নারীর মর্যাদায় ইসলাম বনাম আধুনিক সভ্যতা
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ২৭ মে, ২০১৪, ১২:৩৮:৪১ দুপুর
একমাত্র ইসলামই সকলের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে বলেই এটি শাশ্বত ধর্ম। আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন আঠার হাজার মাখলূকাতের সৃষ্টিকর্তা। এর ভিতরে মানুষ ও জীন জাতিকে তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আবার এ দুয়ের মাঝে মানুষকে অত্যন্ত সম্মান করেছেন। নারী-পুরুষের সমন্বয়ে এই মানবজাতি। মহান ¯্রষ্টা এ জাতিকে বিস্তৃত করেছেন নারী ও পুরুষের মিলনের মাধ্যমে। নারী ও পুরুষ সৃষ্টিগত দিক থেকে এক হলেও এ দু’য়ের মাঝে রয়েছে অনেক পার্থক্য। শারীরিক গঠন প্রণালী থেকে শুরু করে তাদের আচার-আচরণ, চাল-চলন, সভ্যতা-সংস্কৃতি সবকিছুতেই রয়েছে বিরাট ব্যবধান। নারীর বিচরণে আল্লাহ তার উপর পর্দা ফরজ করেছেন। আর এ পর্দার যথাযথ মূল্যায়নের মাঝে রয়েছে নারী সমাজের পার্থিব ও পরকালীন কল্যাণ। অপরদিকে এ শাশ্বত বিধানের বিপরীত চলার মাঝে রয়েছে চির অভিশাপ, যার প্রায়শ্চিত্ব দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য ভয়াবহ।
সমাজের যে সমস্ত রমনী ইসলামী তাহযীব তামাদ্দুন, কৃষ্টি-কালচারের পূর্ণ অনুকরণ করে পর্দাবৃত হয়ে চলাফেরা করে বলে তাদের দেখে বখাটে ছেলেরাও সম্মান করে চলে। পক্ষান্তরে অর্ধ-উলঙ্গ নারীদের দেখেলই তারা টিপ্পনি কাটে, ওড়না টানে। অদ্যাবধি কোনো বোরকাপরা নারীকে উত্ত্যক্ত করা হয়েছে এমন নজির পাওয়া যায়নি। যৌতুকের যাঁতাকলে যারা নিষ্পেষিত, রাতের আঁধারে যারা এসিড নিক্ষেপিত, তাদের অধিকাংশই ঐ সমস্ত নারী যারা শরীয়তের নিরাপদ আশ্রয় পর্দাকে উপেক্ষা করে চলে। অথচ আল্লাহ পাক বলেন, ‘মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং আপন লজ্জাস্থান গোপন করে চলে, তারা যেন প্রকাশ না করে তাদের সৌন্দর্য, বেশভূষা ও অলঙ্কার।’ (সূরা নূর-৩১)।
দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের দেয়ালে নব্বইয়ের দশকে প্রশ্নাকারে একটি উক্তি লেখা ছিল : ‘হে যুবক তুমি বিয়ে করতে নারাজ কেন?’ নিচে উত্তর লেখা ছিল : ‘বাজারে দুধ সস্তা বলে নারী জাতিকে চতুষ্পদ গাভীর সাথে তুলনা করা হয়েছে। এরপরও নারীদের চোখ খুলছে না। ঠিক ওই সমস্ত নারীদের প্রতি যারা নিজের ইজ্জত, সম্মান, মর্যাদা এবং শ্রেষ্ঠ সম্পদকে বিলিয়ে দেয় সমাজের কুলাঙ্গারদের হাতে।’
২০০৪ সালে সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দিয়ে ধর্ম নিরপেক্ষতার নামে ফ্রান্সে হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ দেশ ফ্রান্স। ফ্রান্সের বুকে প্রথম গড়ে উঠেছে রাস্তার মোড়ে মোড়ে সেক্স ক্লাব আর যত মদ, জুয়া, নষ্টামী ও বেহায়াপনার আড্ডাখানা। এ সমস্ত ক্লাবগুলোতে ফ্রান্স তথা অন্যান্য দেশের বড় বড় অফিসার এবং যৌনকর্মীরা রাত-দিন ভিড় করে বসে থাকে। যার পরিপ্রেক্ষিতে জন্ম নেয় অগণিত জারজ সন্তান, যারা তাদের পিতার নামও জানে না। এ সব দেশে প্রত্যেক অবিবাহিত ছেলের সাথে থাকে একজন গার্লফ্রেন্ড। শুধু কি বিয়ের পূর্বেই? না বিয়ের পরেও থাকে। এ হলো তাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতি। ভাবতে অবাক লাগে, এসব কাজ কি কোনো মানুষ বা আশরাফুল মাখলুকাতের? ১৯ শতকের পর পরই তুরস্কে হিজাব নিষিদ্ধ করে দেয়। যার জন্য তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যায়। এমনি একজন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাক যিনি ২০০৫-এর ডিসেম্বরের শেষের দিকে হিজাব নিষিদ্ধ করেন। যার প্রতিবাদে ফ্রান্সের লাখ লাখ মুসলিম মহিলা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।
তারা মিছিলের সময় ব্যানারে লিখেছিল : ‘শিরাক, হিজাব তোমার ও দেশের কোনো ক্ষতি করে না।’ একটি মেয়ের বুকের উপর কাগজে লেখা ছিল ‘ফ্রান্স তুমি আমার অহংকার,’ ‘হিজাব তুমি আমার প্রাণ।’ নারী স্বাধীনতা এবং সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার নামে প্রগতি আর উন্নতির ধুয়া তুলে নারীদের অর্ধউলঙ্গ করে বাজারে বাণিজ্য করছে এবং তাদের দিয়েই স্লোগান দেয়াচ্ছে। ‘আমার মন, আমার দেহ যাকে খুশি তাকে দেব’, ‘দেহ আমার সিদ্ধান্ত আমার’। ‘কিসের ঘর কিসের বর’ ইত্যাদি। মানে তাদের ঘর ও বর কোনোটিরই প্রয়োজন নেই এবং তার চেয়ে একটু বেশি আছে। ‘যেখানে কাত সেখানে রাত’ এই হলো দাবির সারকথা। তাদের জানা উচিত ছিল, ছোলা ছাড়া কলা বাজারে বিক্রি হয় না, শুধু পশুর খাদ্যই হয়। হরিণ গভীর অরণ্যে নিজেকে লুকিয়ে রাখার কারণেই সে হয়েছে দুষ্প্রাপ্য, মূল্যবান এবং লুফে নেয়ার বস্তুতে পরিণত। কদর বেড়েছে অধিক। হরিণ যদি গরু-ছাগলের মতো হাটে-বাজারে পাওয়া যেত তাহলে এত কদর থাকত না।
ইসলামই নারী সমাজকে অমর্যাদা আর ভোগের পণ্য থেকে তুলে এনে দিয়েছে আলোর সন্ধান, অফুরন্ত মর্যাদা, অধিকার ও স্বাধীনতা। মাতা, স্ত্রী, কন্যারূপে তাকে উচ্চমর্যাদায় সমাসীন করেছে। তাই ঘোষিত হয়েছে : ‘আল্লাহ ও রাসূলের (সা.) পর সর্বোচ্চ মর্যাদা পাবার যোগ্য মাতা।’ রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন : ‘মাতার অবাধ্যতা, অধিকার হরণ আল্লাহ তোমাদের জন্য হারাম করেছেন।’ (বুখারী)। মাতাকে ‘মা’ হিসেবে মহান ও বিরল সম্মানে সমাসীন করেছেন। একমাত্র ইসলামের বদৌলতে। আর এজন্যই আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা- ‘নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর পারস্পরিক সম্পর্ক, দয়ার্ত ও ¯েœহাশীষ হতে ভুলে যেও না। স্ত্রীকে কষ্ট, যন্ত্রণা দেয়ার উদ্দেশ্যে স্বীয় বিবাহ বন্ধনে আটকে রেখ না।’
শুধু কি তাই? স্ত্রীর ভরণ-পোষণের পূর্ণ দায়িত্ব স্বামীর ওপর ন্যস্ত করার সাথে সাথে রিজার্ভ ফান্ড হিসেবে মোহরানার ব্যবস্থা করেছেন। এ সবই হয়েছে ইসলামের বদৌলতে। কুরআনে এ বিষয়ে যথার্থই এসেছে, ‘পিতা-মাতা ও আত্মীয়দের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীদেরও অংশ রয়েছে।’ (সূরা নিসা-৭)।
স্ত্রীদের মোহর মনের সন্তোষ চিত্তে আদায় করা আল্লাহর নির্দেশ। নারীদের ভরণ-পোষণের ব্যাপারে সূরা বাকারায় উল্লেখ রয়েছে, ‘ধনী-গরিব ব্যক্তিদের সামর্থ্য অনুযায়ী নারীর ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা কর্তব্য।’
কারও যদি কন্যা সন্তান জন্ম নেয় এবং সে প্রতিপালন করে তবে সে তার জন্য দোজখের প্রতিবন্ধক হবে। যে মুসলমানের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করে তবে তারা তার বেহেশতে প্রবেশের উছিলা হবে। কন্যা সন্তানকে সম্পদের হক দিয়েই ইসলাম ক্ষান্ত হয়নি বরং তাদের হক আদায়ের মাধ্যমে বেহেশত লাভের গ্যারান্টি দিয়েছে।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ইসলাম নারীকে দাসী বানায়নি বরং বিবস্ত্র, বেহায়া, অভদ্র, অশালীন, অসহায়, নির্যাতিতা, অবহেলিতা, লাঞ্ছিতা, বঞ্চিতা, অনুগ্রহীতা, জীবন্ত সমাধি, ক্রয়-বিক্রয় এবং ভোগের সামগ্রী হতে পরিত্রাণ দিয়ে মুক্তির সন্ধান দিয়েছে। অন্ধকার ও কুসংস্কার হতে মুক্তি দিয়ে আলোর দিকে ধাবিত করেছে। বর্তমান তথাকথিত নারী স্বাধীনতা ও অধিকারের নামে রাজপথে অর্ধ উলঙ্গভাবে না চলে তারা যদি ইসলামী অনুশাসন পূর্ণভাবে মেনে চলে, তাহলে আগামী দিনে এ পৃথিবীতে গড়ে উঠবে সুখী ও সুন্দর সংসার, বেহেশতের কুসুম কানন পরম সুখের নীড়।
-----নুজহাত তাবাচ্ছুম (সংগৃহীত)
বিষয়: বিবিধ
১১৮৭ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এদেরকে এত নসিহত করে কি আদৈ কোন লাভ হয় ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন