'ফরজ ইবাদতের পর হালাল রুজি অর্জন করা একটি ফরজ ইবাদত।'

লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ১৭ মে, ২০১৪, ১১:৫৭:২০ সকাল



মহাগ্রন্থ আল কোরআনে আল্লাহ তায়ালা প্রিয় বান্দাদের উদ্দেশে সূরা জুমার ১০নং আয়াতে বলেন, 'অতঃপর যখন নামাজ শেষ হবে তখন তোমরা জমিনের বুকে ছড়িয়ে পড় এবং রিজিক অন্বেষণ করো।'

নবীকুলের শিরোমণি বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বৈধ শ্রম প্রসঙ্গে বলেছেন, 'ফরজ ইবাদতের পর হালাল রুজি অর্জন করা একটি ফরজ ইবাদত।' (বায়হাকি)।

ইসলামে শ্রম ও শ্রমিকের মর্যাদা, সম্মান ও অধিকার অত্যধিক। বৈধ শ্রম দ্বারা অর্জিত খাদ্যকে ইসলাম সর্বোৎকৃষ্ট খাদ্য হিসেবে আখ্যা দিয়েছে এবং জীবিকা অন্বেষণকে উত্তম ইবাদত হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।

মানুষ অর্থ উপার্জনের জন্য যে শারীরিক, মানুসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক পরিশ্রম করে তাই শ্রম। মানুষ বেঁচে থাকার, পরিবারের ভরণ-পোষণের, অপরের কল্যাণে এবং সৃষ্টি জীবের উপকারে যে কাজ করে তাও শ্রম। ধনি-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, নর-নারী, নির্বিশেষে সব মানুষই কোনো না কোনো পরিশ্রম করেন। আর যে কোনো কাজ করতে গেলেই প্রয়োজন হয় শ্রমের। এ হিসেবে পৃথিবীর প্রায় সব মানুষই শ্রমিক।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন, 'তিনি তোমাদের জন্য ভূমি সুগম করে দিয়েছেন। কাজেই তোমরা এর দিক-দিগন্তে বিচরণ করো এবং তার দেয়া রিজিক থেকে আহার করো।' (সূরা মুলক : ১৫)।

আমাদের প্রিয় নবী (সা.) শ্রমকে ভালোবাসতেন। তিনি নিজ হাতে জুতা মেরামত করেছেন, কাপড়ে তালি দিয়েছেন, মাঠে মেষ চড়াতেন। নবীজি ব্যবসা পরিচালনাও করেছেন। খন্দকের যুদ্ধে নিজ হাতে পরিখা খনন করেছেন। বাড়িতে আগত মুসাফির কর্তৃক বিছানায় পায়খানা করে রেখে যাওয়া কাপড় ধৌত করে মানবতা ও শ্রমের মর্যাদা সর্বোচ্চ স্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। নবী মুহাম্মদ (সা.) এ ব্যাপারে আরও বলেন, 'নিজ হাতে উপার্জিত খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাদ্য আর নেই। আল্লাহর নবী দাউদ (আ.) নিজের হাতে কাজ করে খেতেন।' (বোখারি)।

কোরআন-হাদিস ও ইসলামের ইতিহাস পড়লে জানা যায়, নবী ও রাসূলরা শ্রমিকদের কত মর্যাদা দিয়েছেন। মালিক হজরত শোয়াইব (আ.) তার মেয়ের বিয়ে দিয়ে শ্রমিক নবী মুসা (আ.) কে জামাই বানিয়েছেন। হজরত মুহাম্মদ (সা.) শ্রমিক যায়েদ (রা.) এর কাছে আপন ফুফাত বোন জয়নবের বিয়ে দিয়েছিলেন। বিশ্বনবী (সা.) যায়েদ (রা.) কে মুতার যুদ্ধে প্রধান সেনাপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন বানানো হয়েছিল শ্রমিক হজরত বেলাল (রা.) কে। মক্কা বিজয় করে কাবাঘরে প্রথম প্রবেশের সময় মহানবী (সা.) শ্রমিক বেলাল (রা.) ও শ্রমিক খাব্বাব (রা.) কে সঙ্গে রেখেছিলেন। নবীজি কখনও নিজ খাদেম আনাস (রা.) কে ধমক দেননি এবং কখনও কোনো প্রকার কটুবাক্য ও কৈফিয়ত তলব করেননি।

নবী (সা.) এর কন্যা হজরত ফাতেমা (রা.) নিজ হাতে যাঁতা ঘোরাতেন। আর এজন্য তার হাতে যাঁতা ঘোরানোর দাগ পড়েছিল। তিনি নিজেই পানির মশক বয়ে আনতেন, এতে তার বুকে দড়ির দাগ পড়েছিল।

কোদাল চালাতে চালাতে একজন সাহাবির হাতে কালো দাগ পড়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) তার হাত দেখে বললেন, 'তোমার হাতের মধ্যে কি কিছু লিখে রেখেছ? সাহাবি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) এগুলো কালো দাগ ছাড়া আর কিছুই নয়। আমি আমার পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণের জন্য পাথুরে জমিতে কোদাল চালাতে গিয়ে হাতে এ কালো দাগগুলো পড়েছে। নবীজি (সা.) এ কথা শুনে ওই সাহাবির হাতের মধ্যে আলতো করে গভীর মমতা ও মর্যাদার সঙ্গে চুমু খেলেন। এভাবে অসংখ্য কর্ম ও ঘটনার মাধ্যমে হজরত মুহাম্মদ (সা.) পৃথিবীতে শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন।

ইসলামী আদর্শের কাছে মনিব-গোলাম, বড়-ছোট, আমির-গরিব সবাই সমান। অধীনরাও ইনসাফের দাবি করার অধিকার রাখেন। একমাত্র ইসলামই শ্রমিকদের সর্বাধিক অধিকার ও সুযোগ-সুবিধার কথা স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছে। পৃথিবীর অন্য কোনো ধর্ম, মানব রচিত অন্য কোনো মতবাদ বা আদর্শ ইসলামের মতো শ্রমিকদের অধিকার দিতে পারে না। ইসলামের দাবি অনুযায়ী, গোলামের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে হবে এবং তাদের কোনো প্রকার কষ্ট দেয়া যাবে না।

রাসূল (সা.) বলেছেন, 'তোমাদের অধীন ব্যক্তিরা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তায়ালা যে ভাইকে তোমার অধীন করে দিয়েছেন তাকে তাই খেতে দাও, যা তুমি নিজে খাও, তাকে তাই পরিধান করতে দাও, যা তুমি নিজে পরিধান করো।' (বোখারি)।

হজরত আবুবকর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, 'ক্ষমতার বলে অধীন চাকর-চাকরানি বা দাস-দাসীর প্রতি মন্দ আচরণকারী বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না।' (ইবনে মাজাহ)। তিনি আরও বলেন, 'কেউ তার অধীন ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে এক দোররা মারলেও কেয়ামতের দিন তার থেকে এর বদলা নেয়া হবে।'

ইসলাম শ্রমিকদের অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। শ্রমিককে কষ্ট দেয়াকে জাহেলিয়াতের যুগের মানসিকতা মনে করে। এ ব্যাপারে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, 'তোমাদের কেউ যেন আমার দাস, আমার দাসী না বলে, কেননা আমরা সবাই আল্লাহর দাস-দাসী।' ওমর ইবনে হুরাইস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, 'তোমরা তোমাদের কর্মচারীদের থেকে যতটা হালকা কাজ নেবে তোমাদের আমলনামায় ততটা পুরস্কার ও নেকি লেখা হবে।'

শ্রমিকদের শ্রমের বিনিময়ে তিল তিল করে গড়ে ওঠে শিল্প প্রতিষ্ঠান। একটি শিল্পের মালিক শ্রমিকদের শ্রম শোষণ করে অল্প সময়েই পাহাড় পরিমাণ অর্থ-বিত্তের মালিক হয়। শ্রমিকদের কম মজুরি দিয়ে, তাদের ঠকিয়ে গড়ে তোলে একাধিক শিল্প-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কারখানায় তাদের কোনো অংশীদারিত্ব থাকে না। এ ব্যাপারে মহানবী (সা.) বলেছেন, 'মজুরকে তার কাজ থেকে অংশ দান করো, কারণ আল্লাহর মজুরকে বঞ্চিত করা যায় না।' (মুসনাদে আহমাদ)।

আমাদের দেশে দেখা যায়, মাসের পর মাস চলে যায় শ্রমিকরা বেতন পান না। বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের মালিকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হয়। শ্রমজীবী মানুষ বা কোনো শ্রমিক অবসর নেয়ার পর তার বাকি জীবন চলার জন্য অর্থনৈতিক সুবিধা বা পেনশনের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। এ ব্যাপারেও ইসলাম নীরব নয়। হজরত ওমর (রা.) বলেছেন, 'যৌবনকালে যে ব্যক্তি শ্রম দিয়ে রাষ্ট্র ও জনগণের খেদমত করেছেন বৃদ্ধকালে সরকার তার হাতে ভিক্ষার ঝুলি তুলে দিতে পারে না।' (সংগৃহীত)

বিষয়: বিবিধ

১২৯৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

222547
১৭ মে ২০১৪ দুপুর ০১:০৯
শিশির ভেজা ভোর লিখেছেন : হালাল রুজি থাকলে মন ও প্রাণে প্রশান্তি আসে।
222555
১৭ মে ২০১৪ দুপুর ০১:৩৯
আমীর আজম লিখেছেন : সহমত। ভাল লাগল।
222620
১৭ মে ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৩
শেখের পোলা লিখেছেন : "এক সাফমে খাড়া হুয়ে মাহমুদ আয়াজ,
আজ না কোয়ী বান্দা রহা না কোয়ী বান্দা নওয়াজ"
এটা শুধু মাত্র ইসলামেই আছে৷ ধন্যবাদ৷
222655
১৭ মে ২০১৪ বিকাল ০৫:১৯
এহসান সাবরী লিখেছেন : হালাল রুজির পথে সকলে হাঁটলে দেশ এমনিতেই
দূর্নীতিমুক্ত হবে।এক্ষেত্রে ইসলাম
নিঃসন্দেহে অনুকরনীয় আদর্শ!
222667
১৭ মে ২০১৪ বিকাল ০৫:৩৪
আহ জীবন লিখেছেন : হালাল রুজি সৎ পথে থাকতে, সৎ কথা বলতে, অসততা কে পস্রয় না দিতে সাহস যোগায়।

হালাল রুজির প্রতি মুহূর্তেই আল্লাহর ভয় অন্তরে পোষণ করতে হয়।
222673
১৭ মে ২০১৪ বিকাল ০৫:৩৯
আহ জীবন লিখেছেন : রূহানী শক্তির একমাত্র পথ হালাল রুজি।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File