তোমার প্রতিপালককে মনে মনে সবিনয় ও সশঙ্কচিত্তে নিচুস্বরে প্রত্যুষে ও সন্ধ্যায় স্মরণ কর

লিখেছেন লিখেছেন েনেসাঁ ৩০ এপ্রিল, ২০১৪, ১১:৫৭:০১ সকাল



বিসমিল্লাহ। ওয়ালহা'মদুলিল্লাহ। ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আ'লা রাসূলিল্লাহ। আম্মা বা'দ।

আল্লাহ বলেছেনঃ

“তোমার প্রতিপালককে মনে মনে সবিনয় ও সশঙ্কচিত্তে নিচুস্বরে প্রত্যুষে ও সন্ধ্যায় স্মরণ কর এবং তুমি উদাসীনদের দলভুক্ত হইয়ো না”। (সূরা আ’রাফঃ ২০৫)

* এ (সন্ধ্যা) হল আসর ও মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়।

তিনি আরও বলেছেনঃ

“সূর্যের উদয় ও অস্তের পূর্বে তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা কর”। (সূরা ত্বাহাঃ ১৩০)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি তার রবের যিক্র (স্মরণ) করে, আর যে ব্যক্তি তার রবের যিক্র করে না— তারা যেন জীবিত আর মৃত” ।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, “আমি কি তোমাদেরকে তা জানাবো না— আমলের মধ্যে যা সর্বোত্তম, তোমাদের মালিক (আল্লাহ্র) কাছে যা অত্যন্ত পবিত্র, তোমাদের জন্য যা অধিক মর্যাদা বৃদ্ধিকারী, (আল্লাহ্র পথে) সোনা-রূপা ব্যয় করার তুলনায় যা তোমাদের জন্য উত্তম এবং তোমরা তোমাদের শত্রুদের মুখোমুখি হয়ে তাদেরকে হত্যা এবং তারা তোমাদের হত্যা করার চাইতেও অধিকতর শ্রেষ্ঠ?” সাহাবীগণ বললেন, অবশ্যই হ্যাঁ। তিনি বললেন, “আল্লাহ্ তা‘আলার যিক্র”।

সহীহ, শায়খ আলবানী সহীহঃ ইবন মাজাহ্ ২/৩১৬, সহীহ তিরমিযী ৩/১৩৯।

!!!সকাল ও সন্ধ্যার যিকিরঃ

প্রাণপন চেষ্টা করুন এই দুআ’গুলো মুখস্থ করে প্রতিদিন আমল করার জন্যঃ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ থেকে যিকিরের জন্য ৩টি বিশেষ সময় পাওয়া যায়। আর তা হলোঃ

১. সকালে (ফযরের পরে)।

২. সন্ধ্যায় (আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত)।

৩. রাতে ঘুমানোর আগে।

সকাল ও সন্ধ্যার যিকর থেকে কয়েকটি বিশেষ দুআ’ যেইগুলো ছোট কিন্তু আমাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী ও প্রয়োজনীয়, অশেষ সওয়াব ও মর্যাদার অধিকারী তার বর্ণনা দেওয়া হলো।

দুয়াগুলো মুখস্থ না হওয়া পর্যন্ত বই দেখে দেখে পড়া যাবে, কোনো সমস্যা নাই। এই দুয়াগুলো করা সুন্নত, ফরয নয়। তবে চেষ্টা করা উচিত, সবার নিজেদের সময় ও সাধ্য অনুযায়ী যতগুলো দুয়া সম্ভব হয় তার উপর আমল করা। যার পক্ষে যগুলো সম্ভব ও ভালো লাগে। মা-বোনেরা মাসিক ঋতু থাকা অবস্থাতেও এই দুয়াগুলো পড়বেন, কোনো বাঁধা নাই।

!!!এতো দুআ পড়ার সময় কোথায়??

এই দুআ’গুলো পড়তে খুব অল্প সময় লাগবে। মোটামুটি ৫-৭ মিনিটের মতো সময় লাগতে পারে। সর্বোচ্চ নাহয় সকালে ১০ আর বিকালে ১০, মোট ২০ মিনিট সময়ই ব্যয় করলেন আল্লাহর রাস্তায়। সর্বোত্তম হয় আপনি যদি সালাতের পরপর মুসাল্লাতে বসেই দুয়াগুলো পড়ে নেন। এতে আপনি বেশি আন্তরিকতা ও মনোযোগের সাথে দুআ’গুলো পড়তে পারবেন, আর যতক্ষণ মসজিদে বসে থাকবেন, ফেরেশতারা আপনার জন্য রহমতের দুয়া করতে থাকবে। আর যদি আপনার ব্যস্ততা একটু বেশি হয়ে থাকে, ফযর ও আসর সালাত মসজিদে পড়ে বাসায় আসতে আসতে পড়ে নিতে পারেন। মা-বোনদের ঘরের ছোটখাট কাজ যাতে মনোযোগ নষ্ট হয় না, সেইগুলো করার সময়ও দুয়াগুলো পড়তে পারেন।

!!!দুয়াগুলো কঠিন!!

সত্যি কথা বলতে ২-১ টা দুয়া যারা আরবিতে এক্সপার্ট না তাদের জন্য একটু কঠিন লাগতে পারে। এমনকি আমার কাছেও প্রথম প্রথম একটু কঠিন মনে হতো। কিন্তু ভেবে দেখুন, আপনি যদি দুয়াগুলো কষ্ট করে একবার মুখস্থ করে নিতে পারেন, এর পরে সারা জীবন প্রত্যেকদিন এইগুলো পড়তে পারবেন। বিইজনিল্লাহ, আপনার যেইদিন মৃত্যু হবে সেই দিন যদি আপনি ‘সাইয়্যিদুল ইসতিগফার’ পড়ে থাকেন, ইন শা’ আল্লাহ আপনি জান্নাতে যাবেন। এটা সহ এমন দু’আ আছে যা আপনাকে অনেক বিপদ আপদ, এক্সিডেন্ট ও দুনিয়া ও আখেরাতের সমস্ত চিন্তা ভাবনা থেকে মুক্তি দিবে। এতোবড় “আল্লাহর রহমত” পাওয়ার জন্য আপনি সামান্য মুখস্থ করার এই কষ্টটুকু করতে পারবেন না?

!!!কিভাবে মুখস্থ করবেন??

প্রথমে যেকোনো একটা দুয়া (যেটা বেশি দরকারী/যেটা বেশি ভালো লাগে) কয়েকবার শুধু পড়বেন আরবীতে (পড়তে কষ্ট হলে বাংলা উচ্চারণ থেকে সাহায্য নেবেন), অথবা বারবার অডিও শুনতে পারেন। এইভাবে কয়েকবার পড়া/শোনার পরে যখন দুয়াটা পড়া সহজ হয়ে যাবে তখন মুখস্থ করা শুরু করবেন। দুয়াটাকে কয়েকটা সুবিধাজনক অংশে ভাগ করবেন। আর একটা একটা অংশ বারবার দেখে ও না দেখে পড়ে মুখস্থ করার চেষ্টা করবেন। এইভাবে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করে না দেখে কয়েকবার বলতে পারলে অর্থাৎ মুখস্থ হলে পরের অংশ মুখস্থ করা শুরু করবেন। একদিনে না পারলে ২-৩ দিন বা এক সপ্তাহেও যদি আপনি একটা দুয়া মুখস্থ করতে পারেন তবুও ভালো।

***সকাল ও সন্ধ্যার আমল ১ - সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনার সর্বশ্রেষ্ঠ দুআঃ ১ বার

জান্নাতে যাওয়ার নিশ্চিত গ্যারান্টি কে পেতে চান?

“সায়্যিদুল ইস্তিগফার” বা “ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দুয়া” নামে একটা দুয়া আছে – আন্তরিক বিশ্বাসের সাথে কেউ যদি প্রতিদিন সকাল (ফযরের পরে) ও সন্ধ্যায় (আসর বা মাগরিবের পরে) পড়ে – আর সে ঐদিন মারা যায় – ইন শা’ আল্লাহ সে জান্নাতে যাবে। এই গ্যারান্টি দিয়ে গেছেন স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সাঃ)। (বুখারী, তিরমিযী ৫/৪৬৬)

দুয়াটা পাবেন হিসনুল মুসলিম বইয়ের ১২৭ নাম্বার পৃষ্ঠাতে।

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَّا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِر لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা-ইলাহা ইল্লা আনতা, খালাক্বতানি ওয়া আনা আ’বদুক, ওয়া আনা-আ’লা আহ’দিকা ওয়া-ওয়াদিকা মাস্তা-তোয়া’ত, আ’উযুবিকা মিন শাররি মা-ছানাআ’ত আবু-উ-লাকা বিনি’মাতিকা আলায়্যা ওয়া-আবু-উ-বি-যামবি, ফাগফিরলী, ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুযযুনুবা ইল্লা-আনতা। (বুখারী)

অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছো আর আমি তোমার বান্দা। আমি আমার সাধ্যানুযায়ী তোমার সাথে যে ওয়াদা করেছি তা পূরণ করার চেষ্টায় রত আছি, আমি আমার কর্মের অনিষ্ট থেকে পানাহ্ চাই, আমি স্বীকার করছি আমার প্রতি তোমার প্রদত্ত নিয়ামতের কথা এবং আমি আরো স্বীকার করছি আমার পাপে আমি অপরাধী, অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করো, তুমি ছাড়া ক্ষমা করার আর কেউ নাই।

বিঃদ্রঃ অনেকের কাছে দুয়াটা কঠিন মনে হতে পারে, কিন্তু চিন্তা করে দেখুন – কঠিন এই দুয়া মুখস্থ করে আমল করার কি প্রতিদান। বিশেষ করে মা বোনদের উচিত – বেশি বেশি সকাল ও সন্ধ্যার দুয়াগুলো মুখস্থ করে রাখা, যাতে করে নামায বন্ধ থাকার দিনগুলোতে সারাদিন দুনিয়াবি কাজকর্ম করে বা গান শুনে, নাটক সিনেমা দেখে বা গল্পের বই না পড়ে আমলনামায় শুধু পাপ কাজ জড়ো করার পরিবর্তে ঐদিনগুলোতে কিছু নেক আমলও থাকলো – যার বিনিময়ে আল্লাহর কাছে জান্নাতের আশা করা যেতে পারে। আর কঠিন হলেও কোনো কাজই অসম্ভব না, আপনি শুরু করুন দেখবেন খুব শীঘ্রই মুখস্থ হয়ে যাবে ইন শা’ আল্লাহ।

হাদীসের রেফারেন্সঃ শাদ্দাদ ইবনে আউস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘সায়্যিদুল ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠতম দোআ) হল বান্দার এই বলা যে, ‘আল্লা-হুম্মা আন্তা রাব্বি...শেষ পর্যন্ত"।

যে ব্যক্তি দিনে (সকাল) বেলায় দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এ দুআটি পড়বে অতঃপর সে সেই দিনে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই মারা যাবে, সে জান্নাতিদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে (সন্ধ্যায়) এ দুআটি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে পড়বে অতঃপর সে সেই রাতে ভোর হওয়ার পূর্বেই মারা যাবে, তাহলে সে জান্নাতিদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’’

সহীহুল বুখারী ৬৩০৬, তিরমিযী ৩৩৯৩, নাসায়ী ৫৫২২, আহমাদ ১৬৬৬২।

সকাল ও সন্ধ্যার আমল ২ - জান্নাত প্রার্থনা করা ও জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাওয়ার দুয়াঃ ৩ বার

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আ’উযু বিকা মিনান্নার।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ৩ বার জান্নাত প্রার্থনা করে, জান্নাত আল্লাহর কাছে দুয়া করে, হে আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করো। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ৩ বার জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে, জাহান্নাম আল্লাহর কাছে দুয়া করে, হে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাও”।

তিরমিযিঃ ২৫৭২, ইবনে মাজাহ ৪৩৪০, শায়খ আলবানি এই হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, সহীহুল জামি ৬২৭৫।

***উল্লেখ্য – সকাল সন্ধ্যায় ৭ বার “আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার” পড়ার হাদীসটা জয়ীফ বা দুর্বল, শায়খ আলবানী সিলসিলা জয়ীফাহঃ ১৬২৪।

সুতরাং সেটা না পড়ে এই দুয়া পড়বেন, কারণ এটাতে জান্নাত চাওয়া ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া দুইটা দোয়া আছে আর এটা সহীহ। ঐটা থেকে এইদুয়াটা ভালো ও সহীহ।

***সকাল ও সন্ধ্যার আমল ৩ - কিয়ামতের দিন আল্লাহর সন্তুষ্টি বা জান্নাত পাওয়ার জন্য সহজ আমলঃ ৩ বার

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ (তাঁর বান্দাদের সাথে) ওয়াদা করেছেন যে, যে ব্যক্তি প্রত্যেক দিন সকালে ৩ বার ও সন্ধ্যায় ৩ বার এই দুআ পড়বে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট থাকবেন"।

হিসনুল মুসলিম, পৃষ্ঠা ১৩৮।

رَضِيْتُ بِاللهِ رَبـاًّ، وَبِاْلإِسْلاَمِ دِيْنـًا، وَبِمُحَمَّدٍ نَبِيـًّا

উচ্চারণঃ রদ্বীতু বিল্লা-হি রব্বান, ওয়াবিল ইসলা-মি দ্বীনান, ওয়াবি মুহা’ম্মাদিন সাল্লাল্লা-হু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামা নাবিয়্যান। (৩ বার)

অর্থঃ আমি আল্লাহকে রব হিসাবে, ইসলামকে দ্বীন হিসাবে ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নবী হিসেবে গ্রহণ করে সন্তুষ্ট”।

আহমাদঃ ১৮৯৬৭, নাসাঈ, ইবনুস সুন্নীঃ ৬৮, আবু দাউদঃ ১৫৩১, তিরমিযীঃ ৩৩৮৯। আব্দুল আজীজ ইবনে বায (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর ‘তুহফাতুল আখইয়ার’ এর ৩৯ পৃষ্ঠায় এই হাদীসকে “হাসান সহীহ” বলেছেন।

***সকাল ও সন্ধ্যার আমল ৪ – হঠাৎ কোন বিপদ-আপদ ও দুর্ঘটনা থেকে নিরাপদ থাকার জন্য আমলঃ ৩ বার

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সকালে তিনবার ও সন্ধ্যায় তিন বার এই দুআ পড়বে, কোনো কিছুই ঐ ব্যক্তির ক্ষতি করতে পারবেনা”।

بِسْمِ اللهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ العَلِيمُ

আরবী উচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা ইয়াদুররু মা আ’সমিহী শাই’উন ফিল আরদি, ওয়ালা ফিস সামা-য়ী, ওয়াহুয়াস সামীউ’ল আ’লীম। (৩ বার)।

বাংলা অর্থঃ আমি সেই আল্লাহর নামে শুরু করছি, যার নামে শুরু করলে আসমান ও যমীনের কোনো কিছুই কোনো ক্ষতি করতে পারেনা। প্রকৃতপক্ষে তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী। (৩ বার)।

আবু দাউদ, তিরমিযী ৩৩৮৮, ইবনে মাজাহ ৩৮৬৯, মুসনাদে আহমাদ ৪৪৮, ৫২৯। হিসনুল মুসলিম, পৃষ্ঠা ১৩৮। শেখ আলবানীর মতে হাদীসটি হাসান।

***সকাল ও সন্ধ্যার আমল ৫ – দুনিয়া ও আখেরাতের যেকোনো টেনশান বা দুঃচিন্তা এবং মানসিক অস্থিরতা থেকে বেঁচে থাকার জন্য আমলঃ ৭ বার

আপনি কি দুনিয়া অথবা আখেরাতের কোনো বিষয় নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করছেন? কি হবে না হবে? না জানি কি ক্ষতির মাঝে পড়ে গেলাম? যা করছি ভুল করছি নাতো? এইরকম দুনিয়াবি অথবা আখেরাতের যেকোনো দুঃশ্চিন্তা, টেনশান বা পেরেশানি থেকে বাচার জন্য একটা দুয়া আছে যা সকাল ও সন্ধ্যায় ৭ বার করে পড়তে হয়...

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় ৭ বার এই দুয়া পাঠ করবে আল্লাহ্ তার সকল চিন্তা, উৎকণ্ঠা ও সমস্যা মিটিয়ে দেবেন”।

হিসনুল মুসলিম ১৩২-১৩৩ নাম্বার পৃষ্ঠা। সুনান আবূ দাউদ, হাদীস ৫০৮১।

*উল্লেখ্য এই দুয়াটা সুরা তাওবার সর্বশেষ ১২৯ নাম্বারে আয়াতে আল্লাহ তাআ’লা পড়ার জন্য বলেছেন।

حَسْبِيَ اللهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ

উচ্চারণঃ হা’সবিয়াল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা-হুয়া, আ’লাইহি তাওয়াক্কালতু, ওয়া হুয়া রব্বুল আ’রশিল আ’যীম।

অর্থঃ আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া আর কোন মা’বুদ নাই, আমি তাঁরই উপর নির্ভর করছি, তিনি মহান আরশের প্রভু।

***সকাল ও সন্ধ্যার আমল ৬ – শিরক থেকে বাঁচার দুয়াঃ (১/২/৩)

কেউ ৪০ বছর আল্লাহর ইবাদত করলো, কতযে নফল সুন্নত নামায পড়লো, রোযা রাখলো - কিন্তু মরণের আগে শিরক করা অবস্থায় তোওবা না করেই মারা গেলো...শিরক তার সমস্ত আমল নষ্ট করে দেবে (নাউযুবিল্লাহ)!

কেয়ামতের দিন তার আমলগুলোর কোনো ওযন আল্লাহ তাকে দেবেন না, এইগুলোকে ধূলো বালিতে রূপান্তরিত করে দেবেন। সে লাঞ্চিত হয়ে চিরজাহান্নামী হবে। অবশ্য ঈমানদার যারা তারা যদি অজ্ঞতাবশত ছোট শিরক যেমন রিয়াতে লিপ্ত হয় তাহলে চিরজাহান্নামী হবেনা, কিন্তু এইগুলো থেকে তোওবা না করে মারা গেলে কঠিন শাস্তির পরে জান্নাতে যেতে পারবে।

আর জেনে হোক বা না জেনেই হোক যে কেউ, যেকোনো সময় শিরকে লিপ্ত হতে পারে, যে যত বড় নেককারই হোক না কেনো (মা যা' আল্লাহ)।

এইজন্য শিরক করা অথবা অনিচ্ছায় শিরকে লিপ্ত হওয়া থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হয়।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) শেখানো একটা দুয়া আছে, কেউ যদি প্রতিদিন সকাল বিকাল একবার করে পড়েন, তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তাকে শিরক থেকে হেফাজত করবেন।

আপনি কি জানেন, সেই দুয়াটা কি?

দুয়াটা হচ্ছেঃ

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أَعْلَمُ، وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لاَ أَعْلَمُ

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা আন উশরিকা বিকা ওয়া আনা আ’লাম, ওয়া আস-তাগফিরুকা লিমা লা আ’লাম।

অনুবাদঃ হে আল্লাহ! আমার জানা অবস্থায় তোমার সাথে শিরক করা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আর আমার অজানা অবস্থায় কোনো শিরক হয়ে গেলে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

আহমাদ ৪/৪০৩, হাদীসটি সহীহ, সহীহ আল-জামে ৩/২৩৩।

হিসনুল মুসলিমঃ পৃষ্ঠা ২৪৬।

***সকাল ও সন্ধ্যার আমল ৭ – চারজন দাস মুক্ত করার সমান সওয়াব পাওয়ার আমলঃ ১০ বার

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَـرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ

এই দুয়া যেকোনো সময় পড়লে ৪ জন দাস মুক্ত করার সমান সওয়াব পাওয়া যাবে। প্রদিতিন অন্তত সকাল ও সন্ধ্যায় একবার পড়ার অভ্যাস করা যেতে পারে।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অহ্দাহু লা শারীকা লাহ, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আ’লা কুলি শায়ইন ক্বাদীর’ দিনে দশবার পাঠ করবে, সে ব্যক্তি ইসমাইল (আঃ) বংশের চারজন দাস মুক্ত করার সমান সওয়াব পাবে। (সহীহ্ বুখারীঃ ৬৪০৪, মুসলিম ৪/২০৭১)

***সকাল ও সন্ধ্যার আমল ৮ – অনেক “বড় সওয়াব” পাওয়ার একটা আমলঃ ৩ বার

সকাল ও সন্ধ্যায় ৩ বার-

سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ: عَدَدَ خَلْقِهِ، وَرِضَا نَفْسِهِ، وَزِنَةَ عَرْشِهِ وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِ

উম্মুল মু’মিনীন জুওয়াইরিয়া বিনতিল হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (সাঃ) সকালে নামায পড়ার পর তার নিকট থেকে বের হলেন। তিনি তখন নিজের নামাযের জায়গায় বসাবস্থায় ছিলেন। তারপর নবী করীম (সাঃ) আবার চাশতের পর ফিরে এলেন। তখনো তিনি বসাবস্থায় ছিলেন। অতঃপর তিনি বললেন, আমি তোমাকে যে অবস্থায় রেখে গিয়েছিলাম সেই একই অবস্থায় তুমি বসে রয়েছো? তিনি জবাব দিলেনঃ জি হ্যাঁ। নবী করীম (সা) বললেনঃ আমি তোমার এখান থেকে যাওয়ার পর এমন চারটি কালেমা তিনবার পড়েছি যা তুমি আজ যা কিছু পড়েছো তার সাথে যদি ওজন করা যায় তাহলে তুমি ওজন করতে পার, অর্থাত তার সমান হবে। সেই কালেমাগুলো হচ্ছেঃ “সুবহানাল্লাহ ওয়া বিহামদিহি, আদাদা খালকিহি, ওয়া রিদ্বা নাফসিহি, ওয়া যিনাতা আরশিহি, ওয়া মিদাদা কালিমা তিহ্‌- (আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি এবং তাঁর প্রশংসা গাইছি, তাঁর সৃষ্টির সমান সংখ্যক, তাঁর মর্জি অনুযায়ী, তাঁর আরশের ওজনের সমান এবং তাঁর বাক্যাবলীর সমান সংখ্যক। (মুসলিম)

***জিনের আসর, যাদু-টোনা, চোখের নজর, অসুস্থতা, রোগ-ব্যধিসহ সমস্ত বালা-মুসিবত থেকে বাঁচার অথবা এইগুলোতে আক্রান্ত হলে শিফা বা চিকিতসার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী একটা আমলঃ

আব্দুল্লাহ ইবনে খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ

“সকাল-সন্ধ্যায় ‘ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ (সুরা ইখলাস) এবং ‘ক্বুল আঊযু বিরাবিবল ফালাক্ব’ (সুরা ফালাক্ব) ও ‘ক্বুল আঊযু বিরাবিবন্নাস’ (সুরা নাস) তিনবার করে পড়।

তাহলে যেকোন(ক্ষতিকর) জিনিস থেকে নিরাপত্তার জন্য এটা তোমার জন্য যথেষ্ট হবে।”

তিরমিযী ৩৫৭৫, আবূ দাউদ ৫০৮২, নাসায়ী ৫৪২৮, ৫৪২৯, হাসান সহীহ বলেছেন। ইমাম তিরমিযী, শায়খ আলবানী।

সকাল হচ্ছে ফযরের নামাযের পর থেকে আর সন্ধ্যা বলতে বোঝায় আসরের পর থেকে নিয়ে মাগরিবের সময় পর্যন্ত।

পড়ার নিয়ম হচ্ছে আউযুবিল্লাহ...বিসমিল্লাহ...পড়ে সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস, ১ বার পড়ার পরে এই সিরিয়ালে আরো ২ বার রিপিট করবেন। প্রত্যেক সুরার আগে শুধু বিসমিল্লাহ...পড়বেন।

বিষয়: বিবিধ

১৪১৪ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

215308
৩০ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ১২:২০
নীল জোছনা লিখেছেন : ধন্যবাদ কুরআন হাদিসের আলোকে ব্যাখ্যা করার জন্য।
215312
৩০ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ১২:২৫
সুশীল লিখেছেন : ধন্যবাদ
215371
৩০ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০২:১৬
জুমানা লিখেছেন : ধন্যবাদ অাপনাকে
215406
৩০ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০৩:২৭
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : সুন্দর পোষ্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ।
217354
০৪ মে ২০১৪ বিকাল ০৫:৩৪
আবু সাইফ লিখেছেন : জাযাকুমুল্লাহ...... Rose Praying


اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَّا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِر لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা-ইলাহা ইল্লা আনতা, খালাক্বতানি ওয়া আনা আ’বদুক, ওয়া আনা-আ’লা আহ’দিকা ওয়া-ওয়াদিকা মাস্তা-তোয়া’ত, আ’উযুবিকা মিন শাররি মা-ছানাআ’ত আবু-উ-লাকা বিনি’মাতিকা আলায়্যা ওয়া-আবু-উ-বি-যামবি, ফাগফিরলী, ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুযযুনুবা ইল্লা-আনতা। (বুখারী)

অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছো আর আমি তোমার বান্দা। আমি আমার সাধ্যানুযায়ী তোমার সাথে যে ওয়াদা করেছি তা পূরণ করার চেষ্টায় রত আছি, আমি আমার কর্মের অনিষ্ট থেকে পানাহ্ চাই, আমি স্বীকার করছি আমার প্রতি তোমার প্রদত্ত নিয়ামতের কথা এবং আমি আরো স্বীকার করছি আমার পাপে আমি অপরাধী, অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করো, তুমি ছাড়া ক্ষমা করার আর কেউ নাই।

Praying Praying

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File