যে ব্যক্তি অভাবী ঋণগ্রস্তকে অবকাশ দেয় অথবা ক্ষমা করে দেয়, আল্লাহ তাকে কেয়ামতের দিন নিজের আরশের নিচে আশ্রয় দেবেন
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ০১ অক্টোবর, ২০১৪, ০১:২৯:৩১ দুপুর
পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা আর অন্যের প্রয়োজনে এগিয়ে আসা হলো ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার অন্যতম উপাদান। একজন মানুষ যা ভোগ করে এর মধ্যে থাকে হাজারো মানুুষের শ্রম, সহযোগিতা আর অনুদান। আমরা যদি এক লোকমা ভাতের কথাই চিন্তা করি তাহলে দেখা যাবে যে, এর উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং একে খাবার উপযোগী করতে কত মানুষ যে শ্রম দিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। পরস্পর সাহায্য-সহযোগিতার একটি দিক হলো প্রয়োজনে অন্যকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা এ শর্তে যে, যথাসময়ে অর্থগ্রহীতা দাতাকে তা পরিশোধ করে দেবে। যাকে ঋণ বলে। ঋণ নিয়ে আদায় না করা চূড়ান্ত গর্হিত কাজ। যা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ গ্রাস করো না। (সূরা নিসা : ২৯)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেন, শহীদের সব পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়। কিন্তু অপরিশোধিত ঋণ ক্ষমা করা হয় না। (মুসলিম)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেন, অপরিশোধিত ঋণের কারণে ঈমানদার বান্দার আত্মা ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। এ ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত এ অবস্থা অব্যাহত থাকে। (তিরমিজি)। রাসূল (সা.) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির জানাজা নামাজ আদায় করতেন না। হজরত সালামা ইবনে আকওয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) এর কাছে একটি জানাজা আনা হলো, যেন তিনি জানাজা নামাজে ইমামতি করেন। রাসূল (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, মৃত ব্যক্তির ওপর কি কোনো ঋণ আছে? সাথীরা বলল, কোনো ঋণ নেই। রাসূল (সা.) জানাজা নামাজ পড়ালেন। এরপর অন্য একটি জানাজা আনা হলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, মৃত ব্যক্তির ওপর কি কোনো ঋণ আছে? মৃতের সাথীরা বলল, হ্যাঁ আছে । রাসূল (সা.) সাহাবাদের বললেন, তোমরা তোমাদের সাথীর জানাজা নামাজ আদায় করো। হজরত আবু কাতাদা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তার ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব আমি গ্রহণ করলাম। একথা বলার পর রাসূল (সা.) সে মৃতের জানাজা নামাজ পড়ালেন। (সহিহ বোখারি)। বিশেষ প্রয়োজনে ঋণ গ্রহণ করলে তা যতদ্রুত সম্ভব পরিশোধ করতে চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহর কাছে তা আদায় করার জন্য সামর্থ্য চাইতে হবে। সর্বোপরি ঋণ আদায়ে আন্তরিক হতে হবে। তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে ঋণ পরিশোধে সহায়তা করবেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, কেউ যদি অন্যের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে এবং সেই ঋণ আদায়ের ইচ্ছা পোষণ করে আল্লাহ তায়ালা তার পক্ষ থেকে ঋণ আদায় করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি ঋণ গ্রহণের পর পরিশোধের ইচ্ছা না করে তবে আল্লাহ তায়ালা তার সম্পদ ধ্বংস করে দেবেন। (সহিহ বোখারি)। অবশ্য ঋণদাতারও উচিত ঋণ গ্রহীতার প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া; বিশেষভাবে যদি ঋণ গ্রহীতা বাস্তবিকই অসচ্ছল ও অভাবী হয়। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, যদি ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি অসচ্ছল হয়ে পড়ে, তবে তাকে সচ্ছলতা আসা পর্যন্ত অবকাশ দাও। আর সদকা করা (ঋণ ক্ষমা করে দেয়া) তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা উপলব্ধি করো। (সূরা বাকারা : ২৮০)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি অভাবী ঋণগ্রস্তকে অবকাশ দেয় অথবা ক্ষমা করে দেয়, আল্লাহ তাকে কেয়ামতের দিন নিজের আরশের নিচে আশ্রয় দেবেন, যে দিন তাঁর আরশের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া অবশিষ্ট থাকবে না। (তিরমিজি)। অন্য বর্ণনায় হজরত আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কেয়ামতের দিনের ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পেতে চায়, সে যেন অভাবগ্রস্ত ঋণী ব্যক্তিকে অবকাশ দেয় অথবা ঋণ লাঘব করে দেয়। (মুসলিম)।
তবে সামর্থ্য থাকার পরও ঋণ পরিশোধ না করা এক ধরনের অত্যাচার, যা কখনও কাম্য নয়। রাসূল (সা.) বলেছেন, ঋণ পরিশোধে সচ্ছল ব্যক্তির টালবাহানা জুলুম। (সহিহ বোখারি)। কাজেই ঋণ গ্রহীতা ঋণ আদায়ে আন্তরিক হলে আর ঋণদাতাও অসচ্ছল ঋণ গ্রহীতার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করলে ঋণ পরিশোধে আর কোনো বিড়ম্বনা থাকবে না। এভাবেই ঋণ খেলাফির অভিশাপ থেকে জাতি মুক্তি পেতে পারে।
(সংগৃহীত)
বিষয়: বিবিধ
১১৯৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন