ইসলামই পৃথিবীর একমাত্র জীবন ব্যবস্থা; যে ব্যবস্থাতে নারীরা আর্থিকভাবে অধিক হারে লাভবান হয়েছে।

লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ১৯ মে, ২০১৪, ০২:৪০:৩৫ দুপুর



জনসমাজে ইসলাম সম্পর্কে কিছু ভিত্তিহীন অভিযোগ উত্থাপিত হয়ে থাকে। ইসলামে নারীর ওয়ারিশি স্বত্ব লাভে বৈষম্য রয়েছে তথা ওয়ারিশি ক্ষেত্রে নারীকে পুরুষের সমান অংশীদার করা হয়নি। উলি্লখিত ধারণাটি নারী-পুরুষের ওয়ারিশি স্বত্ব লাভের ক্ষেত্রে সর্বত্র সত্য নয়। বরং এটি ছেলেমেয়েদের মধ্যকার বণ্টন নীতির একটি রীতি বা ধারা মাত্র। প্রাসঙ্গিকভাবে বলা যায়, নারীরা শুধু মৃত পিতার সম্পত্তিতে তাদের ভ্রাতাদের অর্ধেক সম্পত্তিই শুধু পান না, বরং তারা আরও বিভিন্ন দিক থেকেও সম্পত্তি পেয়ে থাকেন। স্ত্রী হিসেবে স্বামীর সম্পত্তিতে অংশ পান, মা হিসেবে তার মৃত ছেলের সম্পত্তিতে অংশ পান, এমনকি মৃত ব্যক্তির মা না থাকলে নানি অথবা নানি না থাকলে দাদি হওয়ার কারণে মৃত নাতির সম্পত্তিতে নির্দিষ্ট অংশ পেয়ে থাকেন। এছাড়াও অবস্থাভেদে একজন নারী তার দাদার সম্পত্তিতেও নির্দিষ্ট অংশ পেয়ে থাকে। সর্বোপরি, অবস্থাভেদে মৃত ব্যক্তির বোনও মৃত ভ্রাতার সম্পত্তির উত্তরাধিকার হয়ে থাকেন।

একজন নারী সর্বতোভাবে তার সমস্তরের পুরুষের অর্ধেক সম্পত্তি প্রাপ্তির বিষয়টি পিতার সম্পত্তিতে ভাইবোনের মধ্যকার এবং স্ত্রী ও স্বামীর অংশ হিসেবে প্রযোজ্য হলেও অন্যত্র তা সমানভাবে প্রযোজ্য নয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পিতামাতা মৃত সন্তানের সম্পত্তিতে মা হওয়ার কারণে অংশ কম পায় না, বরং এ অবস্থাতে মৃত সন্তানের পিতা যতটুকু অংশ প্রাপ্ত হবে, ঠিক ততটুকু অংশ মাতাও প্রাপ্ত হবে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে পিতামাতা উভয়ই এক ও অভিন্ন তথা সমানসমান অংশই প্রাপ্ত হয়ে থাকে। মহান আল্লাহ বলেন, 'মৃত সন্তানের রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে পিতামাতা উভয়ের জন্যই রয়েছে এক ষষ্ঠাংশ।' (সূরা নিসা : ১১)।

এক কথায়, একজন নারী কন্যা ও স্ত্রী হিসেবে সমশ্রেণীর পুরুষের অর্ধেক অংশ প্রাপ্য হলেও সর্বাবস্থায় অর্ধাংশ রীতি কার্যকর নয় বরং ক্ষেত্রবিশেষ সমশ্রেণীর পুরুষের সমানসমান এমনকি দ্বিগুণ অংশও পেয়ে থাকে। প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ্য, একজন নারী অবস্থাভেদে সুনির্দিষ্ট আটটি ধারায় উত্তরাধিকারী স্বত্ব লাভ করে থাকে। প্রকৃত বিষয় হচ্ছে, যিনি বা যারা ইসলামে উত্তরাধিকার সত্ত্বে বৈষম্য রয়েছে বলে অভিযোগ দিয়ে থাকে তারা ইসলামে উত্তরাধিকাররীতি সম্পর্কে চরম অজ্ঞ। এর চেয়েও বড় আক্ষেপের কথা হলো, ইসলামের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য শত্রুদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনেক মুসলিম নামধারী এসব অবান্তর ও ভিত্তিহীন প্রসঙ্গের অবতারণা করে থাকেন।

কন্যাসন্তান কোনো অবস্থাতেই যখন তার মৃত পিতার সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার স্বীকৃত ছিল না, তখন ইসলামই বিশ্বের প্রথম ধর্ম (জীবনদর্শন); যেখানে কন্যাসন্তানের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছে। বলা বাহুল্য, নারী-পুরুষের সমান অধিকারই ন্যায্য অধিকার নয়। এজন্য ইসলাম সমঅধিকারের পরিবর্তে ন্যায্য ও ন্যায়ানুগ অধিকার নিশ্চিত করেছে।

একটি সহজ ও বাস্তব উদাহরণের মাধ্যমে নারী-পুরুষের মধ্যকার ন্যায্য অধিকারের বিষয়টি ব্যক্ত করা যেতে পারে। এক পুত্র ও এক কন্যার জনক ৩ লাখ টাকার সম্পদ রেখে মারা গেলে, ইসলামী বিধান মতে ছেলেটি ২ লাখ ও মেয়েটি ১ লাখ টাকার সম্পদ প্রাপ্য হবে। বলা বাহুল্য, ছেলেটির টাকা প্রাপ্তি থেকেই তার ওপর পিতার রেখে যাওয়া সংসারের আর্থিক দায়ভার বর্তাবে। এতে করে ছেলেটির প্রাপ্ত টাকা কমতে থাকবে। এমনকি একসময়ে ছেলেটির ওয়ারিশি স্বত্ব হিসেবে প্রাপ্ত সব টাকা নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যায়। অথচ এ অবস্থায় মেয়েটিকে তার পরিবারের দেখাশোনার জন্য এক টাকাও খরচা করতে হয় না। উপরন্তু মেয়েটির বিবাহ হলে মেয়েটি তার স্বামীর থেকে দেনমোহর হিসেবে আরও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক টাকা (সম্পদ) পেয়ে থাকবে। পক্ষান্তরে, মেয়ের ভাইটি নিজের টাকা দিয়েই বোনের বিবাহকর্মের খরচাদি নির্বাহ করতে হবে, ভাইটি নিজ টাকাতেও নিজ বিবাহের খরচাদি নির্বাহ করতে হবে। এসব দিক বিবেচনাতেই পিতার সম্পদে কন্যার অর্ধাংশ নির্ধারণ করেই ভাইবোন (ছেলে ও মেয়ে) মধ্যকার চরম ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে পুত্র ও কন্যাসন্তানের মধ্যে সমান অংশ নির্ধারণ করা হলে ইসলামে পুরুষদের অধিকার সম্পর্কে প্রশ্নের অবতারণা করা হতো বা করতে হতো। তখন পুরুষ অধিকারে বৈষম্য বিষয়ে তোলপাড় পড়ে যেত।

উল্লেখ্য, ওয়ারিশি স্বত্বের এসব অংশ কোনো অর্থেই সাধারণ কোনো বিষয় বা অবহেলার নয় বরং এগুলো হচ্ছে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট অংশ। এসব বিষয়ে কারও ব্যক্তিগত অভিমত বা নিজের অনুমানের ভিত্তিতে কোনো ধরনের পরিবর্তন (সংযোজন-বিয়োজন) করার অধিকার কারোরই নেই। বরং এগুলো হচ্ছে সর্বাবস্থায় একান্ত অপরিহার্য ও বাধ্যতামূলক বিষয়। কোনো কোনো ভাই তার বোনদের অংশ না দিয়ে বরং তাদের ঠকিয়ে থাকে। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি একটি কঠিন গোনাহ। কেননা, এতে শরিয়াসম্মত অংশীদারের অংশ আত্মসাতের জঘন্য ও আখেরাতে ক্ষমা অযোগ্য অপরাধ হয়ে থাকে।

ক্ষেত্রবিশেষ পিতা ও স্বামীর সম্পত্তিতে নারীদের অংশ অর্ধেক নির্ধারিত হওয়া কোনোভাবে জুলুম বা বৈষম্য নয়। কেননা, নারীরা শুধু এ দুইটি উৎস থেকে প্রাপ্ত হয় না বরং ইসলামী আইন-অনুশাসনে নারীদের আর্থিক আয়ের আরও উৎস রয়েছে। যেমন_ তার বিয়ের আগেকার সম্পদের মালিকানা বহাল থাকে এবং এর সঙ্গে মূল বিবাহ অনুষ্ঠানের আগেকার বাগদান পর্বে প্রাপ্ত উপহার ও বিয়ের সময়কার দেনমোহর লাভ করে থাকে। কোনো স্ত্রীর ওপর তার সংসারের (স্বামী ও সন্তানের) আর্থিক দায়ভার থাকে না। স্ত্রী তার বৈবাহিক জীবনে যত ধরনের আয় উপার্জনই করুক না কেন, এগুলো সবই তার সঞ্চিত থাকবে। কোনো কারণে তালাকপ্রাপ্ত হলে ইদ্দতকালেও স্বামীর থেকে পেতে থাকবে। উল্লেখ্য, কোরআন নির্দেশিত ওয়ারিশি স্বত্বের সুনির্দিষ্ট অংশ অর্জনকারী ১২ জনের মধ্যে মাত্র চারজন পুরুষ এবং বাদবাকি আটজন সবাই নারী।

ইসলামই পৃথিবীর একমাত্র জীবন ব্যবস্থা; যে ব্যবস্থাতে নারীরা আর্থিকভাবে অধিক হারে লাভবান হয়েছে। অবস্থা অনুযায়ী কোনো না কোনো পুরুষের ওপর নারীর আর্থিক দায়িত্ব অর্পণ করে নারীকে তা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। পুরুষের এসব দায়িত্বের কারণেই পিতার সম্পদ বণ্টনকালে তার সম্পদ বেশি ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো জুলুম করা হয়নি বরং পুরুষের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। এ বণ্টন ব্যবস্থাতে কোনোভাবেই পক্ষপাত বা অন্যায় করা হয়নি। কেননা এ ব্যবস্থাটি গ্রহণ করেছেন স্বয়ং আল্লাহ; যিনি নারী বা পুরুষ নন, বরং তিনি হচ্ছেন ন্যায়নীতি ও ইনসাফের একমাত্র প্রতীক। (সংগৃহীত)

বিষয়: বিবিধ

১০৩৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

223378
১৯ মে ২০১৪ দুপুর ০৩:৫৫
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : সুন্দর পোষ্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ । সুন্দর পোষ্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ।
223415
১৯ মে ২০১৪ বিকাল ০৪:৪৫
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : ইসলাম নিয়ে মানুষের আগ্রহ আজকাল কম; আমরাই হয়তো যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিকভাবে তাদের সামনে তুলে ধরতে পারিনা তাই এমন।

ভালো লাগলো তবে ইসলামী যুক্তি ছাড়াও যদি পাশ্চাত্যের নারীদের দুর্দশা, বৈষম্য,উদাহরণসহ লেখা যায় আরো গ্রহনযোগ্য হবে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File