কে এই হামাস কমান্ডার মুহাম্মাদ দেইফ?
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ১১ আগস্ট, ২০১৪, ০২:১২:৩৮ দুপুর
আজকের কথিত সভ্যজগত যখন শুধু তাকিয়ে দেখছে তখন বিশ্বের অন্যতম প্রধান দুটি সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে অসম লড়াই করে সেই দুই শক্তিকে পায়ের কাছে নত করতে সক্ষম হয়েছে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার অকুতোভয় যোদ্ধার দল হামাস। হামাস শক্ত হাতে কমান্ড করে অমানবিকতার দুই ভিলেইনকে এতটায় কোণঠাসা করেছে যে, তারা এখন কায়রোয় হামাসের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য হয়েছে।
হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জাদ্দিন আল-কাসসাম ব্রিগেডের দৃঢ়-সংকল্পের কমান্ডার হাম্মাদ দেইফ এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে গাজা উপত্যকার স্বায়ত্তশাসন আদায়ের কাছাকাছি পৌঁছেছেন। একইসঙ্গে তিনি ফিলিস্তিনের জাতীয় বিজয় অর্জনেরও দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু কে এই দৃঢ়-সংকল্পের মুহাম্মাদ দেইফ?
এবারের গাজা যুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরাইলের এত সেনা-ক্ষয়ের নায়ক মুহাম্মাদ দেইফকে ইসরাইলের জনগণের কাছে অনেকটা আড়াল রেখেছে তেল আবিবের কঠোর শাসনে থাকা গণমাধ্যমগুলো। যার কারণে এত বড় পরাজয়ের মুখে সেই কমান্ডার মুহাম্মাদ দেইফকে ‘ছায়াচ্ছন্ন’ করে রেখেছে যুদ্ধবাজ ইসরাইল। বড় জোর তাকে অপরিচিত এক ব্যক্তি বলে আখ্যা দিয়ে থাকে। তারপরেও কি থেমে থাকে সবকিছু! সত্য প্রকাশ হয়ে পড়ে সময়ের ব্যবধানে। যেমনি প্রকাশ হতে শুরু করেছে মুহাম্মাদ দেইফের পরিচয়।
ফিলিস্তিনের জনগণের কাছে চ্যাম্পিয়ন এই কমান্ডারের পরিচয় তিনি একজন ‘সামরিক পণ্ডিত’ যার আরেক পরিচয় ‘গেরিলা যুদ্ধের ছাত্র’। আসুন তার সম্পর্কে এবার একটু বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি।
হামাসের এই কমান্ডারের ওপর পাঁচবার বোমা হামলা চালিয়েছে ইহুদিবাদী ইসরাইল। তবে আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনি প্রতিবারই বেঁচে গেছেন। যতবার জীবন ফেরত পেয়েছেন ততবারই যেন ঈমান আরো বেশি শক্তিশালী হয়েছে আর মধ্যপ্রাচ্যের দাম্ভিক সামরিক শক্তি ইসরাইলকে উপেক্ষা করেছেন প্রবল পরাক্রমে। ইসরাইলের হামলা-ই যেন হামাসকে উপহার দিল এক দুর্ধর্ষ কমান্ডার যার নাম মুহাম্মাদ দেইফ।
এবারের যুদ্ধে ইসরাইল যতই শক্তি নিঃশেষ করে দেয়ার জন্য হামাসকে সতর্ক করেছে, যতই বলেছে রকেট ও টানেল ধ্বংস করা হবে ততই বর্বর শক্তির হুঁশিয়ারিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছেন মুহাম্মাদ দেইফ। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, গাজা উপত্যকার ওপর থেকে আট বছরের অবরোধ তুলে না নিলে যুদ্ধবিরতি হবে না।
১৯৬৫ সালে গাজার খান ইউনুস শহরের এক উদ্বাস্তু শিবিরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই বীর কমান্ডার। কিন্তু কে জানতেন এই শিশুই একদিন ফিলিস্তিন মুক্তি আন্দোলনে এত বড় বীরের ভুমিকা পালন করবেন!
গত ২০ বছর ধরে এ বীর যোদ্ধা হামাসের সামরিক অভিযানের সঙ্গে জড়িত। তার নেতৃত্বে বহু হামলা হয়েছে ইসরাইলের ওপর। বহু হামলার পরিকল্পনা তিনিই করেছেন। ইসরাইলের সেনা অপহরণের নেতৃত্ব কিংবা পরিকল্পনা নিয়ে তিনি কাজ করেছেন, হাতে নিয়েছেন গাজার অভ্যন্তরে টানেল নির্মাণের এক কঠিন প্রকল্প যাতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে রকেট হামলা চালানো যায় সহজেই।
সময়ের ব্যবধানে ২০০২ সালে হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জাদিন আল-কাসসাম ব্রিগেডের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় দেইফকে। ইসরাইলের হাতে পূর্বসুরি সালাহ শেহাদের’র শাহাদাতের পর তিনি এ দায়িত্ব পান।
এ দায়িত্ব পাওয়ার আগে থেকেই দীর্ঘদিন ধরে মুহাম্মাদ দেইফ গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছেন। তারও আগে ১৯৮০’র দশকে তিনি ইসলামি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। বায়োলজির এ ছাত্র ইখওয়ানুল মুসলিমিনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন এবং গাজার ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রধান হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
বলা হয়ে থাকে, ২০০০ সালে যখন দ্বিতীয় ইন্তিফাদা শুরু হয় তখন তিনি ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে পরিচালিত কারাগার থেকে মুক্তি পান অথবা কারা ভেঙে বের হতে সক্ষম হন। এ ঘটনায় অনেক বেশি ক্ষুব্ধ হয় মানবতার শত্রু ইসরাইল। অথচ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মুহাম্মাদ দেইফের ওপর শকুনের মতো তীক্ষ্ণ নজর ছিল ইসরাইলের। হামাসের সামরিক শাখার প্রধান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পরপরই ইসরাইল পঞ্চমবারের মতো হামলা চালিয়েছিল দেইফের ওপর।............
বিষয়: বিবিধ
১৪৮০ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন