাজ আদায় করি যার উত্তম আদর্শ আমাদের সামনে তিনি (সা.) প্রতিষ্ঠা করেছেন তাহলে এ ইবাদত আমাদের চোখের শীতলতার কারণ হবে। আল্লাহর হক যেভাবে আদায় করতে হবে, তেমনি বান্দার হকও আদায় করতে হবে। শুধু ঈদের দিন একটি কোরবানি দিয়েছি আর মনে করে নিয়েছি যে, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে ফেলেছি এটা মোটেও ঠিক নয়। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোনো গরু বা ভেরা কোরবানির প্রয়োজন নেই।

অনেকে আছেন সামর্থ্য না থাকায় কোরবানি দিতে পারেননি তাই নিজেকে হেয় মনে করছেন। তারা ভাবছেন যে, আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারলাম না। আল্লাহ আমাদের প্রতি নারাজ। এমন ধারণা মোটেও ঠিক নয়। কোরবানি দিতে পারিনি বলে কি হয়েছে, আমরা তো নিজেদের সময়কে ইসলামের তাবলিগের জন্য উৎসর্গ করতে পারি, অসহায় মানুষের খোঁজ-খবর নিতে পারি। নিজেকে সত্যিকার মুসলমান হিসেবে গড়ে তুলতে পারি, অযথা সময় নষ্ট না করে মসজিদে আল্লাহর ইবাদতে রত থেকে সময় কাটাতে পারি। আর এসব যদি আমরা করি তাহলে কোরবানি না করেও আল্লাহপ্রেমিক হতে পারব। ঈদের দিন যেভাবে আমরা একে অপরের খোঁজ-খবর নেই এমন আমল যেন বছরের প্রতিটি দিন হয়। মানুষের বাহ্যিক কাজ-কর্ম দিয়ে আল্লাহকে কখনই সন্তুষ্ট করা যাবে না বরং আল্লাহকে খুশি করাতে হলে চাই ধারাবাহিক সৎকর্ম। ঈদের দিনে আমরা লাখ লাখ পশু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি করেছি ঠিকই তাতে কি তাঁর সন্তুষ্টি লাভ হয়ে গেছে? তিনি তো বাহ্যিক কোরবানি চান না, তিনি চান হৃদয়ের কোরবানি, যে হৃদয় তাঁর ভয়ে সব সময় ভীত থাকে কেবল তার কোরবানিই আল্লাহ গ্রহণ করেন। আল্লাহপাকের কাছে বাহ্যিকতার কোনো মূল্য নেই, তিনি অন্তর দেখেন। যেমন মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের শরীর ও চেহারার প্রতি ভ্রক্ষেপ করেন না, বরং তিনি তোমাদের মনের ও কর্মের দিকে দৃষ্টিপাত করেন’ (মুসলিম, রিয়াদুস সালেহীন, প্রথম খণ্ড)। তাই প্রত্যেক কাজ যদি আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির খাতিরে করি এবং হৃদয়ে আল্লাহর ভয় রাখি তাহলে আমার প্রত্যেক কাজে তিনি সন্তুষ্ট হবেন এবং আমার প্রত্যেক দিনই হবে কোরবানির দিন।

বিষয়: বিবিধ

১২৩৪ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

273151
১১ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৪:১৩
ফেরারী মন লিখেছেন : আল্লাহ তায়ালা আমাদের যথাযথভাবে তাঁর নির্দেশিত পথে চলার তৌফিক দিক আমিন
273223
১১ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৫
আফরা লিখেছেন : সুন্দর লেখনির জন্য আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন ।আমীন ।
273228
১১ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
273304
১২ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০১:৫৮

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 7238

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 764

"> রায়হান রহমান লিখেছেন : আল্লাহ্’র ভয় মুসলমানের প্রতিটি কাজকে করে বিশেষ কাজ, প্রতিটি সময়কে করে বিশেষ সময়।

কিন্তু আমারা দেখি মুসলমানদের প্রতি কাজই "আকাজ", প্রতিটি সময়ই "দুঃসময়"

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File