সৌদি প্রবাসীরা সাবধান!
লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ২১ মে, ২০১৪, ০৩:৫৯:৪২ দুপুর
সৌদিতে সাম্প্রতিক সময়ে অভিনব সব প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশি, ইন্ডিয়ান, শ্রীলঙ্কান, ইন্দোনেশিয়ানসহ বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরা। সৌদি পুলিশের বিভিন্ন শাখায় বাড়ছে অভিযোগের সংখ্যা। ভুয়া নাম্বার প্লেট ব্যবহারের কারণে বেশির ভাগ সময় অপরাধীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী রায়হান। বেশ প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এক লাখ রিয়াল নিয়ে নিজ গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন বাসায়। পেছনে আসা একটি গাড়ি থেকে সংকেত পেয়ে রাস্তার পাশে গাড়ি সাইড করে রায়হানের ড্রাইভার।
সংকেত দেওয়া গাড়িটি পাশে এসে দাঁড়ায়। গলায় ঝুলানো পরিচয়পত্র, ওয়ারল্যাস সেট হাতে নেমে আসে সাদা পোশাকের পাঁচজন লোক। ঘিরে ফেলে রায়হানের গাড়ি। গাড়ির চাবি জব্দ করে গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয়ে শুরু করে রায়হানের গাড়ি তল্লাশি। রায়হানের কাছে পাওয়া যায় ৯৭ হাজার রিয়াল। গোয়েন্দাদের গাড়িতে উঠানো হয় রায়হানকে।
সৌদি আরবের আইনে যেহেতু সরাসরি কোনো বাংলাদেশির ব্যবসা করা নিষিদ্ধ, তাই রায়হান গোয়েন্দাদের জানায় সব টাকা স্পন্সর তথা কপিলের।
উল্লেখ্য, সৌদি আরবে নিজ স্পন্সরের নামেই ক্ষুদ্র, মাঝারি, বড় ব্যবসায়ীরা ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে।
গোয়েন্দারা ফোনে কথা বলে রায়হানের স্পন্সরের সঙ্গে। স্পন্সরকে জানিয়ে দেয় আমরা রায়হানকে নিয়ে যাচ্ছি। আপনি অফিসে আসুন।
রায়হানও বিশ্বাস করে। মিনিট খানেকের ব্যবধানে রায়হানকে আকামা তথা ওয়ার্ক পারমিট ফটোকপি করে আনতে গাড়ি থেকে নামতে বাধ্য করে চম্পট দেয় কথিত গোয়েন্দারা। রায়হান গাড়ির নাম্বার নেয়। কিন্তু কথিত প্রতারক গোয়েন্দাদের গাড়িতে লাগানো নাম্বার প্লেটটি ছিল ভুয়া।
রায়হানের মতো বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এমন ঘটনা কম ঘটলেও সাধারণ শ্রমিক,ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের ব্যবসায়ীরা চলতি পথে প্রায়ই খোয়াচ্ছেন টাকা-পয়সা, মোবাইল সেট, আকামা। তবে ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার ধরন পুরোই আলাদা।
রংপুরের সোহেল। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল ট্যাক্সি ক্যাবের জন্য। টয়োটা মডেলের প্রাইভেটকার এসে দাঁড়ায় সোহেলের সামনে। গাড়ির ভেতরে ইথিউপিয়ান, মিসরি, সুদানিসহ মোট তিনজন। অনেকেই নিজ গাড়ি দিয়ে ডিউটি শেষে বাড়তি রোজগারের জন্য ভাড়া মারে। তিনজন তিনদেশের দেখে কোনরকম সন্দেহ ছাড়াই গাড়িতে উঠে সোহেল।
একটু দূরে যেতেই সামনের সিটের ইথিউপিয়ান যাত্রী নেমে পড়েন। ভাড়া দেওয়ার জন্য পকেটে হাত দিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন। দাবি করেন, ১০ হাজার রিয়াল পাওয়া যাচ্ছে না। টাকা নিশ্চয় গাড়িতে পড়েছে। গাড়িতে উঠে এদিক সেদিক খোঁজার ভান করে না পেয়ে বলে, সবার মানিব্যাগ চেক করা হবে। সোহেল সরল বিশ্বাসে মানিব্যাগ দেয়। ড্রাইভার এবং অপর যাত্রীর মানিব্যাগও নেওয়া হয়। শেষে বলা হয়, সবাই গাড়ি থেকে নামো। শরীর তল্লাশি করা হবে।
সোহেল যেই গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে, অমনি চোখের পলকে সবাই গাড়িতে উঠে পড়ে। চোখের পলকেই পালিয়ে যায় গাড়িটি। যতক্ষণে সোহেল বুঝল অভিনব প্রতারণার শিকার হয়েছে ততক্ষণে সব শেষ। মানিব্যাগের চার হাজার রিয়ালের সঙ্গে আকামা দুই-ই গিয়েছে।
সৌদি পুলিশের ভাষ্যমতে, রাস্তায় অভিনব সব প্রতারণার সঙ্গে জড়িত সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যদের বেশির ভাগই ইথিউপিয়ান। আছে সৌদিয়ান বখাটেরাও। পাশাপাশি সিরিয়া, ইয়মেনের অনেকেই সংঘবদ্ধ চক্রের সঙ্গে জড়িত। যাদের বেশির ভাগই সৌদি আরবের নাগরিকত্ব পেয়েছেন। নাগরিকত্বের সুবাধে চালিয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাটে অভিনব সব প্রতারণা।
ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাঁচশ’ থেকে এক হাজার রিয়াল প্রতারকদের ফাঁদে পড়ে খুঁইয়েছে অনেক প্রবাসী। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আইনি ঝামেলা এড়ানো এবং সময় বাঁচাতে পুলিশের কাছে যাচ্ছে না প্রবাসীরা।
প্রতারণা থেকে বাঁচতে করণীয় :
১. ট্যাক্সিক্যাব ছাড়া অপরিচিত প্রাইভেট গাড়িতে উঠবেন না।
২. বাইরে বের হওয়ার সময় প্রয়োজনের বেশি অর্থ রাখবেন না। মোটামুটি ৫০-১০০ রিয়াল রাখুন।
৩. যদি প্রতারকদের কোনো ফাঁদে পড়ে যান নাম্বার প্লেটের পাশাপাশি গাড়ির রং, কোন মডেল তা দেখে নেবেন।
৪. সৌদি পুলিশ, গোয়েন্দারা ওয়ার্ক পারমিট চাইবে। যদি গোয়েন্দা কিংবা পুলিশ পরিচয়ে মানিব্যাগের রিয়াল নিতে চায় তাহলে সোজা ৯৯৯ (পুলিশ) অথবা ৯৯৬ (হাইওয়ে পুলিশ) নম্বরে কল দিন।
৫. মাস শেষে বাড়িতে টাকা পাঠানোর সময় ব্যাংকে যেতে পরিচিত ট্যাক্সি ক্যাবে উঠুন।
Click this link
বিষয়: বিবিধ
১১৭৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন